জুনিয়র বর!! -লেখাঃ রায়হান আহমেদ
আজকের দিনটি অন্য রকম লাগছে। অন্য
রকম অনুভুতি।
আজ সোমবার, বরাবরই এই দিনটি আমার
জন্য শুভ হয়ে আসে।
আজ আমার বিয়ে। পরিবারের মতামতেই
বিয়েটা হচ্ছে,বাবার বন্ধুর ছেলের
সাথে।
যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে সে আমার
অনেক পরিচিত। বলতে গেলে বন্ধুর মতো
সম্পর্ক। প্রায়ই আমাদের বাড়িতে উনারা
আসতেন। আমরা গ্রামে বাস করি। আর
উনারা শহরে।
যথাক্রমে বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের
আগে কিছু কানাঘুষো হচ্ছিলো। কি
বিষয়ে জানিনা।
কিছুক্ষন পর আমাকে নিয়ে গিয়ে বরের
পাশে বসালেন।
আমি তো আমার পাশের ছেলেকে দেখে
আমি অবাক হয়ে গেলাম। সে আমার
দেবর।
আমি চুপিচুপি ওকে বললাম কি রে লাড্ডু,,
আমার বরের স্থানে তুমি বসে আছো যে,,?
আমার কথায় ও মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আমি ওর এমন ভাব দেখে চুপ করে আছি।
অপেক্ষারত ছিলাম বরের জন্য।
এভাবে প্রায় ত্রিশ মিনিট কেটে
গেলো। আমার এক আপু এসে অভিকে আর
আমাকে খাইতে নিয়ে গেলো। বুঝলাম
ভাবির সাথে দেবর ও খাবে কিন্তু আমার
বরটা কই?
আমি আপুকে ফিসফিস করে বললাম আপু বর
কই,,?
আপু বললো কেন তোর সাথেই তো,,
আপুকে বললাম এখন কিন্তু ফানি মুডে নেই
আমি।
আপু বললো আজব তো, তোর বর নিয়ে মজা
করবো কেনো,,আমি তোর বড় আপু
না,,বোকা মেয়ে।
আমি চিন্তায় পরে গেলাম, কি হচ্ছে
এসব,,?
আমি অভির দিকে তাকালাম ও আবারো
দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।
এরপর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পেলাম
না।
আমি সব ছেড়ে নিজের রুমে গেলাম।
আচমকা আমার এভাবে উঠে যাওয়াতে
সবাই আমার দিকে কেমন জানি ভাবে
দেখছে, মনে হয় আমি বিরাট কোনো ভুল
করে ফেলেছি।
আমি রুমে গিয়ে আম্মুকে ডাকলাম, আম্মু
আব্বু দুজনই আসলো।
আমি কিছু বলার আগেই আব্বু বললো,যেসব
হইছে সব আমার মর্জিতেই হইছে।
আমি আব্বুকে বললাম আব্বু অভি আমার
তিন বছরের ছোট।
এরমধ্য দেখি আমার শ্বশুর শাশুড়ি ও এসে
গেছেন। উনারা আমার মাথায় হাত রেখে
আমাকে সান্তনা দেয়ার অপচেষ্টা করছে।
আমি কিভাবে অভিকে সামী হিসেবে
মেনে নিবো। আর অভিও এ বিয়েতে খুশি
না। সেটা ওকে দেখেই বুঝতে পেরেছি।
অনিক এমন করলো কেন?
অনিকের কথা এখানে কেউ বলছেনা।
কারন কি?
সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো এক
মুহুর্তেই।
এরপর আমাকে বিদায় দিয়ে দিলো আমার
বাড়ির লোকজন।
আমি কাঁদতে কাঁদতে শ্বশুরবাড়ি এলাম।
রাস্তায় একটা কথা অব্দি অভি বলেনি।
যে ছেলে আগে বউ বউ বলতে বলতে
আমাকে বিরক্ত করে তুলতো আজ যখন তার
সে ডাক বাস্তবে রুপ নিয়েছে তখন সে
চুপটি করে আছে,,!
আসলে মেনে নিবে কিভাবে,,, সিনিয়র
বউ কেউ চায় নাকি,,?
শ্বশুরবাড়িতে এসে শুনতে পাই অনিক এক
মেয়েকে ভালোবাসতো তাকেই
পালিয়ে বিয়ে করেছে আজ সকালে।
বউ দেখার পর্ব শেষে আমাকে অভির রুমে
রেখে গেলো।
রাত দুটা বাজে। কিন্তু এখন অব্দি আমার
পিচ্চি বরের আসার কোনই খবর নেই।
একে তো নতুন পরিবেশ,, বেশ থমথমে তার
উপর অনাকাঙ্ক্ষিত পাওয়া,,,সব মিলায়ে
কেমন জানি অস্থির লাগছিলো।
আমার সাথেই কেনো এমন হয়ে গেলো,,?
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে
ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতে পারিনি।
ভোরের দিকে একবার জেগেছিলাম,
তখনো অভি রুমে আসেনি। এরপর আবার
ঘুম,,,
সকালে শাশুড়ি মা এসে আমাকে ডেকে
তুললেন। তারপর ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে
গেলাম। এসে দেখি একটা মেয়ে লম্বা
ঘোমটা টেনে কি যেন রান্না করছে।
আমাকে নিয়ে গিয়ে শাশুড়ি মা
অনেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
এরপর আমাকে ওই ঘোমটাপরা মেয়েটির
কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন ওই মেয়ে
অনিকের বউ। আর আমাকে দেখিয়ে
সযত্নে বললেন এটা আমার ঘরেরলক্ষ্মী
বৌমা, অভির বউ। বুঝতে পারছিলাম
শাশুড়ি মা ওই মেয়ের চেয়ে আমাকেই
বেশি ভালোবাসে।
মেয়েটি আমার নাম জিজ্ঞেস করলো।
মেয়েটির পরিচয় জেনেই মেজাজ আমার
একশো এক এ উঠে গেছে, আর ওকে আমি
আমার নাম বলি,,!
এরপর সেখানে থাকতে পারছিলাম না।
দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাই তাড়াতাড়ি
নিজের রুমে চলে এলাম। কেন জানি খুব
কান্না পাচ্ছিলো। তাই বালিশে মাথা
গুঁজিয়ে আস্তে করে কাঁদছিলাম।
অভি এসে বলছে কাঁদছ কেনো?
বাসার কথা মনে পরেছে নাকি,,?
— মরে গেলেও ওই বাসার কারো কথাই
মনে করবোনা,,
— কেনো,, জুনিয়র বর দিয়েছে তাই জন্য,,?
— জানিনা।
— একটা কথা বলবো কি?
— না,,
— আচ্ছা বললাম না। আমার বউটা অনেক
বুড়ি,,,
আমি কিছু বলার আগেই ও এ কথা বলেই
চলে গেলো।
আমি নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে পরলাম।
আমি বেশি চিন্তা করলে প্রচুর ঘুম পায়।
আজ ও তার ব্যতিক্রম হলোনা।
আবার ঘুমিয়ে পড়েছি।
চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভেঙে গেলো।
বাহিরে বের হতেই অনিকের সাথে
সামনাসামনি দেখা হলো। ওকে দেখে
মনে হচ্ছিলো ওর কাছ থেকে এসবের
উত্তর নেই। কিন্তু কোথায় যেন আটকে
গেলাম।
কিছুই বলতে পেলাম না। ও আমাকে স্যরি
বললো। পিছন থেকে অভি এসে অনিক কে
বললো তোর স্যরি তোর পাশেই রাখ।
আমার বউ এর লাগবেনা তোর স্যরি।
এরপর অভি আমার হাত ধরে টেনে ঘরে
আনলো।
তারপর,,,,