পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 47 (Last-Part)

#part_(অন্তিম পাতা)
___________________________
—“ ভালোবাসা কি??কেনো এই ভালোবাসার জন্ম??কেনো ভালোবাসা হয়??কত প্রশ্ন মানুষের মনে তাই না??”
অরিত্রান ম্যাগাজিনের পৃষ্টা উল্টাচ্ছে।হাত তার রক্তে লাল।হাতের কব্জিতে কাঁটা হয়েছে।রিমন ভীতু!ভয় প্রাপ্ত আসামির মতো তাকিয়ে আছে সে।ঘরের একটা কোনে জায়গা হয়েছে তার।অরিত্রান আবার বিড়বিড় করে বলে,
—“ ভালোবাসা অদ্ভুত অনুভুতি।এর ব্যাখা নেই।যানোছ কথাটা??”
রিমন মাথা নাড়লো দু’বার।মানে সে জানে না।অরিত্রান বেশ মজা ফেলো মনে হচ্ছে।সে হাসছে।খুব করে হাসলে যেমন মানুষের ঠোঁট প্রশারিত হয়ে মেলে উঠে একুই ভাবেই মেলে আছে অরিত্রানের ঠোঁট।শৈকত খুব ভীতু।এসব ভয়ংকর রক্ত খেলা সে নিতে পারে না।তাই চুপচাপ দাড়িঁয়ে আছে কোণের একটা জায়গা দখল করে।অরিত্রানের হাতের রক্তে চোখ যায় রিমনের।সে ভাবে,প্রশ্ন কোনটা আগে করবে।অরিত্রান এখানে লুকে কেন আছে??এটা না কি,অরিত্রানের হাতে এতো রক্ত কেনো??এটা।বেশ চিন্তার বিষয়।তাই চুপ করে সে চিন্তিত হয়ে বসে আছে।অরিত্রান নিজে থেকে বলে,
—“ ভালোবাসার মানে না যেনে ভালোবাসা উঁচিত না।আমার মতে হারাম।তাই তোরে এখন মেরে দিতে ইচ্ছে করছে।”
রিমন বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো,

-“ তুই ভালোবাসার মানে যানছ??”
-“ তা নয় তো কি।যানি দেখেই তো তোরে প্রশ্ন করছি।”
রিমন এবার হাসলো।বললো,
-“ অরিত্রান খান আসলেই ভালোবাসতে পারে না।পারলে আর যাই হোক ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট দিতে পারতো না।তুই কি যানছ না তোর ভালোবাসার মানুষ কষ্টে আছে??কত কষ্টে আছে তাও কি ফিল হয় না??”
-“ না হয় না।কিছু কষ্ট অদ্ভুত ভাবে মানুষের ভালোর জন্য হয়।তাই সেই কষ্টগুলো পাওয়া উঁচিত।”
অরিত্রান উঠে দাঁড়ায়।রিমনের চোখ চড়কগাছ।সে হা করে তাকিয়ে আছে।ছয় মাস!!মাত্র ছয় মাসে অরিত্রান শুকিয়ে গেছে গত খানি তা ভাবতেই রিমনের মাথায় হাত।এ কে!!!অরিত্রান??কোথায় সেই বাহু!!কোথায় সেই সুঠাম দেহ!!রিমন চমকিত চোখে তাকিয়ে বলে,
-“ অরিত্রান!!তোর এ কি অবস্থা???এতো শুকিয়ে গেছিস কেন??আর হাতে এতো দাগ??কেনো??কি করেছিস নিজের??”
হাসির একটা শব্দ ছাড়া কিছুই কানে আসে না রিমনের।শৈকত আফসোসের সুর তুলে বলে,
-“ ভাই আর বলিয়েন না উনি তো খাওয়া দাওয়া তেমন করেই না।আর সারা দিন মদের সাগরে বুদ হয়ে থাকে।তাই তো এই অবস্থা।”
-“ মানে কি??কেনো??ভাব দেখে মনে হচ্ছে ছ্যাঁকা খেয়ে বেকা হয়েছিস।অথচ তুই নিজেই ভাবিরে ছ্যাঁকা দিয়ে এখানে লুকিয়ে আছিস।”
-“ চুপ।একদম চুপ।আমি পরীজাকে কখনো ছ্যাঁকা ট্যাঁকা দি নি।এগুলোর সাথে আমার সম্পর্ক নেই।”
—-“ হোয়াট???তাহলে এতো দিন কি চলছে এসব??”
—-“ এগুলো আমি করি নি।পরীজার হিটলার বাবা করেছে।তিনি চেয়েছেন তার মেয়ে থেকে দূরে থাকতে তাই থাকছি।ব্যস।”
রিমন ভারী অবাক হলো।হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই অরিত্রান মদের বোতলে চুমুক দেয়।দাড়িঁ বড় হয়েছে।চুলগুলো বড় হয়েছে অনেক।এলোমেলো চুলে অরিত্রানকে অদ্ভুত লাগছে।হাতের কাটা জায়গায় মদ ঢেলে দেয় অরিত্রান।রিমন চোখ কুঁচকে প্রশ্ন করে….”
—-“ তুই মেয়ের বাবার কথা শুনছিস??কেনো??আর ওয়াসেনাত স্যরি ভাবীর বাবা তো রাজিই ছিলো।এমন কি তিনি নিজে আমার কাছে এসেছিলেন খবর নিতে।কয়েক বার প্রশ্ন করেছেন তুই কোথায়।তাহলে তাকে দোষ দিচ্ছিস কেনো??আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।খুলে বলবি প্লিজ?”
অরিত্রান খুব করে হাঁসে।ঢুলে ঢুলে ওয়াসেনাতের ঝুলানো ছবির দিকে তাকায়।রক্তাক্ত হাতে চুলের কাছটায় হাত বুলিয়ে দেয়ে।তৌফিক সাহেব চুলে চিরুনি করছে।তার দিকেও তাকিয়ে থাকে সে।রিমন অধর্য্য হয়ে উঠেছে।উত্তেজিত হয়ে বলে,
——“ আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।বুঝিয়ে বলবি??আর হাত কাঁটলি কিভাবে???”
——“ হাত তো কাঁটে নি উনি কাটঁছে।” শৈকতের কন্ঠে ভয়।”
অরিত্রান চোখ ছোট করে বলে,

——“ ও তাহলে তুমিই একে এখানে নিয়ে এসেছো??সাহস তো কম না??” অরিত্রানের চিৎকার শুনে শৈকত ভীতু হয়ে বলে,
-“ আমার একার দোষ না স্যার।উনি আপনার সাথে দেখা করতে না পারলে আমাকে খুন করতো।নিজের জীবন বাঁচানো ফরজ।তাই তো আমি নিয়ে এসেছি।”
-“ অরিত্রান প্লিজজ কি হয়েছে বলবি??”
অরিত্রান লম্বা চেয়ারে বসে।হাতে গ্লাস নিয়ে।তারপর পুরনো স্মিতি ভাবে,
__________________
৬মাস আগে,
অরিত্রান পাগলের মতো হসপিটালের রুমের সামনে হাঁটা হাঁটি করছে।তাকে বেশ উত্তেজিত লাগছে।পাগল পাগল লাগছে।তৌফিক সাহেব রেগে আছে।খুব রেগে আছেন তিনি।অরিত্রান চেয়ারে বসেছে মাত্র।সারা রাত সে দাড়িয়ে পার করে দিয়েছে।তৌফিক সাহেবের হুট করে কি যেনো হলো,রেগে তিনি অরিত্রানের পাঞ্জাবির কলার ধরে তাকে টেনে তুলেন।অনেক রাগ নিয়ে বলে,
-“ এই জন্য আমি তোমার থেকে আমার মেয়েকে দুরে রাখতে চেয়েছি।আমার মেয়ের এই অবস্থার জন্য মাদৌলি না তুমিই দায়ি।তুমিই এসব করেছো।আগেই বলেছি তোমার জীবন আর আমার মেয়ের জীবন এক না।তাহলে কেনো তাকে তোমার সাথে জড়িয়ে তার জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছো??কেনো??”
অরিত্রান স্তব্ধ!!চোখ নিচের দিকে।তৌফিক সাহেব আবার বললেন,
-“ তুমি জীবনে এতো এতো শত্রু তৈরি করেছো যে তারা তোমাকে কিছু করতে না পারলে কি হয়েছে আমার মেয়ের ক্ষতি করেই ছাড়বে।তাই আমি তোমাকে চাই না।চাই না আমার মেয়ের জীবনে তুমি থাকো।বের হয়ে যাও।আর কখনো ওর জীবনে তোমাকে চাই না।আমি অন্য ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো।তবুও তোমার সাথে না।”
অরিত্রান এবার রেগে তাকালো।নিজের পাঞ্জাবির কলার থেকে হাত খুলে নিয়ে বললো,
-“ আপনি হয় তো ভুলে যাচ্ছেন আপনার মেয়ে আমাকে ভালোবাসে।”
-“ ভালোবাসা!!আমি মানি না এসব।যে ভালোবাসা কষ্টের কারন হয় সে কেমন ভালোবাসা??তুমি যদি সত্যিই ওয়াসেনাতকে ভালোবাসতে তাহলে পেতে নয় ওর জীবন বাঁচাতে চাইতে।”
-“ যা হয়েছে সবই দূর্ঘটনা।এতে আমার দোষ কোথায়??”অরিত্রানের চিৎকার শুনে আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে তাকায়।তৌফিক সাহেব আরো রেগে যায়।রাগে তার মাথা কাজ করছে না।বিপদে পড়লে মাথা কাজ করা ছেড়ে দেয় কথাটা যেনো আজ সত্য মনে হচ্ছে অরিত্রানের।তৌফিক সাহেবকে এতো রেগে যেতে সে আগে কখনই দেখেনি।তৌফিক সাহেব চিৎকার করে বলে,
-“ দোষ তোমারই।কারন সে মেয়ের সাথে তোমার শত্রুতা ছিলো আমার মেয়ের না।তাই তোমারই দোষ।এমন হাজারো শত্রু আছে তোমার।আজ হয় তো সে বেঁচে যাবে কিন্তু কাল??কাল আবার কেউ আমার মেয়ের উপর তোমার শত্রুতা চালিয়ে দিবে।আমি মেনে নিতে পারবো না।তাই আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকো।”
-“ তা সম্ভব না আপনিও জানেন।আমি আপনার মেয়ের থেকে দূরে থাকতে পারবো না।”অরিত্রানের স্বাভাবিক কন্ঠ।
-“ তুমি কি চাও??আমার মেয়ে তোমার জন্য মরুক??”
-“ এটা আমি কেনো চাইবো??আপনার মেয়ে আমাকে যতটা ভালোবাসে আমি তার চেয়ে বেশি ভালোবাসি।ওকে ছাড়া আমার চলবে না।স্যরি।আমি নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারবো না।কারন আপনার মেয়ে এখন আমার নিঃশ্বাসে রূপ নিয়েছে।”
-“ তাই আমার মেয়ের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছো??হা হা ভালোবাসায় স্বার্থপরের জায়গা নেই।তুমি স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছো অরিত্রান।নিজের কথা ভাবছো।তাই তো আমার মেয়ের বাঁচা মরা তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ন্য না নিজের বেঁচে থাকা প্রয়োজন।তাই তো??”
অরিত্রান হাত মুঠ করে।ওয়াসেনাতের অনেক রক্ত ক্ষরন হয়েছে।তাই রক্তের প্রয়োজন।অরিত্রান নিজের পাঞ্জাবির দিকে তাকায়।এতো রক্ত!!!সে কি সত্যি স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে??ওয়াসেনাত সত্যি ঝুঁকিতে থাকবে তার সাথে থাকলে।সে জীবনে অনেক শত্রু নিজের হাতে তৈরি করেছে।অনেক মানুষ মেরেছে।তাদের পরিবার সত্যি অরিত্রানের উপরে প্রতিশোধ নিবে।তাকে মারা তো সহজ না।কিন্তু তার কাছের মানুষকে মারা তো অনেক সহজ।সেটাই মাদৌলি প্রমান করেছে।অরিত্রান সব ভাবে,তবুও সে অনড় হয়ে বলে,
-“ আপনার মেয়েকে ছাড়া সম্ভব না।আপনি অন্য যে শর্ত দিবেন আমি মেনে নিবো।”
-“ আমি শুধু আমার মেয়ের ভালো চাই।আর তা তোমার সাথে থেকে সম্ভব না।”
-“ আমার সাথে থাকলেই আপনার মেয়ে ভালো থাকবে।দূরত্ব কষ্ট বাড়াবে।আপনার মেয়ে কষ্ট পাবে।”
-“ পাবে না।ও ভালো থাকবে।হয় তো অনেক ভালো।”
-“ থাকবে না।আমি বলছি।”
-“ তুমি দেখে নেও।দূরত্ব বাড়াও।দেখবে ভালোবাসা কমে যাবে।”
অরিত্রান চুপ করে যায়।চোয়াল শক্ত করে।রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।তৌফিক সাহেব হাসেন।বলে,
-“ কি হলো চুপ কেনো??”
অরিত্রান সামনে হেঁটে যায়।পিছনে ফিরে বলে,
-“ আপনি নিজে আপনার মেয়েকে আমার হাতে দিবেন।এবং খুব খুঁশি মনেই দিবেন।অপেক্ষার সময় শুরু।আমি ভালোবাসার সব পরীক্ষা দিতে রাজি।তবে আপনার মেয়ে আমার হবে।হতেই হবে।সময় দিতে পারবো কিন্তু তাকে ছাড়তে নয়।”
তৌফিক কিছু বললো না।শুধু তাকিয়ে ছিলো।অরিত্রান আইসিইউতে অনুমতি বিহিন ঢুকে।ওয়াসেনাত নিস্তেজ হয়ে পরে আছে।গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়।ডাক্তার নার্স তাকে সরাতে চায়।সে সরে না।ওয়াসেনাতের কপালে অসংখ্য চুমু খায়।হাতের দিকে তাকায়।সাদা ব্যান্ডেজ করা হয়েছে হাতে।হাত ছুঁয়ে দেয়।হাত বুলিয়ে বলে,
-“ আমার ভালোবাসা তোমার অপেক্ষায় থাকবে।ভালোবাসি।কতটা বলতে পারবো না।গননা করতে পারবো না।শুধু ভালোবাসতে পারবো।”
________________
-“ অনেক দিন কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখা হয় না।অনেক দিন বলা হয় না কতটা ভালোবাসি।অনেক দিন প্রান খুলে দেখা হয় না।আমি খুব করে নিজেকে বেধে রেখেছি।তবুও ছুটে যেতে মন চায়। আমি যাই।লুকিয়ে দেখি।”
অরিত্রান কাঁদছে।রিমন অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে সেই কান্না।ভালোবাসায় পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকে।অরিত্রানকে না দেখলে তার জানো হতো না।কিছুতেই না।রিমন বলে,
-“ ভাই অনেক প্রেমেই বাবা মা রাজি থাকে না।তবুও তারা পালিয়ে বিয়ে করে।তুই ও করতে পারছ।তাহলেই তো হয়।বসে বসে মদে বুদ না হয়ে চল পালিয়ে যা।”
অরিত্রান শরীর দুলিয়ে হাসে।শৈকতের বিরক্ত লাগে এসব।আবার ভয় লাগে।যদি অরিত্রান শুট করে মেরে দেয়।তাই চুপ থাকে সে।রিমন বলে,
-“ তুই হাসছিস কেনো??”
-“ তা না হলে কি করতাম।আমি তো আর সিনেমাটিক না যে সিনেমার মতো সব হবে।আর আমি পালিয়ে যেতে চাইলেই পরীজা যাবে না।তার চেয়ে ভালো ওর বাবা ভালোবাসা বুঝে নিক।”
-“ ভাই পালিয়ে বিয়ে করলে কি এমন হবে বল??”
-“ অনেক কিছু হবে রিমন।আমি চাই না সেগুলো হোক।আমার বাবা মাও পালিয়ে পরিবারের অমতে বিয়ে করেছে।পরিণতি কি হয়েছে তা তো যানোছ??এখন বলবি সব দুর্ঘটনা।কিন্তু আমি ভোগ করেছি।বাবা মায়ের অধিকার সবার আগে।তারা ছেলে মেয়েদের জন্য নিজেদের মতামতকে বেষ্ট মনে করে।তাদের মনে হয় তারাই বেষ্ট চিন্তাবিধ।এটা তাদের ভুল ভাবনা।আমি শুধু এটাই উনাকে বুঝাতে চাই।যে জীবনসঙ্গি পছন্দ করার অধীকার ছেলে মেয়েকেও দেওয়া উঁচিত।আমি চাই না পরীজাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে উনাদের মনে কষ্ট দিতে।চাই উনি নিজে মেনে নিক।ব্যস।”
রিমন বেশ হতাশ হয়ে বসে থাকে।তার ফোনটা বেজে উঠে।কল রিসিভ করে হতবম্ভ হয়ে অরিত্রানের দিকে তাকায়।বলে,
-“ যদি ওয়াসেনাতের বিয়ে হয়ে যায় তখন কি করবি??”
অরিত্রান চমকায়।রাগি চোখে তাকিয়ে বলে,
-“ ফাইজলামি আমি পছন্দ করি না রিমন।”
-“ আমি সত্যি বলছি।ও রাজি হয়ে গেছে।কাল বিয়ে।”
অরিত্রান উঠে দাড়ায়।ধমকে বলে,
-“ শেট আপ রিমন।যা তো তুই।পরীজা এটা কখনোই করবে না।ইম্পসিবল।”
রিমন ফোন রেখে অরিত্রানের সামনে এসে দাড়ায়।তারপর বলে,
-“ আমি সত্যি বলছি।সত্যি বিয়ে তাও কাল।আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।ভাবী রাজি হয়ে গেছে কিভাবে??”
অরিত্রান বিশ্বাস করে না।পাশের তাক থেকে আর একটা বোতল নামিয়ে নেয়।মেদের বোতল শেষ হয়ে যায়।কিন্তু ওয়াসেনাতকে ভুলা হয় না।কি ভয়ংকর হয় ভালোবাসার নেশা!!!এই নেশা ভুলার মতো কোনো নেশা পৃথিবীতে নেই।কেনো নেই??অরিত্রানের গভীর প্রশ্ন।এই ছয় মাসে সে অনেক নেশা করেছে।তবে সবই ফাউ।রিমন ফোন দেখিয়ে বলে,

-“ ছবি দেখ।”
অরিত্রান চোখ তুলে তাকায়।হা করে তাকিয়ে থাকে।ওয়াসেনাতের পাশে বসা ছেলেটা কে??ওয়াসেনাত শাড়ি পরেছে??কেনো??অরিত্রান চোখ লাল করে।চোয়াল শক্ত করে তাকায়।হাতের বোতল চাপতে চাপতে ঠাস করে ফেটে যায়।দুরে ছুঁড়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে,
-“ এটা হতেই পারে না।কে এই ছেলে??আমার পরীজার পাশে কি করছে??কি করছে??কেনো বসেছে??আমি খুন করে দিবো।সব ধ্বংষ করে দিবো।সব সব।”
অরিত্রান ভাঙ্গচুর করছে।এটা যে সে কতো ভালো পারে শৈকতের জানা হয়েগেছে।অরিত্রান ভাবতে পারছে না এমন কিছু হবে।সে চিৎকার করে জিনিস ছুঁড়ে মারছে।রিমনও ভয় পেয়ে গেছে।এতো হাইপার অরিত্রানকে শেষ কবে দেখেছে মনে নেই তার।অরিত্রান ভাঙ্গচুর করে চুপ হয়ে যায়।চিন্তিত হয়ে বসে পরে।সামনের বিছানায়।হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-“ পরীজা কথা দিয়ে ছিলো আমার বাদে সে কারো হবে না।ও কি কথা ভুলে গেছে??ওর বাবার কথাই ঠিক??ভালোবাসা কি সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে যায়??”
___________________________
অনেক কেঁদেছে সে।কেঁদে কেঁদে একটা সময় ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।ওয়াসেনাতের ঘুম হয় না।অপেক্ষা ঘুম কেড়ে নিয়েছে।তাকে আবেগি করে তুলছে দিন দিন??এতো কষ্ট কেনো ভাসোবাসায়??কেনো??ওয়াসেনাত সবার থেকে লুকিয়ে ঘুমের ঔষুধ খায়।এছাড়া তার শান্তির কোনো পথ নেই।এটাই একমাত্র পথ একটু ঘুমানোর।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।আজান হচ্ছে চারপাশে।তৌফিক মেয়ের রুমে এসে অবাক হলেন।রুমটা অন্ধকার।এতো অন্ধকার তার মেয়ে কখনোই করে রাখে না।তৌফিক ধীর পায়ে রুমের ভেতরে যায়।ওয়াসেনাত এলোমেলো চুলে ঘুমিয়ে আছে।তৌফিক সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।মেয়ের পাশে কিছু সময় বসে থাকে।পাশের টেবিলে ঘুমের ঔষুধের পাতা দেখে তিনি চমকায়।চারটা ঔষুধ নেই??মানে কি??এই ঔষুধ কালই কিনা হয়েছে।তিনি নিজে কিনেছেন।এতো গুলো ঔষুধ নেই??মানে ওয়াসেনাত খেয়েছে??তৌফিক সাহেব অদ্ভুত ভাবে মেয়ের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকেন।ভাবেন,মেয়ের এই অবস্থার জন্য কোনো না কোনো ভাবে তিনি দায়ি।অসলেই কি তিনি দায়ি??হ্যা!অরিত্রানের জন্য আজ তার মেয়ের এই অবস্থা।অরিত্রান তো তার মেয়েকে ছাড়তে চায় নি।সে ছাড়িয়েছে।হ্যাঁ!কিন্তু ভালোর জন্য।হ্যাঁ তার মেয়ের ভালোর জন্য।কিন্তু আদো কি ভালো হচ্ছে??কাল বিয়ে।বিয়ের পরে কি সব ঠিক হবে??তার মেয়ে কি ভালো থাকবে??অরিত্রান ঠিক ছিলো??না কি সে ঠিক??তৌফিক মাথায় হাত দেয়।ঝিম ঝিম করছে মাথা।
ওয়াসেনাতের ঘুম ভাঙে সকালে।আজ আকাশ মেঘলা।খুব ভারী বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।আকাশ মলিন হয়ে আছে।পরিবেশ ভিজা ভিজা।অন্ধকার রুমে ওয়াসেনাত বসে আছে।বৃষ্টি মানে প্রেম!!অদ্ভুত অনুভুতি!!পরিবেশ প্রেমময়!!কিন্তু ওয়াসেনাতের তেমন অনুভুতি হচ্ছে না।সে ভয়ে আছে।সন্ধ্যার পরে কি হবে ভেবে সে চিন্তিত।ওয়াসিকা মেয়ের রুমে এসে মেয়ের পাশে বসে।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“ এতো চিন্তা কিসের বলো তো??”
-“ জানি না আম্মু।”
-“ তাহলে এতো চুপচাপ কেনো তুমি??আর তোমার বাবা বলেছে তুমি না কি ঘুমের ঔষুধ খেয়েছো??”
ওয়াসেনাত মায়ের দিকে একবার তাকায়।চোখ সরিয়ে বিছানার সাথে ঠেসে বসে।তারপর বলে,
-“ আম্মু ঘুম আসে না অনেক দিন তাই খেয়েছি।”
ওয়াসিকা অবাক হয়ে বলে,
-“ ঘুম না আসলেই ঔষুধ খাবে??এটা কেমন কথা??”
ওয়াসেনাত যেন মায়ের কথায় ভারী বিরক্ত।তাই উঠে যেতে যেতে বলে,
-“ আম্মু তুমি যাও তো আমি ফ্রেশ হবো।এসব কথা আমার ভালো লাগে না।”
ওয়াসিকার রাগ হয়।রেগে বলে,
-“ আমার কোন কথা তোমার ভালো লাগে??একটাও তো ভালো লাগে না।আমি তো ভালো মাই না।তাই তো??”
ওয়াসেনাত হাসে।মাকে পিছন থেকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“ পৃথিবীর সব মায়েরা বেষ্ট হয় আম্মু।তুমিও বেষ্ট।”
ওয়াসিকা মন খারাপ করে বলে,
-“ আজ বিয়ে !!”
-“ তো কি হয়েছে??তুমি তো এই বিয়ে নিয়েই চিন্তিতো ছিলে।এখন চিন্তা মুক্ত।”
ওয়াসেনাতের অভিমানী সুর।ওয়াসিকার খারাপ লাগে।মেয়ে হয় তো খুব মন খারাপ করেছে।
-“ এভাবে বলো না।আমাদের কাছে তুমি সব সময় গুরুত্বপূর্ন্য।”
-“ হ্যা জানি।তাই তো বিয়ে বিয়ে করছে সবাই।মেয়েরা কি বাবা মায়ের জীবনে ভারী জিনিস আম্মু?যা থেকে মুক্তি পাওয়াই চাই?”
-“ ছিঃ এগুলো কেমন কথা??মেয়েরা মা বাবার কাছে সবচাইতে দামি জিনিস।”
ওয়াসেনাত মাকে ছেড়ে দেয়।সরে আসে।মুখটা মলিন।ওয়াসিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঢাক পরে।তিনি চলে যান।ওয়াসেনাত বিয়ে করবে বলেছে কিন্তু হলুদ বা অন্য অনুষ্ঠান করবে না সে।তাই তো শুধু বিয়ের আয়োজন হচ্ছে।

_____________________
বাড়িটা সাজানো হয়েছে।তেমন বেশি না হলেও কম না।একমাত্র মেয়ের বিয়ে।ওয়াসেনাত বলেছে একদম সাদামাটা বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।তাই তেমন আয়োজন করা হচ্ছে না।অরিত্রান বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।তার কাছে সব এলোমেলো লাগছে।ওয়াসেনাত বিয়েতে রাজি হয়েছে এটা সে মানতে পারছে না।কিছুতেই না।এটা হতেই পারে না।দেয়াল বেয়ে ওয়াসেনাতের ব্যালকনিতে এসে দাড়িঁয়েছে সে।এটা ওয়াসেনাতের বারান্দা।ভেতর থেকে হাসির শব্দ আসছে।ওয়াসেনাত বসে আছে পিছন ঘুরে অরিত্রান দেখতে পাচ্ছে না তাকে।ওয়াসেনাতের হাসির শব্দও আসছে।অরিত্রান চমকায়।সে ভেবেছে ওয়াসেনাতকে ধরে বেধে বিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু এখানে এসে সে পুরাই চমকের উপরে আছে।বিয়ের সব আয়োজন চলছে।ওয়াসেনাত হাসছে।তার মানে সে রাজি।পিছনে ঝুলে আছে ওয়াসেনাতের লম্বা চুলগুলো।অরিত্রানের শরীর কাঁপে।হৃৎপিণ্ডে যেন হাতুড়ী পিটা হচ্ছে।হাতের রক্তে ফ্লোর ভাঁসছে।এতো রক্ত ঝঁড়াতে পারে সে!!!তবুও যেন রক্ত শেষ হয় না।অরিত্রান নিজের চুলের ভাঁজে হাত গুঁজে দেয়।তার চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সে করছে না।কিছু বলছে না।আবার আগের মতো নেমে চলে যায়।
“ ভালোবাসায় কে পেলো সেটা গুরুত্বপূর্ন্য না।ভালোবাসায় ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকা গুরুত্বপূর্ন্য।”
অরিত্রানের চোখের কোণ ঘেঁষে পানি নামে।সে কাঁদছে।জীবনে প্রেমটা যত সহজে হয়ে ভালোবাসা সহজে পাওয়া হয় না।ভালোবাসা কঠিন!!খুব কঠিন!!এই ভালোবাসার গল্পগুলো যতটা সুন্দর ঠিক ততটাই কঠিন!!অরিত্রানের দমবন্ধ হয়ে আসছে।নিঃশ্বাস যেন কেউ চেপে ধরেছে।ভয়ংকর ভাবে তার নিঃশ্বাস গলায় আটকে আছে।
___________________
লাল লেহেঙ্গায় ওয়াসেনাতকে লাল পরীদের মত লাগছে।আকাশের খুব ইচ্ছে ওয়াসেনাত লাল লেহেঙ্গা পড়বে।এতোটা লাল হবে যে দেখে মনে হবে রক্তে ভাসছে।ওয়াসেনাতকে দেখে সত্যি মনে হচ্ছে সে রক্তে ভাসছে।ওয়াসেনাত লাল লেহেঙ্গার উপরে হিজাব পড়েছে।গলায় ঝুলছে গহনা।মাথার উপরে বিশাল উড়না।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।হাত ভর্তি চুড়ি।ঝুনঝুন শব্দে সেই চুড়ি বেজেই চলেছে।ওয়াসেনাত আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।হঠাৎ দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠে ওয়াসেনাত।লামিয়া রিমি সহ সবাই চমকায়।রিমি সবাইকে বের করে দেয় রুম থেকে।ওয়াসেনাতের পাশে বসে।ওয়াসেনাত কেঁদে কেঁদে বলে,
-“ কেন আসছে না উনি???উনি কি আসবে না??আমার কি সত্যি বিয়ে হয়ে যাবে??”
রিমি ওয়াসেনাতের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।বলার মতো বা শান্তনা দেওয়ার মতো কোন ভাষা তার কাছে নেই।ওয়াসেনাতের চোখের পানি দু’চোখের কোল ঘেঁষে নামে।এই বিরহো দেখার মতো নয়।রিমির খারাপ লাগছে।খুব খারাপ লাগছে!!কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না।ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে তার হাড় মটমট করে ভাঙ্গছে।কষ্টটা যেনো আরো বেশি।সব দিকে শূন্যতা বিরাজ করছে।হঠাৎ বাতাসের তীব্রতায় বারান্দার দরজা খুলে যায়।ওয়াসেনাত চমকায়।বারান্দা থেকে খুব পরিচিত গন্ধ ভেসে আসে।ওয়াসেনাত ভারী লেহেঙ্গা একটা হাতে উঠিয়ে ছুটে বারান্দায় যায়।কেউ ছিলো??কিন্তু এখন নেই কেন??ওয়াসেনাত পাগলের মতো বারান্দায় চোখ বুলায়।না কেউ নেই??হতাশায় চারপাশ এলোমেলো লাগছে।ওয়াসেনাত বুকে হাত দেয়।বুক কাঁপছে খুব।লামিয়া এসে বলে,
-“ ওই তোর হইছে??তাড়াতাড়ি রেডি হো।সবাই চলে আসবে কিছুক্ষণ পরেই।”
ওয়াসেনাতের বুক আরো কেঁপে উঠে।পায়ে কিছু লাগে।পানির মতো ঠান্ডা!!ওয়াসেনাত একহাতে লেহেঙ্গা সরিয়ে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে।হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে।লাল!!হ্যা,লাল রক্ত!!ঠোঁট ঠেলে বেরিয়ে আসে,
-“ কার রক্ত??
ওয়াসেনাত চোখের সামনে হাত নিয়ে ভালো করে দেখে।হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে বলে,
-“ অরিত্রান!!!উনার রক্ত!!উনি এসেছিলো!!!”
ওয়াসেনাত উঠে দাড়াঁয়।চোখ বেয়ে পানি পড়ে।ঠোঁটে হাসি।তৌফিক সাহেব রুমে আসে।ওয়াসেনাত দ্রুত বাবার কাছে যায়।বলে,
-“ বাবা আমি এ বিয়ে করবো না।”
তৌফিক চমকায় না।স্বাভাবিক তিনি।যেন যানতো এটাই বলবে ওয়াসেনাত।তৌফিক সাহেব বলে,
-“ কি হয়েছে??এতো উত্তেজিত কেনো তুমি??”
ওয়াসেনাত হাতের ভাঁজে লেহেঙ্গা গুটিয়ে নিতে নিতে বলে,
-“ উনি এসেছে।হ্যা এসেছে বাবা।আমি জানতাম আসবে।”
তৌফিক সাহেব প্রশ্ন করলেন না কে।ওয়াসেনাত কাঁপছে।খুশিতে পাগল পাগল অবস্থা হলে যেমন হয় ওয়াসেনাতের এখন তেমন অবস্থা।তাকে দেখে পাগলের মতই লাগছে।ওয়াসেনাত বেরিয়ে যেতে চায়।তৌফিক সাহেব মেয়ের হাত ধরে বলে ,প্রথম থেকে সব বলেন।বাবার মুখে সব কথা শুনে ওয়াসেনাত হা হয়ে গেছে।অবাক হয়ে বললো,
-“ বাবা তুমি এগুলো কি বলছো??তুমি উনাকে কেনো দোষি ভাবছো??”
তৌফিক অপরাধীর মতো মুখ করে বললো,
-“ স্যরি।আমি ভুল করেছি।খুব ভুল করেছি।”
ওয়াসেনাত চেঁচিয়ে বললো,
-“ ছিঃ বাবা তুমি আমার কাছে কেনো ক্ষমা চাচ্ছো।”
-“ মাঝে মাঝে বাবা মায়ের কাজ গুলো তাদের ছেলে মেয়েদের কাছে ছোট করে দেয়।ঠিক এই মুহূর্তের মতো।আমি ভালোবাসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছি।যেটা সম্ভব না।অরিত্রান শুধু চেয়েছে আমাদের মত নিয়ে বিয়ে করতে।আর আমি তো তার সাথে অন্যায় করে ফেলেছি।খুব অন্যায়।”
ওয়াসেনাত নিজের বাবাকে জড়িয়ে নেয়।বলে,
-“ বাবা আমি উনার কাছে যেতে চাই।”
তৌফিক হাসলেন।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“ তুমি এখনো আমার অনুমতি চাইছো??কেনো??আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো।”
ওয়াসেনাত বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ বাবা মা যা করে আমাদের ভালোর জন্যেই করে।আমি এটা বিশ্বাস করি বাবা।আর যে নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয় তাকে কি আর বলা যায় বলো।সে তো সব বুঝতেই পেরেছে।”
তৌফিকের খুব গর্ব হয়।মেয়ে তার মনের মতো।আর অরিত্রান!!হ্যাঁ অরিত্রানের মতো কেউ তার মেয়েকে ভালোবাসতে পারবে না।কেউ না।এটা তিনি অরিত্রানকে গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই বুঝতে পেরেছে।তিনি ভুল করেছেন!!
_______________________
অরূপের আজ খুব অসহায় লাগছে নিজেকে।ভালোবাসলে তার দোষ গুলোকেও আপন করে নিতে হয়।এটা সে জানে।তাই তো আজ আরো বেশি করে অনুশোচনা হচ্ছে।ওয়াসেনাতের হাতটা ধরলেই সে সারা জীবনের জন্য নিজের ভালোবাসা পেয়ে যেতো।কিন্তু সে কি করছে??বাবার কথায় ওয়াসেনাতের এই বিপদের সময় তাকে ছেড়ে দিচ্ছে??না সে এমনটা করবে না।সে ওয়াসেনাতকে ভালোবাসে।অরিত্রানও নেই।তৌফিক তাকে খুব পছন্দ করে।তাদের বিয়ে তিনি দিবে।তাকেও মেনে নিবে।সে বলবে।আজই বলবে সে ওয়াসেনাতে বিয়ে করতে চায়।নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সে ওয়াসেনাতের বাড়িতে এসেছে।ওয়াসেনাতকে খুঁজে চলেছে।তার জানা মতে বিয়ে হয় নি।রিমি রিমনের সাথে কথা বলছে না।বেশ রেগে আছে সে।রিমন রিমির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
-“ স্যরি।”

রিমি কানে নেয় না।শাড়ির আঁচল তুলে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে সে।রিমন চারপাশে একবার ভালো করে তাকিয়ে রিমির কোমড় জড়িয়ে বললো,
-“ অরিত্রানকে খুঁজে পেয়েছি।ওদের মিল হবেই।ওরা তো একে অপরের জন্য সৃষ্টি।যেমন আমি আর তুমি।পাঁজরের সন্ধান পাঁজর করবেই।”
________________________
অরিত্রান মাঝ রাস্তায় বসে আছে।তাকে দেখে পথের ভিখারি মনে হচ্ছে।এলোমেলো ঢোলা শার্ট।কাঁটা হাত।এলোমেলো ভাবভঙ্গী।চোখের পানি আর পানি।সে কাঁদছে চিৎকার করে।কাঁটা হাত বাড়ি দিচ্ছে নিচের পিছঢালা রাস্তার উপরে।সবুজ চোখ লাল হয়ে আছে।হাতের রক্ত বেশি!!মারাত্নক দেখাচ্ছে তাকে।লোক জড়ো হয়েছে তাকে দেখে।অনেকই বলছে পাগল হবে হয় তো।অনেকে চিন্তে পেরে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।অরিত্রান ভেঁজা চোখে মিটমিট করে তাকায়।দুর থেকে দেখা যাচ্ছে কেউ এদিকেই আসছে।দৌড়ে আসছে।পরনে লাল লেহেঙ্গা।এলোমেলো হয়ে দৌড়ে আসছে সে।অনেকটা উম্মাদের মতো।পরেও গেছে কয়েকবার আবার উঠে এদিকেই আসছে।একহাতে লেহোঙ্গার স্কার্ট ধরে পেরে উঠছে না সে।লাল টকটকে সাজ।সম্পূর্ন্য শরীর জুড়ে লাল।যেনো সত্যি রক্তাক্ত হয়ে আছে মেয়েটা।চারপাশের হালকা আলোতেও তাকে অসাধারন লাগছে।অপুরূপা শব্দ দয় এই মেয়ের জন্যই সৃষ্টি।অরিত্রান চোখ কচলায়।শোকে কাতর হৃদয় মুহূর্তে ছটফট করে উঠে।হৃৎপিণ্ডের শব্দ বাড়ে পূর্বের থেকে বহু বহু গুন।অরিত্রানের সারা শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে কাঁপে।ল্যাম্পপোষ্টের আলোতে অরিত্রান দেখে লাল পরী দৌড়ে আসছে তার দিকে।বহু প্রতীক্ষিত এই প্রহর!!আচ্ছা ওয়াসেনাতের কি বিয়ে হয়ে গেছে??অরিত্রান চমকে উঠে দাড়ায়।ভাবে তাহলে কেন আসছে??সিনেমার মত বিদায় নিতে!!অরিত্রান ফঁস করে উঠে।ওয়াসেনাত দৌড়ের গতি বাড়ায়।খুব কাছে এসে ঝাপটে ধরে অরিত্রানকে।হামলে পরে বুকে।অরিত্রান চমকে তাকিয়ে থাকে।কিছু মুহূর্ত সে চুপ হয়ে থাকে।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে তার।লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে চোখের সামনে চলে আসে।ওয়াসেনাত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছে।চিৎকার করে কান্নার শব্দে অরিত্রান অবাক হয়।ওয়াসেনাতের লেহেঙ্গা কোমড়ের দিকে ঝুঁলে পড়ে।অরিত্রান দু’হাতে খালি কোমড় জড়িয়ে ধরে।ওয়াসেনাত কেঁদে কেঁদে বলছে,
-“ আপনি এতো খারাপ??কেনো??কেনো??এতো খারাপ না হলে চলে না??”
