ঝগড়া

ঝগড়া !! Part- 07 ( শেষ পর্ব )

রণকে ধাক্কা দিয়ে খাটের উপর ফেলে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।
বেচারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর আমি বাইরে এসে হাসতে লাগলাম,

ডিয়ার বর,
আজ থেকে তুমি দেখবে আমার লজ্জা।

এরপর রণ যখনই আমার সামনে আসে আমি এত্ত বড় লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে লজ্জা লজ্জা দৃষ্টিতে তাকাই ওর দিকে।
আমাকে দেখে মনে হয় আমি যেন লজ্জায় মরে যাচ্ছি।

আম্মু আর বেলা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিকেলের দিকে চলে গেলেন।

মা বলেছিলেন,থেকে যেতে কয়টা দিন।
আম্মু বললেন,আবার পরে এসে থাকবে।

আম্মু রণর হাত ধরে বলে গেলেন,

_আমার মেয়েটাকে আগলে রেখো।
_আপনি কোন চিন্তা করবেন না আম্মু।এখন থেকে ওর সব দায়িত্ব আমার।আমি ওর খেয়াল রাখবো।

_ভাইয়া আমরা আসি।আপনি আপুকে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবেন কেমন?

_খুব শীঘ্রই আসবো।

আম্মুরা চলে যায় আমার মন খারাপ হয়।
মা আমাকে বলেন,

_আমরা আছিনা?মন খারাপ কিসের হুম?
রণ দুই একদিন পরই নিয়ে যাবে তোমাকে।

রাতের খাবার খেয়ে শুতে গেলাম আমরা সবাই।

এদিকে আমি বড় একটা ঘোমটা দিয়ে খাটে গিয়ে শুয়ে আছি।

_ওই মেয়ে ওই,সরাবা তোমার ঘোমটা?
মেজাজ খারাপ হচ্ছে কিন্তু।

_সরেন তো,আমার বুঝি লজ্জা করেনা?
_লজ্জা না?
দেখাচ্ছি আমি লজ্জা আজ তোরে,
দাঁড়া।

এই বলে রণ আমাকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে গেলো।

মনে মনে ভাবছি,হয়তো রোমান্টিক মোমেন্ট কাটাবে তাই।
চাঁদ দেখবে আমাকে নিয়ে,বা গান গেয়ে শোনাবে।গল্প শোনাবে।

কিন্তু ও যা করলো,তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।

আমাকে কোলে নিয়ে ছাদের একেবারে শেষ প্রান্তে নিয়ে গেলো।

_এ কি করছো রণ,পড়ে যাবো তো।

_আর লজ্জা লজ্জা করবি হুম?
লজ্জা কি এখন ভাঙবে নাকি দিবো ফেলে?

একবার ফেলে দিলে,আকাশে গিয়ে লজ্জা লজ্জা করতে হবে তখন।

আমি ন্যাকা কান্না কেঁদে বললাম,তুমি আমাকে মেরে ফেলতে চাও রণ?
এই তোমার ভালবাসা?

নামাও নিচে আমায়।
আমি এখনই চলে যাবো আমাদের বাসায়।

এবার রণ গেলো ঘাবড়ে।

এই মেয়ে কি বলে?এটা দেখি উলটো রিয়েকশন হয়ে গেলো।

_রণ আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে অনেক ক্ষণ রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করলো।

আসলে আমি তো রাগ করার অভিনয় করছি।
রাগি নি।

যখন কান্না কান্না ভাব ছেড়ে,দিলাম হেসে

_ওহ,এত ক্ষণ আমার সাথে মজা করা হচ্ছিলো,না?

দাঁড়াও এবার দেখাচ্ছি মজা আমিও।

রণ আবার আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে নিয়ে যায়।

এমন দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া খুনসুটিতে চলতে থাকে আমাদের সুখের সংসার।

রণ ওর পরিবারের সাথে সাথে আমার পরিবার টাকেও আপন করে নেয়।

আমার চেয়ে বেশি এখন রণই যেন আমার বাসার সবার আদরের।

আব্বু আম্মু এখন রণ ছাড়া কিছুই বুঝেন না।
যেকোন কিছু করার আগে রণর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত জানে।
রণর সাথে ডিসকাস করে।

বেলা ও রণ ভাইয়া রণ ভাইয়া বলে জান দেয়।

আর রণও আম্মু আব্বুকে তাদের ছেলের অভাব টা পূরণ করে দেয়।

হুট করে কখনো কখনো আমাকে নিয়ে রণ আমাদের বাসায় গিয়ে উঠে।

সবাইকে এক রাশ খুশি উপহার দেয়।

কখনো বা আমাকে না জানিয়েই একাই চলে যায় মাছ মাংস,বাজার,ফলমূল নিয়ে তার আম্মু আর ছোট বোনের কাছে।

যখন বাসা থেকে বেলা ফোন দিয়ে আমাকে বলে,

বলো তো আমাদের বাসায় কে এসেছে আপুনি?

আমি উত্তর কি দিবো,
বলি,খালামণি?
_উহু,
_তাহলে?

মামা?

_না।
_তাহলে ফুঁপি?

_তাও না।
_তাহলে কে?

_কে আবার?আমার ভাইয়া এসেছে আমাদের দেখতে।

আমি তখন খুশিতে আমার চোখের জল।মুছি।

সত্যিই।
রণকে পেয়ে আমি যেন আমার পৃথিবীটা পেয়ে গেছি।

কেটে গেছে বিয়ের অনেক গুলো দিন।

আজ আমি জানতে পারি আমি মা হতে চলেছি।

রণর খুশি আর দেখে কে।

আমাকে জড়িয়ে ধরে বর আমার চোখের পানি মুছতে লাগলো।
আর কপালে ছুঁয়ে দিলো ভালবাসার টিপ।

জানো বিন্দু,
আমাদের না লক্ষী একটা মেয়ে হবে।একদম তোমার মত।

_উঁহু,একদম না।
আমাদের দুষ্টু একটা ছেলে হবে।একদম তোমার মত।

_না মেয়ে,
_না ছেলে।

আবার ছেলে মেয়ে করে করে লেগে গেলো আমাদের ঝগড়া।

এখন তো প্রতিদিনের ঝগড়ার টপিক ই এটা।

দেখতে দেখতে কেটে গেছে মাস গুলো।

আজ আমার ডেলিভারি ডেইট।আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো।

নার্স রা আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলো।
রণ যেন ভয়ে,টেনশনে চিন্তায় ভেতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আমাকে কিছুই বুঝতে দিলোনা।

হাসি মুখে কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বল্লো,
কিচ্ছু হবেনা আমার কলিজার।
আল্লাহ্‌ ভরসা।

আমাকে ভেতরে নেয়ার কিছু ক্ষণ পর দুজন নার্স এসে রণকে বল্লো,

কাকে আগে কোলে নিবেন?

ছেলেকে নাকি মেয়েকে?

আপনার এক ছেলে এবং এক মেয়ে হয়েছে।

ওদের দুজনকে পেয়ে আমাদের সংসারে খুশির ঢল নেমে এলো।

ভাবছেন এখন বুঝি আমাদের ঝগড়ার অবসান ঘটেছে,তাইতো?

উঁহু!একদম না।বরং ঝগড়া আরো বেড়ে গেছে।

রণ বলে, বেবীরা দেখতে ওর মত হয়েছে।
আমি বলি,না,আমার মত হয়েছে।

রণ বলে বেবীরা ওকে বেশি ভালবাসে।
আমি বলি,না।আমাকে বেশি।

এদিকে আমাদের ছেলে মেয়ে দুটো মা বাবার ঝগড়া দেখে হাসতে থাকে।

আমরা আর কি করবো,আমরাও তখন ঝগড়া থামিয়ে দিয়ে হাসতে থাকি।

আমাদের রণন,আর রণিতা কিন্তু মামা আর খালামণিদের/চাচ্চু আর ফুঁপিদের এত্ত গুলা ভালবাসা জানিয়েছে।লাভ ইউ বলে দিয়েছে।
তোমরা সবাই ওদের ভালবাসা নিও।আর ওদের জন্য দোয়া করো।কেমন?
টা টা,আল্লাহ্‌ হাফেজ।

(সমাপ্ত)

#গল্পটি কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।
দেরি করে দিয়েছি এবারের পর্ব গুলো।তার জন্য এত্ত গুলা সরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *