স্বীকৃতি !! Part- 15
ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে বসে আছে খুশবু। টেবিলের উপরে রাখা কলমটার দিকে তার দৃষ্টি। কলমটি হাতে নিয়ে একটা সাক্ষর করলেই সব শেষ। একটা কাগজ সম্পর্কের ভাঙন সৃষ্টি করতে পারে। কি অদ্ভুত না!
পেপারে আরহামের সাইনটা দেখতে পাচ্ছে খুশবু। শুধু তার টা বাকি। দিতে যখন হবেই দেরী করে লাভ কি! আরহামকে মুক্ত করে নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে দেয়া উচিত তার।
কলম হাতে তুলে পেপারে নিজের সাইন বসাতে যাচ্ছিলো খুশবু। তখনি তার মা এসে বললো-
খুশবু তোর বাবা ডাকছে তোকে।
.
মাকে দেখে তাড়াহুড়ো করে ড্রয়ার টেনে পেপার টা রেখে দিলো খুশবু।
খালেদা শারমিন বললো-
কি লুকোলি?
-তেমন কিছুনা।
-জামাই এর জন্য চিঠি লিখছিস বুঝি?
-হু।
.
বিড়বিড়িয়ে খুশবু বললো-
শেষ চিঠি!
অফিসে বসে আছে আরহাম। খুশবুর তরফ থেকে এখনো কোনো জবাব এলোনা। না এলো ডিভোর্স পেপার টা। তার মানে সে কি ডিভোর্স টা নিয়ে দ্বিধায় আছে? এতে আরহামের খুশি হবার কথা হলেও সে খুশি হতে পারছেনা। কেননা খুশবু মা বাবার জন্য বিয়েটা করেছে, তাদের কথা রাখতেই সংসার টা করছে। এখন তাদের কথা রাখার জন্যই হয়তো ডিভোর্স টাও দিতে পারছেনা। বিষয় টা যদি উলটো হতো সে কি করতো? হু, অবশ্যই মেনে নিতো খুশবুকে। চেষ্টাও করেছে সে, খুশবুর মন থেকে ফারাজের নামটা মুছে দিতে। কিন্তু ফলাফল কি? শূন্য। খুশবু ফারাজকেই ভালোবাসে, তার কাছেই যেতে চায়। তাহলে আরহাম কে তার? শুধু মাত্রই তৃতীয় ব্যক্তি! যে কিনা দুটো ভালোবাসার মানুষের মাঝে দেয়াল।
এসব ভাবতে ভাবতে টেবিলের উপরে রাখা পানিভর্তি গ্লাসটি, মেঝেতে ছুড়ে মারলো আরহাম।
ইচ্ছে করছে পুরো পৃথিবীটাই এভাবে তছনছ করে দিতে।
কেনো সে শুরু থেকেই খুশবুকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়নি! তাহলে হয়তো আজ এতোটা কষ্ট পেতে হতোনা।
খুশবুর বাবা তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।
খুশবু ও খুশি ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করতে থাকলো।
আচমকা খালেদা শারমিন এসে বললেন-
এসব কি দেখছি আমি!
.
মায়ের কথা শুনে খুশবু বললো-
কি মা?
.
খুশবুর মুখের উপরে ডিভোর্স পেপার টা ছুড়ে মারলেন খালেদা শারমিন।
খুশবু সেটা হাতে নিয়ে দেখেই চমকে উঠলো। তার মা এটা পেলো কোথায়!
.
খালেদা শারমিনের শরীর রাগে কাঁপছে। আরহাম ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে আর তার মেয়ে কিনা কিছু জানালোই না তাকে!
খুশবুর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে খালেদা শারমিন বললেন-
আরহাম কেনো দিয়েছে ডিভোর্স তোকে? নিশ্চয় তুই চেয়েছিস?
.
অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে খুশবু বললো-
আমি চাইনি।
-তাহলে নিশ্চয় ফারাজের বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছে?
