চন্দ্রাবতী আসছে ! Part- 02
সুখীর রুমের দিকে এগুতে লাগলাম আর খেয়াল করলাম একটা শব্দ সুখীর রুম থেকে বয়ে আসছে।ভয়ে ভয়ে সুখীর রুমের দিকে এগুতে থাকলাম।যতই এগুতে থাকলাম ততই বুকের কম্পন যেন বেড়ে চলতে লাগল।মনে হচ্ছে এখনেই আমার মৃত্যু ঘটবে।খেয়াল করলাম সুখীর রুম থেকে একটা চেঁচামেঁচির আওয়াজ বের হচ্ছে।সুখী মনে হচ্ছে ব্যাথায় হালকা চেঁচাচ্ছে আর কেউ একজন হয়ত সুখীর মুখটা চেপে ধরেছে।তাহলে অরন্য সুখীর সাথে এমন করছে না তো? ভাবতেই যেন গা টা শিউরে উঠল।গা এর লোম দাঁড়িয়ে গেল।বুকের হার্টভিট টা যেন ক্রমশ বাড়তে লাগল।শরীরটা কাঁপতে লাগল।ভয়ে ভয়ে দরজাটা খুললাম।
দরজা খুলে খেয়াল করলাম ঘরে কেউ নেই।কিন্তু এ ঘরে যে কেউ একজন ছিল এটার উপস্থিতি আমি ঘরে ঢুকেই টের পেয়েছিলাম।এখনও কেন জানি না মনে হচ্ছে ঘরে কেউ আছে।আশপাশ খেয়াল করলাম দেখলাম কেউ নেই।ওয়াশ রুম যখন চেক করলাম তখন কেন জানি না মনে হল দরজা দিয়ে কেউ বের হয়েছে।তারাহুরা করে দরজার কাছে আসলাম খেয়াল করলাম আশে পাশে কেউ নেই।তাহলে আমার ধারণা কি ভুল?
নাহ ধারণা ভুল হওয়ার কথা না।যদি একান্তই আমার ধারণাটা ভুল হত তাহলে সুখী এভাবে উলঙ্গ অবস্থায় খাটে পড়ে থাকত না।খেয়াল করলাম সুখী উলঙ্গ অবস্থায় খাটে পড়ে আছে।তার শরীরে এক সুতা কাপড়ও নেই।শরীরটার দিকে তাকিয়ে অজোরে নিজের চোখ দিয়ে জল চলে আসল।কারন মেয়েটার শরীরটার এ অংশগুলো কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে বলে আমি তার আঘাত গুলো কখনও লক্ষ্য করতে পারি নি।সুখীর সারাটা শীরীরে খামচির দাগ।কোন কোন খামচির দাগ আগে ছিল সেগুলা শুকিয়ে গেছে।আর কিছু খামচির দাগ নতুন।সুখীকে দেখে নিজের অজান্তেই আমার কলিজাটা যেন ফেটে যাচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে সুখীকে কাপড় পড়ালাম।দেখলাম মেয়েটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।কিন্তু সুখীর এ অবস্থা কে করল?আমি সুখীকে যখন চাদর দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে নিলাম সুখী আমার হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল
-আমাকে ছেড়ে দাও আমার কষ্ট হচ্ছে।
সুখীর দাঁতগুলা যেন আমার হাতে বিদে গেল।ব্যাথা হতে লাগল অনেক।আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।হয়ত সুখী ভেবেছে আমি সেই নরপশু টা তাই এভাবে আমাকে কামড়ে ধরেছে।কিন্তু রুমে কে ছিল?কে রুম থেকে বের হল?রুমে কি তাহলে অরন্য ছিল?ভাবতে ভাবতেই যেন আমার মাথাটা ঘুরে গেল।সাথে সাথে আমি মেঝেতে লুটিয়ে পড়লাম।এরপর কি হয়েছে জানি না।তবে মনে হচ্ছিল আমি এক পুড়াবাড়িতে আছি।পুড়াবাড়িটা দেখতে বেশ পুরনো হলেও তার কারুকাজ ছিল মনোমুগ্ধকর।আমি কিছুটা স্তম্বিত বিহ্বলিত হয়ে বাড়িটা দেখতে লাগলাম।বাড়িটার ভিতর ঢুকতেই একটা অপরূপ সুন্দর মোমের পুতুল পেলাম।মোমের পুতুলটা দেখতে যেন একটা জ্যান্ত মানুষের মত লাগছে।আমি মোমের পুতুলটা হাতে নিলাম।সাথে সাথে মনে হল আমার দমটা আটকে যাচ্ছে।শরীরের সব ক্রিয়া যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আমি গপ করে উঠলাম।খেয়াল করলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি আর অরন্য আমার পাশে শুয়ে আছে।
কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি কিছুক্ষণ আগে সুখীর রুমে ছিলাম আর তার পাশেই আমি পড়ে ছিলাম।কিন্তু রুমে আসলাম কখন?আমাকে ভয় পেয়ে এভাবে উঠতে দেখে অরন্য ও উঠে পড়ল।আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করল
– কি হল এভাবে উঠেছ যে?কোন সমস্যা হয়েছে?
অরন্যের কথাটা শোনে যেন আমি আকাশ থেকে পড়ছিলাম তার মানে আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম।হতে পারে।হয়ত বেশি চিন্তায় এমন হচ্ছে আমার।আমি কিছুটা শান্ত হয়ে অরন্যকে জাবাব দিলাম
-নাহ কিছুনা, এমনি।
অরন্য আমার হাত টা ধরে যখন কাছে নিতে লাগল।তখন একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। আর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কামড়ের দাগ।তার মানে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা সত্যি ছিল।কারন এ কামড়টা আমাকে সুখী দিয়েছিল।তাহলে আমি এখানে আসলাম কিভাবে?অরন্যের দিলে তাকিয়ে খেয়াল করলাম ওর মধ্যেও একটা অস্থিরতা কাজ করছে।হতে পারে অরন্য আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছে।ও আমাকে এ রুমে এনেছে।আর আমার জ্ঞান ফিরার পর হয়ত নাটক করছে যাতে করে আমি ঘটনাটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাই।নাহ অরন্যকে বুঝতে দেয়া যাবে না যে আমি তার চালাকি ধরে ফেলেছি।তাই অরন্যের সাথে আমি ভালো ব্যবহার করতে লাগলাম।বুঝাতে লাগলাম যে আমি হয়ত স্বপ্নই দেখেছি।তাই অরন্যকে বললাম
-হয়ত স্বপ্ন দেখেছি। বাদ দাও ঘুমিয়ে পড়।
অরন্য আর কোন কথা না বাড়িয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অরন্য ঘুমিয়ে গেল।কিন্তু আমার চোখে এক ফোটা ঘুম ও আসল না।সারা রাত এভাবে কেটে গেল।
আবার একইভাবে পরদিন মাঝরাতে আমার ঘুৃম ভাঙ্গল খেয়াল করলাম অরন্য আমার পাশে নেই ওয়াশ রুম চেক করলাম খেয়াল করলাম ওয়াশ রুমেও অরন্য নেই।এবার আমি মনটা বেশ শক্ত করে সুখীর রুমের দিকে এগুলাম।পূর্বের দিনের মত আজকেও সুখীর রুমটা থেকে একি রকম শব্দ ভেসে আসছে।আমি সুখীর রুমটায় প্রবেশ করলাম।খেয়াল করলাম সুখীর রুমে কেউ নেই আর সুখী উলঙ্গ অবস্থায় পড়ে আছে।আমি আশে পাশে তাকালাম খেয়াল করলাম আশে পাশে কেউ নেই।কিন্তু হঠাৎ মনে হল কেউ একজন রুম থেকে দরজা দিয়ে বের হল।আমি দরজার সামনে যেতেই খেয়াল করলাম অরন্য দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে চমকে উঠে বলল
-তুমি এত রাতে সুখীর রুমে কি করছ অধরা?তোমাকে কোথাও পেলাম না তাই খুঁজতে খুঁজতে এখানে আসলাম।
আমি অরন্যের কথাটা শোনে বেশ অবাক হলাম।কারন অরন্য তো রুমেই ছিল না।তাই আমি অরন্যকে বললাম
-তুমি তো রুমে ছিলে না।তাহলে আমাকে রুমে খুঁজেছ মানে কি?
অরন্য আমাকে বিনয়ের সহিত জবাব দিল।
-আমি বেলকনিতে ছিলাম।
অরন্যের জাবাব শোনে আমি কিছুটা হতাশ হলাম,
কারন আমি ওয়াশরুম চেক করলেও বেলকনি চেক করি নি।তবুও কেন জানি না মনে হচ্ছে অরন্যই এ কাজটা করেছে আর আমার সাথে নাটক করছে।তাই নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারলামনা।অরন্যকে ধরে সুখীর রুমের পাশ থেকে আমার রুমে নিয়ে আসলাম।টি শার্ট টা মুঠো করে ধরে বললাম
-লজ্জা করল না।মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের সাথে নোংরামি করে নাটক করতে।তুমি কি ভেবেছ আমি কিছুই বুঝব না?আমি গতকাল জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম সে সুযোগে তুমি আমাকে নাটক করে বুঝিয়ে ফেলেছিলে আজকে কিভাবে বুঝাবে?
অরন্য যেন আমার কথাটা শোনে আকাশ থেকে পড়ল।আমার কথা শোনে আমাকে বলল
-অধরা তুমি এসব কি বলছ?কিসের নাটক করেছি আমি?তোমার মাথা কি ঠিক আছে?
অরন্যের কথাটা শোনে যেন আমার গা টা আরও জ্বলে গেল।আমি কর্কশ হয়ে বললাম
-সুখী প্র্যাগন্যান্ট।আর সুখীর সাথে এ নোংরামিটা তুমি করেছে।তুমি ছাড়া এ বাসায় কোন পুরুষ মানুষ নেই।আর সুখী মুখ খুলছে না।হয়ত সুখীকে তুৃমি ভয় দেখিয়েছ।
অরন্য এবার আমার কথা শোনে আমার গালে কষিয়ে একটা চর বসাল।আর বলল
-লজ্জা করল না আমাকে আর সুখীকে নিয়ে এত নোংরা কথাটা বলতে।কত সংগ্রাম করে তোমাকে আমি বিয়ে করেছি সব কি ভুলে গিয়েছ?বিয়ের এত বছর পর ও যখন আমাদের বাচ্চা হয় নি আমি তোমাকে কখনও এটা নিয়ে আঘাত করে কথা বলে নি।তুমি নিজেও আমাকে বলেছ আরেকটা বিয়ে করতে, করে নি।কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর সুখীকে এনেছিলাম তোমার কষ্টটা দূর করতে আর ওকে আমি মেয়ের মত ভালোবাসি আর তুমি ওকে জড়িয়ে এমন নোংরা কথা বলতে বিবেকে বাধল না।
অরন্যের চর আর অরন্যের কথা গুলো শোনে যেন মাথাটা আরও চড়ে গেল।কারন বিয়ের পর এ প্রথম অরন্য আমার গায়ে হাত তুলল।আমি চেঁচিয়ে অরন্যকে বললাম
-তাহলে সুখী প্র্যাগন্যান্ট হল কিভাবে?আমি ঐ রুম থেকে কাউকে বের হতে দেখেছি আর আমি যখন সুখীর রুম এর দরজার সামনে আসি তখন তোমাকে দেখি।তার মানে তুমিই ছিলে ঐ রুমে।আর সুখী ঐ রুমে উলঙ্গ অবস্থায় ছিল
অরন্য আমার কথা শোনে বিস্মিত হয়ে বলল
-আমি ঐ রুমে গিয়েছিলাম তোমাকে এ রুমে না পেয়ে।কারন আমি বেলকনি থেকে এসে দেখি তুমি রুমে নেই।তাই খুঁজতে গিয়েছিলাম।আর সুখী কি করে প্র্যাগন্যান্ট সেটা আমারও অজানা।কিন্তু তুমি যে সুখীকে নিয়ে এত নোংরা মন্তব্য করবে আমি বুঝতে পারি নি।
অরন্যের কথাগুলো শোনে কেন জানি বিশ্বাস করতে মন চাইলেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।অরন্যের সাথে এভাবে মন কষাকষি করেই সারা রাত পার হল।সকালে উঠেই অরন্য আমার সাথে তেমন কথা না বলে অফিসে চলে গেল।আর আমি এদিকে সিদ্ধান্ত নিলাম সুখীকে আজকে সত্যিটা যেভাবে হোক বলাব।
তাই আমি সুখীর রুমে গেলাম।খেয়াল করলাম সুখী বসে আছে।আমি সুখীর কাছে গিয়ে সুখীকে বললাম
-মা তুই ভয় পাস না।তুই আমাকে সবটা সত্যি বল।রাতে তোর কাছে কে আসে?তোর শরীরটারে কে এভাবে ক্ষতবিক্ষত করে আমাকে বল মা।
সুখী আমার কথাগুলো শোনে ঢুক গিলতে লাগল।মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়ে আছে।আমি সুখীকে অভয় দিয়ে বললাম
-আমাকে সবটা বল মা তোর সাথে কে এমন করে?
সুখী এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।আর কাঁদতে কাঁদতে যা বলল আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।কারন এ কি শোনলাম আমি।তাহলে অরন্য..