শারীরিক সম্পর্ক- তুমি আমার ভালোবাসা !! Part- 10
রেষ্টুরেন্টে বসে আছে ফাহাদ আর মৃন্ময়। খাবার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। মৃন্ময়ের মন খারাপ। কালই ওকে বাসায় ব্যাক করতে হবে। বিজনেসের একটা কাজে বাহিরে যেতে হবে। বাবার আদেশ বলে কথা। খাবার সামনে থাকা সত্ত্বেও মৃন্ময় চুপ করে বসে আছে। ফাহাদ মৃন্ময়কে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কিরে খাচ্ছিস না কেন?”
“ভালো লাগছেনা।”
“আরে খেয়ে তো দেখ। এই রেষ্টুরেন্টের খাবারগুলো জাস্ট ইয়াম্মি!”
“মন ভালো না থাকলে কি খেতে ইচ্ছে করে?”
“আরে মন খারাপ করছিস কেন? তুই তো আর একেবারে চলে যাচ্ছিস না। কাজটা শেষ করেই তো চলে আসবি।”
“হু।”
“নে এখন খা।”
এরপর মৃন্ময় আর ফাহাদ একসাথে খাওয়া শুরু করলো।
বাড়িতে কোনো বাজার নেই। ফ্রিজও সম্পূর্ণ ফাঁকা। সব খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে দেখে প্রিয়া মাকে বললো,
“ও মা ঘরে তো কোনো বাজারই নেই!”
“হ্যাঁ রে। বাজার করতে হবে। আজ ডিম রান্না করেছি। রাতে এগুলো দিয়েই আমাদের চলে যাবে। কাল আমি বাজার করে আনবো।”
“কাল কখন বাজার করবে আর কখন রান্না করবে? আমি বরং যাই পাশের বাজার থেকেই কিছু কিনে আনি।”
“না, না। তোকে বাজারে যেতে হবে না।”
“কেন?”
“কেন আবার কি? আমি বারণ করেছি তাই।”
“বারণ করলেই হবে? খেতে হবে না? তুমি টিভি দেখো। আমি শুধু যাবো আর আসবো।”
“তাহলে আমাকেও তোর সাথে নিয়ে চল।”
“তুমি আবার কষ্ট করে যাবে কেন? তুমি বাসায় থাকো। যখন মাসকাবারির বাজার করবো তখন দুজন একসাথে যাবো কেমন!”
প্রিয়া একটা ব্যাগ নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। নতুন জায়গা খুব একটা চিনেনা প্রিয়া। ফুটপাত ধরে হাঁটছিল টুকটাক বাজার করে বাসায় ফিরছিল। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা সাতটা বাজে। এখনো কত কপোত-কপোতি হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে। কেউবা রিক্সায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাশেই খেয়াল করলো, একটা ছেলে একটা মেয়েকে হাত ধরে রাস্তা পাড় করে দিচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে প্রিয়ার ভেতর থেকে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। প্রিয়া আর সেদিকে খেয়াল না করে হাঁটা শুরু করে।
.
ফাহাদ আর মৃন্ময় খাওয়া শেষ করে রেষ্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে আসে। ফাহাদ বললো,
“চল ব্যস্ত শহরে একটু হাঁটি।”
মৃন্ময় হাসিমুখে বললো,
“চল।”
দুই ভাই মিলে হাঁটছিল আর গল্প করছিল। ফাহাদ বললো,
“এভাবে হাঁটতে ভালো লাগছেনা। তুই দাঁড়া আমি দোকান থেকে কিছু কিনে আনি।”
“যা।”
ফাহাদ দোকানে গেলো। মৃন্ময় প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে গুণগুণ করে গান গাইছিল। আচমকা মৃন্ময়ের হার্টবিট বেড়ে গেলো। পা দুইটা অসাড় হয়ে আছে। সামনে এগোতে পারছেনা। মুখ দিয়ে অনেক কষ্টে বের করলো,
“ফাহাদ! প্রেয়সী প্রেয়সী!”
মৃন্ময় দৌঁড়াতে শুরু করলো। পেছন পেছন ফাহাদও দৌঁড়ালো। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মৃন্ময় থেমে গেলো। সাথে ফাহাদও। দুইজনই সমানে হাঁপাচ্ছে। ফাহাদ হাঁপাতে হাঁপাতেই বললো,
“প্রেয়সী প্রেয়সী বলে চেঁচাচ্ছিলি কেন?”
“আমি প্রেয়সীকে দেখেছি ফাহাদ।”
“কি বলিস! কোথায় দেখলি?”
“যেখানে তুই দোকানে গেলি। তখন দেখলাম আমি ওকে।”
“তুই শিওর তুই ওকে দেখেছিস?”
“আমি স্পষ্ট দেখেছি। ওকে চিনতে আমার একটুও ভুল হবেনা।”
“তাহলে কোথায় চলে গেলো?”
“জানিনা। এত মানুষের ভীড়ে হারিয়ে ফেলেছি।”
“ও কি তোকে দেখেছে?”
“আমি শিওর না। তবে মনে হচ্ছে দেখেছে।”
“যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন রে মৃন্ময়।”
“এত সামনে থেকে দেখেছি, তবুও বলছিস খুঁজে পাওয়া কঠিন?”
“দেখা আর মানুষটাকে পাওয়া এক কথা নয়। এমন তো হতে পারে সে তোর কাছে ধরাই দিতে চায়না কখনো।”
“জানিনা আমি এতকিছু। আমি শুধু জানি, একবার যখন ওকে এখানে দেখেছি তখন ওকে তো আমি খুঁজে বের করবোই।”
“তারপর?”
“তারপর আর কি? ক্ষমা চাইবো।”
“যদি ফিরে না আসে?”
“তুই আমার ভাই নাকি শত্রু হ্যাঁ? পজেটিভ ভাবতে পারিস না?”
ফাহাদ এবার হেসে দিলো। বললো,
“স্যরি স্যরি। তবে পজেটিভ ভাবার আগে নিগেটিভ দিকটাও ভাবতে হয়।”
“সব ভাবাভাবি বাদ। বিজনেসের কাজে যে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল সেটাও ক্যান্সেল।”
“পাগল হলি নাকি তুই? আংকেল এতে ভীষণ রেগে যাবে। পাগলামি না করে কাজটা কর। বাড়ির সবাইকে খুশি রাখ আগে। আর একবার যখন তাকে দেখেছিস তখন এটা তো তুই শিওর যে তোরা এক দেশে, এক জেলাতেই আছিস! সো, ওকে খুঁজে বের করতে কোনো সমস্যা হবেনা। আর একবার যা করেছিস এরপরও পরিবারের সাপোর্ট পাওয়া অনেক কঠিন বুঝলি?”
মৃন্ময় ভাবলেশহীনভাবে বললো,
“হুম।”
“কি বুঝলি?”
“তুই যা বুঝালি।”
“তাহলে তুই মালয়েশিয়া যাচ্ছিস তো?”
“হুম।”
“দ্যাট’স লাইক আ গুড বয়। নাউ লেট’স গো।”
বাড়িতে গিয়ে দরজা আটকেই ফ্লোরে ধপাস করে ব্যাগটা ফেললো প্রিয়া। জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেলো। অনেকটা হাঁপিয়ে গিয়েছে। মা এসে বললো,
“এমন হাঁপাচ্ছিস কেন?”
প্রিয়া কিছুক্ষণ দম নিয়ে বললো,
“মা মৃন্ময়কে দেখেছি আজ।”
“কোথায়?”
“বাজারের ঐখানে।”
“ও তোকে দেখেছে?”
“হ্যাঁ। শুধুই দেখেনি আমার পিছন পিছনও এসেছিল। আমি লুকিয়ে ছিলাম।”
“ওকে দেখে লুকানোর কি আছে? তুই তো কিছু করিসনি।”
“সব অতীত থেকে দূরে সরার জন্য সব চেঞ্জ করে নতুন জায়গায় আসা। সেখানে যদি অতীত এসে এভাবে হাত বাড়ায় তখন আমি লুকাবো না? এসব বাজে অতীতের সম্মুখীন আমি হতে চাইনা মা। ঘৃণা করি আমি অনেক ঘৃণা করি।”
মা প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“শান্ত হো। আর যা ফ্রেশ হয়ে নে। অতীত চাইলেও আর তোকে ছুঁতে পারবেনা।”
.
.
মৃন্ময় মালয়েশিয়া চলে গিয়েছে। কিন্তু মনটা বাংলাদেশেই পড়ে আছে। ফাহাদ আজকাল প্রিয়াকে নিয়েই বিভোর থাকে। মনের না বলা কথাটাকে এখনো হৃদয়ে বন্দি করে রেখেছে। কবে যে এই মনের শিকল থেকে মুক্ত হবে ভালোবাসার কথা কে জানে!
অফিস থেকে একটা ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়েছে সিলেটে। প্রিয়া প্রথমে যেতে একদম রাজি হয়নি। ফাহাদ এটার টোপ হিসেবে কাজে লাগালো পৃথাকে। পৃথাকে দিয়ে রাজি করালো। বাসে বসে যে যার মত আনন্দ করছে আর ফাহাদ চুপিসারে দেখছে প্রিয়াকে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে কেউ সেটা বুঝতেও পারছেনা। কারণ ফাহাদ চোখে কালো সানগ্লাস পড়ে বাসের সিটের সাথে হেলান দিয়ে আছে। যাতে সবাই বুঝে যে, ফাহাদ ঘুমাচ্ছে। স্পটে পৌঁছে সবাই ফ্রেশ হয়ে আগে খেয়ে নিলো। এরপর যে যার মত ঘুরতে শুরু করলো। পৃথা আর প্রিয়া চা বাগানের উঁচুনিচু জায়গায় ঘুরছিলো। প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কতটা মনোরম তা বাহিরে গেলেই বুঝা যায়। পৃথার ফোন আসায় পৃথা ফোনে কথা বলছিল। আর প্রিয়া অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিল। মনটা বিষণ্ণ খুব। হুট করেই ফাহাদ পেছন থেকে বলে,
“কি ম্যাম মন খারাপ?”
প্রিয়া পিছনে তাকিয়ে দেখলো ফাহাদ।
“উঁহু।”
“মন খারাপ না?”
“না।”
“সত্যিই?”
“হুম।”
“একটা কথা বলি?”
“জ্বী।”
“আমি যদি আপনাকে তুমি করে ডাকি তাহলে কি কোনো সমস্যা?”
প্রিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বললো,
“না। সমস্যা হবে কেন? আপনি তো পৃথাকেও তুমি করে ডাকেন।”
ফাহাদের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। মনে মনে বললো,
“এই মেয়েটা এত আনরোমান্টিক! কিসের সাথে কি তুলনা করে! আরে আমি কি পৃথাকে ভালোবেসে তুমি ডাকি নাকি।”
প্রিয়া আবারও হাঁটা শুরু করলো। সাথে ফাহাদও হাঁটছে। ফাহাদের মাথায় দুষ্টু বু্দ্ধি এলো। জোরে চেঁচিয়ে বললো,
“সাপ সাপ!”
ফাহাদের সাথে প্রিয়া জোরে জোরে চেঁচাতে লাগলো। সাথে বাচ্চাদের মত লাফাতে লাগলো। প্রিয়ার এই অবস্থা দেখে ফাহাদ হাসতে হাসতে শেষ। বিষয়টা প্রিয়া খেয়াল করে থেমে গেলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
“আপনি হাসছেন কেন? আর কোথায় সাপ?”
ফাহাদ হাসতে হাসতেই বললো,
“হাসছি তোমার বাচ্চামো দেখে। তোমার মধ্যে কতই সৌন্দর্য লুকায়িত। কিন্তু তুমি যে কেন তা প্রকাশ করো না আল্লাহ্ মালুম।”
প্রিয়া কথাটাকে এড়িয়ে গিয়ে বললো,
“সাপ কোথায়?”
“সাপ নেইতো।”
“তবে আপনি যে সাপ সাপ বলে চেঁচালেন?”
“সেটা তো তোমার রিয়াকশন দেখার জন্য করেছি। আর….”
“আর?”
ফাহাদ চোখে-মুখে দুষ্টুমির রেখা ফুঁটিয়ে বললো,
“আর ভাবলাম যে তুমি ভয় পেয়ে একটু জড়িয়ে ধরবে।”
বলেই ফাহাদ ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো। প্রিয়া চোখমুখ কুঁচকে বললো,
“নির্লজ্জ।”
ফাহাদ ডান হাত বুকের বা পাশে রেখে বললো,
“আয়ে হায়! এভাবে বলো না। প্রেমে পড়ে যাবো।”
প্রিয়া আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো।
সন্ধ্যায় গানের আসর বসিয়েছে সবাই মিলে। যে যে গান পারে সবাই গান গাইছে। আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার এক ফাঁকে অফিসের অন্যান্য বসরা সবার উদ্দেশ্যে বললো,
“তোমরা কি জানো যে, তোমাদের বস মিস্টার ফাহাদ যে খুব ভালো গান করে? গান কিন্তু তার স্বপ্ন।”
ফাহাদ বললো,
“এটা কি হলো? এভাবে ফাঁসানো?”
কিন্তু মনে মনে ফাহাদ খুশিই হলো। এই সুযোগে গানের মাধ্যমে ইশারা ইঙ্গিতে প্রিয়াকে ভালোবাসার কথা জানাবে।
উপস্থিত সকলে বললো,
“তাহলে স্যার একটা গান হয়ে যাক?”
ফাহাদ হেসে বললো,
“হোক তাহলে।”
ফাহাদ গিটার নিয়ে টুংটাং আওয়াজ তুললো। ফাহাদের সরাসরি বসে আছে প্রিয়া। প্রিয়ার সাথে বসে আছে পৃথা। ফাহাদ গাওয়া শুরু করলো,
“তোমার নামের রোদ্দুরে, আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে,,
জানিনা যাবো কদ্দুরে এখনো..!!
তোমার নামের রোদ্দুরে, আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে,
জানিনা যাবো কদ্দুরে এখনো।
আমার পোড়া কপালে,
আর আমার সন্ধ্যে সকালে,,
তুমি কেন এলে জানিনা এখনো…
ফন্দি আঁটে মন পালাবার,,
বন্দি আছে কাছে সে তোমার..!!
যদি সত্যি জানতে চাও,
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই।
যদি মিথ্যে মানতে চাও,
তোমাকেই চাই।
হুম,,,,,যদি সত্যি জানতে চাও,
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও,
তোমাকেই চাই….!!!”
চলবে….