তোকে চাই

তোকে চাই !! Part- 39

অবশেষে এডমিশন টেস্টটা শেষ হলো,,অসম্ভব রকম মানুষিক চাপ থেকে বেঁচে গেলাম।।এই কয়দিন শুভ্র আমাকে মারাত্মক পরিমানে জ্বালিয়েছে,,,এইতো সেদিন,,রাতে পড়ছিলাম হঠাৎ উনি সামনে এসে দাঁড়ালেন,,,ট্রে হাতে নির্বিকভাবে দাঁড়িয়ে আছেন,,আমি চোখ তুলে তাকাতেই পাশে বসে পড়লেন,,গম্ভীর গলায় হুকুম ছাড়লেন,,,”হা” করো।।আমি ভ্রু কুচকে বলে উঠলাম,,,”মানে?”

মানে বুঝো না??ওপেন ইউর মাউথ।।

কিন্তু কেন??

কেন মানে?? এসব খাবে তাই,,নাও “হা” করো।।

কয়টা বাজে?(রাগী গলায়)

১ঃ০৫,,

এই মাঝরাতে কেউ ভাত খায়??

উনি আমার কথা শুনে সাথে সাথেই ভাতের প্লেটটা রেখে অন্য একটা প্লেট নিলেন,,,

এবার “হা” করো,,,

এসব কি???

ফ্রুটস,,যা তুমি এখন খাবে,,

আপনি কি পাগল নাকি??আমি খাবো না এখন যান তো,,,,

খেতে তো তোমাকে হবেই,,,বুঝছো এই সময় তোমাকে বেশি মুখস্থ করতে হবে,,,আর তারজন্য বেশি বেশি ক্ষেতে হবে,,,,শুনো তোমাকে কিন্তু আমাদের ভার্সিটিতেই চান্স পেতে হবে,,,এট এনি কষ্ট,,

কেনো??এতো দরকার কিসের???তাছাড়া সেটার জন্য আমাকে এক্সট্রা খাওয়াতে হবে না।।।আমি নিজেও চাই যেনো আমার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স হয়।।।কিন্তু আপনার এতো ব্যাকুলতার কারন কি??(ভ্রু নাচিয়ে)

তোমাকে অন্য ভার্সিটিতে দিয়ে আমি শান্তিতে থাকতে পারবো নাকি??টেনশনে মরে যাবো,,আমাদের ভার্সিটি হলে তোমার সব আপটেড আমার কাছে পৌঁছে যাবে,,,সো প্লিজ সোনা,,,বেশি বেশি খাও আর পড়ো,,,,(করুন স্বরে)

কিন্তু শুভ্রর ইচ্ছে পূরন হয় নি,,,ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়া হয়ে উঠে নি আমার।।জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি,,,এ নিয়ে বেচারা তিন দিন যাবৎ মুখ ফুলিয়ে বসে ছিলো,,,তার নাকি এখনি হার্ট ফেটে যাচ্ছে টেনশনে।।।আপুর এখন ৬ মাস চলছে,,,কেমন একটা গুলুমুলু ভাব চলে আসছে আপুর মধ্যে,,, খুব কিউট লাগে দেখতে।।।আপুকে দেখে মাঝে মাঝে আমারও কনসিভ করতে ইচ্ছে করে,,কতো কিউট একটা অনুভূতি হবে সেটা ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতিতে ছেঁয়ে যায় মন।।।কিন্তু শুভ্রকে বুঝিয়ে লাভ নেই,, তারমাথায় তা কিছুতেই ঢুকবে না।।।প্রথমবার আমার কাছাকাছি আসার পরই উনি আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছিলেন,,,যা দেখে আমি বুঝে গেছি উনি উনার ডিসিশনে অবিচল।।।কিন্তু আমার মারাত্মক ধরনের কাজটা করতে ইচ্ছে করছে খুব।।উনার ডিসিশনকে ওভারটেক করার মতো মারাত্মক কাজ।।।

আজ তিনদিন আমি জানতে পেরেছি যে আমি প্রেগনেন্ট।।অসম্ভব রকম ভালোলাগার সাথে চাপা ভয় ঝেকে ধরেছে আমায়।।আর ভয়টা হলো শুভ্র।।।এতোদিনে এটুকু আমার বোঝা হয়ে গেছে,,, উনি আমার জীবনের সাথে তিল পরিমান রিস্কও নিতে চান না।।।আমাকে হারানোর ভয় তার মধ্যে প্রকট।এই কথাটা বলার পর উনার কি রিয়েকশন হবে ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।। দু’দিন যাবৎ উনাকে বলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বাদ সাধছে গলা,,,কিছু বলতে গেলেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে,,,সমস্ত কথাগুলোকে শুষে নিচ্ছে অন্ধকার গহ্বরে।।বাড়ির সবার মধ্যে খুশি খুশি ভাব,,মাত্র দু’মাসের মাথায় আমাদের জীবনের সাথে একটি নতুন জীবনের পথচলা শুরু হতে যাচ্ছে।।শুভ্রর ও উৎসাহের সীমা নেই,,সে চাচ্চু হবে,,,ছোটো ছোটো হাতে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরবে তা ভাবতেই নাকি তার শরীর শিউরে উঠছে।।সবার আনন্দের মাঝে আমার আনন্দটাই চাপা পড়েছে হাজারো টেনশনের চাপাচাপিতে।।।আমার বিষয়টা কাউকে জানায়নি,,,যেখানে স্বামীকেই জানাতে পারি নি,,সেখানে অন্য কাউকে কিভাবে জানাবো??কাল আপু চট্টগ্রাম থেকে চলে এসেছে,,, কিন্তু ওকেও বলতে পারি নি,,,আসলে বলার সুযোগই হয়ে উঠে নি।।মা হওয়ার অদম্য ইচ্ছেটাকে পূরন করতেই এতোবড় ভয়ানক ডিসিশন নেওয়া,,,,কিন্তু আজ যখন সেই অনুভূতিটা আমার কাছে প্রকট তখনই সাহস গুলো যেনো উড়ে গিয়েছে।।

দুপুরে আপুর সাথে বসে গল্প করছিলাম হঠাৎই শুভ্র এসে টেনে হিঁচড়ে রুমে নিয়ে গেলো।।।উনার চোখ মুখ অসম্ভব রকম লাল।।।উনার এই অগ্নিরূপ আমি আগে কখনো দেখি নি,,ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম।।আপুও হয়তো বেশ ভয় পেয়েছে তাইতো টু শব্দটি পর্যন্ত করলো না।।শুভ্র আমাকে রুমে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দরজা লাগিয়ে দিলেন।।।ঘরে ভয়াবহ নিস্তব্ধতা,,, উনি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিছানার নিচে রাখা প্রেগনেন্সি রিপোর্ট টা ছুড়ে মারলেন আমার উপর।।ভয়াবহ শান্ত গলায় বলে উঠলেন,,,

এসব কি রোদ??

………………………..

আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি রোদ,,,হোয়াট ইজ দিস?(চিৎকার করে)

…..……………………

কেনো করলে এমন?? হোয়াই??মানা করেছিলাম তোমায়,,,করেছিলাম কিনা??তবু এসব কেন??? সে সামথিং ইডিয়ট।।

কথাটা বলেই ড্রেসিংটেবিলের পাশের ফ্লাওয়ার ভাজটা ছুড়ে ফেলে খণ্ডবিখণ্ড করে দিলেন,,,চারদিকে ঝনঝন শব্দটা যেনো প্রতিধ্বনিত্ব করে উঠলো,,,

এতো জেদ???এতো জেদ কিসের তোমার???আমাকে মেরে ফেলতে চাও তুমি??বারবার মানা করার পরও তুমি এই স্টেপটা কি করে নিলে??তবু আমাকে না জানিয়ে??বাচ্চার বাবা যেহেতু আমি জানার অধিকার আমার ছিলো রোদ,,,,কাজটি কি তুমি ঠিক করেছো??

আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছি,,,সত্যি এটাই, আমি ভুল করেছি,, শুভ্রকে জানানো টা উচিত ছিলো আমার,,কিন্তু উনার ডিসিশন টাও তো ভুলই ছিলো।।।উনি হঠাৎই আমার দুই বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে উঠলো,,,

রোদ??প্রতিশোধ নিচ্ছো আমার থেকে??তোমার সাথে রোড বিহেভ করার প্রতিশোধ??তাহলে সেই প্রতিশোধে নিজের জীবন কেনো জড়াচ্ছো??আমাকে মারো,,আমার সাথে যা ইচ্ছে তা করো কিন্তু নিজের সাথে,,,কেনো??তোমার কোনো ধারনা আছে কতোটা টেনশনে থাকি আমি তোমায় নিয়ে।।।আর আজ তো তুমি সেই টেনশন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলে,,,এভাবে তিলে তিলে মারার চেয়ে একবারে মেরে ফেলো আমায় রোদ,,,,

আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি,,,বুকটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে,,উনার কথার প্রতিত্তরে কিছু বলার সাহস আজ আর নেই।।এতোক্ষণে দরজার ওপাশে বাড়ির সবাই এসে দাঁড়িয়েছে।।সবার কন্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট তারসাথে দরজা খোলার আকুতি।।শুভ্র যেন আরো ভরকে গেলো,,,দরজার পাশে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে লাগলো আর ক্রমাগত লাথি দিতে লাগলো,,,

জাস্ট গো ফ্রম হেয়ার,,,যাও এখান থেকে আমাদের মধ্যে আসার চেষ্টাও করবে না,,,গো টু হেল অল অফ ইউ।।

কথাটা বলেই পাশের সোফায় জোড়ে লাথি দিয়ে দিলেন,,,,সোফা মুহূর্তেই উল্টে পড়লো।।।ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে থরথর করে,,,যেনো শরীরের মধ্যে ভূমিকম্প বয়ে যাচ্ছে,,,উনি আমাকে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে সোজা করে দাঁড় করালেন,,,উনার রাগ এখন আকাশচুম্বি,,,,আমার হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন,,,

বাচ্চা,,বাচ্চা,,বাচ্চা।।।আমার থেকে তোর কাছে এই বাচ্চা বেশি বড় হলো???কি আছে এই বাচ্চায়??যে আমার এতো অনুরোধ,, এতো আদেশও তার,কাছে ব্যর্থ হলো।।।কি হলো কথা বল,,,,ভালোবাসি তোকে,,আমার ভালোবাসাটা কেনো বুঝিস না তুই???এতো করে বললাম,,, পারবো না তোকে হারাতে,,,মরে যাবো আমি।।কিন্তু না,,, সেটা বুঝার ক্ষমতা তোর নেই।।শুনে রাখ,,,আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ,,,শুধু “তোকে চাই ” আমার,,,শুধু এবং শুধুই তোকে।।যে বাচ্চাটা এখনো আসেই নি আমার জীবনে তাকে তো চাইই না,,,আর তোমার বিনিময়ে তো কখনোই না,,(চিৎকার করে)

উনার চিৎকার,,, দরজার বাইরের সবার চেঁচামেচি,, আর শরীরের দুর্বলতায় যেনো চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার দেখাচ্ছিলো,,অনেক চেষ্টা করেও দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে উনার বুকে ঢলে পড়লাম,,তারপর কি হয়েছিলো জানি না।।যখন চোখ খুলি তখন আমি বিছানায়,,, আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বসে আছে শুভ্র,,,চোখ মুখ লাল,,,বিশেষ করে ফরসা নাকটা টুকটুকে লাল হয়ে আছে,,,বুঝায় যাচ্ছে কান্না করেছেন।।লোকটা আসলেই পাগল,,এইটুকুর জন্য কান্না করা লাগে বুঝি??চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম,,,মামা,,মামানি,,আপু,,ভাইয়া সবাই আছে,,এমনকি বাবা -মা ও এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে,,সবার চোখ-মুখে খুশি খুশি ভাব,,,শুধু শুভ্র ছাড়া।।।আমি বুঝতে পারছি তার মনটা হাজারো ভয়ে চুপসে আছে।।প্রিয়জনকে হারানোর ভয়।।।আমাকে চোখ খুলতে দেখেই একে একে সবাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কনগ্রাচুলেশন জানালো,,,বাবা-মা তো খুব খুশি,,,,তার দুই মেয়েই মা হতে চলেছে।।মামানির খুশি দেখার মতো,,সে রীতিমতো লিস্ট তৈরি করতে বসে গেছে,,,দুই বাবু আসবে কতো এরেঞ্জমেন্ট।।।সবাই যে শুভ্রকে এক দফা বকাবকি করেছে তা বেশ বুঝতে পারছি।।।সবাই রুম থেকে চলে গেলে,,,শুভ্র মুখ খুললো,,

সরি পুচকি,,,আম সো সরি,,,(ধরা গলায়)

কেনো??সরি কেনো??

তোমার সাথে কতো বাজে ভাবে কথা বললাম,,,আসলে এতোটা রেগে গিয়েছিলাম যে কিছু মাথায়ই আসছিলো না।।।মাফ করে দাও আমায় প্লিজ।।

চুপ করুন তো।।আপনাকে সরি বলতে হবে না,,,,দোষটা আসলে আমার,,আমার এমনটা করা উচিত হয় নি।।।সরি,,

এই পিচ্চি,,,তুমি জানো না তোমার ব্যাপারে আমি কতোটা ভিতু,,, তবু এমনটা কেনো করলে???আজ থেকে ঘুম খাওয়া সব হারাম হয়ে গেলো আমার।।।

আমি চুপচাপ উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি,,এই চোখে আমার জন্য অপরীসীম ভালোবাসা।।।এই ভালোবাসায় মরে গিয়েও শান্তি,,,,,

#চলবে,,,,