মিশে আছো নিঃশ্বাসে !! Part- 04 ও শেষ
“এখন পালাচ্ছিস কেনো?ভয় লাগছে বুঝি আমাকে?”
“দে….দেখুন।”
সে আচমকা বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে আমার সামনে এসে ঝুকে আমার দুই সাইডে বেঞ্চের মধ্যে হাত রেখে চিৎকার করে রেগে বলল,
“চুপ একদম চুপ।আগে মনে ছিলোনা?আর এসব কি পড়েছিস হে?হাতাটা এইটুকু না রাখলেই পারতি।চুল কি তোর সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে হবে?বেধে রাখা যায়না?সবাইকে কি দেখাতে হবে তুই কতো সুন্দর?কাল থেকে যদি তোকে এসব ড্রেস আর চুল ছাড়া অবস্থায় তোকে বাইরে বেরোতে দেখেছিতো তোর এমন হাল করবো যে তুই ভাবতেও পারবিনা।”
তার কথা শুনে আমি এবার ফুপিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিলাম।সে আবারও আমাকে ধমক দিয়ে বলল,
“এই এই একদম ন্যাকা কান্না করবিনা আমার সামনে।এসব ডং অন্যকাউকে গিয়ে দেখাস।আমাকে নয়।বোঝতে পেরেছিস।আর ওই শিহাব তোকে অবু ডাকছিলো কেনো হে?ওর সাহস কি করে হয় তোকে অবু ডাকার?কে হয় ও তোর।ও কি তোর প্রেমিক যে তোকে এসব ডাকবে?ও যখন তোকে বাজে দৃষ্টিতে দেখছিলো তখন নিশ্চয়ই তোর খুব ভালো লাগছিলো নারে?তাইতো তুইও ওকে বাধা না দিয়ে বসে বসে মজা নিচ্ছিলি।”
আমি তার কথাগুলো আর সহ্য করতে পারলাম না।দুই হাতে তার বুকে খুব জোড়ে ধাক্কা ।যার ফলে সে আমার থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো।আমি দাড়িয়ে রাগে ক্ষোভে চিৎকার করে বললাম,
“ব্যাস অনেক বলেছেন আর না।হ্যা হয় সে আমার প্রেমিক।তাতে আপনার কি হে?কে আমাকে কিভাবে দেখলো না দেখলো সেটা আমার ব্যাপার।আপনি এসব বলার কে শুনি।আমি কি পড়বো না পড়বো,কিভাবে চলবো সেটা আমি নিজেই বোঝে নিতে পারবো।সো আপনার এসব নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে।সেই অধিকার আমি আপনাকে দেইনি।বোঝতে পেরেছেন আপনি।”
কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে আসি।তার দিকে একবারের জন্যও আর ফিরে তাকাইনি।
,
,
,
,
,
আজ তিনদিন হয়ে গেলো নিহালের সাথে আমার কোনো দেখা হয়না।না এখন বাড়িতে আসেনা আর আগের মতো আর না ভার্সিটির কোথাও তাকে পাওয়া যায়।আমারও তাকে না দেখে বুকটা কেমন জানি খা খা করে।কিন্তুু আমিও আমার ইগুর কারণে আর তার খোজ নেওয়ার চেষ্টা করিনি।কেনো করবো?দোষটাতো ওইদিন সে করেছিলো আমার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে।মানছি একটু ভুল আমারও ছিলো।তাই বলে সে আমাকে ওসব বলবে?
আমি যখন বেডে আধশোয়া হয়ে বসে কোলে একটা বালিশ নিয়ে এসব ভাবছিলাম তখনই কেউ দরজা ঠেলে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে।তাকিয়ে দেখি আম্মু। উনাকে দেখে কেনো জানি খুব চিন্তিত লাগছে।
আমি বিচলিত হয়ে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি হয়েছে আম্মু?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?”
উনি বললেন,
“এতো কথা বলার টাইম নেই।(আমার দিকে কয়েকটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে)তুই ঝটপট এগুলো পড়ে রেডি হয়ে নে।তোর জন্য সবাই নিচে অপেক্ষা করছে।”
আমি অবাক হয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“রেডি হবো মানে!কিন্তুু কেনো রেডি হবো সেটাতো বলবে নাকি?”
