প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ !! Part- 05

কি সমস্যা আপনার?
আরিফের রুমে রেহান ভাই ল্যাপটপে কাজ করছেন। শাওয়ার নিয়ে রুম থেকে বেরিয়েই দেখি আরিফ কোথাও যাচ্ছে।।
-রেহান ভাই কোথায়?
– আমার রুমে।
– তুই কই যাচ্ছিস? হাতে এগুলো কি?
– ভাইয়ার কি দরকারি কাগজপত্র, কুরিয়ার করতে যাচ্ছি।
কথা না বারিয়ে সোজা আরিফের রুমে চলে আসি।
আমার প্রশ্ন শুনে রেহান ভাই হা করে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললো –
কি সমস্যা মানে?
– এখন আপনাকে মানেও বুঝাতে হবে?
আমি তো আর আপনাকে জ্বালাতন করছি না।আপনার কি এমন অনিষ্ট করেছি আমি?
– এসব কি বলছিস আর কেন বলছিস? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
– অহহহহহো…. উনি এখন কিছু বুঝতে পারছেন না!! উনি সাধু!
– দেখ, হেঁয়ালি করবি না।যা বলার সরাসরি বলবি।
– বিয়ে আপনি ঠিক করেছেন?
– হা। করেছি। তো? কি হয়েছে?
– কি হয়েছে মানে? আমার লাইফ।আমি কাকে বিয়ে করবো না করবো, সেই সিদ্ধান্ত আমি নিবো।
আমাকে একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেননি? আপনার সব সিদ্ধান্ত কেন আমার উপর চাপিয়ে দিবেন?
রেহান ভাই কিছু সময় থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে, ধপাস করে বসে আবার কাজ শুরু করলেন।
উনার এই ভাবলেশহীন ব্যবহার দেখে রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।
টান দিয়ে ল্যাপটপ সরিয়ে নিলাম।
– আরে কি করছিস!!.
ল্যাপটপ সরিয়ে অন্য যায়গায় রেখে বললাম
– আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
– কি উত্তর দিবো।বল।প্রশ্ন কর।
– আপনার প্রব্লেম টা কি জানেন?
– নাতো! কি প্রব্লেম? বল তো।
– আপনার ইগো! আর আপনার মাঝে একটা স্বৈরাচারী মনোভাব। আপনার সিদ্ধান্ত অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চান সবসময়।
– তাই?
– জি।একদম তা-ই। কে বলেছে আপনাকে আমার বিয়ে ঠিক করতে?
– তোকে বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বিদায় করার জন্য বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। উত্তর পেয়েছিস?হ্যাপি? এখন ল্যাপটপ দে।
আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
রেহান ভাই একটু থমকে গেলেন।
– আমাকে পুতুল মনে হয় আপনার?
– কিসব বলছিস।তোকে পুতুল মনে করবো কেন?
– আপনি আমাকে পুতুল ই মনে করেন। না হলে আমার ও মন বলে কিছু আছে সেটা বুঝতে পারতেন।
আমার অনুভূতির কোনো মূল্য আপনার কাছে নেই সেটা জানতাম। কিন্তু আমার ভালো লাগা – মন্দ লাগা, এসবের ভাবনাও নেই।
– ওহহ… আচ্ছা। ছেলে তোর পছন্দ না হলে বিয়ে ভেঙে দেই।
– ছেলে কি করে, কেমন দেখতে, কানা,খোঁড়া যাই হোক দেখবোও না।তবে বিয়ে আমি করবো।এখানেই করবো।
– সেকি কথা। ছেলে কানা,খোঁড়া হবে কেন?? দেখ…..এই দেখ ছেলের ছবি।
মোবাইল থেকে ছবি বের করে চোখের সামনে ধরলেন। একবারও তাকিয়ে দেখিনি।
আমি উনার মুখের দিকে কঠিন মুখে তাকিয়ে দেখছি।
– আমার মনের কোনো মূল্য আপনাদের কাছে নেই। তো বিয়ে এখানেই হবে। তাতে আমি সুখী হই বা না হই!!
– ছেলে খুবই ভালো। হ্যাপি রাখবে সবসময়।
আমি আর একটা কথাও বলিনি।নিজের রুমে চলে আসে দরজা লক করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
মনে হচ্ছে কেউ আমার হৃদপিণ্ড ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে ফালাফালা করছে।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।
দরজায় ধুমধাম শব্দে ঘুম ভাঙলো।
দরজা খুলে দেখি দিয়া,মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।
– তোর আর কোনো কাজ নেই? আমি একটু ঘুমালে তোর কি অশুদ্ধ হয়ে যায় শুনি? সহ্য হয়না?
– এতো মেজাজ দেখাচ্ছিস কেন?
আম্মু ডাকছে। গেস্ট আসছে।
– কিসের গেস্ট?
– আরে ছেলে পক্ষের তারা বিয়ের জন্য যে রিসোর্ট বুকিং দিয়েছিলো সেখানে একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। পুলিশ ব্লক করে দিয়েছে। উনারা হোটেলে উঠতে চেয়েছিলো। কিন্তু আব্বু,ফুপ্পি তারা উনাদের জোর করে বাসায় নিয়ে আসছে।
– বাসায় নিয়ে আসছে মানে?
– আব্বু বলছে দুটো বাড়িতে এতো গুলো রুম খালি পড়ে থাকতে, গেস্ট কেন হোটেলে থাকবে!
– আজিব তো! উনাদের কি বাড়ি ঘর নাই?এসবের মানে কি!!
– তুই দেখি কিছু ই জানিস না! আম্মু বলেনি।
উনারা চিটাগং থেকে এসেছেন ৮/১০ দিন থেকে বিয়ের পরে একেবারে যাবেন। এইজন্য একটা রিসোর্ট বুকিং করেছিলেন।
– আম্মু কই?
– নিচে আছে। তুই তাড়াতাড়ি আয়।
বলে দিয়া চলে গেলো।

নানুবাড়ি থেকে এসে যা হচ্ছে তাতে আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।
বুঝতে পারলাম বিয়ে টা চিটাগং হচ্ছে। নিশ্চয়ই মাহি আপুর হাত আছে এখানে।
ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরুতেই দেখি রেহান ভাইও নিচে যাচ্ছেন।
আমাকে দেখেই বললেন – এখনো যাসনি নিচে!!
আমি কিছু না বলে চুপচাপ নিয়ে চলে আসি।
এসে দেখি ৮/১০ জন মানুষ।
আমাকে দেখে একজন অল্প বয়স্ক মহিলা বললেন – আরে, তুমিই তো হিয়া।
আমি সালাম দিলাম।
– কেমন আছো তুমি?
– ভালো। আপনি?
– অনেক ভালো। আমার একমাত্র দেবরের বিয়ে। আর আমি ভালো থাকবো না।
বলেই মিষ্টি করে হাসলেন।
– মাহির কাছে তোমার অনেক গল্প শুনেছি।আমি রিয়াদের ভাবি।আর এই আমার মেয়ে তিথি।
৭/৮ বছরের মিষ্টি একটা মেয়েকে দেখিয়ে বললেন।।
– এসো বসো আমাদের সাথে।
আমাকে হাতে ধরে নিয়ে গেলেন সবার মধ্যে।
আমি খুব আনইজি ফিল করছিলাম। রেহান ভাই, আম্মু সবাই এখানে।পাশে বসা একটা মেয়ে বললো
– আপু,আমি রাইসা। রিয়াদ ভাইয়ের ছোট বোন।
– কেমন আছো তুমি?
– আমি ভালো আছি।সেদিন যখন এসেছিলাম, তুমি তো ছিলে না।তাই দেখা হয়নি।
– কোন দিন?
– এনগেজমেন্ট এর দিন।আমিও এসেছিলাম আব্বুর- আম্মুর সাথে।
– অহহ।।
না বুঝেই অহহহ বললাম, কিসের এনগেজমেন্ট!! মাথায় ঢুকছে না।
– মাহি ভাবি তো সব সময় তোমার কথা বলে।
– মাহি ভাবি!!!
– আরে দুদিন পরে তো ভাবি ডাকতেই হবে ।
তাই আগেই অভ্যাস করছি।
সবাই রাইসার কথা শুনে হেসে উঠলো।
সবটা ক্লিয়ার এখন। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে মাহি আপুকে খুঁজছি।।
কিন্তু এখানে নেই।রেহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
এই হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।
মাহি আপুর বিয়ে!! কি ভয় দেখালো আমাকে!!
চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *