আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 26

বিথীর লজ্জা পাওয়া দেখে বিধান বিথীর দিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দিলো। বিধান, দিপ্ত ও নীলাভ্রের চোখের আড়ালে বিথীর দিকে চোখ টিপ দিলো। বিথী তা দেখে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। বিধান তা দেখে মুচকি হেসে আবার বিথীকে লজ্জা দিতে লেগে পড়ে।
বিধানঃ দেখেছো! দেখেছো! দিপ্ত দেখো কেমন রাক্ষসীর মতো তাকায় আছে! তোমাকে সত্য বলায় আমাকে মনে হয় ঘরে নিয়ে আজ হেব্বি পেঁদানি দিবে!
বিথীঃ হারামী তোরে আমি কি মারমু তুইই তো আমারে ধমক মাইরা বহায় রাহস! শালা নেঙটা ইঁদুর! (বিড়বিড় করে)
বিথী বিড়বিড় করে বললেও কথাটা সেখানে উপস্থিত সবাই শুনে। বিধান তো চোখ রাঙিয়ে তাকায় বিথীর দিকে। বিথী বিড়বিড় করতে করতে উপরে তাকিয়ে দেখে বিধান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। বিথী তাই বিধানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো তাহলে যদি বজ্জাতটার রাগ ভাঙে। কিন্তু না।
বিধানঃ এই মেয়ে তুমু কি বলছিলে আমাকে? ( বিথীর কানে ফিসফিস করে দাঁতে দাঁত চেপে)
বিথীঃ না! না! খারাপ কিছু বলিনি তো। বলেছি আমার বরটা কতো ভালো এবং রোমান্টিক। একদম কিউটের বালতি। পুরাই পাণ্ডার মতো! দেখলেই ভালোবাসতে মন চায়!
বিথী ভয়ের চোটে বড়বড় করে মুখে যা আসছে বলে যাচ্ছে। সেটাও ফিসফিস করে নয় বেশ জোরে যার ফলে নীলাভ্র ও দিপ্ত উভয়েই সব শুনতে পারছে। বিধান অনেক কষ্ট নিজের হাসি কন্ট্রোল করলো আর দিপ্ত তো মুখ টিপে হাসছে। শুধু নীলাভ্রই নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় সবটা দেখে যাচ্ছে।
বিধানঃ সত্যি এতো ভালোবাসা আমায়!
বিথীঃ হুমম! প্লিজ আমায় বকবেন না!
দিপ্তঃ এতো ভালোবাসিলে বকবে কি করে। তুই তো ভালোবেসেই সব ভুলিয়ে দিবি।
দিপ্তের কথায় বিথীর হুশ আসে যে সে কাদের সামনে কি বলে ফেলেছে। এবার তো বেচারি চোখই তুলে তাকাতে পারছে না কারো দিকে। বিথীর কান্ডে বিধান ও দিপ্ত হোহো করে হেসে দেয়। এর মধ্যেই হঠাৎ নীলাভ্র নিচে নামতে শুরু করে।
নীলাভ্রঃ দিপু আমি গেলাম তুই আসলে আয় আমার লেট হচ্ছে!
দিপ্তঃ আমিও আসছি নীল ভাই! বাই জিজু!
বলে দিপ্তও চলে গেলো। নীলাভ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিধান বাকা হাসলো। বিথীর চোখে এই হাসি ধরা পড়লেও বর্তমানে এই হাসিত অর্থ উন্মেষণ করতে পারলো না। অবশ্য বিথী চায়ও না।
বিধানঃ কেন রে শালা কষ্ট হয় আমার বউকে আমার সাথে দেখে! ব্লাডি শ্যামলেস তোকে জালানোর জন্যই তো সবকিছু! ( মনে মনে বলে বাকা হাসে)
বিথীঃ কি হলো এমন পাগলের মতো বাকা হাসছেন কেনো? ( ভ্রু কুচকে)
বিধানঃ কিছু না জান চলো ঘরে যাই!
বিথীঃ হুম।
,
,
,
বিধান বিথীকে নিয়ে ঘরে ঢুকে বিথীকে বিছানায় বসিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসলো। বিধান দরজা লাগিয়ে বিছানায় এসে দেখে বিথী মোবাইলে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলছে খুব মনযোগ দিয়ে।
বিধানঃ শালার বউ পাইছি একটা! গল্প পড়া থেকে উঠাইলাম তো গেমের পিছা লাগছে! ( বিড়বিড় করে)
বিধান বিথীর কিছুক্ষণ তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে হেচকা টানে মোবাইলটা নিয়ে নিলো।
বিথীঃ আরে! কি সমস্যা!
বিধান বিথীর কথা শুনে বাকা হেসে বিথীর পাশে বসে পড়লো। বিথীর দিকে অনেকটা ঝুকে বিথীর কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। বিধানের এতোটা কাছে আসায় বিথীর বুকের ভিতরে যে কতটা উথালপাতাল হচ্ছে তা শুধু বিথীই বুঝতে পারছে।
বিধানঃ সমস্যা তো অনেকই হচ্ছে। বলবো? ( প্রেমাতাল ধীর গলায়)
বিথীঃ ন-নাহ। ( ঢুক গিলে)
বিধানঃ গুড! আর এতো ভয় পাচ্ছো কেনো জান? শোনো আমি অনেক টায়ার্ড এখন আমি একটু ঘুমাবো! ওকেহ?
বিথীঃ মাথা ঝুলিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে।
বিধানঃ তাহলে শুয়ে পড়।
বিথীঃ আ-আমি কেন শুবো?
বিধানঃ এজন্য! ( বলে বিধান বিথীকে শুয়িয়ে নিজে বিথীর বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।)
বিথীঃ আ-আপনি এখানে…….
বিধানঃ প্লিজ জান ডোন্ট ডিস্টালিস মি! আই এম রেয়ালি ভেরি টায়ার্ড!
বিথী বিধানের একথা শুনে কিছু বললো না বরং বিধানের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আর মনে ডানা বাধা কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা শুরু করলো।
বিথীঃ কে আপনি? হঠাৎ আসা এক ঝড়োহাওয়া নাকি বসন্তেরকোকিল যার মধূর্যে আমি বারবার হারিয়ে যাচ্ছি! আপনাকে তো আমি কালবৈশাখীর সে ঝড়োহাওয়া ভেবেছিলাম যে জীবনটা তচনচ করে দিবে। তচনচ তো করেছেন আমার এই ক্ষুদ্র মনটাকে কারণ আপনার কাছে আসা যে ঝড় তুলে দেয় মনে। কেনো আপনি কাছে আসলে হার্টবিটস বেড়ে যায়! কেনো আপনাকে চড়ুই পাখির সেই বড় গাছটা লাগে যার ছায়াতলে আমি সর্বদা সুরোক্ষিতো? কেনো বুঝতে পারছি না! কেনো আপনার সাথে অন্যকে মেনে নিতে পারি না! আমি তো এমন ছিলাম না? এসব প্রশ্নের উত্তর কি আদৌ মিলবে? আজ অতিতে পড়া একটা সায়েরি খুব মনে পড়ছে,
কুছ ইসতারহা শায়েদ হাম হোনে লাগে হে,
কি কোয়ি বান্দা পেহলিবার রাবকে সুন্নে লাগে হে!
কুছ ইসতারহা শায়েদ আপ মিলে রেহে হে হামারি জিন্দেগি সে,
যেসি মুরছায়ি সি ফুল আব মিলি হে পানি সে!
কুছ ইসতারহা দিল মে জাগ রেহে হ্যা জাজবাত,
কি ইস দিলকো পেহলিবার মিলা হ্যা উসকা হাকদার।
বিথী শায়েরিটা চোখ বন্ধ করে বেশ সুন্দর ভাবেই আবৃতি করে বলল। তার বলার ধরনে মনে হচ্ছে সে শায়েরির প্রতিটা শব্দ নিজের মন থেকে অনুভব করে বলছে। বিধান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে বিথীর দিকে। বিথীর চোখে মুখে অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতা কাজ করছিলো এই শায়েরিটা বলার সময়। যা বিধানের প্রেমিক মনকে ঘায়েল করতে বাধ্য। আসলে বিধান এতক্ষণ ঘুমোয়নি ও চোখ বন্ধ করেছিলো শুধু। বিথীর হঠাৎ শায়েরি পাঠ করায় ঘুম থেকে জেগে উঠে। বিথী চোখ খুলে বিধানকে এমন মাতাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়।

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *