ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 19

আমার মুখে ডিবোর্সের কথা শুনে রাফিত কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থাকলেও পরমূহুর্তেই চোখ-মুখ শক্ত করে আমার এক হাতের বাহু ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘোরালো।তারপর আমার এক হাত মুচরে পিছনে নিয়ে ধরে রেগে বলল,

“ব্যাস অনেক বলেছো তুমি।আর একটা কথাও বলবেনা বলে দিচ্ছি।মগের মুল্লোক পেয়েছো নাকি?বললেই হলো ডিবোর্স চাই।আরে একটা ভুল করেছি তার জন্য তো আমি ক্ষমাও চেয়েছি তোমার কাছে।কি কথা হয়েছিলো তোমার সাথে হে?তুমি আমাকে যা খুশি শাস্তি দিবে কিন্তুু ছেড়ে যাবেনা এটাইতো?তাহলে কিসের ডিবোর্স হে?দিবোনা তোমাকে ডিবোর্স আমি।দরকার পরলে তোমার হাত-পা ভেঙে সারাজীবনের জন্য নিজের কাছে রাখবো।তবুও নিজের থেকে দূরে যেতে দিবোনা বোঝতে পেরেছো তুমি।”

“রাফিত আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি।ছাড়ুন।(তার চোখের দিকে তাকিয়ে)”

“ওহহো ব্যাথা পাচ্ছো তুমি না?আরে তুমিতো ব্যাথা পাচ্ছো বাহ্যিকভাবে।আর আমি যে দিনের পর দিন ভিতরে অনুশোচনার আগুন নিয়ে ভিতরে ভিতরে জ্বলে পুড়ে মরছি তা কি তোমার চোখে পরেনা?আরে মানুষ মাত্রইতো ভুল।তাই বলে কি তাকে ক্ষমা করা যায়না?তোমার সাহস কি করে হয় আমার সামনে ডিবোর্সের কথা বলার হে?(খুব রেগে)”

“রাফিত আমার সত্যি লাগছে ছাড়ুন।(টলমল চোখে)”

সে এবার ঝাড়ি মেরে আমার হাতটা ছেড়ে পাশ ফিরে রেগে চিৎকার করে সঝোরে দেয়ালে একটা ঘুষি মারলো।

আমি এদিকে রেলিং-এ পিঠ ঘেঁষে কাদতে কাদতে ধপ করে নিচে বসে পরি ও বলি,

“আমি কি করবো রাফিত আপনিই বলুন?না পারছি আপনাকে ক্ষমা করতে আর না পারছি কাছে টেনে নিতে।এভাবে কি থাকা সম্ভব?আমি খুব ক্লান্ত রাফিত আর পারছিনা আমি।আর পরছিনা।(নিচের দিকে তাকিয়ে)”

এমন সময় নিজের দুই গালে কারো হাতের আলতো স্পর্শে তাকিয়ে দেখি রাফিত আমার সামনে হাটু গেরে বসে আছে।সে মৃদু স্বরে বলল,

“দেখো দিশা যা হওয়ার হয়েছে।মানুষ চেষ্টা করলে পারেনা এমন কোনো কাজ নেই।তোমারও উচিত পিছনের সবকিছু ভুলে আমাদের সম্পর্কটাকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলোনা।আমি মরেই যাবো তোমাকে ছাড়া।আর তবুও যদি আমাকে ছেড়ে যেতে চাও তাহলে আমাকে মেরে তারপর যেও না হয়।কারন তোমাকে ছাড়া আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবো।তিলে তিলে মরার থেকে ভালো না হয় আমাকে একবারেই মেরে রেখে যেও।(তার কথাগুলো ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছিলো)”

আমি তার মুখে মৃত্যর কথা শুনে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।মনে হচ্ছে আমার কলিজায় কেউ ক্রমাগতো ছুরি দিয়ে আঘাত করছে।শত হলেও আমি কখনো তার মৃত্যুর কথা চিন্তাও করতে পারিনা।আমি তাকে বললাম,

“দয়া করে এসব আজেবাজে কথা আর একবারও মুখে আনবেন না।”

“তাহলে তুমিও আর ডিবোর্সের কথাও বলবে না।আর আমাদের সম্পর্কটাকে আরেকটা সুযোগ দিবে।”

আমি তাকে ছেড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হ্যাসূচক মাথা নাড়ালাম।সে বলল,

“এক জায়গায় যাবে আমার সাথে?”

আমি জিজ্ঞেস করলাম,

“কোথায়?”

“তুমি যাবে কিনা সেটা বলো?তবে প্রমিস করছি তোমার একটুও বোরিং ফিল হবেনা।যাবে?”

“আপনার সাথে কখনোই আমার বোরিং লাগেনা।বরং খুব ভালো লাগে সবসময় আপনার আশেপাশে থাকতে।”

সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার হাত ধরে বলল,

“চলো।”

আমি বিস্ময়সূচক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

“এখন!এখনতো দুপুর।বাইরে অনেক রোদও পরেছে।এমন টাইমে কেউ বাইরে বের হয়!”

