স্যার যখন স্বামী

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৩

জান্নাতুল ফেরদৌস 
“মেঘ তুমি পাগল হয়ে গেছ,,তুমি নিজে কি
বলছ সেটাই ভালোভাবে জানো না।
তোমার সাথে কথা বললে এখন শুধু ঝগড়া
হবেই।আজকের দিনে আমি এইসব করতে
চাচ্ছি না।যাও চুপচাপ ঘুমাও গিয়ে।
কালকে আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—২
“কিন্তু…”(মিনমিনে সুরে)
“দেখ আমি খুব ক্লান্ত,, ঘুমাব।”
……
“কি ব্যাপার এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
“বলছি আপনি কি খাটে ঘুমাবেন?”
“হ্যা, কেন?”
“না,, কিছু না ঠিক আছে তাহলে আমি
খাটে আর আপনি সোফায় ঘুমান,, থুক্কু
আমি সোফাতে আর আপনি খাটে ঘুমান।”
“কেন?সোফাতে কেন?”
“তো কোথায় ঘুমাব?”
“কেন খাটে।”
“আপনি না খাটে ঘুমাবেন তাহলে,,”
“তাহলে কি হয়ছে?আমরা দুইজনেই খাটে
ঘুমাবো।আর কথা পেচায়ো না প্লিজ,,
খাটে এসে ঘুমিয়ে যাও।”
(কি খারাপ কপাল তোর মেঘ,, শেষ পর্যন্ত
তোকে এই রাক্ষসটার সাথে ঘুমাতে
হবে)…..,,
“এখনো দাঁড়িয়ে আছে তুমি,,বুঝছি,
তোমাকে এখন ভালোভাবে বলছি তাই
কাজ হচ্ছে না।ওয়েট,,”
“আরে,,,,নামান,, নামান,,”
“চুপ “(ধমক দিয়ে)
অতঃপর আর কি চুপিই থাকলাম।আমাকে
কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে
দিলেন।
“এবার ঘুম যাও,,, আর কোন কথা বলবা না।”
….
“কিছুক্ষণ পর মেঘ,,”
……
“কি ব্যাপার কথা বলছ না যে? দেখ আমার
এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না,,,তারপরও
বাধ্য হয়ে আমাকে বলতে হচ্ছে,,এতদূরে
গিয়ে ঘুমালে দেখা যাবে তুমি ঘুমের ঘুরে
খাট থেকে পড়ে গেছ।তাই আরেকটু কাছে
এসে ঘুমাও।”
“না,,আমি ঠিক আছি এইখানে।”
“না ঠিক নেই,,,যে মেয়ে ভার্সিটিতে
হাঁটতে গিয়ে দিনে কমপক্ষে ১০ বার
আছাড় খেয়ে পড়ে তাকে বিশ্বাস নেই।
এখন তুমি খাট থেকে পড়ে গেলে ব্যথা
পাবে,,তারপর তোমাকে নিয়ে আমার
মেডিকেলে দৌড়াতে হবে।আমার কোন
ছুটিও নেই। তাই আমি আজাইরা কাজে
কোন রিস্ক নিতে চাই না। কাছে আসো।”
“আচ্ছা,,,”(কি আর করার উনার কাছে
আসতে হল,,,নাহলে ধমক খাবো এখন)
“এটা কাছে আসা হল,,,এখনো রিস্ক আছে
এইখান থেকেও পড়ে যেতে পারো।
তোমাকে দিয়ে হবে না।এই বলে নিজে
আমার কাছে এসে আমার মাথাটা তার
বুকে রাখলেন।আর কথা বলবে না।ঘুমিয়ে
পড়। ”
“আমিও আর কথা বাড়ালাম না,,জানি
বলে লাভ নাই।তাই বাধ্য হয়েই স্যার যা
বলল তাই মেনে নিলাম। শুধু একটাই চিন্তা
আগেতো শুধু ক্লাসে বকা খেতাম আর এখন
বাসা আর ক্লাস দুই জায়গায় বকা,,,,বকা
আর বকা,,এইদিনও দেখা আমার বাকি
ছিল “(ভিতরে ভিতরে কেঁদে)
.
.
পরেরদিন সকালে জানালা দিয়ে সূর্যের
আলো আমার মুখে পড়ে আমার এতসুন্দর
ঘুমটা নষ্ট করে দিল। আরে মা,,এত সকালে
কেন জানালার পর্দাটা খুলছ।জানলায়
পর্দা দিয়ে দাও।
“এখন সকাল ৮:০০টা বাজে মেঘ।উঠো
তাড়াতাড়ি।”
“না,, আরেকটু ঘুমাবো,,যাও এখান থেকে।”
এরপরে আমার হাতের আঙ্গুলটা গরম
কফিতে ঢুকিয়ে দিল।আর আমি চিল্লিয়ে
উঠলাম মা পাগল হয়ে গেছ কি করছ?কথা
বলতে বলতে দেখি এটা মা না স্যার। উনি
খাটে বসে আছেন।
“এখানে স্যার কেমন করে এল? আপনি
এখানে কি করে?”
“মানে,, কি বলছ,, আমার বেডরুম আমার
বাসায় আমি থাকব নাতো কে থাকবে?”
“আপনার বাসা!!চারদিকে তাকিয়ে
দেখলাম,,হ্যা তো এটাতো আমার বেডরুম
না। এখানের কোন কিছু চিনা মনে হচ্ছে
না। এটা যদি স্যারের বাসা হয় তাহলে
আমি এখানে কেন? এরপরেই মনে পড়ে
গেল কালকে স্যারের সাথে আমার বিয়ে
হয়েছে যারকারণে আমি এইখানে।হঠাৎ
করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়াগায়
আসায় এরকম হয়েছে।আমার এই ধরণের
ব্যবহারের জন্য খুব লজ্জাই পড়ে গেলাম।
কি করব মাথায় আসছে না,,,”
“গুড মর্নিং,,মেঘ,,”
“গুড মর্নিং স্যার,,”
“দিলেতো সকালে মুডটা খারাপ
করে,,দেখ আমি তোমার হাজবেন্ড
হয়,,স্যার নয়,,প্লিজ এই স্যার,, স্যার
কথাটা বলা বন্ধ কর,, বিরক্ত লাগে।আর
আরেকটা কথা,মেঘ আগের মতন চললেতো
আর হবে না। আজকে অনেক ঘুমিয়েছ
কারণ কালকে তুমি অনেক ক্লান্ত ছিলে
এইজন্য আমি তোমাকে এতক্ষণ ধরে ঘুম
থেকে ডাকি নি।সকাল ৮:০০টা বাজে
এক্ষণো তোমার ঘুম শেষ হয় নাই।আবার
বলছ আরেকটু ঘুমাবো।এখন থেকে এত
ঘুমানোর আরাম আমি হারাম করে দিব।
কালকে সকাল সকাল ঘুম থেকে তোমাকে
উঠতে হবে বুঝেছ।”
“হুম।”(মন খারাপ করে)
“টেবিল থেকে কফির কাপ তুলে আমাকে
দিলেন,”
……..
“দেখ চুপ করে বসে থাকলে হবে
না,,,আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে,,,
আমারতো আর ছুটি নেই।তাড়াতাড়ি চা
টা শেষ করে ফ্রেস হয়ে খাওয়ার টেবিলে
আস।একসাথে নাস্তা করব।”
“আচ্ছা।”
.
.
নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখি টেবিলে
সুন্দর করে খাবার সাজানো হয়েছে। স্যার
ছেলে হয়েই নাস্তা বানাতে পারে কিন্তু
আমি!!?আমিতো কিছুই পারি না।বিয়ের
আগে রান্নাঘরে আমি ভয়েও যেতাম না।
একবার খুব শখ করে মাছ ভাজতে
গিয়েছিলাম।মাছ ভাজতে গিয়ে তেলের
ছিটা হাতে এসে পড়েছিল।এরপর থেকে
ভয়েও রান্নাতো দূরের কথা আমাকে
দিয়ে মা কোন রান্না করাতে পারেনি।
খুব বেশি জোর করলে কান্নাকাটি করে
ভরিয়ে দিতাম।এইসব কথা ভাবতে গিয়ে
হাসি পাচ্ছে আবার মা বাবার কথাও খুব
মনে পড়ছে।
“মেঘ বস,,”
“জ্বী,,”
“ওত দূরের চেয়ারে গিয়ে বসছ কেন?আমার
পাশের চেয়ারটাতে বস।”
“না,,না,,”(মনে পড়ে গেল ধমকের কথা)
“না না মানে,,”
“আমি না না কই বলছি,, বলছি হ্যা হ্যা
হ্যা,,,”
“আরেরে,, এত হ্যা হ্যা হ্যা করছ কেন
বস,,”(ধমক দিয়ে)
“বসছি।”
“এই নাও,,গাজরের হালুয়া,,তোমার
ফেভারিট খাবার,,”
“আপনি কেমন করে জানেন এটা আমার
ফেভারিট খাবার,,,”
“কথা ঘুরিয়ে,,নাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
“আপনার না তাড়া আছে।আমাকে খাইয়ে
দিতে দিতে গেলে আপনার দেরি হয়ে
যাবে।”
“তোমাকে ১-২ চামচ খাইয়ে দিলে কোন
দেরি হবে না।নাও হা কর।”
(কালকে খাওয়া নিয়ে যে অবস্থা হল
আবার ও যদি কিছু বলতে চাই তাহলে
সাতসকালে আবারও বকা খাব।বকা
খাওয়ার চেয়ে স্যারের হাত থেকে খেয়ে
নিয় সেই ভালো।)
“আরে,,বাহ,,আজকে কিছু না বলে আমার
হাত থেকে খাচ্ছ।ভেরি গুড গার্ল।আমার
সাথে থাকতে থাকতে আরও good হয়ে
যাবে (হেসে)।মেঘ বললে না তো কেমন
হয়েছে আমার হাতের রান্না,,”
“হেসে,,,হুম ভালো।”
“শুধুই ভালো,,,”
(মনে মনে তো আর কি বলব,,ভালো হয়েছে
তাই ভালো বলেছি।এর সাথে কি আরও
কিছু কথা মিক্সড করতে হবে নাকি?)
“ভাবনায় পড়ে গেলাম,,আর কি
বলবো,,ভালো কথার সাথে আর কি কি
প্রশংসনীয় কথা লাগাতে হবে,,”
“আচ্ছা থাক,,ভাবতে হবে না আর,,খাও,,,”
…….
“মেঘ এত ধীরে ধীরে খাচ্ছ কেন?
তাড়াতাড়ি নাস্তা খাওয়া শেষ কর।”
…..(আরে,,,এত তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ
করার কি আছে,,আস্তে ধীরে শেষ করলে
কি হয়,,আমার তো তাড়া নেই,,,তাড়া তো
উনার।)
“ভাবা শেষ,,,”
“হ্যা,,(চিন্তার জগত থেকে
বেরিয়ে),,,কিছু বলছেন,,,”
“কাকে কি বলি,,বলছি ভাবাচিন্তা শেষ
হয়ে গেলে বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসেন
দয়া করে।”
“না,, না,,, ভাবছি নাতো,,এই যে খাচ্ছি
দেখেন,,দেখেন,,,”
“হুম দেখছি অনেক,,,আর দেখতে পারবো না
এখন,,, দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।মেঘ
শুনো,,তুমিতো ঘরের কোন কাজ পারনা”
(এ্যা,,,ডাইরেক্টলি অপমান)…..
“দেখ,,, আমি আগে থেকে সেটা
জানি,,,রান্না করতে পারো না,,, সেটা
সমস্যা না,,তোমাকে রান্না শিখানোর
মানুষ আজকে এসে যাবে,,,আর তোমার
জন্য আজকে একটা সারপ্রাইজ আছে।”
“কি সারপ্রাইজ?”
“সেটা সময় হলে দেখতে পারবে।”
….
