বধুবরন

বধুবরন-সিজন-2 ! Part- 17

ভেজা চুল এলিয়ে নীলের ঘারে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছে শুভা।যতোবার চোখের জল পড়ছে নীল ততবার মুছিয়ে দিচ্ছে। শুভার একসময় বিরক্ত লাগলো নীলের এহেন কাজে।নাক ফুলিয়ে মাথা উচু করে নীলের দিকে তাকাতেই নীল ভ্রু নাচায়।
“- বদ লোক একটা!একটু শান্তি মতো চোখের জলও ফেলতে দেবেন না?
“-না! অনেক শান্তিতে জল ফেলেছে ।শান্তি এবার শেষ।কজ এসে গেছে ওয়ান এন্ড অনলি শুভার কুত্তাওয়ালা ব্যাডা ওরফে নীল। নীল হাত ঘুরিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে।
তা দেখে শুভা অনিচ্ছা স্বত্বেও হেসে দেয়।নীল দুচোখ ভরে সে হাসি দেখে।শুভাকে অবাক করে দিয়ে আচমকা বুকে আকড়ে ধরে।
“-আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল নয়তো সত্যি মরে যেতাম আমি।কেন একা করে দিয়েছিলে ইদুরনি।আমি যে তোমাকে ছাড়া নিঃস্ব রিক্ত।শুভা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নীল কে ধাক্কা দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
“- হু ডং! কে যেন বলেছিল যাও মরে যাও।যা খুশি করো।জাস্ট লিভ।একমুখে দুই কথা।দুমুখো কাল সাপ একটা।
নীলের সত্যি কষ্ট লাগলো এটা ভেবে যে ঐ দিন রাগের মাথায় বলা কথা শুভা এখনও মনে লাগিয়ে রেখেছে।শুভার লাগা ব্যথা গুলো বিলীন করে আবার নিজের ভালোবাসার ইদুরনী করবে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয় নীল।বিছানা ছেড়ে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ানো শুভার কোমড় জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে।
“- এই কি করছেন কি? ছাড়ুন।লজ্জা শরম তো সব হাঁটে বেঁচে আসছেন।নাহলে কাল মজনু, খালার সামনে এমন করতে বাধলো না আপনার।
“-দীর্ঘদিন পর বউকে পেয়ে ফিলিংস ব্লাস্ট হয়ে গেছিল কি করবো বলো? মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তোমাকে পেয়ে।সব দোষ তোমার।
“- কি! লজ্জা শরম নাই আপনার।আর আমাকে দোষ দেন?
“- তোমারই তো দোষ।তোমার বিরহে পাগল হয়ে গিয়েছি না আমি? পাগলে কি না করে? পাগলের কি আর লোক লজ্জা থাকে।আমার অবস্থাও তো তখন এমনই ছিল।
“- আচ্ছা! যতো দোষ নন্দঘোষ?
“- এই নন্দঘোষ কে?
“- আমার বয়ফ্রেন্ড!
“- হোয়াট!
“- হ্যাঁ! ছাড়ুন। ও এসে আমাকে এভাবে জড়িয়ে রেখেছেন দেখলে মেরে আপনার নাক ফাটিয়ে দেবে।
“- আচ্ছা ( ভ্রু উচিয়ে)
“- হ্যাঁ ( মুখ টিপে হেসে)
“- আমাকে রাগানোর চেষ্টা করো।আমাকে! আজ তোমাকে কাঁচা খেয়ে ফেলবো।শুভার ঘারের চুল সরিয়ে আলতো করে কামড় দেয়।
“- উফ! ধ্যাৎ। শুভা নীলের বুক থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছিল ঠিক তখনই শৌর্য আর নুরভি ঘরে ঢুকলো।দুজনই মাম্মী আর বাবাই কে জড়িয়ে ধরলো।নীল শুভার এক হাতে টেনে অন্য হাতে সন্তানদের খাটে বসায়।শুভাকে সামনে বসিয়ে তোয়ালে এনে শুভার চুল ভালো করে মুছতে থাকে।শুভা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করতেই নীল শুভাকে দুপায়ে বেষ্টনি করে বাধে।মা বাবার খুনশুটি দেখে শৌর্য আর নুরভি মুচকি হাসে।নুরভি লাফ দিয়ে বাবাইয়ে গলায় ঝুলে পড়ে।শৌর্য মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকে।
নুরভি বাবাইয়ের গলা ঝুলে বাবাইকে অনেকগুলো কিসি দেয়।নীল শুভার কানে ফিসফিসিয়ে বলে।
“- দেখেছ মেয়েটা আমার মতোই হবে।তুমি একটা পানসে।আদর ভালোবাসা কিছুই দিতে জানো না।শুধু ছাড়ুন! সরুন এসবই বলো।শুভা রাগ হয় কাছ থেকে ছুটতে পারছে না দেখে।তারউপর গা শিরশির করছে নীলের ফিসফিসানিতে।
“- এই নুরভি নাম উনার গলা থেকে।এই টা তোর কি হয় যে গলায় ঝুলছিস?
নুরভি মায়ের বকা শুনে বাবাইয়ের দিকে মুখ গোমড়া করে তাকাতেই নীল নুরভির নাকে চুমু দিয়ে মেয়েকে শিখিয়ে দেয় জবাব।নুরভি হি হি করে হেসে মাকে বলে,
“- আমার বাবাই।তুমি চুপ থাকো মাম্মী।
“- আমাকে চুপ থাকতে বলিস? মেরে তোর দাঁত ফেলে দেবো।
“- বাবাই!
“- না! আমার মা কাঁদে না।শুভা! কি হচ্ছে কি? ধমকাচ্ছ কেন?
“-একশ এক বার ধমকাবো।
“- আর একবার ধমকে দেখো কি করি? বা চোখ দিয়ে টিপ দিয়ে বলে নীল।শুভা রাগে গজ গজ করতে করতে উঠে যাবে তখনই চুলে টান লাগে।
“-চুপচাপ বসে থাকো।নয়তো খবর আছে কিন্তু।
শুভাকে নীল চোখ গরম দেয় সেটা শৌর্য দেখে রেগে বাবাইকে বলে।
“- তুমি আমার মাম্মী কে বকছো কেন বাবাই?
“- কোথায় বাবাই! এটা তো তোমার মাম্মী কে ভালোবাসা দিলাম।জিজ্ঞেস করো।
“- মাম্মী!
“- হ্যাঁ আব্বু! আমরা মজা করছি।তুমি আসো শোও।
“-বাবাই! তুমি মাম্মীর চুল মুছে দিচ্ছ কেন?
“- এটা আমার পছন্দের যে তাই শৌর্য।
“- আচ্ছা মাম্মী তোমার কি পছন্দের?
“- তোমার বাবাইয়ের ধমক!
“- এঅ্যাআআ! নুরভি শৌর্য হা করে তাকায়।তারচেয়ে বড় হা নীল করে।শুভা সেই সুযোগে নীলের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করে মুখ ভেংচে ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসে।শুভার কান্ড দেখে শৌর্য, নুরভি,, নীল চোখাচোখি করে হো! হো! হো করে হাসে। নীল ছেলে মেয়ে দুটোকে দুহাতে জড়িয়ে বাইরে এসে দেখে শুভা রান্নার জন্য সাগরের তাজা মাছ কোটা বাছার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীল শুভাকে জোর করে উঠিয়ে আনে।লোক দিয়ে মাছ কুটিয়ে ধুইয়ে তারপর শুভার সামনে আনে।
“- এবার মাখাও।আমি ভাজবো।আজকে তুমি আমাকে শিখাবা।
“-আরে আপনি পারবেন না।গরম তেল গায়ে ছিটবে আপনার।আপনি বরং ওখানে বসুন আমি সব রান্না করে নিয়ে আসছি।কি খাবেন বলুন?
“- না! বলেছি আমি ভাজবো আমিই ভাজবো।আজ নিজের হাতে আমার কলিজার টুকরা দুটোকে খাওয়াবো।সরো সরো।শুভা বাধ্য হয়ে কোরাল,ফাইস্যা,রুপচাদা সহ আরও বিভিন্ন মাছ হলুদ মসলা দিয়ে মাখিয়ে নীলকে দিল।নীল লাফিয়ে লুফিয়ে মাছগুলো ফ্রাই করলো।বাবাইকে রান্না করতে দেখে শৌর্য নুরভি মায়ে কোমড় জড়িয়ে দাড়িয়ে রইল।
অবশেষে নীলের রান্না নামক যুদ্ধ শেষ হলো।শুভা রান্নাঘর ঠিক করে বাকি রান্না শেষ করে মজনু লাভলিকে রান্নাঘরের দায়িত্ব দিয়ে প্লেটে খাবার বেড়ে ঘরের সামনের বাশের মাচানটায় নিয়ে গেল।একটু পর নীল শৌর্য আর নুরভি কে কোলে করে সেখানে গিয়ে বসলো।ধোঁয়া ওঠা ভাজা সাগরের মাছ সাথে গরম গরম ভাত।নীল নিজ হাতে শুভার করা মাছের ঝোলে ভাত মাখিয়ে ভাজা মাছ দিয়ে ছেলে মেয়ে দুটোর মুখে তুলে দেয়।নীলের কাছে স্বর্গীয় এই অনুভূতি।শুভা পাশে দাড়িয়ে দেখছিল নীলের মুখের উচ্ছ্বাস। সেন্টমার্টিনের এই নজরকাড়া ঢেউয়ের মতোই মনোহর সে নীলের হাসি।হঠাৎ শুভার চোখ নীলের হাতে গেল।লাল হয়ে আছে অনেকটা জায়গা।শুভাকে চিন্তিত দেখে নীল চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে।শৌর্য নুরভির খাওয়া হলে বাবাইকে অনেক গুলো আদর দিয়ে ওরা বালুচরে খেলতে শুরু করে।শুভা সেদিকে তাকিয়ে নীলের কাছে এসে বসে।নীলের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে কেঁদে ওঠে।
“- কাঁদছ কেন?
“- কতোখানি পুড়ে গেছে।আপনি এমন করেন কেন সবসময়?
“-কিছুই হয় নি।আমার সন্তানদের এই যে খাওয়াতে পেরে সুখ পেলাম তার কাছে এ ব্যথা ব্যথা নয়।ওদের জন্ম আমি দেখি নি শুভা।ওদের হামাগুড়ি দিয়ে আবার দাড়ানো কিছুই দেখিনি।প্রথম বলা আধোবুলিও শুনি নি।আমার সন্তান আছে গতকালকের রাতের আগেও সেটা জানতাম না।এটা কতো কষ্টের তুমি বোঝো? নীলের চোখের জল দেখে শুভার নীলকে বুকে টেনে নেয়।
“- আমাকে ক্ষমা করে দিন।এ ছাড়া যে আমি আর কোনো পথ পায়নি।
“- তুমি ক্ষমা চাচ্ছ কেন? যতোই রেগে তোমাকে দোষারোপ করি আসলে তো তুমি দোষি নও।মেইন কালপিট তো অন্য কেউ।যাকে শাস্তি দেওয়ার সমস্ত আয়োজন আমার শেষ।আমার ৪ বছরের কষ্ট, আমার শুভার কষ্ট, আমার সন্তানদের পিতার ছায়া থেকে বঞ্চিত করার শাস্তি ওকে সারাজীবন ভরে দিতে হবে।
“- কার কথা বলছেন আপনি? কে করিয়েছে আমার কিডন্যাপ।
“- মিরা আর মালা ফুপি।
“- কি বলছেন? আমি তো ভেবেছিলাম
“- মায়া ফুপি তাইতো?
“- হুমম
“- না! সে তার পাপের শাস্তি তোমাকে হারিয়েই পাচ্ছে।আচ্ছা বাদ দাও।চলো
“- কোথায়! হোটেলে বহু কাজ বাকি।
“- খালা দেখবে হোটেল।আজ তোমার ছুটি।শৌর্য! নুরভি! এদিকে এসো বাবাই।
“- হ্যাঁ বাবাই!
“- চলো আজ আমরা বেড়াতে যাবো।
“- ওয়াও! মজা হবে।চলো বাবাই চলো।মাম্মী তো কোথাও নিয়ে যায় না।শুধু ঘরে বন্দি করে রাখে।
“- থাকবো না ক বদ্ধ ঘরে।দেখবো এবার জগৎ টাকে।চলো,,,শৌর্য নুরভি আর শুভাকে বাহুডোরে জড়িয়ে নীল ভেতরে চলে আসে।নিজ হাতে ছেলে মেয়ে গুলোকে সাজায়।শৌর্য নুরভি সেজেগুজে বাইরে নানিকে দেখাতে দৌড় দেয়।আজ প্রথম ওরা কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে ভেবে খুশিতে আত্নহারা।
নীল শুভার আলমারি ঘেটে একটাও ভালো শাড়ি পায় না।অবশেষে শর্মি কে মোবাইল করে সাদা জরিদার একটা শাড়ি ম্যাচিং ব্লাউজ মজনুকে দিয়ে আনায়।নিজ হাতে সাজিয়ে হিজাব পড়িয়ে শুভাকে নিয়ে মজনুর সাইকেলে ওঠে।নীল কালো শেরওয়ানি পড়ে সাইকেলের সামনে কাপড় বেধে মেয়েকে আর পেছনে শুভাকে আর শৌর্য কে বসিয়ে সেন্টমার্টিনের বালুচরের উপর দিয়ে চলতে থাকে।নুরভি আর শৌর্যের দারুন আনন্দ হচ্ছে বাবাইয়ের সাইকেলে চড়ে।বড় বিয়ের গেটের সামনে এসে দাড়ায় নীলের সাইকেল।মেহেরাজ ভাইকে দেখে দৌড়ে এসে দেখে পাশে দাড়ানো শুভা।আনন্দে আত্নহারা হয়ে ভেতরে ছুটে যায়।শুভা ভ্রুউচিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে বলে,
“- কার বিয়ে?
“- ভাবো!
শুভা এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে পাশে বড় করে লেখা শর্মি ওয়েডস অয়ন।শুভা খুশি হয়ে যায়।
“- শুভা! শর্মি বিয়ের লেহেঙ্গা উচু করে ছুটে এসে শুভাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।শুভাও বেষ্ট ফ্রেন্ড কে জড়িয়ে কাঁদে। একে একে রোদি,চাচি,নীলের মা সবাই শুভাকে ধরে কাদে।নীলের মা নীলের দিকে তাকাতেই দেখে দুটো বাচ্চা নীলের কোলে হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে কথা বলছে।নীলের মা রোদির ঘারে হাত রেখে ইশারায় সে দৃশ্য দেখিয়ে খুশির অশ্রু ফেলে।এগিয়ে যায় নীলের কাছে।নীল মা বোনের সামনে সন্তান দুটোকে দাড় করায়।রোদি আর নীলের মা শৌর্য, নুরভি কে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে।নুরভি শৌর্য বাবাইকে এক হাতে ধরে রাখে।ওরা মুখটা শুকনো করে ফেলে এদের কান্না দেখে।রোদি শৌর্য আর নুরভিকে আদর করে বলে
“- জানো আমি কে? উনি কে?
“- না!
“-আমি তোমার ফুপি মা।আর উনি তোমার দাদু।
নুরভি শৌর্য বাবাইয়ের পেছনে লুকিয়ে বাবাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।নীল ইশারায় হ্যাঁ বলতেই নুরভি শৌর্য ফুপি আর দাদিকে জড়িয়ে ধরে। বাড়ির সবাই এসে শুভা আর ওর সন্তানদের ভেতরে নিয়ে যায়।মিরা, মালা দূরে দাড়িয়ে পরিবারের পুনর্মিলনী দেখে মুখ কালো করে বসে থাকে।মিরার মনে এতোদিন ধরে যে আশা ছিল নীলকে পাওয়ার।আজ শুভাকে দেখে সব আশা শেষ। শুভা আড় চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে মুখটা কালো করে সামনে চলে যায়।
শর্মি আর অয়ন শৌর্য নুরভিকে কোলে করে স্টেজে বসে আছে।সবাই বর বউয়ের ছবি তুলছে।পাশে নীল শুভাকে একহাতে বুকে জড়িয়ে দাড়িয়ে ছেলে মেয়ের দুষ্টুমি উপভোগ করছে।নুরভি কখন থেকে শর্মিকে বিস্ময় চোখে দেখে যাচ্ছে। নুরভির চোখে শর্মি বউ সাজে জলজ্যান্ত একটা পুতুল।নুরভিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শর্মি নুরভির তুলতুলে গালে চুমু দিয়ে হেসে বলে,
“- কি দেখো মাম্মাম!
“- তোমাকে।তুমি এতোসুন্দর কেন? একদম আমার পুতুলের মতো।
“- তাই! অয়ন শর্মি নীল শুভার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।শর্মি আরও শক্ত করে নুরভিকে জড়িয়ে বললো”- তুমি যে আমার থেকেও সুন্দর একটা পুতুল।আমি সেজে পুতুল হয়েছি।তুমি এমনিতেই পুতুল।
“- সেজে পুতুল হয়েছ? কেন?
“- আমার বিয়ে যে তাই!
“- তোমার বিয়ে! ওহ! আচ্ছা আন্টি বিয়ে হলেই সবাই পুতুল সাজে?
“- হ্যাঁ তো!
“- মাম্মী! বাবাই!
“- হ্যাঁ মা!নীল শুভা নুরভির দিকে হেসে জবাব দেয়।
“- আমিও বিয়ে করবো।বউ সাজবো। আমি বিয়ে করবো।পুতুল হবো। বিয়ে করবো।পুতুল হবো।শর্মির কোল থেকে নেমে হাত ছড়িয়ে লাফাতে থাকে নুরভি।বাড়ির সবাই তা দেখে হেসে কুটিকুটি হয়।শর্মি নুরভিকে আবার কোলে নিয়ে বলে,
“- বিয়ে করবা মাম্মাম!
“- হ্যাঁ করবো তো!
“- কিন্তু তোমার বর কই! বিয়ে করলে তো বর লাগে।
“- তাই! তোমার বর আছে?
“- হ্যাঁ আছে তো।এই যে দেখো।অয়নকে দেখাতেই অয়ন হেসে নুরভির গালে চুমু দেয়।
“- বাবাই আমার বর কই? বাবাই আমার বর আনো।আমি পুতুল বউ সাজবো।
নীল শুভার দিকে হেসে তাকাতেই শুভা লজ্জায় নত মস্তকে হাসে।বাবা মাকে হাসতে দেখে নুরভি মলিন মুখে শর্মিকে বলে।
“- তুমি একটা বর খুজে দাও না গো!
“- উমম! দেবো?
“- হ্যাঁ!
“-আচ্ছা তুমি বড় হও তারপর আমার ছেলের সাথে তোমাকে বিয়ে দিয়ে পুতুল বউ সাজাবো।ঠিক আছে গুলুমুলু বউ মা’টা আমার।
“- তোমার ছেলে আমার বর হবে? কিন্তু কই তোমার ছেলে? ওকে ডাকো।আমি বর দেখবো।
“- ও তো এখনও দুনিয়াতে আসে নি।আসলেই তোমার বর হবে।
“- ধ্যাৎ এমন হয় নাকি? ও তো তাহলে পিচ্চি বাবু।
“- হ্যাঁ আমার পাকা পাকা পুতুল বউ মা’টার জন্য পিচ্চি বর’ই মানাবে
“-আচ্ছা!তাহলে তাড়াতাড়ি আমার পিচ্চি বরটা নিয়ে আসো।
“- ঠিক আছে!শর্মি শুভা আর নীলের দিকে তাকিয়ে নুরভিকে বুকে জড়িয়ে নেয়।নীল শুভা শর্মির কথা শুনে একে অপরের দিকে তাকায়।তখন পাশ থেকে রোদি বলে।
“-শর্মি ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অয়ন শর্মি গত বছরই কাওকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে।আমি এবং আশিক সবটা জানি।ভাইকে বলি নাই।তবে এখন বাড়ির সবাই জানে।এজন্যই ধুমধাম করে বধূবরণ হচ্ছে।বাড়ি ফিরেই শুভার বধূবরণ হবে।সেটাও ধুমধাম করে করা হবে।
“- দ্যাটস এ গুড আইডিয়া।তাহলে আরেকবার বাসর রাতও হবে।ওয়াও! শুভার কানে ফিসফিসিয়ে বলে নীল।
“- ধ্যাৎ! কি যে বলো আপু।দুই বাচ্চার মা হয়েও আবার বধূবরণ। লোকে কি বলবে?
“- লোকের যা বলার বলবে।আমরা আমাদের বধূকে বরন করবো না! লোকের কথা শুনতে গিয়েই এতোকিছু হয়ে গেল।এখন আর শুনবো না।আমাদের বধূ আমরা বরণ করবো।একদম জাঁকজমক করে ব্যান্ড বাজিয়ে।
শুভা নীলের দিকে তাকাতেই নীল বা চোখ টিপে মহা খুশি প্রকাশ করে রোদিকে ধন্যবাদ দিয়ে।

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *