পূর্ব রোদ !! Part- 11
কথা বলে রোদ নিজেই বোকাবনে গেলো।পূর্ব দাঁত দেখিয়ে হাসলো।রোদ উঠে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো।তখম হঠাৎ রোদের মেবাইল ফোনটা মেসেজের টোনে বেজে উঠলো।পূর্ব মজার ছলে রোদের মোবাইলের দিকে তাকাতেই দেখলো একটি আননোন নাম্বার দেখে মেসেজ এসেছে,”শুভ সকাল।”মেসেজটা দেখে পূর্বের ভ্রু-কুচকে হাসি থেমে গেলো।নিজের অজান্তেই পূর্ব রোদের মেসেজ বক্স চেক করলো।
“তুমি ম্যারিড-আনম্যারিড অপশনে কিছু বললে না কেনো?”
“সরি মেঘ।হয়তো খেয়াল করিনি।কিন্তু আমার নাম্বার কোথায় পেলেন আপনি?”
“ফর্ম পূরণের সময় নাম্বার দিছো মনে নেই?”
“ওহ।”
“তাহলে আমি দিয়ে দিচ্ছি।তুমি তো আনম্যারিড?”
এতোক্ষণ ধরে পূর্ব রোদের মেসেজ বক্স চেক করছিলো।মেসেজের নিচে সময় দেখতে পাচ্ছে।কাল রাত নয়টার সময়ের মেসেজ।কিন্তু রোদ ঐ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে দশটার একটু আগে।উত্তর দিয়েছে,
“হ্যা!আমি আনম্যারিড মেঘ!”
মেসেজটা দেখে পূর্বের মনটা কেমন করে উঠলো।তার মন বার বার মেসেজটা পড়ছে।পূর্ব চেয়েও এর পরের মেসেজগুলা পড়তে পারছে না।হঠাৎ পূর্ব মোবাইলটা বেডে আছাড় দিয়ে বেলকোনিতে চলে গেলো।পূর্বের মন বলছে রোদ ম্যারিড হওয়া সত্ত্বেও ছেলেটাকে মিথ্যাে কেনো বলছে?আর মেঘ ছেলেটার সাথে যে রোদের আজকেই দেখা হয়েছে তা ভালো ভাবেই বুঝছে পূর্ব।তবুও মনটা কেমন কেমন করছে!
।
।
“যাহ বাবা!মোবাইল রেখে গিয়েছিলাম ড্রেসিং টেবিলে আর পেলাম বিছানায়?অদ্ভুত!”
তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে রোদ বিড়বিড় করলো।একহাতে তোয়ালে চুলের সাথে লাগিয়ে মোবাইল হাতে নিলো।মেসেজবক্স ওপেন করতেই জোরে বাথরুমের দরজা লাগানোর শব্দ পেলো।মোবাইলের মেসেজ বক্সে চোখ না রেখে রোদ ব্যাক দিলো।নাহলে রোদ জেনে যেতো পূর্ব মেসেজ সিন করেছে।পূর্ব এভাবে দরজার লাগানো কারণে রোদ বিড়বিড় করে বললো,
“কুত্তা কামড়ায়ছে।কুত্তার মতো বিহেভ করো হরিচন্দন!”
এটুকু বিড়বিড় করে বললেও পরক্ষনে গলা উঁচু করে বললো,
“সারা রাত যে তুলা করছিস এগুলা পরিষ্কার কে করবে?”
বাথরুম পানি ছাড়া পূর্বের কন্ঠ কানে এলো না।রেগেমেগে রোদ বিড়বিড় করে রুম পরিষ্কার করতে লাগলো।রুম পরিষ্কার করে সকালের জন্য নাস্তা তৈরি করতে গেলো।
রান্না ঘরে এসে রোদ এপাশ ওপাশ তাকাতেই উচুতে ময়দার কন্টিনার চোখে পড়লো।রোদ ঠিক করলো আজকে রুটি আর আলুভাজি করবে।যেহেতু কন্টিনার উঁচুতে তাই একটা চেয়ার দিয়ে নেওয়া পরিকল্পনা করলো।পরিকল্পনা অনুযায়ী রোদ একটা চেয়ারের উপর উঠে কন্টিনার ছোঁয়ার চেষ্টা করলো।প্রথমবার ব্যার্থ হওয়ায় রোদ আবার চেষ্টা করলো।তৃতীয় বার ময়দার কন্টিনার দুহাতে ধরে নিতে যাবে তখনি পেছন থেকে পূর্বের কন্ঠ শুনে ইশারায় ডাকতে যাবে তখন পা পিছলে ময়দার কন্টিনারে হাত লেগে ময়দার সাথেই নিচে পরে গেলো।রোদকে পরে যেতে দেখে পূর্ব রোদকে কোমর জড়িয়ে ধরে ফেললো।কিন্তু ততক্ষণে তাদের উপর ময়দা’র বর্ষা হয়ে গেছে।রোদ প্রতিবারের মতো ভয়ে চোখ বন্ধ করে ভয়ার্ত চেহেরা করে রেখেছে।পরে যাওয়ার ভয়ে পূর্বের গলা দুহাতে আঁকড়ে ধরেছে।দুজনের গায়ে ময়দা লেগে আছে।পূর্ব অনুভব করছে রোদের শরীর থেকে একটি মিষ্টি গন্ধ আসছে।যেটা কোনো নেশা থেকে কম নই।পূর্ব আলতো করে রোদকে নিচে নামিয়ে দিলো।
“এএএ!এইটা কী হলো?মাত্র গোসল করে হলাম।আআ!”
“যে কাজ পারিস না ঐটা করতে আছিস কেন?”
“আমি ঠিকই নিচ্ছিলাম তুই আমাকে ডেকে সব এলোমেলো করলি।হরিচন্দন!”
“যাক বাবা।আমি গোসল করিনি ভালোই হলো।”
রোদ ভ্রু-কুচকে পূর্বের দিকে তাকালো।পূর্ব গায়ের ময়দা ঝেড়ে ফেলছে।রোদের মাথা সঠিক বুদ্ধির উদয় হলো।নিজের ভেজা ময়দাযুক্ত চুলগুচ্ছ নিয়ে পূর্বের মুখে বারি দিলো।
কথায় আছে মেয়েদের চুলে নাকি মাতাল করা সুগন্ধি থাকে।কথাটি পূর্ব বিশ্বাস না করলেও আজ মনে হচ্ছে তা সত্যি।রোদ যখন চুল তার মুখে লাগিয়ে ছিলো তখন আবেশে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো।যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।পরক্ষণে রোদের হাসির শব্দে সব অনুভূতি পা গুটিয়ে সুরসুর করে চলে যায়।
“জোশ লাগছে তোকে হরিচন্দন!”
“তোকে সাদা জাদুমন্ত্রী লাগছে।”
“হাহাহাহা।আমি সাদা রানী তুই সাদা রাজা!ইশ রে এতো কিছু কীভাবে পরিষ্কার করবো?”
“তুই এগুলা পরিষ্কার কর আমি গোসল করে আসি!”
কথাটি বলে আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে পূর্ব দৌড়ে চলে গেলো।পেছন পেছন রোদ যেতে চাইছিলো কিন্তু গত কালকের কথা মনে হতে আবার থেমে গেলো।
।
।
“বুঝেছিস হরিচন্দন!আমি রেস্টুরেন্ট থেকে ভালো নুডলস বানাতে পারি।”
রোদের ফিসফিস কথা শুনে পূর্ব ফিক করে হেসে দিলো।রেস্টুরেন্টে এসে নুডলস খেতে খেতে রোদ সেটার বদনাম করছে।পূর্বের হাসি দেখে রোদ আবারো বললো,
“হাসছিস কেনো?সত্যি বলছি।তুই কীভাবে বুঝবি তুই তো কোনোদিন আমার রান্না খাস নি।”
“ভাগ্যিস তোর কথা এই রেস্টুরেন্টের কেউ শুনছে না।নাহলে লাথি দিয়ে তোকে বের করে দিতো সাথে আমাকেও!”
“তাতে ভালোই হবে।এতোক্ষণ ধরে যে খেলাম তার টাকা দিতে হবে না।”
“হাহাহাহা!”
সকালে দু’দুবার গোসল করার পর রোদের হাতে রান্না করার সময় ছিলো না।তাই পূর্বের কথায় কম্পিউটার কোচিং সেন্টারের কাছে সকালের নাস্তা করে নে।রোদের রেস্টুরেন্টে’র খাবার খেতে ইচ্ছে করে না তাই যা তা বলে যাচ্ছে।এসবে উত্তর দিয়ে পূর্ব হু হা করছে।তখনি পূর্বের মোবাইল বেজে উঠলো।মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো তিহানের কল।
“হ্যালো পূর্ব!কই তুই?”
“এইতো যাচ্ছি!”
“ইন্না-লিল্লাহ!এখনো আসতেছিস?ক্লাস শুরু হতে লাগলো।”
“আচ্ছা তুই ক্লাস এটেন্ড কর।আমি রোদকে কোচিং সেন্টারে ছেড়ে আসছি।”
“ইন্না-লিল্লাহ!রোদ তোর সাথে?”
“হুম।বাই!”
“বাই।”
কথা শেষ করে পূর্ব-রোদ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো।তখন রোদ প্রশ্ন করলো,
“ইন্না-লিল্লাহ’র নিজ বাড়ি সিলেট হলে ঢাকায় কার বাসায় থাকতো?”
“ব্যাচেলারে!”
“ওহ।আচ্ছা তুই চলে যা আমি যেতে পারবো।”
“নাহ।তোকে একেবারে পৌঁছে দি।”
“লাগবে না।”
তর্ক করে ওরা দুজন হাঁটতে হাটঁতে কোচিং সেন্টারে এসে পৌঁছায়।তখন পূর্ব রিকশা করে তার কলেজের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে।রোদ সে দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,”তোর সাথে ভালো থাকার মুহুর্তটা আমার জীবনের ডায়েরিতে উল্লেখ করলাম!”
“হ্যালো মিস রোদেলা!প্রথম দিন লেইট করে আসলেন কেনো?”
চেনা কন্ঠস্বর শুনে রোদ পেছন ফিরলো।গত কালকে যার সাথে দেখা হয়েছিলো সে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।রোদ আমতা আমতা করে বললো,
“সকালে ঘুম থেকে উঠতে লেইট হলো।সরি!”
চেহেরা অনেকটা ছোট করে বাচ্চাদের মতো করে “সরি” বললো।ব্যস!কোনো বরফে মতো কঠিন মন গলার জন্য এইটাই যথেষ্ট।মেঘ মুচকি হেসে বললো,
“এভাবে সরি বললে রেগে থাকা যায় না।ছবি এনেছো?’
“হুম।”
।
।
“সরি সরি ইয়ার আজকে এতো প্রথম দিনে এতো লেইট হলো।”
“ইন্না-লিল্লাহ!সরি বলিস তাও আমাক?”
“নাহ।নিজেকে সরি বলি তোর মতো একটা মদন আমার ফ্রেন্ড হয়েছে।”
“কিন্তু তোর লেইট কেনো হলো?ইন্না-লিল্লাহ!ভাবির সাথে ঝগড়া দিস নি তো?”
“আমার ঠ্যাকা পরে নি তোর ভাবির সাথে ঝগড়া করবো।”
“হাহাহাহা!জোক্স অফ দ্যা ইয়ার।তুই ঝগড়া করবি না।হাহাহাহা!”
“উফ।হাসিস না তো আর।”
“হাই!”
ক্লাস শেষ করে পূর্ব আর তিহান লাইব্রেরী’তে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।তখন ক্লাসের একটি মেয়ে তাদের সামনে আসলো।পূর্ব আর তিহান ভ্রু-কুচকে মেয়েটির দিকে তাকালো।পারমিশন না নিয়ে মেয়েটি পূর্বের পাশের বসে পরলো।তারপর নিজে নিজে বলতে শুরু করলো,
“হাই আমি নাবিলা।তোমাদের নাম আমি জানি।তুমি তিহান আর তুমি পূর্ব।কোথা থেকে জেনেছি তা তোমাদের বলবো না।অনেক খুঁজে তোমাদের লাইব্রেরিতে পেলাম।”
“কিন্তু আমাদের খুঁজছিলেন কেনো?” (তিহান)
“ফ্রেন্ডস হবো তাই খুঁজছিলাম।এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”
“ক্লাসে কী কোনো মেয়ে নেই?আমাদের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে হবে কেনো?” (পূর্ব)
“কাম অন ইয়ার।নাবিলা’র চোখ যেটা চাই সেটা নিজে খুঁজে নে।ক্লাসে পূর্ব লুকিয়ে লুকিয়ে এসেছে আমি দেখিছি।”
“কীহ?” (পূর্ব)
পূর্ব শুনেছিলো এই কলেজের রোলস খুব কঠিন।ক্লাস ধেরি করলে খুব কড়া সজা দে।তাই পূর্ব লুকিয়ে পেছন দিকে ঢুকে।কিন্তু এই মেয়েটা জানলো কী করে?
“আজ্ঞে জ্বী।এখন ফটাফট তোমাদের ফেইসবুক আইডি,ফোন নাম্বার আমাকে দিয়ে দাও।”
“ইন্না-লিল্লাহ!আমাদের নাম্বার কেনো আপনাকে দিবো?”
“কারণ না দিলে পূর্বের করা কাজটা আমি টিচার’কে বলে দিবো।সাথে তোমার নামেও মিথ্যাে কথা বললো।”
কথা শেষ করতে মেয়েটা চোখ টিপ দিলো।ভয়ে তিহানের গলা শুকিয়ে এলো।কিন্তু পূর্ব চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো,
“আমাদের নাম কালেক্ট করলে আর নাম্বার পারলে না?”
“তুমি কী বলতে চাইছো আমি নাম্বার কালেক্ট করতে পারবো না?”
“যদি পারতে তাহলে আমাদের কাছে এসে খুঁজতে না।”
“চ্যালেঞ্জ করছো?”
“ধরে নাও।”
“চ্যালেঞ্জ এক্সপেক্ট!চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তোমাদের ফুল ইনফরমেশন আমি নিয়ে নিবো।”
“ডান!আর যদি হেরে যাও?”
“হেরে গেলো নাবিলা তোমাদের সামনে আসবে না।আর জিতলে তোমরা ফ্রেন্ড করবে।ওকে?”
“ওকে।”
নাবিলা চুলগুচ্ছ পেছনে ফেলে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্থান ত্যাগ করলো।তিহাম বিড়বিড় করে “ইন্না-লিল্লাহ” বললো।মুহুর্তে নাবিলা আবার ফিরে এসে ওদের দুজনের সাথে সেল্ফি তুললো।অবাক হয়ে তিহাম জিজ্ঞেস করলো,
“ইন্না-লিল্লাহ!পিক কেনো তুললে?”
“কাজে লাগবে বস!”
পরক্ষণে নাবিলা আবার উদয় হয়ে গেলো।পূর্ব নাবিলা’র দিকে তাকিয়ে বললো,”ইন্টারেস্টিং!”
[চলবে]