প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 17
আহানা রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলো,হঠাৎ পিছন থেকে তারেক রহমান ডাক দিলেন
.
জি আঙ্কেল বলুন
.
মা আজ আমাদের বাসায় দাওয়াত তোমার,রাতে এসে ডিনার করে যেও
.
আহানা অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা কাশ দিয়ে বললো কি?আমি?
.
হ্যাঁ মা আসিও,ভাবলাম একা একা কি বা খাও,আজ আমাদের সাথে এসে একটু খেয়ে যেও,তোমার আন্টিও এতদিন ধরে কত বলছিল তোমাকে ডাকতে,আসিও কেমন?আমি তো যাচ্ছি বাজার করতে,টাটকা ইলিশ মাছ আর মুরগী আনতে
কথাগুলো বলে দাঁত কেলিয়ে চলে গেলেন তিনি
আহানা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,এই লোকটার হলোটা কি,কাল মুখের উপর দরজা দিয়ে চলে গেছিলো আর আজ আমাকে দাওয়াত দিচ্ছে?আজব তো!
আহানা ভার্সিটি ঢুকতেই দেখলো তাদের ক্লাসে শশী ম্যাম
.
ম্যাম আসবো?
.
হুম আসো
শুনো সবাই! আমি একটা নোটিশ পড়ে শোনাতে এসেছি,নতুনদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান হবে,এত প্রবলেম ছিল এতদিন,আমরা নবীনবরণ অনুষ্ঠানের দিকে খেয়ালই দিই নাই,এ বছর তাই দেরি হয়ে গেলো,নতুন যারা আছে তাদেরকে সিনিয়ররা মিলে বরণ করবে,সব ডেকোরেশনের দায়িত্ব তাদের,সবাই সময়মত আসতে হবে,অনুষ্ঠান হবে ৫তারিখে
বুঝেছো সবাই?
.
জি ম্যামমমম
আহানাদের ক্লাসের সব মেয়ে ঠিক করলো সেদিন হালকা বেগুনি রঙের শাড়ী পরে আসবে
শান্ত ড্রেসকোড লিখে কাগজ তমালের হাতে দিতে গিয়ে থেমে গেলো,তারপর বললো না থাক আমি যাচ্ছি,আমি সব ক্লাসে ড্রেসকোড বুঝিয়ে দিয়ে আসবো
.
আহানাদের ক্লাসে এসে শান্ত নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা তুলে বরাবর আহানার দিকে তাকালো,আহানা রুপার সাথে কথা বলতেসে আর হাসতেসে,আহানা আর রুপা বাদে সবাই শান্তর দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে,ইসস এই ছেলেটা এত সুদর্শন কেন!তার উপর একদিন এক রঙের জ্যাকেট পরে আসে,লাল/সবুজ/খয়েরী/কালো/হলুদ/বেগুনি/নীল,সব জ্যাকেটের কালেকশন মনে হয় ওর কাছেই আছে
যা মানায় না!!মেয়েরা রীতিমত লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে আছে
.
Attention everyone!!
.
আহানা চমকে সামনে তাকালো,শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে ব্রু কুঁচকে কথা বলা শুরু করলো
.
বিভিন্ন ইয়ারের ড্রেসকোড বিভিন্ন রঙের,ফার্স্ট ইয়ারের সব মেয়েরা ঘাড়ো নীল রঙের শাড়ী পরে আসবে,আর ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি পরে আসবে,ওকে?
.
সবাই বললো ওকে
.
আহানার দিকে তাকিয়ে থেকে শান্ত জ্যাকেট ধরে চেইন টানতে টানতে চলে গেলো
.
এই ছেলেটা আমার দিকে এমন করে তাকাই থাকে কেন!
.
ঐ তোর নীল শাড়ী আছে তো?
.
হাসাইলি,যার ২টা জামা তার আবার নীল শাড়ী থাকবে
.
আমার তো নীল শাড়ী একটাই,নাহলে তোকে একটা দিতাম
.
আমি বরং আমার নীল জামাটা পরে আসবো,তাহলেই হবে
.
হুম সেটা ঠিক আছে
.
আহানা রুপার সাথে ঘাসের উপর বসে পানির বোতল হাতে নিলো খাওয়ার জন্য হঠাৎ তমাল এসে রুপাকে আর ওকে ২প্যাকেট কি যেন দিয়ে চলে গেলো
.
কিরে আহানা এইডা কি?
রুপা নওশাদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে জানতে চাইলো এটা কি?
।
নওশাদ শান্তর দিকে ইশারা করে দেখালো
.
এগুলা কি দিসে রুপা?
.
ভিতরে দেখি পেস্ট্রি ২পিস করে,শান্ত ভাই মনে হয় খাওয়াচ্ছে সবাইকে
.
কিন্তু কেন?
.
আমি কি জানি,খুশির ঠেলায় আর কি
.
আচ্ছা এটা কি কাল সকাল পর্যন্ত ভালো থাকবে?ফ্রিজে না রাখলেও?
.
কেন বলতো?
.
এমনি, বল না
.
হ্যাঁ থাকবে তো মনে হয়
.
আহানা মনে মনে খুশি হলো,সে এক পিস কাল সকালের জন্য রেখে দিবে,সেটা খেলে আর ভাত খেতে হবে না
আহানা এক পিস নিয়ে মুখে দিয়ে তো চোখ কপালে তুলে ফেললো,এটা কি রে?এত্ত মজা
.
ওমা তুই জানিস না এটা কি?পেস্ট্রি আর কি
.
কি দিয়ে বানায়?দাম কত?
.
এক পিস ৫৫/৬০টাকা,কেক ও বলা যায়
.
আহানা কেক ও চিনলো না,জীবনে কেক খায়নি সে চিনবে কি করে,তার মানে শান্ত এত টাকা খরচ করে সবাইকে খাওয়াচ্ছে?
শান্ত মনে মনে খুব খুশি হলো আহানার খাওয়া দেখে,সে এতদিনে এটা বুঝেছে যে আহানা ব্রেক টাইমে পানি ছাড়া আর কিছু খায় না, তাই সে স্পেশালি আহানার জন্য পেস্ট্রি অর্ডার করেছে,শুধু আহানাকে দিলে নওশাদ,সূর্য আর রিয়াজ গিলে খাবে ওকে তাই রুপা ও আরও কয়েকজনের জন্যও কিনেছে
আহানা বাকি পিসটা প্যাকেট সহ তার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো
রুপা তার ২পিসই খেয়ে ফেলেছে ততক্ষণে
ছুটি হয়ে গেছে,আহানা আজ আর কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচ দিয়ে যায়নি,অন্য রোড দিয়ে যাচ্ছে,বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে সে
.
হঠাৎই সামনে শান্ত বাইক নিয়ে এসে থামলো
আহানা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
আজ ঐ গাছটার নিচের রোড দিয়ে আসোনি কেন?
.
এমনি,আমার ইচ্ছা😒
.
নীল শাড়ী আছে তো তোমার?
.
আপনি জেনে কি করবেন?
.
শুনো,যদি অন্য রঙ পরেছো তো ভার্সিটি থেকে বের করিয়ে দিব তোমাকে
.
আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি?
.
আহানা পাশ কেটে চলে যেতে নিতেই শান্ত আহানার হাত টেনে আবারও আগের জায়গায় নিয়ে আনলো
.
হাত ছাড়ুন!👿
.
আগে বলো শাড়ী আছে তো?
।
না নেই!জামা আছে,নীল,সেটা পরে আসবো আমি
.
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিলো,যাও এবার
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
শান্ত একটা শপিংমলে আসলো
শাড়ীর দোকানে ঢুকতেই নওশাদ আর রুপাকে দেখে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো
আরে এরা এখানো কি করে,উফ!এখন নওশাদ আমাকে দেখলে ১০০টা প্রশ্ন করবে,শিট!!
.
শান্ত পকেট থেকে মাস্ক নিয়ে পরে নিয়ে দোকানের এক কোণায় চলে গেলো
স্যার আপনার কিছু লাগবে?
.
হুম,নীল শাড়ী দেখান,ঘাড়ো নীল
এটা বলে তার খয়েরী চুলগুলো টেনে চোখের সামনে নিয়ে আনলো যাতে নওশাদ চিনতে না পারে
.
দোকানদার অনেকগুলো শাড়ী দেখাচ্ছে শান্তকে
শান্ত একটা শাড়ী দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো,সেটা ধরতে যেতেই রুপা ছোঁ মেরে নিয়ে বললো এটা আমি নিব নওশাদ,আমাকে কিনে দাও
.
শান্ত এক টান দিয়ে শাড়ীটা নিয়ে হেঁটে চলে গেলো
.
নওশাদ নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো বাঁচলাম,আজ পকেটে টাকা নাই,রুপা আমাকে ফকির করে ছাড়বে
.
কি গো?তুমি লোকটাকে আটকালে না কেন?আমার পছন্দ করা শাড়ীটা নিয়ে চলে গেলো,যাও নিয়ে আসো
.
আরে বাদ দাওও,আরেকটা দেখো,ওটা তো মনে হয় উনি কিনে ফেলেছেন
রুপা মুখ ফুলিয়ে অন্য শাড়ী দেখতে লাগলো
শান্ত শাড়ীটা কিনে চলে যেতে নিতেই আবার কি মনে করে একটা চুড়ির দোকানে গেলো,নীল চুড়ি কিনলো,সাথে নীল গলার আর কানের সেট ও নিলো,হালকা হেসে এক প্যাকেট করলো সব গুলো মিলিয়ে
বাইক নিয়ে বসে আছে সেই কখন থেকে,আহানাকে বাসায় আসতে দেখলে গিয়ে প্যাকেটটা রেখে আসবে সে
আহানা সাড়ে ৬টার দিকে বাসায় ফিরলো,বাসায় ঢুকে জানালা খুলে দিয়ে উঠানে গেলো সকালের ধোয়া জামাটা আনতে
শান্ত চুপিচুপি জানালার সামনে গিয়ে প্যাকেটটা মুড়িয়ে জানালার গ্রিল দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে পালালো
.
আহানা জামাটা এনে গুছিয়ে আলমারিতে রেখে রান্নাঘরে যাওয়া ধরতেই তার চোখ গেলো জানালার পাশে থাকা একটা চকচকে হলুদ প্যাকেটের দিকে
এদিক ওদিক তাকালো সে,মীম আপু নেই,কনিকা আপু ও নেই,তাহলে এটা কে দিলো,তাও আমার বিছানার উপর,যখন বাসায় ঢুকলাম তখন তো এটা ছিল না
আহানা আর দেরি না করে প্যাকেটটা খুললো,ওমা একটা নীল শাড়ী,চুড়ি আর গলার, কানের দুলের সেট,আহানা অবাক হয়ে ওগুলো হাতে নিয়ে বসে আছে,একটা চিঠিও আছে দেখছি!!
সেটাতে লিখা-
প্রিয় আহানা
আমি তোর ভোলার মধ্য চৌরাস্তার ৪র্থ গলির ৫ম বাড়ির ৬ষ্ঠ তম তলার খালাম্মা🐸
তোর জন্য একটা উপহার পাঠাইলাম,পরিস কেমন?
ভালা থাইস🙄
.
আমার খালা?কোথা থেকে আসলো, আমি তো আমার বাবা মায়ের নামই জানি না! খালা আসলো কই থেকে,আর আমার বাসা চিনলো কি করে,চিনলেও দেখা করলো না কেন
যাই হোক,এতসব ভেবে কাজ নেই
আহানা চট করে শাড়ীটা পরে ফেললো,কি সুন্দর পছন্দ আমার পাতানো খালার!!
আহানা সুন্দর করে গুছিয়ে আলমারিতে রেখে দিলো শাড়ীটা
আশ্রমের মায়ের শাড়ীটার সাথের পেটিকোট তো আছে কিন্তু সেটার ব্লাউজ তো লাল
নীল শাড়ীর সাথে তো মিলবে না,আমি এখন ব্লাউজ কই পাবো?
দেখি রুপাকে একটা ফোন করি
.
হ্যাঁ আহানা বল
.
তোর কাছে ২টা নীল ব্লাউজ হবে?আমাকে একটা দিতি
.
হ্যাঁ হবে,আচ্ছা কাল আনবো,তুই না বললি তোর নীল শাড়ী নেই?
.
ছিল না,আমার কোন খালা যেন পাঠিয়েছে
.
ওহ,আচ্ছা
.
আলমারি থেকে আবারও প্যাকেটটা নিয়ে আহানা বসে বসে শাড়ীটাই দেখতেসে কি সুন্দর,শাড়ীর সাথে একটা কাগজ ঝুলতেসে,দামের মনে হয়
আহানা এগিয়ে এসে কাগজটা হাতে নিয়ে দেখতেই চোখ কপালে উঠে গেলো তার
৩হাজার টাকা,আল্লাহ!এত দাম দিয়ে আমাকে শাড়ী না দিয়ে টাকা গুলো আমাকে দিলে আমি অনেক খুশি হতাম
আহানা শাড়ীটা আবার আলমারিতে রেখে দিয়ে তারেক রহমানের বাসায় গেলো
উনার স্ত্রী খুব আদর করলেন,অথচ এতদিন এক গ্লাস পানিও খাওয়ায় নি,আর আজ এত আদর
মুরগী,ইলিশ দিয়ে ১০০টা আইটেম করেছে,মুরগী মনে হয় ২টা এনেছে,মুরগীর কোর্মা,মুরগীর ভুনা,লেগ পিস ২টা আহানার পাতে দিয়েছেন তিনি
আহানা রীতিমত অবাক হচ্ছে আর খেয়ে যাচ্ছে
প্রতিদিন সাদা ভাত আর নুন খেতে খেতে এখন এই খাবার খেতে আহানার কেমন যেন লাগছে
খাওয়া শেষে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো সে
পরেরদিন মিষ্টিদের বাসায় গিয়ে লিফটের ভিতরের বাটনে ৫এ টিপ দিয়ে পাশে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলো আহানা
পাশে শান্ত দাঁড়িয়ে গেমস খেলতেসে
আহানা বুকে থুথু দিয়ে নিজেকে ঠিক করে রেগে বললো
.
কি??এমন চোরের মত দাঁড়িয়ে আছেন কেন?আমি তো খেয়ালই করি নাই আপনাকে!আর একটুর জন্য স্ট্রোক করতাম
.
শান্ত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বললো তুমি তো আমাকে জীবনেও খেয়াল করো না,নিচের দিকে তাকিয়ে লিফটে ঢুকলে কি করে লিফটের ভেতরের মানুষ দেখবা??
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আরেকদিকে ফিরে গেলো
লিফট থেকে নামতে গিয়ে দুজনে মাথায় বাড়ি খেলো দুম করে
.
ইসসস!
তুমি ঠিক করে হাঁটতেও জানো না?
.
আপনি জানেন বুঝি?স্টুপিড!
আহানা চলে গেলো
.
ওমা আমি স্টুপিড? তুমি তাহলে বেয়াদব!!
আহানা মাথা ঘষতে ঘষতে মিষ্টির পাশে গিয়ে বসলো
.
কি হলো মিস তোমার মাথায়?
.
ঐ আসলে বাড়ি খাইসিলাম
.
কারোর সাথে?
.
হুম
.
তাহলে জলদি গিয়ে তার মাথার সাথে আরেকটা বাড়ি দিয়ে আসো নাহলে তোমার শিং উঠবে
.
আরে না এগুলা মিথ্যা কথা
.
না সত্যি বলতেসি আমি,পরশু আমার সাথে আমার ক্লাসমেট সিয়ামের মাথায় ধাক্কা লেগেছিল,এখন দেখো আমার মাথার এ পাশ দিয়ে ফুলে গেছে😭শিং উঠতেসে
.
আহানা হেসে দিয়ে বললো আরে এসব কিছু না
.
তাই নাকি মিষ্টি? তাহলে তো আরেকটা বাড়ি দিতেই হয়!
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
.
হুম আমিও তো মিসকে সেটাই বলতেসি,মিস বিশ্বাসই করে না
.
করবে করবে,যখন শিং উঠবে তখন বিশ্বাস করবে
.
যান এখান থেকে!
.
তোমার বাসা এটা?আমার মিষ্টির বাসা এটা😒
শান্ত গিয়ে সোফায় বসে পড়লো
আহানা গাল ফুলিয়ে মিষ্টিকে ১ঘন্টা ধরে পড়ালো,পুরোটা সময় শান্ত মিষ্টির পাশে বসে নিউজপেপার পড়েছে
আহানা মিষ্টিদের বাসা থেকে বের হয়ে কয়েক কদম হাঁটতেই শান্ত আহানার হাতের কব্জি ধরে এক টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো
.
আহানা ভয় পেয়ে গেলো কিছুটা
.
ফাঁকা করিডোর,ভোরবেলা যেমনটা থাকে আর কি
শান্তর ঠোঁটের কোণে হাসি উজ্জ্বল হয়ে আছে
আহানার আত্না কাঁপতেসে,হাত মুচড়াচ্ছে সে
শান্ত মাথা এগিয়ে এনে আহানার মাথায় এক বাড়ি দিয়ে হেসে আহানার হাত ছেড়ে দিলো
.
যাও,তোমার জন্য তো আর আমি শিং নিয়ে হাঁটাচলা করতে পারি না,পরে আমার বিয়েও হবে না, যাও এখন!
শান্ত আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো
আহানা হা করে দাঁড়িয়ে আছে,কি বলবে,কি করবে কিছুই বুঝতেসে না সে,সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার
শান্ত দাঁড়িয়েই আছে তাকাচ্ছে না আহানার দিকে
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে পিছন ফিরতেই শান্ত এবার তাকালো
আহানা চলে যাচ্ছে,শান্ত মুচকি হাসতেসে ওর দিকে তাকিয়ে
বুয়া সকালের জন্য বুটের ডালের ভাজি,ডিম,চিকেন মাসালা আর রুটি বানিয়েছে,শান্ত সেগুলোর দিকে তাকিয়ে বসে আছে,আহানা তো এখন মনে হয় শুধু ভাত খাচ্ছে
বুয়া!
.
হ্যাঁ বাবা বলেন
.
আমাকে পান্তা ভাত দিন তো
.
কিহ!কিন্তু কেন,কি করবেন?
.
খাবো,কি করবো আর
.
না বাবা,এসব কি মজা হয়নি?অন্য কিছু বানাই দি??
.
না আমি পান্তা ভাত খাবো
.
বুয়া শান্তর জোরাজুরিতে পান্তা ভাত এক বাটি এনে শান্তর সামনে রাখলো,একটু নুন ছিঁটিয়ে দিলো
শান্ত আগ্রহের সাথে এক লোকমা মুখে দিয়ে আর গিলার সাধ্য হয়নি তার,কেশে অনেক কষ্টে গিললো
তারপর চোখ বন্ধ করে বসে রইলো কিছুক্ষন,আহানার খাওয়াটা স্পষ্ট ফিল করতেসে সে
সে তো খুব মজা করে খাচ্ছিলো তাহলে আমার কাছে এটা বিষ মনে হচ্ছে কেন!
বুয়া তুমি কি এই খাবার খাও?
.
হ বাবা,ভাত রয়ে গেলে তো আমি বাসায় লয় যাই,তারপর আমি আমার মাইয়া,আমার পোলা মিলে খাই
.
শান্তর চোখে পানি এসে গেলো,মানুষ কত ফাইট করে এই দুনিয়ায় প্রতিটা দিন কাটায়,আর আমরা উপর থেকে এসব দেখতেও পাই না
দেখার চেষ্টা ও করি না,আমাদের খাবারের ১০ভাগের এক ভাগ তাদের দিলেও তারা সুখে থাকতে পারতো
.
বাবা কি হলো?খাবেন না?আমি যা বানাইসি তা অন্তত খান
.
নাহ! আমার খিধে নেই,এক কাপ রঙ চা পাঠাও
.
রঙ চা?
বাবা আপনার শরীর ভালো তো?সর্দি হয়েছে?
.
কেন?সর্দি হলেই কি রঙ চা খায়?
.
না বাবা,আমরা তো সর্দি হলে খাই,তাই বললাম,কফি আছে তো সেটা বানাই?
.
না,আমি রঙ চা খাব
.
কিরে শান্ত?মদ কি বেশি খেয়েছিস নাকি?কি হয়েছে তোর?এসব কি উল্টা পাল্টা খাচ্ছিস?
.
না এমনি রিয়াজ! মন চাইলো দেশের গরীব মানুষদের খাবার টেস্ট করা দরকার
.
ভাই এসব টেস্ট করতে গিয়ে খুব খারাপ লাগে,কষ্ট হয় তাদের জন্য
.
শান্ত হুম বলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো
সূর্যটা নিচে নামতেসে,পুরো বারান্দা জুড়ে রোদ,শান্ত সিগারেট নিয়ে বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
সিগারেটটা ধরিয়ে মুখ দিয়ে ধোঁয়া আকাশের দিকে ছাড়তেসে সে
এই অনুভূতিটা একটা শান্তি জোগায়,আচ্ছা আহানার কি শাড়ীটা পছন্দ হয়েছে,আমি শাড়ী কিনতে পারি মা বলতো,তার মানে আহানার নিশ্চয় সেটা পছন্দ হয়েছে
মা সবসময় কোনো রিলেটিভকে শাড়ী গিফট করার হলে আমাকে নিয়ে যেতো,আমি বেছে বেছে অানকমনটা খুঁজে দিতাম
.
বাবা!তোমার চা
শান্ত সিগারেটটা ফেলে দিয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে আবার তড়িগড়ি করে নিচে তাকালো,সিগারেটটা ফাঁকা রোডের উপর পড়েছে
ঐদিনের কথা মনে এসে গেলো যেদিন সে আহানার সামনে সিগারেট ফেলেছিল
চায়ের কাপ নিয়ে এক চুমুক দিয়ে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো তার
জীবনে রঙ চা খেয়েছে কিনা মনে নেই, হয়ত খেয়েছি মা থাকতে আজ আবার খেলাম,এত বাজে স্বাদ আর আহানা বললো কফির চেয়ে রঙ চা ভালো
ওর পছন্দ আর আমার পছন্দের সাথে আকাশ পাতাল তফাৎ!
.
নওশাদ বাবা,শান্ত বাবার যেন কি হয়েছে,সকালে এত কিছু বানালাম সেগুলো রেখে পান্তা ভাত খেয়েছে,এখন আবার কফি রেখে রঙ চা খাচ্ছে
.
ও রঙ চা চাইলো আর তুমিও দিয়ে দিলা?তুমি জানো না ওর এই সময়ে কফি না খেলে সারাদিন শরীর খারাপ থাকে,মাথা ব্যাথার জন্য হাঁটতে পারে না!
.
আমি কি করমু,আমাকে ধমক দিয়ে কইলো রঙ চা খাবে
চলবে♥