“তুই এগুলো পড়ে রেডি হয়ে নিচে আয়।তাহলেই সব বোঝতে পারবি।”
কথাটা বলেই আম্মু ব্যাস্ততা দেখিয়ে চলে গেলো।
♣
একটা হালকা লাল কালার লেহেঙ্গা ও গয়না পড়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বউ সেজে বসে আছি।কিছুক্ষণ আগে পার্লার থেকে দুটো মেয়ে এসে আমাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে।আমার সামনের সোফায় আব্বু,আংকেল(নিহালের বাবা)ও একজন বয়স্ক লোক হাতে কিসব কলম ও কাগজপত্র নিয়ে বসে আছে।আর আমার পাশে আমার আম্মু ও আরও কয়েকজন প্রতিবেশী মহিলা।
বোঝতে পারছি আমাকে কারো সাথে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।তাই বলে কি আমাকে একটাবার জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজনবোধ করলোনা আব্বু-আম্মু।আমি কি করে মেনে নিব অন্যকাউকে?আমার মনে যে অন্যকারো বসবাস।হ্যা আমি নিহালকে ভালোবাসি।তবে সেকি আমাকে ভালোবাসে?হয়তো না।
বিদায়ের সময় পুরো পাথর হয়ে ছিলাম আমি।আম্মু-আব্বু কারো সাথে কোনো কোনো কথা বলিনি আমি।তারা দুজনই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদেছে।তবে আমি কোনো রেসপন্স করিনি।অনেক অভিমান জমে আছে আমার তাদের প্রতি।হয়তো সময়ের সাথে সাথে এটা ঠিক হয়ে যাবে।
,
,
,
,
গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো একটা ঘরে বসে আছি।রুমটা যে কার তা আমি খুব ভালো করেই জানি।হ্যা আমার বিয়েটা নিহালের সাথেই হয়েছে।কাজি বিয়ে পড়ানোর সময় যখন নামটা বলেছিলো তখন প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম আমি।আমার বিয়ে নাকি নিহালের সাথে আরও তিন বছর আগে থেকেই ঠিক হয়ে ছিল।আমি বাদে এই কথা দুই ফ্যামিলির সবাই জানতো।এমনকি নিহালও।সেজন্যইতো সে আমার সাথে সবসময় এমন করতো।
♣
আমি আর নিহাল বেলকনিতে রেলিং ধরে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছি।কারো মুখে কোনো কথা নেই।দুজনের নজরই সামনের খোলা আকাশের দিকে।এভাবে বেশ কিছুক্ষন যাওয়ার পর নিরবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম,
“আপনি তাহলে শুরুতেই সবকিছু জানতেন তাইনা?”
সো মৃদু স্বরে বলল,
“হ্যা জানতাম।”
“তাহলে আমাকে বলেননি কেনো?”
সে হালকা হেসে বলল,
“বললে কি আর তোকে ওভাবে জ্বালাতে পারতাম।”
“আই এম সরি নিহাল।”
“কেনো?ওই দিন ওসব বলার জন্য?”
“হুম।”
“আসলে সেদিন দোষটা আমারই ছিলো।কি করবো বল ওই শিহাব তোকে যেই বাজেভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো তাই নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি। ইচ্ছেতো করছিলো তার চোখদুটো ওপড়ে ফেলি।(চোখেমুখে রাগের ছাপ নিয়ে)”
“না অপরাধ কিছুটা আমারও ছিলো।আমার খেয়াল রাখার উচিত ছিলো।”
সে কিছুই বলছেনা।এতোক্ষন আমরা কেউই কারো দিকে তাকাইনি।আমি এবার তার দিকে ফিরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“ভালোবাসেন আমাকে?”
সেও আমার দিকে ফিরে আমার দুই গালে তার দুই হাত আলতো করে ধরে বলল,
“জানিস যেদিন থেকে আমার মনে নতুন কোনো অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিলো সেদিন সেই অনুভূতিগুলোতে শুধু তুই ছিলি।যখন আশেপাশে ভালোবাসা শব্দটা শুনতাম তখন সবার আগে তোর কথাটা মাথায় আসতো।তখন বোঝেও আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতাম।তোকে যদি বলি তোকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারিনা তাহলে হ্যা আমি তোকে ভালোবাসি।যদি বলি তোকে একদিন না দেখলে নিজেকে পাগল পাগল লাগে তাহলে আমি বলবো আমি তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি।কি করবো বল তুই যে আমার প্রতিটা নিশ্বাসে মিশে গেছিস।যদি রোমান্টিক ভাষায় বলতে যাই তাহলে বলবো তুমি #মিশে_আছো_নিশ্বাসে।”
তার কথাগুলো শুনে আমি আর চোখের পানি আটকাতে পারলাম না।আমার চোখ দিয়ে অশ্রুর বন্যা বইছে।না এটা কোনো বেধনার অশ্রু নয় এটা হচ্ছে খুশির অশ্রু।ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার খুশি এটা।যা সবার ভাগ্যে হয়তো জুটে না। আমি ততক্ষণাৎ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখলাম।সেও আমাকে দুই হাতে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।আমি বললাম,
“আমিও আপনাকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।আমিও আপনার মতো রোমান্টিক ভাষায় বলতে চাই ভালোবাসি তোমাকে।কি করবো তুমিই বলো তুমিও যে #মিশে_আছো_নিশ্বাসে আমার।”
♦সমাপ্ত♦