ভালোবেসে তারে !! Part- 10
রাত ৮.০০টা,,,,,,
রাফিতের আসার অপেক্ষায় রুমের বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছি।আমার সব প্রশ্নের উত্তর এখন সেই দিবে।আজ আমি তাকে এড়িয়ে যেতে দিবোনা কিছুতেই।তার জন্য আজ যা করতে হয় দরকার হলে তাই করবো।তাও এই ব্যাটার মুখ থেকে না না মুখ থেকে না মুখ দিয়ে তো শালার ব্যাটা আমাকে বকা ছাড়া কিছু পারেনা।বজ্জাত ব্যাটার পেট থেকে আজ আমি কথা বের করেই ছাড়বো।
আমার ঘোর কাটে দরজা খোলার শব্দে।হ্যা রাফিত এসেছে।কিন্তুু ও ভেতরে ঢুকলো কেমতে?
আরে ধুর ছাতার মাথা আমি বারবার কেনো ভুলে যাই ওর কাছে সবসময় এক্সট্রা চাবি থাকে মূল দরজার(মাথায় এক হাতে বারি দিয়ে)।
রাফিত রুমে ঢুকে আমার দিকে একবার তাকিয়ে গায়ের কোর্ট,টাই খুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আমি খুব বড়সড় একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে তৈরি করে নিলাম।তারপর বসা থেকে উঠে তার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম,
“আপনাকে আমার কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো।”
সে ব্যাস্ত ভঙ্গিতেই বলল,
“যা বলার তারাতারি বলো।আমি ফ্রেশ হবো।”
“কথাটা তাহিয়ার ব্যাপারে।”
এটুকু শুনার পর সে আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো আমাকে মসলা ছাড়া এমনিতেই চিকেন তান্দুরি করে খাবে।তার চোখ দিয়ে যেনো জোয়ালামুখী বের হচ্ছে।সে আমার গাল দুটো এক হাতে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“তোর ঐ নোংরা মুখে যদি আর একবারও আমার বোনের নাম শুনেছি তো তোর ঐ মুখ আমি সুই-সুতো দিয়ে সেলাই করে রেখে দিবো।তুই যদি ভেবে থাকিস গতকাল রাতে আমি তোকে যা বলেছি তা আমি ভুলে গেছি তাহলে তুই ভুল ভাবছিস।আমি অতোটাও ড্রাংক ছিলামনা যে সব ভুলে যাবো।একদিন ভালো করে কথা বলেছি বলে মাথায় উঠে নাচতে শুরু করেছিস তাইনা।বেশি নাচানাচি করিসনা।তোর ঐ পা দুটো ভাঙতে আমার দুই মিনিটও টাইম লাগবেনা।(কথাটা বলে আমার মুখ ধরেই আমাকে সাইডে ধাক্কা মারলো)”
আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যাই।তারমানে গতকাল রাতের কথা তার মনে আছে।আমি তো ভেবেছিলাম ভুলে গিয়েছে।যাক আমার কাজটা এবার আরও সহজ হয়ে গেলো।
সে চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাড়িয়ে আছে।হয়তো রাগ কন্ট্রোল করার চেস্টা করছে।কিন্তুু আমি আজকে তাকে এতো সহজে ছাড়ছিনা।আমার সামনের টি-টেবিলের মধ্যে ফলের ঝুড়ি থেকে ছুরিটা হাতে তুলে নিলাম।তারপর দাড়িয়ে ছুরিটাকে নিজের হাতের শিরা বরাবর রেখে বললাম,
“আপনি যদি আমার প্রশ্নের জবাব না দেন তাহলে আমি আজ নিজেকে শেষ করে দিবো।ভেবে দেখুন কি করবেন।”
মুহূর্তের মধ্যেই রাফিতের রাগ সব হাওয়া হয়ে গেলো ও সেটা ভয়ে পরিণত হলো।সে কাপা কাপা গলায় বলল,
“দিশা কি ক…করছো।প..প্লিজ ওটা ফেলো হাত থেকে। দেখো লে…লেগে যাবে।ফেলো ওটা হ..হাত থেকে।(আমার দিকে এগুতে এগুতে)
” একদম এগুবন না বলে দিচ্ছি।আগে উত্তর দিন আমার সাথে কেনো এমন করছেন?”
“ওকে ওকে তোমার উত্তর চাইতো।বলো কি জানতে চাও?এটাইতো আমি তোমার সাথে কেনো এমন করছি?তোমার দোষ কোথায়?”
“হুম।”
সে কথা বলতে বলতে আচমকা আমার যেই হাতে ছুরিটা ছিলো ঐ হাতটা ধরে ফেললো ও আমার হাত থেকে ওটা ফেলে ঠাসস করে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।তারপর আমাকে তার সাথে চেপে ধরে বলল,
“কেনো তুই জানিস না তুই কি করেছিস।এখন নিজের দোষ ঢাকার জন্য এসব নাটক করছিস তাইনা।ওকে তোর এতোই যখন শখ আমার মুখ থেকে সব শুনবি তাহলে শুন তাহিয়ার লাশ পাওয়া যাওয়ার পর যেখানে ওর রেপ হয়েছিলো ওখান থেকে দুটো ফোন পাওয়া যায়।আর ফোন দুটোর মধ্যে একটা ফোন কার জানিস?তোর।কিন্তুু ওটা বড় বিষয় ছিলোনা।তার থেকেও বড় বিষয় ছিলো তোর ফোনটা থেকে লাস্ট কল যাকে করা হয়েছিল ওটা ছিলো তাহিয়ার বয়ফ্রেন্ডের।যে আরও দুই জনের সাথে মিলে আমার বোনটাকে কষ্ট দিয়ে মেরেছে।তুই যদি এতো ইনোসেন্টই হতি তাহলে তোর ফোন ওখানে কি করছিলো?আর সাদমানকেই বা তুই চিনিস কিভাবে?অপরাধী যতোই চালাক হোকনা কেনো একটা না একটা ভুল সে করেই।যেটা তুইও করেছিস।সেদিন নিজের বোনের লাশের সামনে দাড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম অপরাধীদের খুজে বের করে তাদেরকে নিজের হাতে শাস্তি দিবো।তাই আর পুলিশ কেসও করিনি।দুইজনকে আমি অলরেডি শেষ করেছি।এখন বাকি তুই আর ওই সাদমান।ওকে তো আমি খুজে বের করবোই।আর তোকে তিলে তিলে প্রতিটা মুহূর্তে মারবো আমি।”
এতোক্ষন ধরে চুপচাপ তার কথাগুলো শুনছিলাম।রাফিতের কথা শুনে আমার চোখে বন্যার মতো অশ্রু বইছে।সে এতোটা খারপ মনে করে আমাকে।শেষে কিনা আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের রেপ করাবো।ছি ভাবতেই সারা শরীরে কাটা দিয়ে ওঠছে আমার।আমি কিছু না বলে এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছি।সে আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ জোরেই বলল,
“কি হলো এখন মুখ বন্ধ কেনো তোর?বল এখন কেনো এমন করলি আমার বোনটার সাথে?বল?(দুই হতে আমার বাহু ধরে ঝাকিয়ে)”
আমি এবার কেদে কেদে তাকে বললাম,
“আমি কিচ্ছু করিনি রাফিত তাহিয়ার সাথে।বিশ্বাস করুন।আপনি আমাকে ভুল বোঝছেন।ঐদিন তো তাহিয়া……….”
আমাকে বলতে না দিয়ে সে বলল,
“আর কতো মিথ্যে বলবি?আর কতো?তুই এখন ছুরি দিয়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিলি তাইনা।এখন দেখ তোর কি হাল করি।আমার বোনটা যেই কষ্ট পেয়েছে আজ তোকেও তা পেতে হবে(প্রচন্ড রেগে বলেই সে আমাকে ধাক্কা মেরে বেডে ফেলে দিলো)”
“রাফিত না প্লিজ এমনটা করবেননা আমার সাথে।আমও চাইনা আমাদের সম্পর্কটা এভাবে হোক।প্লিজ রাফিত।”
আমার অনেক আকুতি-মিনতি করার পরও সে আমার কোনো কথাই শুনলোনা।সে তার শার্টের প্রথম তিনটা বোতাম খুলতে খুলতে আমার দিকে এগিয়ে এসে তার শরীরের সম্পূর্ণ ভারটা আমার উপর ছেড়ে দিলো ও আমার ঘাড়ে মুখ ডুবালো।আমি তাকে সরানোর অপ্রাণ চেষ্টা করেও কোনো কাজ হলোনা।তার মতো হাতির সাথে পেরে ওঠা আমার মতো পিপড়ার পক্ষে সম্ভব না।আমি আবারও তাকে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,
“রাফিত সরুন বলছি।প্লিজ সরুন।দেখুন…আহহ”।
সে খুব জোরে আমার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে আমার মুখটা এক হাতের তালু দিয়ে চেপে ধরে বলল,
” এখন কি হলো হে?ভাল্লাগছেনা বুঝি।এটুকুতেই এই দশা।তাহলে পুরো বাসর করলে কি করবি হে?তাছাড়াও তোর মতো নোংরা মেন্টালিটির মানুষের সাথে আমার কিছু করতেও ঘেন্না লাগে।বুঝতে পেরেছিস তুই ঘৃণা করি আমি তোকে।যতোটা ঘৃণা এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে করতে পারেনা ততোটাই ঘৃণা করি আমি তোকে। নেক্সট টাইম এসব ভালো মানুষির নাটক আমার সামনে করতে আসবিনা।মাইন্ড ইট।”
