প্রেমাতাল

প্রেমাতাল পর্ব ৯

লেখা- মৌরি মরিয়ম
আবার এলোযে সন্ধ্যা, শুধু দুজনে।
চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে…”
গানটা শেষ হতেই তিতির বলল,
-“উফফ সত্যি খুব ভাল গান আপনি। আর গানটাও এত জোস। একদম পারফেক্ট এখানে এই পরিবেশে।”
মুগ্ধ হাসলো আর খেয়াল করলো তিতিরের ভয়েসটা একটু অন্যরকম হয়ে গেছে। একদম ঘুমে জড়ানো। তিতির সেই ঘুমু ঘুমু ভয়েসে বলল,
-“সত্যি আমার আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করছেনা এখান থেকে। আচ্ছা, এই গেস্ট হাউজটা সারাজীবনের জন্য ভাড়া দিবেনা?”
মুগ্ধ আবার হেসে ফেলল। বলল,
-“তোমার মাথাটা দেখছি পুরোটাই গেছে। আচ্ছা ভাল কথা.. শোনো, কাল সকাল ৮ টা নাগাদ আমরা নাফাখুমের উদ্দেশ্যে হাটা ধরবো।”
-“সাফি ভাইয়াদের জন্য ওয়েট করবো না?”
-“হুম ৮ টা পর্যন্ত তো ওয়েট করবো। তার বেশি সম্ভব না। বেলা বেড়ে গেলে হাটতে কষ্ট হবে। আর ওদের জন্য এত ভাবতে হবেনা। ওরা ২৬ জন আছে। আমরা দুজন যেসব বিপদে পড়েছি ওরা সেসব বিপদে পড়বে না।”
-“ও।”
-“আচ্ছা, যাও যাও ঘুমাতে যাও এখন।”
তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আরেকটা গান শোনান না প্লিজ! তারপর ঘুমাতে যাব।”
কটেজের বারান্দা থেকেই দেখা যাচ্ছে রেমাক্রি গ্রামের ঘরগুলোতে হারিকেন আর কুপির আলোগুলো মিটিমিটি তারার মত জ্বলছে। কটেজের সামনেই জ্বলছে জোনাক পোকা। আর জ্বলছে তিতিরের জন্য মুগ্ধর বুক!
হঠাৎ মুগ্ধর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। আর সাথে সাথে একটা দুষ্টু গান ধরলো,
“এত কাছে দুজনে প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়!
মায়াবী রাত মাতাল নেশাতে
আজ মনে মোরে চায় যে মেশাতে
দ্বীপ নিভিয়ে ঝড় যে বয়ে যায়..
এত কাছে দুজনে প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়!
আখিতে জ্বলে কামনারই বহ্নি
অঙ্গ যে চায় সঙ্গ যে তন্বীর
মনের কথা মনেই রয়ে যায়..
এত কাছে দুজনে প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়!
আলেয়াকে মিছে ভালবেসোনা
দূরে থাকো কেন? কাছে আসোনা
কোরো না ভুল কে যে কয়ে যায়?”
এত কাছে দুজনে প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়!”
গান গাওয়ার সময় মুগ্ধ ইচ্ছে করেই তিতিরের দিকে তাকালো না। শেষ করে তাকাতেই মুগ্ধ দেখতে পেল তিতির বারান্দার ফ্লোরে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। হায় খোদা! কখন ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটা! বাচ্চা কাকে বলে! লাভ কি হলো ডুষ্টু গানটা গেয়ে? ওর লজ্জা পাওয়াটাই দেখা হলো না। মুগ্ধ ডাকলো,
-“তিতির? এই তিতির?”
তিতিরের কোনো সাড়াশব্দ নেই। মুগ্ধর আর ডাকতে ইচ্ছে করছিল না। কি ইনোসেন্ট যে লাগছিল! মুগ্ধ তিতিরকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর পাশে বসে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। চাঁদের আলোয় ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল। উফ এত কেন ভাল লাগে তিতিরের আনকোরা মুখটা! চুলগুলো এলোমেলো। নিচের ঠোঁটটা সামান্য ভেতরের দিকে ঢুকে রয়েছে। কি মিষ্টি! কি মায়াবী! মুগ্ধর খুব ইচ্ছে করছে তিতিরের কপালে একটা চুমু দিতে! কিন্তু ব্যাপারটা কি ঠিক হবে? তারপর আবার ভাবলো কপালেই তো, ক্ষতি কি! কিন্তু তিতির যদি জেগে যায় আর মাইন্ড করে! করলে করবে। তখন বরং বোঝা যাবে তিতির ওকে ভালবাসেনা। আর যদি জেগে যায় কিন্তু রাগ না করে তাহলেও বোঝা যাবে যে তিতির ওকে ভালবাসে। পরক্ষণেই ভাবলো, ধুর কিসব ভাবছে ও। তার চেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুম দিক। উঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করলো মুগ্ধ। দরজার কাছ পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এল। আবার ওর পাশে বসলো। তারপর নিচু হয়ে তিতিরের কপালে একটা চুমু দিল। নাহ তিতিরের ঘুম ভাঙলো না। ইশ! ঘুম ভাঙা উচিৎ ছিল। নেগেটিভ হোক পজেটিভ হোক ওর এক্সপ্রেশন টা থেকে তো অনেক কিছু বোঝা যেত। কয়েক সেকেন্ড বসে উঠে চলে গেল নিজের ঘরে।
মুগ্ধ চলে যাওয়ার পর তিতির পাশ ফিরে বালিশটা জড়িয়ে ধরলো। হাত পা রীতিমত কাঁপছিল, ঠোঁটে ছিল বিশ্ব জয় করার হাসি! ও ঘুমের ভান করেছিল এতক্ষণ। কারন, মুগ্ধ যেই গান গাইতে শুরু করেছিল তাতে লজ্জায় মরে যেত পরে চোখে চোখ পড়লে। তাছাড়া মুগ্ধর কোলে ওঠার জন্যও এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই। কিন্তু তার সাথে যে ওর ঠোঁটের ছোঁয়াটাও পাবে তা ভাবেনি। এবার ও শিওর যে মুগ্ধ ওকে ভালবাসে। লোভে পড়ে করলে ঠোঁটে করত, অন্য কোথাও করতো। ভালবাসা থেকে করেছে বলেই কপালে করেছে। উফফ, তিতিরের কি যে আনন্দ হচ্ছে!
বিছানায় শুতেই মুগ্ধর খেয়াল হলো তিতির তো ঘুমে, দরজা লাগাতে পারবে না। দরজাটা সারারাত ভেজানো থাকবে? তিতিরকে এতটা আনসেফ রেখে ও ঘুমাতে পারবে না। নিজের খুঁটিনাটি যেসব জিনিসপত্র যা ও বের করেছিল তা আবার ব্যাগপ্যাকে ভরে নিয়ে তিতিরের ঘরে চলে গেল। তিতির টের পেলেও কিছু বলল না। মুগ্ধ ভেতর দরজায় খিল দিয়ে ব্যাগপ্যাকটা ফ্লোরে রেখে ঘরের অন্য বিছানাটায় শুয়ে পড়লো। তিতিরের দিকে আর এক বারের জন্যও তাকালো না। ও মেয়ে না ও একটা মায়াজাল!
খুব ভোরে ঠিকমতো আলো ফোটেনি তখন তিতিরকে ডাকলো মুগ্ধ,
-“এই তিতির, ওঠো ওঠো।”
তিতির একটু কান্নার ভাব করে পাশ ফিরে শুলো। মুগ্ধ তিতিরের মাথায় হাত বুলিয়ে ঝাকি দিয়ে দিয়ে ডাকছিল,
-“এই মেয়ে, ওঠো না প্লিজ। নাহলে খুব মিস করবা। ওঠো ওঠো।”
-“আয়ায়া, আমি ঘুমাচ্ছি তো.. উফফো।”
তিতিরের এই আহ্লাদী কথার সাথে ছিল সেই ঘুমু ঘুমু মাতাল করা ভয়েস! শুনে মুগ্ধর বুকের ভেতরটায় কিছু একটা চুরচুর করে পড়ছিল। ইচ্ছে করছিল ওকে কোলের মধ্যে নিয়ে অনেক অনেক আদর করতে! আবার ডাকলো,
-“ওঠো না। একটু পর নাহয় আবার ঘুমিয়ো।”
তিতিরের কোনো হেলদোল নেই। বাবারে বাবা কি ঘুম! মুগ্ধ তিতিরকে ধরে উঠালো। তারপর বিছানা থেকে নামিয়ে দাঁড় করাতেই লুটিয়ে পড়লো মুগ্ধর বুকে। কাল থেকে বুকের ভেতরটা যে খরায় খা খা করছিল তাতে যেন ঝুমবৃষ্টি নামলো। তিতির ঘুমে পুরো কাদা! মুগ্ধ তিতিরকে বুকে জড়িয়ে ধরেই টেনে টেনে বারান্দায় নিয়ে গেল। মুগ্ধ পারতো ওকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু তাতে তো এতক্ষণ তিতির ওর বুকের মধ্যে থাকতো না! বারান্দায় নিয়ে মুগ্ধ তিতিরের গালে হাত দিয়ে বলল,
-“একবার চোখটা খোলো না.. তিতিরপাখি.. ও তিতিরপাখি.. তাকাওনা একবার।”
তিতির একটু সজাগ হলো। ঘুমে জড়ানো চোখদুটো খুলতেই হালকা আলোয় যেন এক কল্পলোক দেখতে পেল। চারদিকে মেঘ আর নীল, সবুজ পাহাড়ের এক অপূর্ব সমন্বয়। প্রকৃতি যেন এখানে উজার করে রেখেছে এর রূপের ঝাঁপি। ছোট ছোট মেঘের ভেলায় চড়ে কোন এক অপরূপা রাজকন্যা যেন নেমে এসেছে পাহাড় রাজার দেশে। নীল আকাশ হতে সূর্যের আলো যেন সেই রাজকন্যাকে সোনার মুকুট পড়িয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে উষ্ণ পরশে সকলের ঘুম ভাঙাবে বলে।
তিতির তখনও মুগ্ধর বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিল। এসব দেখতেই সোজা হয়ে দাড়ালো। কটেজের সিড়ি বেয়ে নেমে গেল সামনে। এখান থেকেই একপাশে ঘুমিয়ে থাকা রেমাক্রি বাজার দেখা যাচ্ছে। ছোট-খাট একটি বাজার। দোকান প্রায় ৩০ টির মত। বাজারের চারপাশে দোকান আর মাঝখানটা ফাঁকা। আসলে এগুলো প্রত্যেকটি এক একটি বাড়ি। সামনের অংশটুকু দোকান আর পিছনের অংশে তারা বসবাস করে। অন্যপাশে দেখা যাচ্ছে সেই সাঙ্গু নদী। তার ওপাশে গহীন জঙ্গল। আরেকপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। খুব দূরের কিছু দেখা যাচ্ছিল না, হালকা কুয়াশা ছিল। তিতির এসব দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মেঘগুলো সামান্য উপড়ে। উড়ে গিয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। মুগ্ধ পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই তিতির একটা উঁচু পাহাড় দেখিয়ে বলল,
-“আমাকে ওই পাহাড়চূড়াতে নিয়ে যাবেন একবার?”
-“এত ঘুমালে কিভাবে নিয়ে যাব ঘুমকুমারী?”
তিতির এবার আর রাগ করলো না। চোখ বড় বড় করে তাকালো না। মুগ্ধর একটা হাত ধরে বলল,
-“নিয়ে চলুন না ওখানে? যদি সম্ভব হয় আরকি।”
মুগ্ধও ফাজলামো থেকে বেড়িয়ে এসে বলল,
-“আমি তোমাকে ওখানে নিয়ে যাব বলেই ডাকছিলাম। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। জাস্ট ৫ মিনিটে। নাহলে বিশাল মিস হয়ে যাবে।”
তিতির ৩ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে জাস্ট একটা শাল জড়িয়ে চুলগুলোকে হাতখোঁপা করতে করতে বেড়িয়ে এল,
-“চলুন।”
তিতিরের ওই হাতখোঁপা করার দৃশ্যটা মুগ্ধর চোখে আটকে রইলো। এই ছোট ছোট অতি সাধারণ ব্যাপারগুলো কেন যে মুগ্ধর এত ভাল লাগে! আর তিতিরের মধ্যেই বিধাতা যেন সব দিয়ে রেখেছেন যা মুগ্ধ সারাজীবন চেয়ে এসেছে।
মুগ্ধর কাধে ছোট একটা ব্যাগ দেখে তিতির জিজ্ঞেস করলো,
-“ব্যাগ নিচ্ছেন যে? আমারও নিতে হবে?”
-“নাহ, এত কথা বলার সময় এখন নেই। চলোতো।”
-“সময় নেই কেন? আর এত তাড়াহুড়োই বা কেন করছেন?”
-“বলবো, আগে তো চলো।”
মুগ্ধ তিতিরের হাত ধরে ধরে ওকে পাহাড়ের উপড়ে ওঠাচ্ছিল। অনেক খাঁড়া একটা পাহাড়। এটা কোন ট্রেইলের মধ্যে পড়েনা তাই রাস্তাও নেই। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে পা বাঝিয়ে বাঝিয়ে উঠতে হচ্ছে।
প্রায় ২০ মিনিট ওঠার পর ওরা সেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠলো। তিতির উঠেই বসে পড়লো, হাপাচ্ছিল। মুগ্ধ সেই ছোট ব্যাগটা থেকে পানির বোতল বের করে দিল তিতিরের দিকে। তিতির পানি খেয়ে বোতলটা মুগ্ধকে দিয়ে দিল। মুগ্ধ সেটা ব্যাগে রাখতেই তিতির বলল,
-“আপনি পানি খেলেন না যে? তৃষ্ণা পায়নি?”
-“নাহ, এটুকুতেই যদি হাপিয়ে যেতাম তাহলে কি উঁচু উঁচু পাহাড়ে ক্লাইম্বিং করে উঠতে পারতাম?”
-“তার মানে কি আমি কখনো ওসব পাহাড়ে উঠতে পারবো না?”
-“অবশ্যই পারবে। প্রথমেই তো আর কেউ পারেনা। ট্রেনিং নিতে হয়।”
-“ওহ।”
মুগ্ধ হাত বাড়িয়ে বলল,
-“হয়েছে, এবার ওঠো।”
তিতির মুগ্ধর হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। মুগ্ধ তিতিরকে ঘুড়িয়ে দাঁড় করালো। তারপর ওর পাশে দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে একটা পাহাড় দেখিয়ে বলল,
-“শোনো, ওই দিকে তাকিয়ে থাকো।”
হঠাৎ কিছু মেঘ এসে তিতিরের গায়ে লাগলো। আর তিতিরের গায়ের সেই অংশটা ভিজে গেল। তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“এই মেঘ মেঘ! ইশ কি সুন্দর! আমার গায়ে এসে লাগলো।”
-“হুম নোড়োনা। এখনি তোমার গালে লাগবে।”
মুগ্ধর কথা শেষ না হতেই আবার মেঘ এসে লাগালো ওর গালে, মুখে, কানে। তিতির চোখ বন্ধ করে তা উপভোগ করলো। পরেরবার মেঘ আসতেই তিতির ধরতে গেল। আর মেঘ ওর হাতের উষ্ণতা পেয়ে গলে পানি হয়ে গেল। তিতির তা মুগ্ধকে দেখালো। মুগ্ধ হাসলো। মুগ্ধর মেঘের দিকে কোন মনোযোগ নেই। ওর সব মনোযোগ এখন তিতিরের দিকে। মেঘ ও জীবনে অনেক দেখেছে। এখন তিতিরকে দেখার পালা। তিতির বাচ্চাদের মত খালি মেঘ ধরার চেষ্টা করছে। হঠাৎ মুগ্ধ বলল,
-“এই তোমাকে না বললাম ওই পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে থাকো।”
-“কেন ওদিকে কি?”
একথা বলে পাহাড়টার দিকে তাকালো। কিছুই দেখতে পেলনা। তারপর মুগ্ধর দিকে ফিরে বলল,
-“পাহাড় তো সব যায়গা থেকে দেখা যায়। কিন্তু এত কাছে মেঘ কোথাও পাইনি। আমি মেঘই ধরবো।”
মুগ্ধ তিতিরের মাথাটা ঘুড়িয়ে ধরলো সেই পাহাড়টার দিকে। বলল,
-“জাস্ট আর কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকো।”
কয়েক সেকেন্ড পর তিতির দেখতে পেল বিশাল এক সূর্য থালার মত একটা মাথা জাগিয়েছে পাহাড়ের ওপাশ থেকে। তিতির কোনো কথা বলতে পারলো না। কি অসাধারণ! আস্তে আস্তে সূর্যের এক প্রান্ত পুরো পৃথিবীকে তাতিয়ে উপরে উঠছে। আরো একটু উপরে.. তারপর আরো একটু উপরে। এভাবে একটু একটু করে পুরো সূর্যটাই যখন উপরে উঠে গেল তখন তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“সূর্যটা অনেক বড়। একেবারে অন্যরকম! পাহাড়ের সূর্য বুঝি এমন ভয়ঙ্কর সুন্দর হয়?”
-“শুধু পাহাড়ে নয় সূর্যোদয়ের সময় সূর্য সব যায়গাতেই এমন থাকে। কিন্তু শহরের মানুষ সূর্য ওঠার অনেক পরে ওঠে বলে সূর্যের এই রূপের কথা জানতে পারেনা। তাছাড়া ইট পাথরের দেয়ালের ভেতর থেকে এই সূর্যকে দেখার সুযোগ কোথায় বলো? এই রূপটা পাহাড় আর সমুদ্র থেকে সবচেয়ে ভাল উপভোগ করা যায়।”
-“আপনি কি করে আগে থেকে বুঝেছিলেন ওই পাহাড়ের আড়াল থেকেই সূর্যটা উঠবে?”
