ভালোবেসে তারে !! Part- 09
সে হুট করে আমার পিঠের দিক দিয়ে ব্লাউজের ভিতর হাত ঢুকিয়ে আমার খোলা চুলগুলো আকড়ে ধরলো।তারপর আমার ঠোঁটে তার উষ্ণ ঠোঁটজোড়া মিলিয়ে দিলো।আজ আমিও তাকে বাধা দেওয়ার কোনো চেষ্টা করলামনা।বরং তার সাথে তাল মিলিয়ে ভালোবাসার খেলায় মেতে উঠলাম।দুজনেই যেনো এক অন্য জগতে বিরাজ করছি।ঝরনার পানিও যেনো আজ আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যর্থ।একপর্যায়ে সে আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে দেয়ালের সাথে আমার পিঠ ঠেকিয়ে একদম আমার শরীরের সাথে মিশে তার এক হাত আমার উন্মুক্ত কোমরে ও অন্য হাত আমার ঘাড়ের এক সাইডে রেখে ঘাড়ে মুখ ডুবালো।আমি এক হাতে তার মাথার পেছনের চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে আছি।
রাফিত আজও সেই একই কাজ করবেনাতো?না আজ আমি তাকে আমার ফিলিংস, ইমোশান নিয়ে তাকে খেলতে দিবোনা।তাই আমি তার চুল ছেড়ে তার বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললাম,
“রাফিত ছাড়ুন আমাকে।”
না তার কোনো পাত্তা নেই।
“রাফিত কি করছেন ছাড়ুন বলছি।(আবারও ধাক্কা দিয়ে)
এবারও ফলাফল শূন্য।তাই আমি বাধ্য হয়ে বেশ জোরেই তার বুকে দুই হাত দিয়ে তাকে ধাক্কা মারলাম।হ্যা কাজ হয়েছে।সে দূরে গিয়ে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে।হয়তো এমনটা এই মুহূর্তে সে আশা করেনি।আমি কথা ঘোরানোর জন্য নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“এভাবে ভেজা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।আমি রুমে চেঞ্জ করছি আপনি এখানে করে নিন।”
কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও ওখানে দাড়ালাম না আর না তার দিকে তাকিয়েছি।তাকলে হয়তো তার অবাক হওয়া চেহারাটা দেখতে পারতাম।
,
,
,
,
,
রান্নাঘরে দাড়িয়ে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছি চিংড়ি মাছের খিচুড়ি,আচার আর গরুর মাংস ভুনা।রাফিত সকালে বেশিরভাগই জোস আর ব্রেড খেয়ে অফিসে চলে যায়।তার নাকি সময় থাকেনা।কি আর করার ইজি কাজে বিজি মানুষ।আমিতো তার সাথে কথা বলতেই ভয় পাই খাবার কথা বলবো আবার কখন।তবে আজ আমার স্বাধীনতা দিবস।তাই নো ডর নো ভয় অনলি এ্যাকশান হব্বে।খেতে তো তাকে হবেই।বিকজ দিজ ইজ মাই চেলেঞ্জ।তাও নিজের কাছে হাহহ।
♣
ডাইনিং টেবিলে খাবার সার্ভ করে দুই হাতের কনুই টেবিল ভর দিয়ে গালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে আছি আর বারবার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছি।বোঝলামনা এতোক্ষণ কি করছে রুমে ও।অবশ্য আজ রবিবার।আমি খেয়াল করেছি রবিবার দিন ও একটু লেট করেই অফিসে যায় সবসময়।
হঠাৎ সিড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখি রাফিত হাতে ঘড়ি পরতে পরতে নিচে নামছে।কেয়া লুক হে ইয়ার।হোয়াট এ্যা এটিটিউড ম্যান।হায় মে তো মারজাফা।ওমা একি এতো দেখি আমাকে পাত্তাই দিলানা।সে আমার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে ধেইধেই করে না খেয়েই চলে যাচ্ছে।সে মেইন ডোরের সামনে যেতেই আমি তারাহুরো করে চেয়ার থেকে ওঠে তার সামনে গিয়ে তাকে দুই হাতে বাধা দিয়ে দাড়ালাম ও বললাম,
“আরে আরে মিয়া খারান কই যাইবার লাগছেন এতো খাবাজাবা কইরা?আগে খাইয়া তারপর যান।”
সে আমার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“হোয়াট ননসেন্স দিশা।এইসব কোন ধরনের ভাষা?আর পথ ছাড়ো আমি খাবোনা।দেরি হয়ে যাচ্ছে সরো দেখি।”
সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিলো।কিন্তুু আমিও নাছোড়বান্দা।সে যেই যেতে নিবে আবারও গিয়ে একইভাবে তার পথ আটকে দাড়ালাম।
“কুচ্ছো ধুর মানে কোনো দেরি হচ্ছেনা আমি জানি।তাছাড়াও আপনি যতো তারাতারি খাবেন ততো তারাতারি যেতেও পারবেন।”
“আর যদি না খাই তো।(এক ভ্রু উচিয়ে)”
“তো তো আমি আমি…….(কিছুক্ষন ভেবে চোখ বন্ধ করে একনাগারে বলতে লাগলাম)প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ……………”
একি চোখ খোলে দেখি রাফিত আমার সামনে নেই।তো গেলো কোথায়।টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই দেখি সে কি সুন্দর আরামসে বসে খাচ্ছে।
“উফফ যাক বাবা বাঁচা গেলো(এক হাত বুকে রেখে)”
,
,
তার খাওয়া শেষ হওয়ার পর সে উঠে চলে যাবে তখন আমি বেশ বড়সড় একটা ঘুমটা দিয়ে হাতে টিফিন বক্স নিয়ে তাকে পেছন থেকে আবারও ডাক দিয়ে বললাম,
“ওগো শুনছো খাবারটা নিয়ে যাও গো(মুখে আমার লজ্জা লজ্জা ভাব)”
সে পেছন ফিরে এইবার আমার দিকে অল্প সময় রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো।তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে ঠাস করে টিফিন বক্সটা নিয়ে হনহন করে চলে গেলো।এদিকে আমি হাবলার মতো তার দিকে তাকিয়ে আছি।কি হলো কিছুই বোঝলামনা।আমি তো ভেবেছিলাম আমার উপর এখন ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বোমা ফাটবে।এটাই আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।যাক এখন কাজে লেগে পরো দিশা বাবু।রহস্যমন্ত্রীর রহস্য খুজে বের করতে হবে।
,
,
,
,
বাড়ির পেছন সাইডটায় এসেছি আমি।কিন্তুু এদিকে তো গাছপালা ছাড়া কিছুই নেই।তাহলে রাফিত ঐদিন রাতে এখানে কেনো এসেছিলো।না হার মানলে চলবেনা।কিছু একটাতো পাবোই এখানে।
আমার নজর হঠাৎ অনেকগুলো গাছের সারির দিকে গেলো।গাছগুলো ডালপালায় ভরপুর।দেখে কেনো জানি মনে হচ্ছে ওই গাছগুলোর পেছনে কিছু একটা আছে।আমি আর দেরি না করে ঐদিকে পা বাড়ালাম।
ঠিক যা ভেবেছিলাম তাই।এখানে অল্প কিছুটা জায়গা জুড়ে একটা ঘর রয়েছে।দেখে মনে হয় অনেক পুরোনো ঘরটা।সামনে গিয়ে দেখি দরজায় তালা।এখন কি করি।ঘর যেহেতু আছে জানালাও নিশ্চয়ই আছে।একটু খোজার পর তাও পেয়ে গেলাম।
♣
ঘরের ভিতর ঢুকে আমি অবাক।কারন একটা চেয়ারে দড়ি ঝুলানো ও বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় রক্তের দাগ।।আমার বোঝতে বাকি নেই এখানে কারও মার্ডার হয়েছে।তবে যারই হয়েছে সে অবশ্যই অপরাধীই হবে।এতোকিছু ভাবার সময় নেই।যা করতে এসেছি তারাতারি করতে হবে।রুমটা পুরোই স্টোর রুমের মতো।সব বাতিল জিনিসপত্র।
খোজতে খোজতে একটা পুরনো আলমারির দিকে চোখ গেলো আমার।আলমারি খুলে দেখি এর ভিতরে কিছু পুরনো পুতুল আর খেলনা ছাড়া আর কিছুই নেই।তবে একটা পুরনো বড় গয়নার বক্স আছে।প্রচন্ড কৌতুহলে তারাতারি করে বক্সটা খুলে ফেললাম।এর ভিতর দুটো বন্ধ মোবাইল ও কিছু ছবি রয়েছে।সবগুলোই একটা মেয়ের হাস্যোজ্জল ছবি। তবে মেয়েটাকে কেমন যেনো চেনা চেনা লাগছে।কোথাও তো দেখেছি আমি একে।কিন্তুু কোথায়?(চোখ বন্ধ করে ব্রেনে জোর দিয়ে মনে করার চেষ্টা করছি)হ্যা মনে পরেছে।আরে এতো সেই মেয়েটা না যে এক বছর আগে আমার ফোন চুরি করে পালিয়েছিলো।তবে কি এটাই রাফিতের বোন তাহিয়া।ফোন দুটোর দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখি এখান থেকে একটা ফোন আমার।তাহলে কি আমার সাথে এইসব করার পেছনের মূল কারণ এই ফোন?
একবছর আগে,,,,,,,,
বাসস্ট্যান্ডে বাস আসার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি।এক বাসায় টিউশনের জন্য গিয়েছিলাম।ওখান থেকেই ফিরছি।হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে বলল,
“হাই আপি তোমার ফোনটা কি একটু ইউজ করতে পারি প্লিজ।আসলে আমার ফোনে চার্জ নেই বন্ধ হয়ে গেছে(মোবাইল দেখিয়ে)।খুব ইম্পরট্যান্ট একটা কল করার ছিলো এক ফ্রেন্ডকে।”
আমিও কিছু না ভেবে মানবতার খাতিরে আমার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,
“হ্যা শিউর।”
“থেংকস আপি”
মেয়েটা আমার ফোন নিয়ে কাকে যেনো কল করে বলতে লাগলো,
“হ্যালো সাদমান তুমি কোথায়?
…………….
হ্যা এসে গেছি।
……………
ও হে দেখতে পেয়েছি(খুব খুশি হয়ে কাকে যেনো দূর থেকে হাতে হাই দিলো)
তারপর মেয়েটা ফোন কানে দিয়েই সামনের দিকে দৌড়ে চলে যেতে লাগলো।আর আমি তাকে পেছন থেকে অনেকবার ডাকলামও ফোনটা ফেরত দেওয়ার জন্য।তার খুশিতে কোনো হুশই নেই।দেখলাম আমার থেকে কিছুদূর গিয়ে একটা ছেলের সাথে কি যেনো কথা বলছে।ভাবলাম বোধহয় বয়ফ্রেন্ড।ফোনটা আবার এসে দিয়ে যাবে হয়তো।কিন্তুু মেয়েটা ঐ ছেলের সাথে একটা ব্লাক কারে করে আমার ফোনটা নিয়েই চলে গেলো।তাকে কারে উঠতে দেখে দৌড়ে যেয়ে ফোনটা নিতে চেয়েছিলাম।দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকবার ডাকলামও।কিন্তুু ফলাফল জিরো।সে ততোক্ষণে চলে গেছে।
এখন,,,,,,,
সেদিন মনে করেছি হয়তো মেয়েটা চোর।আর এসব রাস্তাঘাটে চুরি করার ধান্দা।এতো দেখি আরেক কাহিনী।তাহলে ঐদিনই তাহিয়ার রেপ হয়েছিলো।সব কেমন যেনো গোলমাল লেগে যাচ্ছে।
,
,
,
,
রাত ৮.০০টা,,,,,,
রাফিতের আসার অপেক্ষায় রুমের বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছি।আমার সব প্রশ্নের উত্তর এখন সেই দিবে।আজ আমি তাকে এড়িয়ে যেতে দিবোনা কিছুতেই।তার জন্য আজ যা করতে হয় দরকার হলে তাই করবো…………..
to be continued……………….