“না যেতে যেতে বিকেল হয়ে যাবে।তাই এখন বের হবো।”
,
,
,
,
,
,
বাইকে রাফিতের পিছনে তাকে জড়িয়ে ধরে তার পিঠে মাথা রেখে বসে আছি।আর রাফিত বাইক চালাচ্ছে।বাতসে আমার চুলগুলো বার বার উরে মুখে পরছে।খারাপ লাগছেনা।বরং খুব ভালোই লাগছে প্রিয় মানুষটার সাথে এভাবে থাকতে।

বাইকটা বাড়ির পিছনের গেরেজেই ছিলো।কিন্তুু কোথা থেকে আসলো জানিনা।তারই হবে হয়তো।আচ্ছা একবার কি জিজ্ঞেস করবো বাইকটা এখানে কেনো?সেতো এখানে থাকেনা।তাহলে এখানে খামোকা ফেলে রেখেছে কেনো?এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে তার পিঠ থেকে মাথা তুলে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেলাম।না থাক এখন না পরে জিজ্ঞেস করবো।তাছাড়া বাইক চলাকালীন অবস্থায় বাতাসের শব্দের কারণে শুনতেও সমস্যা হবে।

প্রায় অনেক্ষন পর একজায়গায় এসে বাইক থামালো রাফিত।বাইক থেকে নেমে যেটুকু বোঝতে পারছি এটা একটা নদীর কাছে আছি আমারা।জায়গাটা খুব সুন্দর।হালকা বাতাসে কিছুদূরে থাকা কাশফুলগুলোও দুলছে।পানির কলকল শব্দ।বেশ নির্জন জায়গাটা।সন্ধা হতে আর কিছু সময় বাকি মাত্র।তাই রোদটাও আর নেই।তবে সূর্যের ডুবার আগের লাল আভাটা রয়েছে ও আকাশে একদম পরিষ্কার সাদা ছোট-বড় মেঘগুলো মনে হয় একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেয়ে দুই হাত মেলে চোখ একদম নদীর পার ঘেঁষে দাড়লাম।অন্যদিকে যেনো আমার কোনো ধ্যানই নেই।

রাফিত আমার পাশে এসে পকেটে দুই হাত দিয়ে দাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“ফেনী ছোট নদী।”

“হু।” (হাত নামিয়ে তার দিকে ফিরে)”

“হোয়াট ‘হু’!বলেছি এটা ফেনী ছোট নদী।রোজ অনেক মানুষ আসে এখানে ঘুরতে।তবে এই সাইডটায় তেমন কেউ আসেনা।এটা গ্রাম সাইড।মুসাপুরের দিকে এই নদীর ঘাট আছে।তবে আমার কাছে এদিকটাই বেশি ভালো লাগে।এখন সন্ধা হবে তাই এখানটা ফাকা।”

“ওহহ।তবে এখানটাও খুব সুন্দর।আচ্ছা রাফিত আপনি তো এখানে থাকেন না।তাহলে বাইকটা এখানে আসলো কোথা থেকে?”

“ওটা তাহিয়ার জোরাজোরিতে কিনেছিলাম।ওর নাকি বাইক চড়তে খুব ভালো লাগে তাই।প্রায়ই ওকে নিয়ে এখানে আসা হতো।তবে তার মৃত্যুর পর এখানে আর আসিনি।আজ একবছর পর তোমাকে নিয়ে এলাম।”

“আপনাদের ভাইবোনের মধ্যে খুব ভালোবাসা ছিলো তাইনা?”

“হ্যা।আমরা একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।ও আমার কাছে সবকিছুই শেয়ার করতো জানো।তবে কেনো জানি সাদমানের কথাটা সে আমাকে বলেনি।বললে হয়তো আর এমনটা হতোনা।”

বলতে বলতে রাফিতের চোখ দিয়ে দু-তিন ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম,

“চলুন ওখানটায় বসি।”

ঘাসের উপর অনেক্ষন যাবৎ আমি ও সে পাশাপাশি বসে আছি।এই প্রথম তার সাথে আমার এতোটা ভালো লাগছে।নিরবতা ভেঙ্গে আমি বললাম,

“আজ বাসায় যাবেননা?”

“না।”

“মানে!তাহলে কি রাতে এখানেই থাকবেন😳?”

সে হেসে বলল,

“আরে নাহ।এখানে থাকবো কেনো।”

“তবে কোথায় থাকবেন?”

“সেটা নাহয় পরেই দেখতে পাবে।(মুচকি হেসে)”

ইসস কোনো ছেলের হাসিও কি এতোটা সুন্দর হয়।আমি অপলক তার দিকে তাকিয়ে আছি।……………..

to be continued……………..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *