ভালোবাসি হয়নি বলা

ভালোবাসি হয়নি বলা !! Part- 35

যতক্ষণ ওনাকে দেখা যায় আমি উনার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে আছি আমি লক্ষ্য করলাম উনি ও ততক্ষণ পর্যন্ত আমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ততক্ষণ আমাকে দেখা যায় কিন্তু যখন আড়াল হয়ে গেলাম তখন জানি না উনি হয়তো চলে গেছেন সেখানে থেকে
পরের দিন সকাল বেলা,,,,,,
ঘুম ভেঙে গেল বাইরে অনেক চেঁচামেচি কারণে,
আর চেঁচামেচি হবে না বা কেন বিয়ের বাড়ি বলে কথা।।।
বাইরে চেঁচামেচি তে রুমে শুয়ে থাকতে পারলাম না বাধ্য হয়ে উঠে গেলাম বাহিরে বাহিরে গিয়ে তো আমি অবাক,,,!!!
আমি এই অনি শিলা,,(অনেক জোরে চিৎকার করে)
অনিঃ এই আর আমি তোর সাথে কোন প্রকার কথা নাই
আমিঃ দেখ অভিমান করে লাভ নেই কারণ আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অভিমান করে থাকতে পারবিনা চলে আয় বুকে
আমি বলতে দেরি কিন্তু ওরা দুইজন দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেরি নেই।।
শিলাঃ জানিস তোকে কত মিস করতেছি আমরা কতবার??
আমিঃ থাক আর ঢং দেখাতে হবে না যদি আমাকে এতই মিস করতেই তাহলে দেখার জন্য অন্তত একবার চলে আসতিস এরকম করে সেলফিশের মতো দূরে দূরে থাকিস না

অনিঃ দেখ আমি এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।। এখন তুই বল আমাদের জিজু কেমন মেবি অনেক কিউট এন্ড রোমান্টিক তাইনা??
তারপর ওদের সাথে সবকিছু শেয়ার করলাম।।
অনিঃ ইসসস তোর মত যদি আমার একটা বর থাকতো তাহলে তো মজাই আলাদা হইত।।
আমিঃ টেনশন করিস না হয়ে যাবে আজকে তো মনে হয় উনার অনেক ভাই কাজিন আসবে তাদের মধ্যে একজনকে বেছে নিস কথা বলে দেখব।।
শিলাঃ কথাটা কিন্তু একদম বন্ধ বলিস নি একজনকে বেছে নিতে হবে তাহলে দেখা যাবে যে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে আড্ডা দিতে পারব।।।
আমরা তিনজন জমিয়ে আড্ডা দিতেছিলাম এর মাঝে আম্মু আমাদের রুমে চলে আসল
আম্মুঃ এখানে আর বসে না থেকে সবাই বাহিরে আসো হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করব,,, বর পক্ষ থেকে লোক এসেছে।।।
অনিঃ আন্টি আপনি নিচে যান আমরা দীপাকে নিয়ে আসতেছি।।।
তারপর আম্মু চলে গেল আর আমরা কিছুক্ষণ পরে নিচে চলে আসলাম।।
নিচে এসে দেখি ছোট একটা স্টেজ তৈরি করা হয়েছে আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো,,,
তারপর একে একে সবাই আমাকে হলুদ মাখিয়ে মিষ্টি মুখ করিয়ে যাচ্ছে।।।
বেশ মজাই লাগতাছে অনেকেই আমার সম্পূর্ণ মুখেই হলুদ মেখে দিচ্ছে,,,
সবাই কি খুশি সবাই অনেক আনন্দ করতেছে অনেক মজা করতেছে সবার মুখে হাসি খুশি কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করলাম আমার ভাইটাকে এখনো দেখতে পেলাম না আমি।। আমার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল আমি চারদিকে আমার ভাইকে খুজতে লাগলাম কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না।।।
এইদিকে,,,

ছুটকিঃ এই যে ভাইয়া তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পর আম্মু রাগ হইতেছে আজকে না তোর গায়ে হলুদ তুই এখনো ঘুমিয়ে আছিস তোর কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই।।।
মাহিনঃ চুপ থাকত গায়ে হলুদ তো কি হয়েছে আমি বিয়ে করব না যা ভাগ এখান থেকে
ছুটকিঃ মানে তুই কি বলতে চাচ্ছিস তুই না বললে বিয়েটা করবি এখন তুই বলছিস বিয়ে করবি না মানে তুই কি আব্বু আম্মু আমার মান-সম্মান রাখবি না নাকি
মাহিনঃ সেটা তোকে ভাবতে হবে না আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করিস না যা ভাগ এখান থেকে।
ছুটকিঃ দাঁড়া আমি আম্মুকে গিয়ে বলে দিচ্ছি যে তুই বিয়ে করবি না তারপর দেখ মজা কেমন লাগে তোর।।।
মাহিনঃ বলছি না বিয়ে করবো না তারমানে বিয়ে করবো না তুই এত কথাটা পেচাচ্ছিস কেন যা ভাগ এখান থেকে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করবি না।।
ছুটকিঃ তুই একটু ভেবেচিন্তে কথা বল ঘুমের দেশ থেকে চলে আয়।। একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলিস না।।
মাহিনঃ এখন তুমি কি আমাকে জ্ঞান দিবি নাকি এখান থেকে চলে যাবি নাকি তোকে মাইর লাগাবো কোনটা???
ছুটকিঃ তাও তোকে বলতেছি একটু ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিয়ে বুঝছিস একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলিস না এইভাবে।।।
মাহিনঃ যা ভাগ বলতেছি আমার রুম থেকে।।।

ছুটকি আর কিছু না বলে চুপচাপ আম্মুর কাছে চলে গেল

ছুটকিঃ আম্মু এই দিকে একটু আসো তো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।।

আম্মুঃ তোর আবার কি হইল তোর ভাইয়াকে না তোকে ডাকতে পাঠাইলাম কি বলল??

ছুটকিঃ ভাইয়া এখন বলতেছে বিয়েটা নাকি করবে না।।।

আম্মুঃ কিইইইইই ওর কি মাথা ঠিক আছে না কি পাগল টাগল হইলো ওর জন্য ওর আব্বুকে কত করে ম্যানেজ করলাম আর ও এখন বলতেছে বিয়ে করবে না এটা কি পুতুল খেলা নাকি একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা এটা ঠিক না।।।

ছুটকিঃ আম্মু আমিও ভাইয়াকে কত করে বুঝালাম যে একটা মেয়ের জীবনে খেলিস না কিন্তু ভাই আমার কথা শুনতেছে না তুমি একটু গিয়ে দেখ না।।।

এইদিকে,,,

আমার চোখদুটো শুধু আমার ভাইয়াকে খুজতেছি কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছি না একে একে সব মেহমানরা আমার গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে আমার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ এই নেই কারণ আমার মনটা ছটফট করতেছে আমার ভাইয়াকে দেখার জন্য।।

হঠাৎ করে আমার চোখ আটকে গেল একটা চেয়ারে

দেখলাম আমার ভাইটা ওইখানে বসে আছে

আমি তাকে ইশারা করে ডাক দিলাম আমার কাছে

যেই আমার ছোট ভাইটা আমার কাছাকাছি চলে এসেছে আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম কারণ বুঝতে পারলাম হয়তো সারারাত কান্না করেছে চোখ দুটো কেমন ফুলে গেছে লাল হয়ে গেছে চেহারাটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।।।।

ওর এই অবস্থা দেখে আমার বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না আমার ছোট ভাইকে আমার বুকে টেনে নিয়ে অনেক জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম হয়তো আমার জন্য সে কান্না করতেছে

আমার সাথে সাথে আমার ভাইটা ও কান্না করতে লাগল আর বলতে লাগল

মিলনঃ আপু রে এখন থেকে আমি কার সাথে বাইরে হাটতে বেরোবো কার সাথে আমি দুষ্টুমি করবো কার সাথে রাগ করে অভিমান করে থাকবো,,,, বলতে পারিস আপু???

আমি কিছুই বলতেছি না ওর কথা শুনতেছি আরো অনেক জোরে জোরে কান্না করতেছি কেন জানি আমার চোখের পানি বাদ মানতেছে না আমার বুকটা কেন জানি ধুকপুক করতেছে।।। আচ্ছা মেয়েদের জীবন কেন এমন হয়???

মিলনঃ আপু রে তোকে না দেখলে তোর সাথে একটু কথা না বললে আমার কলিজাটা ফেটে যায় রে আপু আমি সেখানে কি করে থাকবো তোকে ছেড়ে??? বলতে পারিস আপু???

ভাইয়া কথাগুলো বলতেছে আর অনেক জোরে জোরে কান্না করতেছে আমাকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমিও ভাইয়াকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছি আর ভাবতেছি হয়তো তার সাথে আর আমি দুষ্টুমি করতে পারবোনা

চাইলেও আর আমি আমার ভাইটাকে সময় দিতে পারব না কারণ আমি এখন থেকেও অন্যের খাঁচায় বন্দী হয়ে যাচ্ছি

আমার ভাইটা চাইলেও আমার সাথে খুনসুটি ঝগড়াঝাটি করতে পারবে না চাইলেও আমার সাথে হাঁটতে বের হতে পারবে না চাইলেও আমার সাথে কোথাও ঘুরতে যেতে পারবে না

আল্লাহ তুমি মেয়েদেরকে কেন এরকম একটা পরীক্ষার মাঝে ফালায় দাও,,,,

তার দীর্ঘ 20 বছরের মায়া ত্যাগ করে অন্য খানে পাড়ি জমাতে হয় আর সেখানের অপরিচিত মানুষ গুলো কে আপন করে নিতে হয় আর একদম আপন মানুষ নিজের বাবা মাকে ভুলে যেতে হয় কেন?????

মেয়েদের এত বড় শাস্তি দেওয়া হয় কেন কেন কেন???

কান্না করেই যাচ্ছি আমরা দুজন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই অবাক দৃষ্টিতে হয়তো তারা ভাবতেছে এইরকম ভাই বোনের জুটি কয়জনের হয়

আম্মুঃ এই পাগল পাগলি এভাবে কান্না করতিছিস কেন এটাই মেয়েদের জীবন এটা আমাদের কে মেনে নিতে হয় এটাই সমাজের নিয়ম এটাকে খন্ডন করা কারো পক্ষে সম্ভব না আদিকাল থেকে এই রীতিনীতি চলে আসছে এটা আমাদেরকে মেনে নিতেই হবে যেমন আমি একদিন আমার বাবা মাকে ত্যাগ করে অপরিচিত কে আপন করে নিয়েছি ঠিক তেমন তোকেও আমাদেরকে ভুলে গিয়ে তোর শ্বশুর-শাশুড়িকে আপন করে নিতে হবে এটাই বাস্তবতা আর এটাই মেয়েদের জীবন।।।

আম্মু কথাগুলো বলতে বলতে ভাইয়াকে আমার বুক থেকে টেনে আলাদা করে নিল এবং আম্মু ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল

আমার বুকটা হাহাকার করতে লাগল হায়রে জীবন।।।

আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সব মেহমানদের চোখে পানি বুঝতে পারলাম তারা হয়তো অনুভূতি টা বুঝতে পেরেছে।।।

হঠাৎ করে মিউজিক বাজতে লাগলো

আমি সহ সবাই চমকে উঠলাম।।।

এইদিকে, ,,,

আম্মুঃ এই মাহিন তোর কি হয়েছে রে এসব কি কথা কথা বলতেছিস তুই তুই কি একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলতে পারিস এটা কি ঠিক এটাই কি আমি তোকে শিক্ষা দিয়েছি আমরা তাদের কে কথা দিয়ে ফেলেছি।।

মাহিনঃ কথা দিয়েছি তো কি হয়েছে আমি বলছি তো বিয়েটা করবো না তো করবো না আর একটা কথা হবে না এখানে জাস্ট স্টপ।

আম্মুঃ তুই আমার ছেলে হতেই পারিস না কারণ আমার ছেলে এতটাও বেয়াদবি আমার সাথে করে না আর আমি যখন তাকে ঝাড়ি মেরে কথা বলি সে কথা বলার সাহস পর্যন্ত পায়না তুই সেখানে আমার সাথে উল্টা ঝাড়ি মারতেছিস তার মানে তুই আমার ছেলে হতেই পারিস না।।।।

ছুটকিঃ কি বুঝেছো আম্মু তাহলে এই ছেলেটাকে????

মাহিনঃ আরে আম্মু কি বলতেছো আমি তো মাহিন

আম্মুঃ না তুই আমার ছেলে হতেই পারিস না।।

চলবে….