“আর শুনো বাসায় একা থাকবে,, তাই
বরিং ফিল হতে পারে,,তাই সময়
কাটানোর জন্য আজকে ম্যাথ বইয়ের
দ্বিতীয় চ্যাপ্টারের ম্যাথগুলো দেখে
রাখবে।এটা সময় কাটানোর জন্য করলে
করতে পার নাহলে নাই।কিন্তু আজকে
বাসা এসেই যাতে দেখি দ্বিতীয়
চ্যাপ্টারের ম্যাথগুলো তোমার শেষ।”
(এটা কেমন স্যাররে….একদিন যেতে না
যেতে পড়া শুরু করে দিছে)…..
“এই যে ম্যাডাম পড়া পড়লে আজাইরা
ভাবনা মাথায় আসবে না,,,সারাদিন শুধু
ভাবনার তলেই থাকেন। আজকে পড়া যদি
না পার তাহলে তোমার খবর আছে সেটা
জেনে রাখ।আচ্ছা আসি,,তাহলে,,,ভাল
থেকো,, আমার গালে দুই হাত দিয়ে উনি
কথাটা বললেন।”
“জ্বী,,ঠিক আছে,,,”
“ও সরি একটা জিনিস করতে ভুলে গেছি,,,”
“কি জিনিস,,,,”
“আমার কপালে ভালবাসার পরশ দিয়ে
বলল,,,এই জিনিসটা,,,আচ্ছা আসি তাহলে,,”
“হুম,,,”(ওনার এই ধরণের ব্যবহারে আমি
একেবারে আক্কেলগুড়ুম। লোকটার মাথায়
নিশ্চয় সমস্যা আছে,,,হবে বা না কেন
সারাদিনই ম্যাথ নিয়ে থাকে। এই ধরণের
ম্যাথ করা স্যারগুলো কখন যে কি করে
বসে কিছুই বুঝা যায় না।)
.
.
পুরো বাড়িতে আমি একা একলা একটা
মানুষ। ভালো লাগছে না।পড়াশুনা
জিনিসটার প্রতি আমার ছোটকাল থেকে
এলার্জি।আগেতো মা বাবা আমাকে
ঠেলেঠুলে পড়িয়ে এই পর্যন্ত নিয়ে
এসেছে।ভেবেছিলাম বিয়ে করে আর
পড়াশুনা করব না,,এই বিরক্তিকর জিনিস
থেকে রেহাই পাব। কিন্তু এখন যা দেখছি
তাতে তো মনে হচ্ছে আমার পড়ালেখা
জীবনেও শেষ হবে না। উনি যদি
প্রতিদিন ম্যাথ করায় আর ম্যাথ করতে
দেয় তাহলে আমি শেষ। এই ম্যাথ
জিনিসটা আমার চিরকালের শত্রু।
ভেবেছিলাম অন্য সাবজেক্ট নিয়ে পড়ব,,,
কিন্তু কথায় আছে না ভাগ্যের লিখন না
যায় খন্ডন।আমার ফাটাপোড়া কপালে এই
সাবজেক্ট এসে পড়েছে তাই বাধ্য হয়েই
কোনরকম পড়তে হচ্ছে। এই ম্যাথ করতে
করতে আমি শেষ হয়ে যাব আজকে থেকে।
আল্লাহ আমাকে তুমি বাঁচায়ো। এখন এই
ভয়ানক সাবজেক্ট পড়ার কথা ভেবে ভয়
লাগছে।না,, এখন না,,,ম্যাথ বই পরে
ধরব,,এখন আপাতত আমার লাগেজ থেকে
কাপড়গুলো নামিয়ে গুছিয়ে রাখি।
লাকেজ থেকে কাপড়গুলো নামাতে
গিয়ে হঠাৎ করে আমার লাকেজ থেকে
সাগরের একটা ছবি পেলাম।বিয়ের আগের
দিন আমি নিজেই এই ছবিটা সযত্নে
লাকেজে রেখে দিয়েছিলাম।কিন্তু
আজকে এই ছবিটা পেয়ে আমি
কিছুক্ষণের জন্য আমার আর সাগরের সেই
দিনগুলোর স্মৃতিতে ফিরে গেলাম
আমরা গ্রামেই থাকতাম।পরীক্ষা শেষ
হওয়ার পর আমরা ঢাকাতে চলে আসি।
আমরা যে এলাকায় ছিলাম সেখানেই
সাগররা থাকত। ঢাকায় আমি ইন্টারে
পড়ার জন্য কলেজে ভর্তি হলাম।এখান
থেকে আমার পড়ালেখা আবার শুরু
করলাম। কলেজে আমিসহ আমার এক
বান্ধবী একসাথে যেতাম।রাস্তায় একদিন
আমার বান্ধবীসহ কলেজের পথে হেঁটে
যাচ্ছিলাম।তখনি সাগরের সাথে আমার
প্রথম দেখা হয়।
“তিশা কেমন আছিস?”