অরিত্রান কথার মানে বুঝে না।সে জড়িয়ে নিতে ব্যস্ত।সে উম্মাদের মতো ওয়াসেনাতের চোখেমুখে চুমু খায়।বহু দিনের পরে দেখা।ছয় মাস!!যেনো ছয় বছরের বেশি অরিত্রানের কাছে।ওয়াসেনাত কেঁদে লাল হয়ে আছে।লিপষ্টিক লেগে আছে অরিত্রানের সাদা শার্টে।ওয়াসেনাতের শরীর কাঁপে।অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে বলে,
-“ আপনি এতো শুকিয়ে গেছেন কেনো??”
অরিত্রান হাসে।হাসির চোটে চোখের কোনে জমে থাকা পানি গড়িয়ে পরে।ওয়াসেনাত আবার বলে,
-“ আপনি কেনো এতো দেরি করে এলেন??কেনো??”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের এলোমেলো উড়নাটা পিছনে ঠেলে দিয়ে বলে,
-“ আগে বলো বিয়ে হয়েগেছে কি না??”
ওয়াসেনাত অভিমানের সুরে বলে,
-“ ও আপনি তাহলে বিয়ে হয়ে গেলে খুঁশি হতেন তাই তো??আপনি তো এটাই চান।আমাকে তো আর পছন্দ না।পুরাতন হয়ে গেছি তো তাই।”
অরিত্রান শস্তির নিঃশ্বাস নেয়।বিয়ে হয় নি।খুশিতে সে আবার শক্ত করে ওয়াসেনাতকে জড়িয়ে ধরে।একদম বুকের পাঁজড়ের সাথে মিশিয়ে নেয়।তারপর বলে,
-“ তুমি সব সময় সতেজ ফুলের মতো নতুন আমার কাছে।প্রতিবার নতুন হয়ে ফুটো আমার বুকে।পুরাতন কেনো হবে বলো তো??”
ওয়াসেনাত খাঁমচি দিয়ে ধরে।কেঁদে অরিত্রানের শার্ট ভাসিয়ে দেয়।সেই সময় তৌফিক সাহেবের কন্ঠ কানে আসে।অরিত্রান চমকে ওয়াসেনাতকে একহাতে শক্ত করে ধরে পাশে দাড় করায়।তৌফিক সাহেব যেন ছিনিয়ে নিতে এসেছে।আর অরিত্রান মরে যাবে তবুও তাকে দিবে না।এমনটাই দেখাচ্ছে তাকে।তৌফিক ওয়াসেনাতের হাতটা ধরে।অরিত্রান টেনে ধরে বলে,

-“ দেখেন অনেক হয়েছে জামাই শ্বশুরের খেলা।আর না।আপনি আর কিছু করতে আসবেন না প্লিজ।”
তৌফিক হাসলো।মেয়ের হাত অরিত্রানের হাতে দিয়ে বললো,
-“ আজ থেকে আমার মেয়ের সব দায়িত্ব তোমার।আজ এই মুহূর্ত থেকে তুমিই আমার মেয়ের প্রধান অভিভাবক।আশা করি আগলে রাখবে।আর আমি জানি তুমি ভালো রাখবে আমার মেয়েকে।”
অরিত্রান একটু অবাক হয়ে হেসে ফেললো।তারপর বললো,
-“ তাহলে শ্বশুর মশায় লাইনে এসেছেন!!ভালো।আই লাইক ইট।আপনি বাসায় যান।কাজি ঠিক করেন।আমি আসছি।অনেক দিন জ্বালিয়েছেন।এবার সারা জীবন জ্বালাবো শ্বশুর বাবা।”
তৌফিক হাসলেন।মেয়ের মাথায় চুমু একে সামনে হেঁটে যান।ঠিক তখনই অরূপ দৌড়ে আসে।হাত জোড় করে বলে,
-“ স্যরি আঙ্কেল।আমি ক্ষমা চাচ্ছি।আপনি আমার উপরে আশাবাদি ছিলেন।আমি আপনার মেয়ের দায়িত্ব নিবো।কিন্তু আমি ভুল করেছি।সব ভুলে যান।স্যরি।আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।প্লিজ আঙ্কেল না করবেন না।আমি ভালো রাখবো ওয়াসুকে।আপনার মতই ভালো রাখবো।বিশ্বাস করেন।ও ছোট বেলার প্রেম আমার।আমি ভুল করেছি বাবার কথা শুনে।আমি এখন নিজের ভুল শুধরে নিতে চাই।প্লিজ আঙ্কেল।”
অরিত্রান তীর্যক চোখে তাকায়।অরূপ আকুতিমিনুতি করে।তৌফিক সাহেব চুপ করে শুনে।ওয়াসেনাত অরিত্রানের শার্ট খামঁছে ধরে নিজের বাম হাতে।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে তৌফিক সাহেব অরূপের হাত ধরে ওয়াসেনাতের সামনে নিয়ে আসেন।অভিজ্ঞ গলায় বলেন,
-“ তুমি দেরি করে ফেলেছো অরূপ।হ্যা পৃথিবীর সব বাবা চায় তার মেয়ের জীবনে এমন কেউ আসুক যে তার মেয়েকে তার মতই যত্নে আর ভালোবাসায় গুঁছিয়ে রাখবে।আমিও তাই চাইতাম।তাই বরাবর আমার তোমাকে পছন্দ ছিলো।”
অরূপ মাঝ পথে থামিয়ে বললো,
-“ তাহলে কি এখন আর পছন্দের নই।”
-“ না।কারন এখন আমি চাই আমার মেয়ের জীবনে এমন কেউ আসুক যে তাকে আমার চেওয়া ভালো রাখবে ,ভালোবাসবে।তুমি হয় তো আমার মেয়েকে আমার মতই ভালো রাখতে পারবে।কিন্তু অরিত্রান আমার মেয়েকে আমার চাইতেও ভালো রাখবে।আর ছোট বেলার প্রেম!!শুনো অরূপ মাঝে মাঝে কিছু ভালোবাসা বছরের পর বছরের ভালোবাসার চাইতেও অধীক ভালোবাসাময় হয়ে উঠে।তাই তো আমি বলতে পারছি ২০বছরের ভালোবাসার চাইতেও অরিত্রান আমার মেয়েকে বেশি ভালোবাসে।তাই আমার চোখে অরিত্রান বেষ্ট আমার মেয়ের জন্য।”
অরূপ অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে।আর প্লিজ আঙ্কেল করতে করতে তৌফিকের পিছনে পিছনে যায়।অরিত্রান সব দেখে।কিছুই বলে না।তার হাতের বাঁধন শক্ত।খুব শক্ত !!এতো টাই যে কেউ ছিঁনিয়ে নিতে পারবে না তার পরীজা কে।কেউ না।
তৌফিক সাহেবের ফোন বাজে।তিনি মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে কল রিসিভ করে।ওপাশ থেকে ছেলের বাবা উত্তেজিত হয়ে বলে,
-“ তৌফিক সাহেব স্যরি আমাদের ছেলেকে মানে আকাশকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।মনে হয় পালিয়েছে।তা না হলে কিডন্যাপ হয়েছে।তাই দুঃখিত আপনার মেয়েকে বউ করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে না।”
তৌফিক সাহেব ফোন পকেটে রেখে পিছনে ফিরে তাকায়।অরিত্রান চোখ টিপে হাসে।তৌফিস সাহেবও হাসে।বিড়বিড় করে বলে,
-“ অরিত্রান তুমি বদলাবে না।”

অরিত্রান যেনো শুনতে পায়।চিৎকার করে গলা উঁচিয়ে বলে,
-“ না শ্বশুর বাবা।অরিত্রান খান অরিত্রান খানই।তাকে পরিবর্তন করা যাবে না।আর সেটা যদি হয় পরীজার বিষয় তবে তো প্রশ্নই উঠে না।”
তৌফিক সাহেব কথা বাড়ায় না।এই ছেলে তার মেয়েকে পাগলের মতো ভালোবাসে।আর পাগলদের সাথে পেরে উঠা যায় না।কিছুতেই না।প্রকৃত ভালোবাসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয় না।যুদ্ধে জিত তো দূরে থাক।
___________________
অনেক মানুষ রাস্তায় ভীর জমিয়েছে।ওয়াসেনাত রাগ করেছে অরিত্রানের উপরে।তাই অভিমানী কন্ঠে বলে,
-“ আপনি কেনো এমন করলেন??আপনি জানেন আমার কত কত কষ্ট হয়েছে??”
অরিত্রান সহজ গলায় বলে,
-“ সব কষ্ট পুষিয়ে দিবো আমার পরীজা।”
ওয়াসেনাত মুখ ঘুরিয়ে বলে,
-“ না লাগবে না।”
ওয়াসেনাত অরিত্রানের বাঁধন ছুটিয়ে সামনে হাঁটে।অরিত্রান পিছন পিছন হাঁটে।চেঁচিয়ে বলে,
-“ আমার মতো মানুষ কিন্তু দুটি নেই।তুমিও কিন্তু দ্বিতীয় খুঁজে পাবে না।”
ওয়াসেনাত রাগি চোখে পিছনে তাকিয়ে বলে,
-“ লাগবে না।”
অরিত্রান আবার চিৎকার করে বলে,
-“ আমার মতো প্রেমিক পাবে না পরীজা।ভেবে দেখো??”
ওয়াসেনাত জবাবে বলে,
-“ লাগবে না আমার আপনার মতো প্রেমিক।”
-“ আমার মতো ভয়ংকর ভালোবাসার মানুষ পাবে না কিন্তু আর।”
ওয়াসেনাত থামে।কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে পিছনে ফিরে বলে,
-“ লাগবে না লাগবে না।”
-“ আমার মতো ভয়ংকর ভালো তোমাকে আর কেউ বাসতে পারবে না পরীজা।”
-“ তাও লাগবে না।”

অরিত্রান দ্রুত হেঁটে সামনে আসে।ওয়াসেনাত পা চালানো বন্ধ করে।অরিত্রান চোখে চোখ রেখে বলে,
-“ আমার মতো ভালো কাউকে বাসতে পারবে না পরীজা।আর আমার মতো জীবনসঙ্গী মিলবে না আর।তোমার বাবার মতও আর পরিবর্তন হবে না।আমার মতো বুকে আগলে ভালো তোমাকে আর কেউ বাসবে না।সারা জাহানেও কাউকে আমার মতো পাবে না কিন্তু।”
ওয়াসেনাত তাকিয়ে থাকে।অরিত্রান দৌড়ে পিছনে যায়।কি যেনো নিয়ে আসে।ওয়াসেনাতের বাম হাতে বইটা দেয়।পুরানো বই।সেই বই।বাবলি”।অরিত্রান জোড়া লাগিয়েছে।সেই ফোন!!ওয়াসেনাত মুগ্ধ চোখে তাকায়।এগুলো অরিত্রানের কাছে ছিলো??এতো যত্নে!!অরিত্রানের হাতে শুকনো সাদা গোলাপ।প্রথম দিনের সেই গোলাপ।যা অরিত্রান মনের অজান্তে কিনেছে।শুকিয়ে কালো হয়েছে ফুল।কিন্তু অনুভুতি একুই।হাঁটু ভেঙ্গে বসে অরিত্রান।ওয়াসেনাতের দিকে ফুল এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“ভালোবাসা শব্দটার অর্থ আমি আজও খুঁজে পাইনি।আসলে এই কয়েক শব্দের ভালোবাসাকে কখনো পাত্তাই দিনি আমি।বরাবরই একটা শব্দের নজরেই দেখেছি।এর গভীরতা বলতে কিছু আছে তা জানা তো দূর এটা নিয়ে দুই মিনিটের চিন্তা করার সময়ও ছিলো না আমার।এই শব্দদয়কে উপেক্ষা করে চলাই আমার কাজ ছিলো।কি আশ্চর্য আজ ভালোবাসার অগুনে জ্বলছি আমি।নেশা তো অনেক করেছি।রাতে করলে সকালে সেই নেশা শেষ।কিন্তু ভালোবাসা যে একটা ভয়ংকর নেশা এতো নেশার মাঝেও আমি বুঝতে পারিনি।আজ বুঝি।আমি ভয়ংকর প্রেমে আক্রান্ত পরীজা।আমি তোমার চোখে নিজের সর্বনাশ দেখেছি।আমি ভালোবাসায় মরেছি।আমি প্রেমে পড়েছি।আর অনন্ত কাল আমি প্রেমে পড়তে চাই।আমি এতো এতো প্রেমে পড়তে চাই যে প্রেম এক আকাশ সমান হবে।আমি তোমার প্রেমে পড়তে চাই পরীজা।সকাল দুপুর রাত ভোর আবার সকাল।আমি তোমার প্রেমে ডুবতে চাই।এতো প্রেম ঢালতে চাই যে তুমিও হাঁপিয়ে উঠবে।আমি তোমাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে চাই।এক আকাশ সমান ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলতে চাই তোমার জীবন।নিজেকে তোমার নীলাভ চোখে ডুবিয়ে মারতে চাই।”
ওয়াসেনাতের চোখে পানি।সে কাঁদছে।খুশিতে না কি কষ্টে তা ধরতে পারছে না অরিত্রান।কাঁপা গলায় ওয়াসেনাত বলে,
-“প্রেমে একটা আগুন আছে জানেন!সে আগুনে জ্বলতে হয়,পুড়তে হয়।যেমন লোহা পুড়িয়ে খাটি করা হয়।স্বর্ণ জ্বালিয়ে গহনা তৈরি করা হয়।ঠিক প্রেমে জ্বলে টিকে থাকতে পারাই ভালোবাসা।ভালোবাসা কঠিন অনেক।তার চাইতেও বেশি কঠিন জীবন সঙ্গীকে ভালোবাসা।”
অরিত্রান হাসলো।মেঘ গর্জন করে উঠে।আকাশ ভর্তি মেঘ জমেছে।বৃষ্টি নামবে।চারপাশ কালো হয়ে আছে।অরিত্রান বলে,
-“ আমি জ্বলতে চাই!পুড়তে চাই!!তবুও তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।শত রূপে!!জীবনসঙ্গী হিসেবে।আমি তোমার নীল চোখে চোখ ডুবিয়ে বাঁচতে চাই নতুন রূপে।তুমি আমার জীবনের নতুন সূর্য।তোমার তেজেই আমি এখন ভাসি।হবে কি আমার জীবন সঙ্গী??আমার এক আকাশ ভালোবাসায় ভাসবে??উজাড় করে উড়িয়ে দিবে নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দদয় কে?তুমি কি আমার হবে পরীজা??”

ওয়াসেনাত ডান হাতে ফুল নেয়।খুব কাঁপছে হাত।অরিত্রান নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় ওয়াসেনাতের হাতের পিঠের নিচে।ওয়াসেনাত মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।অরিত্রান হাসে।চারপাশের লোক জমেছে অনেক।অরিত্রান সবাইকে উপেক্ষা করে কোলে তুলে নেয় ওয়াসেনাতকে।ওয়াসেনাত চমকায়।চেঁচিয়ে বলে,
-“ কি করছেন??সবাই দেখছে??”
অরিত্রান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
-“ দেখুক।আমার কি।আই ডোন্ট কেয়ার।আমার সব কেয়ার জুড়ে শুধু পরীজা।আমার পরীজা।”
ওয়াসেনাত অরিত্রানের গলা জড়িয়ে পিঠে হাত রাখে।নিজের ডান হাত দেখিয়ে বলে,
-“ আমি কিন্তু ডান হাত চালাতে পারিনা রুডি সাহেব।”
অরিত্রান ঝুঁকে ওয়াসেনাতের হাতে চুমু খায় বলে,
-“ আমার তো দুই হাতই চলে।আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো।সব কাজে নিজের দুই হাত দিবো।তোমার হাতের প্রয়োজন নেই পরীজা।আমি একাই আমার পরীজার জন্য ১০০।”
ওয়াসেনাত হাসে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের কপাল জুড়ে চুমু খায়।রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাঁটছে অরিত্রান।ওয়াসেনাত মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে।কিছুদুর হেঁটে অরিত্রান থামে।বলে,
-“ বাম হাতটা আমার ঠোঁটের উপরে রাখো তো।”
ওয়াসেনাত ভারী আবাক হয়ে বললো,
-“ কেনো??”
-“ আরে রাখো না প্লিজ।”
ওয়াসেনাত হাত রাখে অরিত্রানের ঠোঁটের উপরে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের ঠোঁটের উপরে সে হাত রেখে চুমু আঁকে।ওয়াসেনাতের শরীর শিরশির করে কেঁপে উঠে।অদ্ভুত অনুভুতিতে শরীরের রঞ্জে রঞ্জে রক্তের প্রবাহ বারে।অরিত্রানের হৃৎপিণ্ডের শব্দ কানে আসে তার।বৃষ্টি ঝুঁপ ধরে নামে।শরীর ভিঁজিয়ে দেয়।এতো বৃষ্টি!!হঠাৎ এসে হানা দেয় শহর জুড়ে।সবাই ছুঁটে ছুঁটে পালায়।অরিত্রান রাস্তা দখল করে হাঁটে।তাকে পৃথিবীর সবচাইতে সুখি মানুষ মনে হচ্ছে।দু’জনেই ভিঁজছে।ভালোবাসা আজ বৃষ্টির সাথে মাখছে।অরিত্রান বৃষ্টিতে নিজের ভালোবাসা মিশিয়ে নতুন জীবনের সুচনা করছে।এগিয়ে যাচ্ছে নিজের পরীজাকে নিজের করার দিকে।আজ থেকে নতুন পথচলা।হয় তো বহু বাধাঁ আসবে জীবনে।কিন্তু ভালোবাসা একুই থাকবে।ভালোবাসায় ভাসবে তারা।হাতটা ধরবে শক্ত করে।এটাই ভালোবাসার নতুন পথচলা।ওয়াসেনাত ভিঁজে চুপ চুপ।অরিত্রানের মুখের পানি গড়িয়ে পড়ছে তার মুখে।অরিত্রান থামে।ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ হিটলার শ্বশুর বাবা অনেক জ্বালিয়েছে তাই আমি ভাবছি টুকটুককে দিয়ে উনাকে খুব করে জ্বালাবো।ভালো আইডিয়া না??”
ওয়াসেনাত অনেক ভেবে বলে,
-“ এই টুকটুক কে??”

অরিত্রান ঠোঁট মেলে হাঁসে।ওয়াসেনাতের চোখে বৃষ্টির পানি পরে।তাই সে চোখ মিটমিট করে তাকিয়ে আছে।ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“ এতো হাসছেন কেনো??আর টুকটুক কে বলবেন??”
অরিত্রান শব্দ করে হেসে বলে,
-“ আমার মেয়ে টুকটুক।”
ওয়াসেনাত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।বিয়েই হলো না এখনো মেয়ে!!!অরিত্রান ওয়াসেনাতকে আরো একটু বিভ্রান্ত করে কপালে চুমু খায়।ওয়াসেনাত হা করে তাকিয়ে থাকে।অরিত্রান বেশ খুঁশি মনে হাঁটে।কিছুটা থেমে আবার বলে,
-“ আমি তোমাকেই বেশি ভালোবাসবো।চিন্তা করো না পরীজা।তুই আমার ভালোবাসা আমার টুকটুকের আম্মী।”
অরিত্রান আবার চুমু খায় গালে।ওয়াসেনাত চোখ মুখ কুঁচকে নেয়।আবার হাসে ।অরিত্রান বিড়বিড় করে তার প্ল্যান বলে।সব প্ল্যান জুড়ে হিটলার শ্বশুরকে জ্বালানোর পদ্ধতি ঘুরছে।আর একটু পর পর ওয়াসেনাতের কপালে চুমু পড়ছে।ভালোবাসা এটাই।ভালোবাসার মানুষের প্রিয় মানুষ গুলোকে ভালোবাসাও ভালোবাসার মধ্যের একটা অংশ।অরিত্রান সব ভালোবাসায় এগিয়ে।এটাই তাদের নতুন ভালোবাসার শুরু।বাকি পথ শুধু ভালোবাসার সাথে জীবনের রেখা আঁকা হবে।হাসি থাকবে,কান্না থাকবে,খুনশুটি থাকবে আর থাকবে,”ভালোবাসা”🎈🎈
#সমাপ্তি……
শেষ!!এই গল্পটা হয়তো অনেকের মন ছুঁয়ে যেতে পারে নি।হয়তো বিরক্তিরও কারন হয়েছে অনেকের কাছে।তাই দুঃখিত।আসলে এই গল্প লিখার সময় আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম।গল্প একরকম লিখার ছিলো কিন্তু অন্য রকম হয়ে গেছে।তবুও শেষ করতে পেরে আমি শান্তি পাচ্ছি।হয় তো মনের মতো হয় নি ।অনেকের কাছে সিজন——১টাই ভালো লেগেছে।আমার মতে কিছু গল্পের সিজন হওয়া উঁচিত নয়।আমি আমার আর কোনো গল্প সিজন নিয়ে আসবো না।কারন আমি সিজন লিখতে পারিনা।এক চরিত্রের জন্ম একবারই হয়।তাই কেউ আর সিজন লিখতে বলবেন না।অসুস্থতার কারনে আমি অনেক দেরিতে গল্প দিয়েছি।তাই আগে সুস্থ হবো তারপর নতুন গল্প লিখবো।যাতে প্রতিদিন দিতে পারি এমন ভাবে গল্প লেখা শুরু করবো।সবাই দোয়া করবেন।আর ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।আমার পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
সবার কাছে আবার দুঃখিত।ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।যাদের কাছে সিজন-১বেশি পছন্দ তারা সিজন-১ নিয়েই খুঁশি থাকবেন।সিজন-২এড়িয়ে চলবেন।চরিত্র তো একুই।অনেকে আবার বলবেন,তাদের বিয়ে,সংসার কেনো দিলাম না।তাদের জন্য বলছি,বিয়ে তো প্রথম সিজনেই হয়েছে।মনে মনে না হয় বাকিটা আপনারা কল্পনায় সাজিয়ে তুলুন।কিছু পাঠক স্বাধীনতার ব্যাপারও আছে তো!!পাঠকরাও গল্পের অংশ।🙃
@হাফসা_______🎈