.
খুশবুকে নিশ্চুপ দেখে খালেদা শারমিনের মাথাটা যেনো বিগড়ে গেলো। নীরবতা সম্মতির লক্ষণ এটা তার অজানা নয়। নিজের রাগ সংযত করতে না পেরে, খুশবুর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন তিনি।
খুশি চেঁচিয়ে বলে উঠলো-
মা এটা কি করলে!
.
খালেদা শারমিন মেঝেতে বসে পড়লেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন-
এটা কি হয়ে গেলো! অতীত কেনো আড়ালে রাখতে পারলি না তুই! এখন কি হবে? এই সমাজে ডিভোর্সী মেয়ের স্থান কোথায় তুই জানিস?
.
খুশি মায়ের পাশে বসে বললো-
শান্ত হও মা তুমি। কিচ্ছু হবেনা। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
.
-কিভাবে ঠিক হবে?
পেছনে ফিরে নীলয় কে দেখে সকলে চমকে গেলো।
নীলয় এখানে হঠাৎ!
নীলয় এসে খুশির উদ্দেশ্যে বললো-
আন্টিকে ভেতরে নিয়ে যাও, পানি খাওয়াও।
.
খালেদা শারমিনকে নিয়ে খুশি ভেতরে গেলো।
খুশবুর দিকে তাকিয়ে নীলয় বললো-
ভালো আছো খুশবু?
-হু। আপনি?
-তোমাকে দেখে তো ভালো নেই আর। কি হাল করেছো নিজের! আর এসব কিইবা শুনছি আমি! সবে মাত্র বিয়ে হলো আর এখুনি ডিভোর্স? তার চেয়ে আমাকে বিয়ে করে নিলেই পারতে। কোনো অযত্ন আমি হতে দিতাম না। কেননা তোমার অতীত নিয়ে সব তো আমি জানিই।
.
নীলয়…
ফারাজের খুব কাছের বন্ধু।
খুশবুকে শপিং মলে দেখেই তার পছন্দ হয়েছিলো। তবে সে জানতোনা খুশবু ফারাজের প্রেমিকা।
ফারাজ যখন তার প্রেমিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নীলয়কে, খুশবুকে দেখেই সে চমকে গিয়েছিলো। তার প্রথম ভালোলাগার মানুষটাই কিনা তার বন্ধুর প্রেমিকা! তখনো ফারাজ ও খুশবুর সম্পর্ক টা মাত্রই শুরু হয়েছিলো। নতুন সম্পর্কে ফাটল ধরানো সহজ হয়। তাই নীলয় সুযোগটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলো। ফারাজ থেকে খুশবুর ফোন নাম্বার নিয়েছিলো সে। ফারাজ তার মতলবের ব্যাপারে টেরই পায়নি। এদিকে ধীরেধীরে খুশবুকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করতে থাকলো নীলয়। খুশবু এসব বুঝতে পেরে দূরে থাকার চেষ্টা করতো। একসময় খুশবুর এই দূরে থাকা মেনে নিতে না পেরে তাকে মনের কথা জানিয়ে দেয় নীলয়। সেই থেকেই দুই বন্ধুর মাঝে ফাটলের সৃষ্টি হয়।
.
খুশবু ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো-
আপনি যেটা করেছিলেন সেটা আমি এখনো ভুলিনি। আমাদের আলাদা করতে চেয়েছিলেন আপনি। কি করে আপনাকে বিয়ে করতে পারি আমি!
-ফারাজ তো….
-নেই সে। কিন্তু থাকাকালীনও তার কোনো গুরুত্ব ছিলো কি আপনার কাছে? ছিলোনা। তাই এসব বিষয়ে আর কথা না বলাই ভালো।
-এখন যে তোমার ডিভোর্স হতে চলেছে। একটা সুযোগ কি আমি পেতে পারিনা?
.
কিছু না ভেবেই খুশবু জবাব দিলো-
অবশ্যই না।
.
.
খালেদা শারমিন কান্নায় ভেঙে পড়লেন। খুশির উদ্দেশ্যে তিনি বললেন-
আমি আরহামের পরিবারের সাথে কথা বলবো৷ ক্ষমা চেয়ে নিবো সব লুকোনোর জন্য।
-আমার মনে হয়না তারা এই ব্যাপারে কিছু জানে। তাই তাদের সাথে কথা না বলাটাই ভালো হবে।
-তাহলে কি চুপচাপ বসে থাকবো?
-মোটেও না। আমি কথা বলবো ভাইয়ার সাথে।
-তোর কথা শুনবে?
-না শুনলে তখন নাহয় তোমরা যা খুশি করিও। আমাকে একটা চেষ্টা করতে দাও। বাবাকেও কিছু জানিও না মা।
.
.
.
খুশিকে এভাবে অফিসে আসতে দেখে অনেকটা অবাক হলো আরহাম।
আশেপাশে তাকিয়ে খুশির উদ্দেশ্যে বললো-
তুমি হঠাৎ?
-কিছু কথা ছিলো ভাইয়া।
-বাইরে গিয়ে বসি কোথাও?
-হু।
.
রেস্টুরেন্টে বসে আছে খুশি ও আরহাম।
খুশিই প্রথমে বললো-
আপুকে কেনো ডিভোর্স টা দিয়েছেন জানতে পারি?
-অন্য কেউ জিজ্ঞাসা করলে হয়তো কারণ টা আমি বলতাম না। কিন্তু তোমাকে বলতেই পারি। মূল কারণ ফারাজ।
-সেটা আমি বুঝেছি। কিন্তু অতীত নিয়ে বর্তমান বা ভবিষ্যৎ নষ্ট করা কি ঠিক?
-দেখো খুশি তোমরা আমাকে কিছু জানাও নি এতে আমি কিছু মনে করিনি, খুশবু আমাকে কিছু বলেনি এতেও আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু বিয়ের পরেও খুশবু ফারাজের জন্য বিষন্ন হয়ে থাকবে এটা কি করে মেনে নিবো আমি?
-ফারাজ ভাইয়াকে ভুলতে একটু তো সময় লাগবে তাইনা?
-সেটা আমি বুঝেছি। সময় নিক সমস্যা নেই, কিন্তু সে যে ফারাজের সাথে কথা বলছে। এতে কি আমাকে ঠকানো হচ্ছেনা?
চোখ জোড়া বড়বড় করে খুশি বললো-
কথা বলছে মানে! কি সব বলছেন আপনি?
-হুম খুশি এটাই সত্যি। দুটো ভালোবাসার মানুষের মাঝে আমি দেয়াল হয়ে যাচ্ছিলাম।
-আপনার ভুল হচ্ছে কোথাও।
-আমি নিজের চোখে দেখেছি খুশি, নিজের কানে শুনেছি সবটা। তাছাড়া ফারাজ আমাকে মেসেজও করতো, খুশবু কে যেনো আমি ছেড়ে দিই।
.
খুশি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললো-
ডিভোর্স দিবেন দেন, তাই বলে হাবিজাবি মিথ্যে অজুহাত দিচ্ছেন কেনো?
-মিথ্যে অজুহাত! নিজের বোনের পক্ষ নিতে কি এখন বলবে, ফারাজ নামের কেউ নেই?
-ফারাজ নামের কেউ ছিলো কিন্তু এখন নেই। তাই আপনি যা বলছেন তা সম্ভব নয়।
-নেই মানে?
-ফারাজ ভাইয়ার বাইক এক্সিডেন্টেই ঘটনা স্থলে মৃত্যু হয়েছিলো। মানে ফারাজ ভাইয়া মৃত।
.
খুশির কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো আরহাম।
এ কি বলছে খুশি! ফারাজ মৃত হলে এসব কি ঘটেছে এতোদিন!
.
চলবে