“জ্বী ভাইয়া, ভালো।”
” তা এই মেয়েটা কে, এলাকায় নতুন
নাকি?”
“হ্যা ও… এলাকায় নতুন,ও আমার বান্ধবী ”
“ও,,,আচ্ছা। ”
“হাই,আমি সাগর,আপনার নাম কি?”
” ভাইয়া, ও মেঘ, আমাদের দেরি হয়ে
যাচ্ছে,আসি তাহলে ভাইয়া,,”
“আচ্ছা, ঠিক আছে ,,সাবধানে যা,, ”
“জানিস মেঘ ও হচ্ছে আমার চাচাতো ভাই
সাগর।
ও,,,আচ্ছা।”
“মেঘ তুই আমার ফ্রেন্ড,, তাই তোকে একটা
সত্যি কথা বলি।ও কিন্তু মোটেও ভালো
ছেলে না,,একটু স্মার্ট বলে এলাকার
প্রায় সব মেয়ে ওর জন্য পাগল। আর ও তার
সুযোগ নিয়ে ওদের সাথে ভালবাসার
নাটক করে। একেকটা মেয়ের সাথে প্রেম
করে,,শখ মিটে গেলে আরেকটার সাথে
সেই একি খেলা। ভাই হয় তবুও কথটা বলতে
খারাপ লাগছে ,,ওর থেকে একটু সাবধানে
থাকিস।”
“হুম, ঠিকছে।”
.
.
এরপরে আমি প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার
পথে ওকে সহ ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা
দিতে দেখতে পেতাম।প্রথম প্রথম আমি
তিশার কথার সেই আভাস সাগরের মধ্যে
দেখি নি।কিন্তু হ্যা ওর পিছনে মেয়েদের
লাইন লেগে থাকত সেটা ঠিক বলছে
ও,,কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারি
তিশার কথায় ঠিক। ওকে দেখতে যতটা
ভালোমানুষ মনে হয় ও আসলে তা না। ও
হচ্ছে সুযোগের সন্ধানী মানুষ। আজ এর
সাথে তো কাল ওর সাথে মিথ্যা
ভালবাসার নাটক চালাচ্ছে।তিশা
আমাকে আগে থেকে সর্তক করে দিয়েছে
তাই আমি যতটা সম্ভব রাস্তাঘাটে
সাবধানে চলি।বিশ্বাস নেই এলাকার সব
মেয়ের সাথে এর মোটামুটি ভালো লাইন
আছে,, না জানি কখন আমাকে ফাঁদে
ফেলায় তাই একটু সর্তকতা অবলম্বন করি।
এর কয়েকদিন পর দেখি ও সবসময় আমাকে
ফলো করে,,,একদিন সাহস করে আমার
সামনে এসে কথা বলল,,
“এই যে মেঘ তুমি এমন কেন বলত?”
“মানে?”
“এখানে আসছ একবারো আমার সাথে কথা
বলোনি,”
“কেন আপনি কোন স্পেশাল লোক নাকি
যে আমি সেধে আপনার সাথে কথা বলতে
আসবো। ”
“না ঠিক তা না,,আসলে এখানে আসছ তুমি
এতদিন হল,, তো দেখতেই পারছ আমার
পিছনে মেয়েদের লাইন কেমন? সবাই
আমার সাথে কথা বলতে আসে,একমাত্র
তুমি ছাড়া,,, ”
“ও,,,,”
“আচ্ছা মেঘ আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি
না,,”
“না,,”
“কেন,,”
“আমি আসলে অপরিচিত কারো সাথে
বন্ধুত্ব করি না,”
“আমি তো তোমার অপরিচিত না,,আমাকে
তুমি চিন,,আমি তিশার চাচাতো
ভাই,,প্লিজ শুধু বন্ধু হবো,,,অন্য কিছু না,,”
“সরি,,”
.
.
এইভাবেই প্রায়ই প্রতিদিনই আমার
পিছনে লেগে থাকত আমার সাথে বন্ধুত্ব
করার জন্য।পরে বিরক্ত হয়ে একপ্রকার
বাধ্য হয়েই ওর সাথে বন্ধুত্ব করেই ফেলি।
এরপরে হঠাৎ করে একদিন আমাকে সবার
সামনে প্রপোজ করে বসে,,,তখনি বুঝলাম
তিশার কথাই ঠিক ও আমাকে পটানোর
জন্য এইসব করছে,,, ওর আসল উদ্দেশ্য আমি
বুঝে গেছি।তাই ওকে না করে দিলাম।
কিন্তু সেও ছাড়বার পাত্র নয়,,,আমার
পিছনে প্রায়ই লেগে থাকত।হঠাৎ করে
তিশার শরীর খারাপ থাকায় ওর
পরবর্তীতে আমি আমার কলেজের ফ্রেন্ড
রিশাবের সাথে একসাথে কলেজ আসতাম
যেতাম।একা আসতে যেতে ভয় লাগত তাই
ওকে সাথে নিয়ে যেতাম। আর সেটা
সাগর একদিন দেখে ফেলে।পরেরদিন
আমি শুনতে পারি আমার সেই ফ্রেন্ডকে
কতগুলো ছেলে এসে মেরে চলে যায়।
ওকে দেখার জন্য ওর বাসায় যায়। আমার
ফ্রেন্ডকে ওরা এত মেরেছে যে ও
দাঁড়াবার মতন অবস্থায় নায়।বুঝতে
পেরেছি এই কাজ সাগরের।ওর সেই
প্রপোজ মেনে না নেওয়া আর আমার সেই
ফ্রেন্ডের সাথে একসাথে কলেজ আসা
যাওয়া এটা ও মেনে নিতে পারেনি,, এই
জিনিসটা ওর ইগোতে লেগেছিল।তাই
আমার ফ্রেন্ডকে ইচ্ছেমত ও সহ ওর বন্ধুরা
মেরেছে।এতে আমার খুব রাগ উঠে
গিয়েছিল সেদিন,,,ও ওর ফ্রেন্ডদের
সাথে সবসময় যেখানে আড্ডা দেয়
সেখানে গিয়ে পাব্লিক প্লেসে ওর
বন্ধুদের সামনে ওকে গাল কষে একটা
থাপ্পড় মারি।তারপর কিছু কথা শুনিয়ে
চলে আসি।
.
.
কয়েকমাস পর ওর মধ্যে পরিবর্তন আসে।
আগের সেই সাগর আর আগের মতন নেই,,ও
অনেক চেঞ্জ হতে থাকে,,,আগের মতন আর
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় না ,,,মেয়েরা
ওর পিছনে লাগলেও ও এখন তার সুযোগ
নিয়ে ওদের সাথে মিশে না,,,চাকরি করে
সময় কাটাই,,সবার মুখে এখন ওর প্রশংসা
শুনি। হ্যা আমিও দেখেছি ও আর আগের
সেই নেই।কিন্তু ওর একটা জিনিসি
খারাপ লাগত আমার পিছনে ঘুরাঘুরি। এখন
ও সেই একি কাজ,, একদিন আবারও সে
প্রপোজ করে বসে,,আমি এবার ও না করে
দিই।এরপরেরদিন সকালে আমার
মোবাইলে একটা মেসেজ আসে ও নাকি
সুইসাইড করতে গিয়েছিল।এখন সে
মেডিকেলে ভর্তি আছে।আমি দৌড়ে সে
মেডিকেলে চলে যাই,,গিয়ে দেখি ওর
হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করা। ব্লেড দিয়ে ও
নিজের হাত পা কেটেছে ।
“এইসব কি করেছেন আপনি? এভাবে
নিজের ক্ষতিটা করার মানে কি?”
“তোমার জন্য এইসব হয়েছে।আমি জানি
আমি আগে খারাপ ছিলাম,, তোমার
সেইদিনের সেই থাপ্পড় খেয়ে বুঝেছি
আমি কত খারাপ,, তাই সেদিনের পর
থেকে নিজেকে পরিবর্তন করি।আসলে
আমাকে এইভাবে কেউ থাপ্পড় মেরে
আমার ভুলগুলো কেউ ধরে দেয় নি।কিন্তু
তুমি আমার সেই ভুল তুলে ধরে আমাকে
সঠিক রাস্তা দেখিয়েছো,,,এরপর থেকে
আমি তোমাকে সত্যিকার অর্থে
ভালবেসে ফেলি।কিন্তু তোমাকে
সত্যিকারে যখন ভালবেসে ফেলেছি তখন
থেকে আবারো তোমার পিছনে লাগি।
তোমার অবহেলা আমি সয়ে নিতাম
এতদিন কিন্তু সেইদিন আমার প্রপোজাল
তুমি একসেপ্ট না করায় আমি পুরোপুরি
ভেঙ্গে পড়ি,, তোমার এই না শব্দটা
আমার সহ্য হচ্ছিল না খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই
নিজেকে শেষ করে দিতে
চেয়েছিলাম,,,যদি বেঁচে থেকে তোমার
ভালবাসা না পায় তাহলে এই জীবন
রাখার মানেটা কি? এর থেকে মরে
যাওয়া অনেক ভালো। ”
.
.
ওর এই কথা শুনে সেদিন বুঝতে
পেরেছিলাম,, এই পাগলকে আর কষ্ট
দেওয়া চলবে না,,,ও শুধু আমাকে শুধু
আমাকেই ভালবাসে।সেদিন থেকেই
আমাদের ভালবাসা শুরু হয়।ওকে আমি
থাপ্পড় মেরে যে ভুল করেছিলাম
সেদিনের সেই ভুলের জন্য আমি ওর কাছে
ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম। ও বলেছিলো
সেই দিনের সেই থাপ্পড়টা ওর জন্য
দরকার ছিল নাহলে সে নিজের ভুল বুঝতে
পারত না,,এতে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,, সেইদিনের সেই
ঘটনা ওর ইগোতে খুব লেগেছিল তাই
আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ও
অনেক আগে থেকে সব প্ল্যান করে
রেখেছিল। আমার সাথে এতদিন যে
ভালবাসার নাটক করেছিল,,সেটাও ওর
প্ল্যানের মধ্যে ছিল,, আমি ওকে পাব্লিক
প্লেসে যেভাবে থাপ্পড় মেরে অপমান
করেছিলাম সাগরও ঠিক একিভাবে তার
প্ল্যান অনুযায়ী আমার বিয়ের দিন
গ্রামের মানুষের সামনে আমাকে আর
আমার পরিবারকে অপমান করিয়েছিল।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম।এই
সময়ে কে এল,,ছবিটা বিছানায় ফেলে
দিয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলতে
চলে গেলাম।দরজা খুলে আমি যা দেখলাম
তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম
না,, অনেক অবাকতো হয়েছি তারসাথে
নিজের চোখকে আমি বিশ্বাস করাতে
পারছি না,,
আপনি!!??
(আপনাদের কি মনে হয় মেঘ কাকে দেখে
অবাক হয়েছে যার জন্য ও নিজের
চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না,ওর
জীবনের অতীত ফিরে এসেছে নাকি অন্য
কেউ? জানতে হলে আমার এই গল্পের
সাথে থাকুন)
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৪