একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 26

২৬.
_______________________________________
সাফা নিজের রুমে পাইচারি করছে।চুলগুলো আঁছড়াতে চাইছে কিন্তু হাতের ব্যাথার জন্য পারছেনা।মাথার চুলগুলো তার এলোমেলো হয়ে আছে।এতে সে প্রচণ্ড বিরক্ত। চুল বড় রাখলে যতটা সুন্দর লাগে একে যত্ন করতে ততটাই কষ্ট।সাফার চুল আছঁড়াতে এমনেই হিমশিম খেতে হয় তার উপড় আবার এখন হাতে ব্যাথা।সাফা হাত দিয়ে সামনে আসা চুলগুলো পিছনে শরাতে চায়।কিন্তু ব্যাথার জন্য পারছে না।সাফা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে।উড়না ঠিক করে চিরুনি হাতে নেয়।খোঁপার কাঠি টেনে খুলে ফেলে।পরক্ষনেই তার লম্বা সিল্কি সরু চুল এলোমেলো হয়ে পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে।সাফার পিঠ জুড়ে তার চুলেরা লেপ্টে আছে।কিছু অবাদ্ধ চুলে সাফার চোখে মুখে আছঁড়ে পড়েছে।সাফা সেগুলো সরাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।হাতে টান লাগে।কাটাঁ জায়গায় ব্যাথা হয়।হাত থেকে কেউ চিরুনি টানতেই সাফা চমকায়।গোলগোল চোখে পিছনে ঘুড়ে তাকায়।দ্রুত ঘুড়ার কারনে সাফার চুল পিছনে থাকা ব্যক্তির গায়ে আছঁড়ে পরে।সাফা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার পিছনে থাকা লোকটার দিকে।সাফার ভাবনার বাহিরে গিয়ে লোকটা তার চুলগুলো হাত দিয়ে মুখ থেকে সরাতে ব্যস্ত হয়। সাফা চরম চমকাইত চোখে তাকিয়ে বলল…………
—–“আপনি চিরুনি নিলেন কেনো??
নিভ্র হাঁসে। তারপর চিরুনি চুলের পাশে চালাতে চালাতে বলল……..
—-“যা পারো না তা সব সময় তোমার করতে ভালো লাগে না??আর হাতে ব্যাথা রাফাকে ডাকলেই পারতে??তা না করে নিজের চালাকি দেখাতে নেমে পরেছো।এবার সামনে ঘুড়ো আমার সমস্যা হচ্ছে।
.
নিভ্রর শান্ত ভঙি।সাফা যেনো শিহরিত। নিভ্রকে এখন মনে হচ্ছে সে পার্লের কাজ পারে।তার চেয়ে ভালো কেউ চুল আছড়াতেই পারে না।সেই বেস্ট এই কাজের জন্য।সাফা এক হাতে নিজের চুল ধরে সরিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল…….
—–“আপনি কেনো চুল আছড়াতে যাচ্ছেন??আমি নিজেই করতে পারবো।সরে দাঁড়ান। আর আছড়াতে পারেন আপনি চুল??
নিভ্র বিরক্তি নিয়ে সরু চোখে তাকালো।তারপর বলল…..
—-“নিভ্রনীল পাড়েনা এমন অনেক কম কাজ আছে। তাই সামনে ফিরে বসো।
সাফা এবার ভারী অবাক।এই লোকের হলো কি??নিভ্র সাফার বাহুতে হাত দেয়।সাফার শিরশিরে অনুভুতি হয়।আবেশে তার চোখজোড়া বুজে আসে।নিভ্র আয়নায় সাফার প্রতিবিম্ব দেখে।লজ্জায় লাল হতে মেয়েটার সময় লাগে না।একদম বহুরূপী বলা যেতে পারে।মেয়েরা বহু রূপী হয়।এটা তার জানা ছিলো না।সাফাকে না দেখলে অনেক কিছুই তার যানা হতো না।সাফার বুক কাঁপে।অদ্ভুত অনুভুতি হয়।নিভ্র চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে প্রশ্ন করে……
—–“এই চুল সামলাও কিভাবে??আমি তো একটুও আছড়াতে পারছি না।”
সাফা হাঁসে। চোখ খুলে নিভ্রর দিকে তাকায়।নিভ্র ব্যস্ত তার কাজে।জীবনের সব মনযোগই সাফার এই চুলে ডেলে দিয়েছে।মনে হচ্ছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চুল দেখছে।সাফা কিছুক্ষণ নিভ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর বলে………
—–“সবাইকে দিয়ে সব হয় না।”
নিভ্রর কথাটা গায়ে লাগে।তার ধারনা তাকে দিয়ে মোটামুটি আল্লাহর রহমতে সবই হয়।আর এটা তো সামান্য চুল যেখান সে কত কাজ করে দিনে।নিভ্র বিদ্রূপের সুর তুলে বলে……..