-“আমি আগেও এখানে এসেছিলাম, কটেজ থেকে দেখে মনে হয়েছিল এখানে এলে মেঘ ধরতে পারবো, তাই এসেছিলাম। এসে হঠাৎই এইরকম সূর্যোদয় দেখে সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। সূর্যোদয় আমি আগেও বহু দেখেছি সমুদ্রের পাড় থেকে, এর চেয়েও অনেক উঁচু পাহাড় থেকে। কিন্তু তবু এই যায়গা থেকে কেন জানি সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছিল।”
-“আপনার সেই ভাললাগাটা আজ আমাকে দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“না না, ধন্যবাদ নেবনা।”
-“তাহলে?”
-“তোমাকে ঋণী করে রাখবো।”
পাহাড়ে ওঠাটা যতটা কঠিন ছিল নামাটা আরো বেশি কঠিন মনে হলো তিতিরের। নিচে তাকাতেই ভয় করছে। এত খাড়া পাহাড়! মুগ্ধ বলল,
-“আরে এভাবে পা ফেলছো কেন? এত ভয়ের কিছু নেই।”
-“ভয়ের কিছু নেই মানে? কোথায় পা ফেলবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”
মুগ্ধ হেসে তিতিরের হাত ধরে ধরে পাহাড় থেকে নামালো। তারপর কটেজের সামনে এসে তিতির নৌকা ঘাটের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
-“দেখুন দেখুন, সাফি ভাইয়ারা আসছে।”
মুগ্ধ তাকিয়ে দেখলো চারটা নৌকা এসে ঘাটে ভিড়েছে। সাফি এবং অন্যরা নৌকা থেকে নামছে। কাঠের ব্রিজটাতে উঠেই সাফি ওদেরকে দেখতে পেল। সেখান থেকেই হেসে হেসে বলল,
-“ভাই শুধু তোর পক্ষেই এটা সম্ভব! হারিয়ে গিয়েও আমাদের আগে এসে বসে আছিস!”
মুগ্ধও হাসি মুখে বলল,
-“আর তুই যেটা করেছিস সেটাও শুধু তোকে দিয়েই সম্ভব।”
ততক্ষণে সাফি ওদের কাছে চলে এসেছে। দুই ভাই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলো। সাফি বলল,
-“আমি তোকে না দেখে ভেবেছিলাম তুই প্রথম গাড়ীতে চলে গেছিস। নিলগিরি গিয়ে দেখি তুই নেই। আর তিতিরও নেই। কি যে ভয় পেয়েছিলাম। পরে দোলা বলল যে ও নাকি শিওর তিতির তোর সাথেই আছে।”
মুগ্ধ সাফিকে ছেড়ে বলল,
-“তুই নিলগিরি গিয়ে টের পেয়েছিস যে আমি নেই! তাহলে বোঝ তুই কোন জাতের ছাগল।”
-“সরি সরি ভাই।”
-“কাল রাতে কোথায় ছিলি? থানচি থেকে না ভোরে রওনা দিয়েছিলি?”
-“হ্যা, ভাই কি আর বলবো ভুল রাস্তায় গিয়ে দুনিয়ার ঘুরলাম।”
-“কেন মাঝিরা রাস্তা চিনে না? আর গাইড নেস নাই?”
-“মাঝিদের কথা কি আর বলবো। একজন বলল কোন রাস্তা দিয়ে জানি শর্টকাট মারবে আর অন্যরাও লাফাতে লাফাতে সেদিকে চললো। গাইডরা নিষেধ করেছিল। ওরা শোনেনি।”
-“বললে আবার শুনবে না কেন?”
-“গাইডও যে কি জুটসে কপালে! তোমার মংখাইরে খালি পায়ে ধরা বাকী রাখছি। সে বলে সে মাত্র নাফাখুম থেকে গেছে সে কোনক্রমেই আসতে পারবেনা।”
মুগ্ধ হেসে দিল। তিতির এতক্ষণ চুপ করে ছিল। তারপর মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“উনি কোন মংখাইয়ের কথা বলছে?”
তিতিরের কথা শেষ হতে না হতেই মংখাইকে দেখা গেল নদী থেকে ব্রাশ হাতে উঠে আসছে। সাফি বলল,
-“ওই মিয়া তুমি না কইলা আসবা না?”
মংখাই দাঁত কেলিয়ে বলল,
-“মুগ্ধ দাদা বললে তো না আসি পারিনা।”
মুগ্ধ মংখাইয়ের কাধ জড়িয়ে বলল,
-“আমার ভাই লাগেনা? না এসে পারবে কি করে?”
মংখাই লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইল। তিতিরের ভাল লাগছিল। মংখাই মুগ্ধর কত ভক্ত। আর সেটা শুধুমাত্র ওর ব্যবহারের জন্যই। ওদের মত মানুষদের এত আপন করে নিতে সবাই পারেনা।
মুগ্ধ বলল,
-“তারপর রাতে কোথায় থাকলি তোরা?” -“সন্ধ্যা নাগাদ কোনক্রমে তিন্দু আসতেই ডুবো পাথরে ধাক্কা লেগে আমাদের নৌকাটা গেল উল্টে। বাকী তিনটা সেফলি ছিল, সামনেই। ভাগ্য ভাল ওই নৌকার সবাই সাঁতার জানতাম আর ওখানটায় পানিও কম ছিল। তাও পাথরে লেগে সবাই কমবেশি ব্যাথা পেয়েছি। তারপর সন্ধ্যা হয়ে গেছে নৌকা চালানোও নিষেধ তাই আমাদের এক গাইড বলল বড়পাথর এলাকায় নদীর একটা অংশে নাকি চর পরেছে। ওখানে থাকা যাবে। তো আমরা সেখানে গিয়েই তাঁবু গাড়লাম। খুব ভয়ে রাতটা পার করেছি ভাই। কতরকম রিস্ক ছিল চিন্তা কর।”
-“তা তো ছিলই। ভালয় ভালয় আসতে পেরেছিস সেজন্য শুকরিয়া কর।”
-“হুম। আল্লাহ বাঁচাইছে।”
-“যাই হোক, জীপ ছাড়ার কথা ছিল বান্দরবান বাস স্ট্যান্ড থেকে ৯ টায়। ছাড়ালি হোটেলের সামনে থেকে ৮ টায়। আমরা তো ৯ টার আগেই বাসস্ট্যান্ড গিয়ে দেখি জীপ নেই। হোটেলে গিয়ে শুনি ১ ঘন্টা আগে চলে গেছিস। আজব ব্যাপার!”
-“আরে আর বলিস না। জীপ ড্রাইভার এসে বলে জীপ রেডি চাইলে আমরা আগেও যেতে পারি। তো আমি দেখলাম সবাই ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে রেডি। তাই ভাবলাম যত তাড়াতাড়ি যেতে পারবো ততই ভাল, রওনা দিয়ে দিলাম। তোরা কিভাবে কিভাবে এলি?”
-“অনেক কাহিনী! সব বলবো আগে ফ্রেশ হয়ে নে তোরা।”
এতক্ষণে দোলাও চলে এসেছে। তিতিরকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলল,
-“আহারে, বোনটা আমার! অনেক কষ্ট হয়েছে না?”
তিতির অযথাই অস্বস্তিবোধ করলো। বলল,
-“না না ঠিক আছি একদম।”
দোলা এবার ওকে ছেড়ে বলল,
-“এই তোমার কাপড় ভেজা কেন?”
তিতির হেসে বলল,
-“আমরা মেঘ ধরতে গিয়েছিলাম। মেঘ আমাদের ভিজিয়ে দিয়েছে।”
দোলা বলল,
-“কোথায়?”
তিতির অাঙুল দিয়ে দেখালো,
-“ওই যে উঁচু পাহাড়টা দেখতে পাচ্ছো ওর চূড়ায় গিয়েছিলাম। সূর্যোদয়ও দেখে এসেছি।”
সাফি বলল,
-“ভাইয়া তুই আবার ওই রিস্কি পাহাড়টাতে গিয়েছিলি? তাও তিতিরকে নিয়ে? তোর কি মাথা খারাপ?”
মুগ্ধ বলল,
-“নো রিস্ক নো গেইন।”
তিতির বলল,
-“আসলেই। রিস্ক নিয়ে গিয়েছিলাম বলেই তো আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যের লিস্টে আরো একটা যোগ হলো।”
-“হ্যা কিন্তু জানের রিস্ক নিয়ে এসব করা উচিৎ না। তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার ফ্যামিলির কাছে কে জবাব দেবে বল?”
মুগ্ধ বলল,
-“আমি জবাব দেব।”
-“ভাইয়া তোর সাহস অতিরিক্ত বেশি।”
-“হুম। কারন আমি জানি আমি ওকে ওখানে সেফলি নিয়ে যেতে পারবো এবং সেফলি নিয়ে আসতে পারবো তাই নিয়ে গেছি। আর ও তোর মত ভীতু না যে অর্ধেকটা গিয়ে ফিরে আসবে। সি ইজ আ পিওর ট্রাভেলার। গত ২/৩ দিন ধরে আমাদের উপর দিয়ে যা গেছে অন্য কোনো মেয়ে হলে ভেঙে পড়তো, কান্নাকাটি করতো, বিরক্ত করতো। হার্ট অ্যাটাকও করতে পারতো। ও বলেই হাসি মুখে স্টেবল ছিল। বিপদকে বলেছে এডভেঞ্চার। ওকে নিয়ে পৃথিবীর যেকোনো দুর্গম যায়গায় চলে যাওয়া যাবে। কোনো প্রব্লেম হবেনা।”
মুগ্ধর মুখে এসব কথা শুনে লজ্জায় কুকড়ে গেল তিতির। সাফি, দোলা মিটিমিটি হাসছিল। মুগ্ধ যে এরেস্ট হয়ে গেছে তা বুঝতে কারোরই বাকী রইল না।
তিতির যে ঘরে ছিল সে ঘরে ঢুকেই দোলা বলল,
-“ভাইয়ার ব্যাগ এখানে? তোমরা একসাথে ছিলে? এত ফাস্ট?”
তিতির কি বলবে ভেবে পেলনা। মুগ্ধ পেছন থেকে দোলার মাথায় একটা গাড্ডা মেরে বলল,
-“চিন্তাটাকে বিশুদ্ধ কর। আর মনটাকে ড্রাই ক্লিনার্সে দে। ওটা নোংরা হয়ে গেছে। সবাই তোর আর সাফির মত না। বাসের মধ্যেই কিসব করছিলি! ছিঃ”
তারপর নিজের ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। দোলা চিৎকার করে উঠল,
-“ভাইয়া!! তুমি সবসময় কেন আমার পিছনে লেগে থাকো?”
-“আমি কোথায় পিছনে লাগলাম? তোমরা তো এক ঘরেই ছিলে! যা দেখেছি তাই বললাম।”
-“হুম। এই ঘুমকুমারী ঘুমিয়ে পড়েছিল দরজা না লাগিয়ে তাই আমি ওনার সেফটির জন্য এঘরে এসে শুয়েছি। অবশ্যই আলাদা বিছানায়।”
বলেই মুগ্ধ বেড়িয়ে গেল। দোলা তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“এই তুমি অস্বস্তি ফিল করছো কেন? আমরা ভাই বোনরা এমনই। সবসময় দুষ্টুমি করতে থাকি। কিছু মনে করোনা।”
-“না না আমি কি মনে করবো? আমি বুঝেছি।”
ওদের সবার মনই মোটামুটি খারাপ হয়ে গেল কারন আর্মি ক্যাম্প হতে শুধু মাফাখুম যাওয়ার পারমিশন মিলেছে। নাইক্ষ্যাং, সাতভাইখুম, ভেলাখুম কোনটারই পারমিশন পায়নি। ওদিকে কোনো জনবসতি নেই, পাহাড়ীরা শুধু মাছ ধরতেই ওদিকে যায় কিন্তু পুরো বর্ষাকাল বৃষ্টির কারনে ওদিকে কেউ যেতে পারেনি। আপাতত কোনো রাস্তা নেই, সব জঙ্গল! মুগ্ধ, সাফি অনেক রিকোয়েস্ট করেছিল জঙ্গল কেটে রাস্তা বানিয়ে যাবে যেহেতু ৫ জন মাঝি ৫ জন গাইড আছে তার উপর ওরাও আছে কোনো প্রব্লেম হবেনা। কিন্তু কোনো কাজ হলোনা। আর্মিরা শুধু নাফাখুম পর্যন্তই পারমিশন দিল।
রেমাক্রি বাজার থেকে নাস্তা করে ৮ টার মধ্যে ওরা রওনা হয়ে গেল নাফাখুম জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে। রেমাক্রি হতে গাড়ি তো দূরের কথা নৌকা ও চলাচল করতে পারে না বলে নাফাখুম পর্যন্ত পুরো রাস্তাটা পায়ে হেটেই যেতে হয়। নাফাখুম যাওয়ার রাস্তাটা বড্ড সুন্দর, ঘন সবুজ পাহাড়ি জঙ্গল, তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে অসম্ভব সুন্দর একটি ঝিরি। ঝিরিপথ ধরে হাটছে সবাই। তিতিরের খারাপ লাগছে। এই কদিন মুগ্ধ আর ও একসাথে ছিল। সারাক্ষণ টুকটাক গল্প করেছে আর আজ দূরে দূরে থাকতে হচ্ছে। দোলা আপু সারাক্ষণ ওর পাশাপাশি হাটছে। মুগ্ধ কাছাকাছিই আছে, কথাও বলছে কিন্তু স্পেশালি ওকে কিছুই বলছেনা। শুধু দৃষ্টি বিনিময় হচ্ছে। ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। সবার সামনে তো আর মুগ্ধ সারাক্ষণ ওর সাথে বকবক করতে পারবেনা। কিন্তু তবু মন মানতে চাইছেনা।
হঠাৎ মুগ্ধ তিতিরকে থামালো,
-“এই দাঁড়াও দাঁড়াও।”
তিতির দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর বলল,
-“কি হয়েছে?”
মুগ্ধ নিচু হয়ে তিতিরের একটা পা ধরে বলল,
-“নড়ো না। জোঁকে ধরেছে।”
তিতির কোন কথা বলল না। কারন ও টের পাচ্ছিল না জোঁকটা ধরলো কোথায়! ব্যাথা তো পাচ্ছেনা। উল্টো দোলা চেঁচিয়ে উঠলো,
-“মাগো এটুকু যেতে না যেতেই জোঁক?”
একটা ছেলে লবন নিয়ে দৌড়ে এল। মুগ্ধ চেনেনা তাকে। মুগ্ধ বলল,
-“না না লবন দিয়েন না। আমি এমনি ছাড়িয়ে দিচ্ছি।”
মুগ্ধ জোঁকটা ধরে টেনে ছুটিয়ে আনলো। এতক্ষণে তিতিরের ব্যাথা লাগলো কারন জোঁকটা কামড়ে ধরেছিল আর মুগ্ধ তা টেনে ছুটাবার চেষ্টা করছিল। সাফি বলল,
-“ভাইয়া, লবন দিলে জোঁকটা একা একাই পড়ে যেত তো।”
মুগ্ধ কোনো কথা বলল না। জোঁকটা ছুটিয়ে ফেলার সাথে সাথে রক্ত পড়তে লাগলো। মুগ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পকেট থেকে রুমাল বের করে পায়ের ক্ষতস্থানটায় বেধে দিয়ে বলল,
-“লবন দিলে জোঁক পড়ে যেত ঠিকই। কিন্তু ইনফেকশন হয়ে যেত। মাসখানেক ভুগতে হতো। এখন তা হবে না। রক্ত এমনি এমনি থেমে যাবে।”
তিতির কিছু বলল না। দাঁতে দাত চেপে রইলো। ওর কিছুই বলার নেই ও জানে ওর সবচেয়ে ভাল হবে যাতে মুগ্ধ তাই করবে।
কিছুদূর যেতেই দেখা গেল ঝিরির পানি অনেকটাই বেশি। মুগ্ধর হাটুর উপর পর্যন্ত যা তিতিরের কোমড় সমান হবে। তিতির বলল,
-“ইশ! পুরো ভিজে যাব। ভেজা কাপড়ে সারাটা দিন থাকতে হবে। আচ্ছা আর কোনো রাস্তা নাই এটুকু পার হওয়ার?”
সাফি বলল,
-“না, এটাই একমাত্র রাস্তা। পাশে তো পাহাড় দেখছোই। আর পাহাড় এবং আটকা যায়গা বলেই তো এখানে পানি জমে রয়েছে।”
মুগ্ধ তিতিরের কাছে গিয়ে নিচু স্বরে বলল,
-“অলরেডি অনেকবার কোলে চড়ে ফেলেছো! আরেকবার কি চড়বে?”
তিতির চমকে তাকালো। মুগ্ধ বলল,
-“আই মিন টু সে তোমার কোন আপত্তি না থাকলে আমি তোমাকে কোলে করে এটুকু পার করে দিতে পারি।”
তিতির লজ্জা পেয়ে গেল। মনে মনে তো নাচছে কিন্তু একথার রিপ্লাই ও কিকরে দেবে? “হ্যা কোলে চড়বো” একথা কি বলা যায়? মুগ্ধ বোধহয় বুঝে নিল। আচমকাই তিতিরকে কোলে তুলে পানির ভেতর দিয়ে হাটা শুরু করলো। তিতির মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরে তাকিয়ে রইলো মুগ্ধর দিকে। এতগুলো মানুষের সামনে মুগ্ধ যদি এতখানি পানির মধ্যে দিয়ে ওকে কোলে করে হাটতে পারে ও কেন পারবে না মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে থাকতে? মুগ্ধও কম না ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল তিতিরের চেয়ে থাকা চোখে। কি যে আনন্দ হচ্ছিল তিতিরের! খানিকটা অহংকারও! অহংকার তো খারাপ, তবু আজ তিতির অহংকার করবে। কেনই বা করবে না? গ্রুপে যে কয়েকটা মেয়ে তাদের সবার সাথে তাদের বয়ফ্রেন্ড আর শুধু একজনের সাথে ফ্রেন্ডরা আছে, তবু সবগুলো মেয়ে কোমড় সমান পানিতে হাটছে। ছেলেগুলো বড়জোড় ওদের হাত ধরে আছে। আর ও একজনের কোলে করে যাচ্ছে! হা করে তাকিয়ে তা সবাই দেখছে। নিজেকে তখন প্রিন্সেস মনে হচ্ছিল!
To be continued….