00

চন্দ্রাবতী !! Part- 02

চন্দ্রা কী বলবে এখন?সে লজ্জায় এবং ভয়ে মরে যাচ্ছে।আর মনে মনে বলছে, ভগবান।ও ভগবান। তোমার কাছে জীবনে যদি সামান্য পূণ‍্যও করে থাকি আমি সেই পূণ‍্যের বদৌলতে তুমি আমায় এই মুহূর্তে মৃত্যু দাও।
মৃত্যু কী অত সহজ? কিংবা কেউ কী কখনো নিজের ইচ্ছায় মৃত্যু ডেকে আনতে পারে?
চন্দ্রাও আর জমদূতকে ডেকে আনতে পারলো না।
ভূবন এবার বললেন,’তোকে আমি জীবন্ত চিতায় দিবো রে পাপিষ্ঠা। তোকে আমি জীবন্ত পুড়িয়ে মারবো।’
চন্দ্রা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ভূবন এগিয়ে আসছেন।তার চোখ লাল লাল হয়ে উঠেছে।চন্দ্রা ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তারপর চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।
‘মেরো না মামী মেরো না। আমার কোন দোষ নেই।সব দোষ বারিষদার।সব দোষ বারিষদার।’
চন্দ্রার কথা কানে তুলছেন না ভূবন। তিনি শাড়ির আঁচল কোমরে বেঁধে এগিয়ে আসছেন।আজ পুড়িয়েই মারবেন চন্দ্রাকে।
চন্দ্রা এবার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।আর তখন তার চিৎকারে জেগে উঠলেন ভূবন। তিনি সুইচ টিপে লাইট জ্বালিয়ে দেখলেন চন্দ্রা কাঁদছে।তার সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে একসার হয়ে গেছে।

তিনি তার গায়ে হাত দিয়ে বললেন,’কী হয়েছে চদ্র?কী হয়েছে মা তোর?’
চন্দ্রা চোখ খুলে দেখে তার পাশে বসে আছেন মামী।মামীর চোখ শান্ত, পবিত্র।তার শাড়ির আঁচল কোমরে বাধা নয়।
তবে কী সে স্বপ্ন দেখেছিল এতোক্ষণ?এতো ভয়ংকর স্বপ্ন মানুষ দেখে!
চন্দ্রা মুহূর্তে চোখ মুখ মুছে নিলো।
মামী বললেন,’খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?’
চন্দ্রা বললো,’হুম।’
‘কী দেখেছিস বলতো?’
চন্দ্রা আমতা আমতা করেও বলতে পারলো না তার স্বপ্নের কথা।তার লজ্জা করছে।বারিষদার মতো এতো ভালো একটা মানুষকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখা তার উচিত হয়নি। এবং এই স্বপ্নের কথা কোনদিন সে কারোর কাছে বলতেও পারবে না।
চন্দ্রা মুহূর্তে একটা নতুন স্বপ্ন বানিয়ে ফেললো নিজের মন থেকে।সে বললো,’মামী ,আমি দেখেছি একটা বৃদ্ধ লোক যার চেহারা খুব ভয়ংকর।সে আমার দিকে এগিয়ে আসছে ছুরি নিয়ে।আর বলছে,’তোকে আমি মেরেই ফেলবো আজ।আর কেমন অদ্ভুত করে লাল বড় বড় দাঁত বের করে লোকটা হাসছে।দেখে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা!’
ভূবন শোনে কেমন আনমনা হয়ে গেলেন। তারপর আবার মৃদু হাসার চেষ্টা করে বললেন,’এইসব কিছু না মা। এমনিতেই মানুষ এমন স্বপ্ন দেখে। তুই ঘুমিয়ে যা এখন।মনে মনে ভগবানের নাম জপে ঘুমিয়ে যা।’
চন্দ্রা চেষ্টা করলো ঘুমাতে। কিন্তু তার চোখে কিছুতেই আর এক ফোঁটা ঘুম এলো না।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ভূবন বললেন,’চন্দ্র,জামা কাপড় পড়ে রেডি হয়ে নে।’
চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো,’কেন মামী? কোথাও যেতে হবে নাকি?’
ভূবন বললেন,’মন্দিরে যাবো।’
‘মন্দিরে কেন?’
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো চন্দ্রা। ভূবন বললেন,’অত জেরা করিস না তো বাপু।কাজ আছে।’
চন্দ্রা আর কোন কথা বললো না।সে স্নান করে তার সবচেয়ে ভালো জামাটা পড়ে নিলো। তারপর আয়নায় তাকিয়ে দেখলো কী অপূর্ব সুন্দর এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে!চন্দ্রার বিশ্বাস হতে চায় না সে এতো সুন্দর।তার কেন জানি মনে হয় আয়নাটা তাকে লোভাতুর করার জন্যই এমন সুন্দর করে দেখাচ্ছে তার চেহারা।

মন্দিরে গিয়ে পুজো দিলেন ভূবন। তারপর চন্দ্রাকে বললেন,’মায়ের কাছে প্রার্থনা কর।’
চন্দ্রা দু হাত এক করে দেবী দূর্গার সামনে নতজানু হয়ে বসে মনে মনে বললো,’মা মাগো,আমি যেন এমন স্বপ্ন আর কোনদিন না দেখি।বারিষদার মতো এমন ভালো মানুষকে নিয়ে এমন খারাপ স্বপ্ন দেখতে আমার ভালো লাগে না মোটেও।মা দয়া করো আমায়।মা এমন স্বপ্ন যেন আমার বাকী জীবনে আর না দেখি।’
এই সময় বারিষ মন্দিরের দেয়ালে হেলান দিয়ে এক নজরে তাকিয়ে রইল চন্দ্রার দিকে।চন্দ্রার মাথার উড়নাটা নড়ছে বাতাসে। কয়েকটি চুল উড়না ভেদ করে বেরিয়ে আসছে বাইরে।আর উড়ছে।তার ঠোঁট নড়ছে।কী সুন্দর লাগছে তাকে।কী পবিত্র লাগছে।বারিষ ভাবলো এ যেন কোন পৃথিবীর মেয়ে নয়, স্বর্গের অস্পরী।
বারিষ তাকিয়ে আছে আর তাকিয়েই আছে।পলক ফেলছে না মোটেও।
সে অনুভব করলো তার বুকের বাঁ পাশটা কেমন কাঁপছে। এমন হচ্ছে কেন হঠাৎ তার?
ভূবন অবশ্য লক্ষ্য করেছেন বিষয়টা। তিনি আঁড় চোখে তাকিয়ে দেখেছেন বারিষ হা করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চন্দ্রার দিকে। তিনি হঠাৎ কী যেন ভেবে মৃদু হেসে ফেললেন।

মন্দির থেকে তারা ফিরলো হেঁটে হেঁটে। এমনিতে বারিষের খুব লজ্জা। কিন্তু আজ কীভাবে যেন তার লাজের ঢাকনা খুলে গেল। এবং সে চন্দ্রার পাশাপাশি হেঁটে যেতে লাগলো আর কোন একটা বিষয় খুঁজে বের করতে লাগলো চন্দ্রার সাথে কথা শুরু করার জন্য।
বারিষকে কথা শুরু করতে হলো না।কথা শুরু করলো চন্দ্রাই।সে বললো,’বারিষ দা, মাহমুদ ভাইয়ের সাথে কী তোমার রাগারাগী হয়েছে কোন কিছু নিয়ে?’
বারিষ অবাক এবং অদ্ভুত চোখে তাকালো চন্দ্রার দিকে।ও হঠাৎ মাহমুদের কথা জিজ্ঞেস করলো কেন তার কাছে? মাহমুদের সাথে ওর কী?
#চলবে