কথাটা বলে সে আমার উপর থেকে উঠে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আমি এখনো ওভাবেই শুয়ে শুয়ে নিরবে কাদছি।তার কথাগুলো আমার কানে এখনো বাজছে।সে আমাকে ঘৃণা করে,আমার কাছে আসতেও তার ঘৃণা লাগে,আমি নোংরা মেন্টালিটির এই কথাগুলো যেনো আমার কলিজাটা ছেদ করে বেরিয়েছে।এবার আমি উবু হয়ে শব্দ করেই কেদে দিলাম।আর পারছিনা আমি এসব সহ্য করতে।তাও যেই অপরাধটা আমি করিইনি ওটার জন্য এতো শাস্তি দিচ্ছে আমায় ও।সব সহ্য হয় কিন্তুু বিনা অপরাধে শাস্তি পাওয়াটা মৃত্যু যন্ত্রণার থেকেও কঠিন আমি মনে করি।
,
,
,
,
,
,
দুই পা তুলে আসাম করে একধ্যানে টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে সোফায় অনেকটা মূর্তির মতো বসে আছি।কাদতে কাদতে চোখের পানিও এখন আর আসছেনা।রাফিত বেলকনিতে আছে।হয়তো সিগারেট খাচ্ছে।আমি এখান থেকে তার গন্ধ পাচ্ছি।
না অনেক হয়েছে তার এসব রং তামাশা।যেই অপরাধ আমি করিনি তার জন্য কিসের শাস্তি পাবো?আমি সোফা ছেড়ে উঠে সোজা বেলকনিতে গিয়ে তার সামনে দাড়ালাম।সে রেপিং চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে।আমি একটানে তার হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে বেলকনির বাইরে ফেলে দিলাম।আমার কান্ড দেখে সে আমাকে রাগী গলায় বলল,
“হোয়াট ননসেন্স দিশা।সিগারেটটা ফেললে কেনো?”
আমিও তাকে রেগে বললাম,
“আপনি আর এসব খাবেননা তাই ফেলেছি।”
“তোমার কোনো অধিকার নেই আমাকে এসব বলার।যাও এখান থেকে।লিভ।”
“অধিকারতো আমার অনেক কিছুরই আছে।শুধু আমি আমার অধিকার এখনো দেখাইনি বলে।যদি দেখাই তাহলে আপনি আমার সাথে এসব কারার সাহস পেতেন না।”
“ওমা তাই নাকি।তা কি করবে তুমি শুনি একটু।(তাচ্ছিল্যের সুরে)”
“আপনি কি মনে করেন কি নিজেকে।যা খুশি তাই করে যাবেন আমার সাথে আর আমি কিছুই বলবোনা কোনো সময়।আপনি নিজের মতো করে আমাকে নিয়ে যা খুশি ভেবে যাবেন তা তো হতে পারেনা।আমাকে কিছু বলার সুযোগটা পর্যন্ত দিচ্ছেননা আপনি।প্রতিনিয়ত আমার সাথে অন্যায় করছেন।আমি যে বলছি আমি কিছু করিনি তাহিয়ার সাথে আপনি বিশ্বাস করাতো দূরে থাক আমার পুরো কথাটাও শুনছেন না।আরে আমি…….”
আবারও সে আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে আমার চুলের মুঠি ধরে রেগে বলল,
“আমি বোঝতে পেরেছি তুই ভালো কথার মানুষ না।যেই মেয়ে আমার সাথে কথা বলতে ভয় পেতো এতদিন সে আজ আমার সাথে এভাবে কথা বলছে।তোকে আবারও মনে করিয়ে দিতে হবে আমি কে।”
♣
আমার হাত খাটের দুই কোনায়,পা,মুখ বাধা অবস্থায় খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি।আর রাফিত আমার সামনে বসে একটা ছুরি নিয়ে একটা ট্রে এর মধ্যে ঘোরাচ্ছে।একটা ফাস্টএইড বক্সও রাখা তার সামনে।তার চেহারার দিকে তাকিয়েই চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার।আমি বোঝতে পরছি এখন আমার সাথে ভয়ানক কিছু ঘটতে চলেছে।ছোটার জন্য ছটফট করছি।কিন্তুু এতেও আমি ব্যর্থ।সে শান্ত গলায় বলল,
“কি হয়েছে সোনা এখন কেনো ছটফট করছো?আগে মনে ছিলোনা।তোমার সাহসটা কমানোর জন্য যে এই ডোজটা তোমকে দিতেই হবে সোনা।(আমার গালে আলতো করে এক হাত রেখে)প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।”
সে আমার এক হাতের বাধনটা খুলে দিলো।সাথে সাথে আমি যেই আমার মুখের বাধনটা খুলতে যাবো সে আমার হাতটা ধরে তার সামনে এনে বলল,
“তুমি তখন এই হাতটাইতো কাটতে চেয়েছিলে না? এখন আমি তোমাকে হেল্প করছি দাড়াও।”
আমি ভয়ে চোখ বড়বড় করে ক্রমাগত মাথা নেড়ে ইশারায় তাকে না করে চলেছি।কিন্তুু সে আমার……………….
to be continued…………