—-“আমি এক হাতে যেমন মারামারি করি আর একহাতে মডেলিং এর শুটিং করি। দু’হাতে আবার হার্টসার্জারি করি সো ডোন্ট আন্ডারেস্ট্রিমেট মি….ওকে..
—-“চুল আছড়ানো আর হৃদপিন্ডের উপর ছুড়ি চালানো এক না মিস্টার.অলরাউন্ডার…. ”
—-“যেহেতু মিস্টার অলরাউন্ডার বলেছ সেহেতু এটার মিনিংস ও যানো মনে হয় তাই চুপ করো।”
সাফা চুপ করে মুখে আঙ্গুল দেয়।নিভ্র চুল নাড়াচাড়া করে।এদিকে একবার ওই দিকে একবার করে সে হাপিয়ে উঠে।তবুও হাল ছাড়ে না।চুল মেয়েদের ইম্পরট্যান্ট জিনিস।আর তাকে যদি সাফার কেউ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হয় তাহলে এটাও শিখতে হবে।নিভ্র সাফার ঘাড়ের নিচে হাত দেয়।সাফা হকচকিয়ে উঠে।শরীরে কাপঁনি দিয়ে ঝাকি দেয়।নিভ্র ভ্রুকুঁচকে তাকায়।তারপর বিরক্তি ভঙিতে বলে…….
—-“নাড়াচাড়া করছো কেনো??আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে। তুমি চাও আমি যাতে না পারি??তাই তো??তাই তুমি কিছুক্ষণ পরপর ডিস্টার্ব করেই চলেছো??দুষ্টমি করার বয়স পুরিয়ে গেছে অনেক আগেই তবুও তুমি করছো আজিব মেয়ে তুমি।
—–“আমি কি করলাম।আপনিইত…..
আর বলতে পারলো না।চুপ করে গেছে।নিভ্র ঘাড়ের চুল এক পাশে নিয়ে আশে।চুল থেকে একটা ঘ্রাণ নাকে বারি খায়।নিভ্র থমকায়।একটু গভীর ভাবে চুলগুলো দেখে।তার এই চুলে নিজেকে লুকাতে ইচ্ছে করছে।পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয়।মনে মনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে………ভায়াবহ হয় মেয়েরা।এদের থেকে বাঁচা মশকিল।তবে ছেলেরা বাচঁতে চায়ও না।হারাতে চায়। এদের মাঝে হারিয়েও হয়তো আনন্দ আছে।নিভ্র মুচকি হাঁসে। সাফা সে হাসি দেখে।তার মনে হচ্ছে কত ফিলিংস লুকিয়ে আছে লোকটার মাঝে কিন্তু সে দেখাতে চাচ্ছে না।নিভ্র সাফার চুল যত্নের সাথে আছঁড়ে দিচ্ছে। দরজায় দাঁড়িয়ে ইফতেখার সে দৃশ্য দেখে।জীবনে সবচাইতে ভয়ঙ্কর জিনিস দেখেও মানুষ এতটা চমকায় না যেটা তিনি এখন চমকাচ্ছে।তার মনে হচ্ছে জেগে স্বপ্ন দেখছে।তা না হলে এটা হওয়ার কথাই না।তিনি কিছুক্ষন তাকিয়ে নিজের ভাবনাকে মিথ্যা প্রমান করতে চেয়েও পাড়লো না।মুচকি হাসি আপনাআপনি তার ঠোঁট ছুঁয়ে গেছে।তারপর পা ফেলে রুমর দরজা থেকে সরে আশে।তার পাশেই অভ্র ছিলো তিনি খেয়েল করলো না।অভ্র বুকে হাত রাখে।বা পাশটা ব্যাথায় চিনচিন করে উঠে।সাফাকে দেখতে এসেছিলো।এখন কেমন আছে যানতে ইচ্ছে করেছে প্রবল ভাবে।তাই আসা।তবে এখন থাকতে চায় না।তারপর সেও ধাপধাপ পা ফেলে জায়গা ত্যাগ করে।নিভ্রর কপালে ঘাম জমে।এসি অন থাকার পরেও তার অবস্থা খারাপ।মনে মনে বলে…..
—–“ছেলেদের এই চুলে লুকাতে ইচ্ছে করে।আরে তোরা বসে বসে বউয়ের চুল আছঁড়ে দিস তারপর দেখি কিভাবে লুকাতে চাস।ওওও আল্লাহ তাই তো বলি মেয়েদের মাথা বেশিরভাগ সময় এত গরম থাকে কেনো??এবার বুঝলাম।এত বড় চুলগুলো সামলাতেই বেচারিদের অবস্থা খারাপ হয়।তবে তুমি চিন্তা করো না সাফা রানী আমি আছি তো।আমিই তোমার এই চুল সামলে দিবো এবং এতে নিজেকে লুকায়িত করবো।
.
নিভ্র হেঁসে হেঁসে চুল আছঁড়ে দিচ্ছে। সাফা অবাক হয়। লোকটার মাঝে বিরক্তি কাজ করছে না কেনো??সে নিজেই যেখানে এই চুল আছড়াতে গিয়ে বিরক্ত হয় সেখানে ঘাম ঝড়িয়েও লোকটা হাসছে।নিভ্র বহু কষ্টে ঘন্টা খানিক লাগিয়ে এলোকেশী চুলগুলোর একটা গতি করতে পেরেছে।নিভ্র সাফার চুল বাঁকিয়ে কাঠি লাগিয়ে দেয়।তবে এটাও সে পারতো না যদি ইউটিউব বাবা না থাকতো।নিভ্র বিশ্বজয় করেছে এমন করে হাঁসে। তার হাসি যেনো ধরছেইনা।যে ছেলে দিনে আল্লাহর রহমতে চারপাঁচ জনের জীবন বাঁচিয়েও এত হাঁসে না সে চুল বেধে যেনো বিশ্বজয় করেছে এমন হাসি হাসছে।সাফা ভারী অবাক।হা করে নিভ্রকে দেখছে।লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি??নিভ্র সাফাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে দেয়।তার সামনে ফ্লোরে বসে পরে।সাফা হিতাহিত জ্ঞান শূন্যের মত করে তাকিয়ে থাকে।নিভ্র ঠোঁটজোড়া চেপে কপাল কুঁচে হেঁসে বলে……..
—–“দেখলে আমি পারেছি।ওয়াও আমি পেরেছি।তুমি বুঝতে পারছো আমি চুল বাধতে পেরেছি।ইয়াহুহুহুহু ”
সাফা বাকরূদ্দ।নিভ্রর চোখ চকচক করছে।নিজেকে সামলাতেই পারছে না সে।নিভ্র সাফার চোখে চোখ রাখে।তারপর বলে……..
—-“আমার বউয়ের চুল বাধতে পারবো।বউকে কষ্ট করতে হবে না।”
সাফা স্তব্ধ। নিভ্রর মুখে বউ কথা শুনে তার শিরশির ভাবে বেড়ে গেছে।তবে তা বুকে।নিভ্রর হয় তো কেউ পছন্দের আছে।তাকে হয় তো নিভ্র প্যাসেন্ট হিসেবেই দেখে।সাফা নিজের মনকে সামলাতে লাগে।মনে মনে ভাবে সে খুব লাকি হবে যে নিভ্রর হবে।নিভ্র উঠে দাঁড়ায়। একটু ঘুরে ঘুড়ে দেখে।তারপর বলে…….
—-“একটু এদিক সেদিক হয়েছে।আরো কয়েকবার বাধলে ঠিক হবে।
সাফা সহজ ভাষায় বলে……..
—-“আমারটা আর বাধতে হবে না।নিজের বউয়েরটা বেধে দিয়েন।
নিভ্রর কষ্ট হয়।তীব্র ভাবে ব্যাথা হয় মনে। সাফা কি তাহলে তাকে পছন্দ করে না??না কি সাফার চোখে তার অনুভুতি গুলো ধরা পরছে না।সাফা এতটা নির্বোধ নয়।তবে কেনো বুঝতে পারছে না।এটা তার মনের সুপ্ত অনুভুতিই। নিভ্রর রাগ হয়।সাথে কষ্ট।নিভ্র সরে দাড়ায়।অভিমানের দৃষ্টিতে সাফার দিকে তাকায়।সাফার চোখ তখন ফ্লোরে।সে যদি নিভ্রর চোখে নিজের চোখ রাখত তখনই বুঝতে পাড়তো কতটা ব্যর্থতা লুকিয়ে আছে। কতটা কষ্টে সে ভুগছে।কলিজার খাঁজে রক্তক্ষন হচ্ছে কিভাবে।নিভ্র গতি পাল্টায়।সরে দাড়িয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে হাটা দেয়।সাফা নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে…….
—-“ধন্যবাদ…
নিভ্র ঘুড়ে তাকায়।রাগে তার মাথার দু’পাশের নীল রগ ফুলে উঠছে।এত কষ্ট করে সে চুল বেধে দিয়েছে এই ধন্যবাদ নামক পর পর শব্দটা শুনার জন্য??নিভ্র নাক ফুলিয়ে শ্বাস নেয়।সাফা এর অর্থ খুজে। কিন্তু পায় না।নিভ্র ঝাঁঝালো গলায় বলে……..
—-“তোমার ধন্যবাদ তোমার কাছে রাখো।নিভ্রনীল ধন্যবাদ পাওয়ার জন্য কিছু করে না।দায়িত্ববোধ থেকে করে।”
নিভ্র দাড়ালো না।সাফা হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে নিভ্রর যাওয়ার পানে।নিভ্রর কথার আগা মাথা কিছুই সে বুঝতে পারছে না।হঠাৎ করেই এভাবে রেগে গেলো কেনো।আজিব তো।সাফার কানে দায়িত্ববোধ কথাটা আটকে আছে।বুক চেঁপে কষ্ট হয় তার।শুধুই ডাক্তার হিসেবে রোগীর প্রতি সে দায়িত্ববান। এটাই সাফার চুল বেধে দেওয়ার জন্য একমাত্র কারন ছিলো??আর সাফা যে অনুভুতির কথা ভেবেছে তা নিছক মিথ্যা ভাবনা ছিলো??সাফার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পরে কয়েক ফোঁটা।কষ্টে দম আঁটকে আসে তার।
.
.
নিভ্র নিজের রুমে এসে টেবিলের উপরের কাঁচের ফুলদানীটা ছুঁড়ে মারে।সাথে সাথে এক বিকট শব্দ হয় রুম জুড়ে।এত রাগ কেনো হচ্ছে তার এটা নিভ্র বুঝতে পারছে না।রাগে হাত বারি দেয় বুকশেলফের সাথে।নিজের কাটাঁ হাতের দিকে তার তেমন চিন্তা নেই।তার সব চিন্তা জুড়ে সাফার বসবাস।সাফা তাকে কেনো বুঝতে পারছেনা এটাই নিভ্রর মাথায় আসছে না।তবে হাল ছাড়বে না নিভ্র। সাফার মনের কথা যানতে হবে।নিভ্র নিজের মনকে ঠিক করে।তবে সাফা তাকে ধন্যবাদ বলায় এবং বউয়ের কথা আলাদা ভাবে বলায় সে রেগে আছে সাফার প্রতি।নিভ্র নাক ফুলিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।মাথায় পানি দিবে সে।ইদানীং এত অল্পতে রেগে কেনো যায় সে এটা বুঝতে পারছে না নিভ্র।
.
.
নিচে চিৎকারের শব্দে সাফার ঘুম ভাঙে।কান্নার চক্করে পরে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টেরই পায়নি সে।সাফা মুখ ধুয়ে এসে নিচের দিকে যায়।সবাই সোফার দিকে তাকিয়ে আছে।কি আছে সোফায়?? সাফা দ্রুত পায়ে হাঁটে।ইফতেখারের মাথা পানি দিতে দেখে সাফা উত্তেজিত হয়ে পরে।তার কাছে বাসে।প্রশ্ন করে……
—–“আম্মুর কি হয়েছে আঙ্কেল?? ”
সাখাওত ঔষুধের পাতা দেখতে দেখতে বলে……
—“ডায়াবেটিস কমে গেছে মনে হয় মা।আমি শিউর না।”
নিভ্র দ্রুত পায়ে দৌড়ে আসে।সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে সবাই অবাক হয়।নিভ্রকে এতটা উত্তেজিত দেখাচ্ছে কেনো??নিভ্র দৌড়ে সোফার নিচে বসে পরে।মায়ের হাত দেখে।তারপর ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।ময়নাকে চিনির পানি আনতে বলে।নিজ হাতে মায়ের মাথায় পানি দেয়।মায়ের অসুস্থতায় নিভ্র প্রতিবারই এমন করে।শুধু এবার একটু বেশি।নিভ্র তার মাকে কতটা ভালোবাসে এটা বাড়ির দেয়ালগুলোও যানে।নিভ্র ইনজেকশন আনতে বলে।নিখুঁত ভাবে মায়ের সব পর্যবেক্ষণ করে।ছেলে মেয়ের চিন্তায় ইফতেখার খুব কম বয়সেই অনেক রোগ বাধিয়ে ফেলেছে।স্বামী সঙ্গ পেয়েও সে বিরহবেদনায় ভুগেছে।মায়ের কাছে পৃথিবীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ তার সন্তান।এদের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।ইফতেখারকে নিভ্র নিজ হাতে পানি খাওয়ায়।ডায়াবেটিস কমে যাওয়া চিনির পানি খেয়ে তার এখন নিজেকে সুস্থ লাগছে একটু।সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিভ্র হুট করেই মাকে জড়িয়ে ধরে।ইফতেখার হতভম্ভ। এটা কেউ আশা করে নি।নিভ্র মায়ের চিকিৎসা নিজেই করে এটা সবাই জানে কিন্তু এভাবে জড়িয়ে নিবে এটা কেউ যানতো না।সবাই আকর্ষীক ঘটনায় হতভম্ভ। নিভ্র জড়িয়ে আছে তার মাকে।আধাঘণ্টা পিনপিনে নিরবতাই চলছে।কেউ কিছু বলছে না।ইফতেখার নিভ্রর গেঞ্জি ভিঁজি ফেলেছে। কান্না যেনো তার থামছেইনা।নিভ্র মাকে ছাড়িয়ে উঠে দাড়াঁতে চায়।ইফতেখার হাত চেঁপে ধরে।নিজের দিকে বসিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়।আঁটকে আশা গলায় বলে………
—-“ক্ষমা করা কি যায় না??
নিভ্রর কলিজায় বিধে।মাকে আবার জড়িয়ে ধরে সে।কতটা ভালোবাসে মাকে সে বলে বুঝাতে পারবে না।কিন্তু নিজের বোনকেও সে ভালোবাসতো।সব মিলিয়ে সে পরিস্থিতির শিকার।নিভ্র মুখ খুলে।মাকে উদ্দেশ্য করে বলে…….
—-“নিজের খেয়াল রাখতে শিখো আম্মু।ঔষুধ খাও।নিয়ম মেনে চলো। ডায়াবেটিস রোগে নিয়ম মেনে চলাটা গুরুত্বপূর্ণ।
.
নিভ্র মুচকি হাঁসে মায়ের দিকে তাকিয়ে।ইফতেখারের কলিজায় শীতল হাওয়া বইছে।বহু বছরের কষ্ট আজ কমেছে।নিভ্র মায়ের চোখ মুছে দেয়।মায়ের কোলে মাথা রাখে কিছুসময়। তারপর নিজে মাকে তার রুমে রেখে আসে।এর মাঝে সাফা নিভ্রর সাথে কথা বলতে চেয়েছে কয়েকবার। কিন্তু নিভ্র পাত্তাই দিলো না।সাফা হতাশ নিভ্রর এমন আচরনে।সাফা এটা বুঝতে পেরেছে নিভ্র রেগে আছে।কিন্তু কেনো তা যানে না সাফার??নিভ্র নিজের রুমে চলে যায়।
.
সাফা নিজের বিছায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে মাথায় তার ঘুরপাক খাচ্ছে নিভ্র তার সাথে কথা বলছে না কেনো??আচ্ছা নিভ্রর রুমে একবার গেলে কি হবে??সাফা ভাবে।ভাবতে ভাবতেই রুমের বাইরে চলে আসে।সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয় সে।তারপর হাটা দেয়।কেনো যেনো তার নিভ্রর কাছে যেতে ইচ্ছে করছে।সাফা পা টিপে রুমে ডুকে।নাকে গোলাপের মিষ্টি গন্ধ আসে।মাতাল করা সে ঘ্রাণ। সাফা চোখ ঘুড়ি চারপাশে একবার চোখবুলায়।পাশ ফিড়ে বুকশেলফের দিকে একবার তাকায়।সম্পূর্ন শেলফ জুড়ে হুমায়ূন স্যারের বই দেখে সাফা অবাক হয়।মনের মাঝে ভালো লাগা কাজ করে।নিভ্র যে তার কথাকে এভাবে গুরুত্ব দিবে সে ভাবতে পারে নি।সাফা পাশে থাকা কাঁচের সিঁড়ির দিকে তাকায়।তার দেখতে ইচ্ছে করছে কি আছে উপরে।তাই পা বাড়ায়।আগের বারও তার কৌতুহল ছিলো কিন্তু সে গেলো না।এবার যাবে বলে ঠিক করে।সাফা পা টিপে টিপে এদিক ওদিক তাকিয়ে চোরের মত উপরে উঠে।উপরে আর একটা রুম।পর্দা দিয়ে ডাকা রুমের কাঁচের দেয়াল।সাফা একটু এদিক ওদিক তাকায়।অন্ধকার রুম দেখে সাফা একটু ভয় পায়।এদিক ওদিক তাকিয়ে সে ভিতরে হাঁটে।নিজের মোবাইলটার লাইট জ্বালায় সাফা। ভালো করে দেখা শুরু করে।সব ডাক্তারদের জিনিস।মনে হচ্ছে এখানে পড়া লেখা করা হয়।হৃদপিন্ডের ছবি।একপাশে তাকিয়ে সাফা চিৎকার করে উঠে।একটা হৃদপিন্ড কাঁচের বক্সে রাখা।সাফা চেঁচিয়ে পিছনে ঘুড়ে সাথে সাথে সে বিকটা শব্দে চিৎকার করতে থাকে।
.
নিভ্র নিজের রুমের চারপাশে সাফাকে খুঁজে।সাফার চিৎকার শুনে সে চারদিকে তাকায়।মেয়েটা চিৎকার করছে।কিন্তু কোথায় সে??নিভ্র উপরের রুম থেকে হালকা লাইটের আলো দেখে। তার আর বুঝতে বাকি নেই সাফা কোথায়।নিভ্র নিজে নিজে বিড়বিড় করে…
—ওওহহ এই মেয়ে তো জীবনেও শুধরাবেনা মনে হয়।ডাফার একটা।
নিভ্র দ্রুত হাঁটে।রুমে ডুকে সাফাকে খুঁজে।কোথায় গেলো।নিভ্র রুমের লাইট অন করে।রিমট দিয়ে কাঁচের জানালা খুলে দেয়।লাইটের আলোতে সাফাকে দেখছে না।নিভ্র একটু সামনে এগিয়ে যায়।পায়ে কিছু লাগে।নিচে তাকিয়ে নিভ্র হতবাক। সাফা সেন্সলেস হয়ে পরে আছে।নিভ্র রুমের টেবিলে রাখা পানির বোতল নেয়।সাফাকে নিজের বাহুতে তুলে নেয়।এলোমেলো ছোট চুলগুলো সরিয়েদেয়।তারপর সাফার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে হাঁসে। এক হাতে জড়িয়ে সাফার মুখে পানির ছিটা দেয়।সাফা টিপটিপ করে চোখ খুলে।নিভ্রকে দেখে যেনো তার জীবন ফিরে পেয়েছে।চিৎকার করে নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে সে।নিভ্র হতভম্ভ। দুপাশের দু’হাত দুই দিকেই আছে।সাফা জড়িয়ে চিৎকার করছে।নিভ্র নিজের স্তব্ধতা কাটাতে পারছে না।তার বুকে ভয়ঙ্কর শব্দ হচ্ছে। সাথে এক অদ্ভুত ভালো লাগা।মাতাল করা আনন্দ।সাফার কান্নায় নিভ্রর হুশ আসে।দু হাতে সাফাকে জড়িয়ে নেয় সে।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে………
—–“কুল কি হয়েছে আমাকে বলো??ভয় পেয়েছো তুমি??একা এখানে কি করছিলে??
সাফা জবাব দিচ্ছে না।ভয়ে সে ঝুম ধরে আছে।নিভ্রর গেঞ্জিটা চোখের পানিতে ভরিয়ে দিয়েছে।নিভ্র সাফার মাথা তার বুক থেকে ছাড়িয়ে সামনে আনে।সাফা সামনে তাকিয়ে আবার চিৎকার করে।নিভ্র পিছনে তাকিয়ে কংকাল দেখে শব্দ করে হাঁসে।সাফাকে কোলে তুলে নেয়।তারপর কংকালের সামনে এশে একটু ঝাঁকায় তাকে সাফা ভয়ে আরো জাপ্টে ধরে নিভ্রকে।সাথে চিৎকার তো আছেই।নিভ্র হাসেতে হাঁসতে সাফাকে নিয়ে নিঁচে নেমে নিজের রুমে নিয়ে আসে।বিছানায় শুয়ে দিয়ে।পানি এগিয়ে দেয়।সাফা গটগট করে পানি গিলে গলা ভিজিয়ে নেয়।ভয়ে তার প্রান শেষ।সাফা পানি খেয়ে ভয়াত্নক গলায় বলে……..
—-” আপনি কি মানুষ খুন করেন??”
নিভ্র কপাল কুঁচকে হাঁসে। তারপর সাফার পাশ ঘেঁষে বসে।মুখ দিয়ে কথা বলে না।সাফার মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভাবে।এই মেয়েই এত এত রাইফেলের সামনে তাকে স্টিক দিয়ে বারি মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।সাত সাতটা দিন হসপিটালে থাকতে হয়েছে তাকে।আর এই মেয়েই কিনা একটা সামান্য কংকাল দেখে সেন্সলেস হয়েগেছে। ভাবা যায়??নিভ্র আবার হাসে।সাফা রেগে যায়।আবার ভয়ও পায়।ভিতূ গলায় নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে……
—–“আপনি কি মানুষ নাকি ভূত???
—“ভূত…
বলেই শব্দ করে হাঁসে নিভ্র।সাফা ভয়ে উঠে বসে পরে।সে ভাবছে কিভাবে পালাবে??এই বাসার সবাই কেমন অস্বাভাবিক বিহেভ করে।এরা আসলেই মানুষ কিনা সন্দেহ হচ্ছে সাফার।মানুষ হলে হৃদপিন্ড, কলিজা,কিডনি, মানুষের কংকাল কেউ নিজের রুমে রাখে।সাফা বিছানার অপর পাশ দিয়ে নিমে পরে।ভয়ে তার কলিজা কাপঁছে। শেষে কিনা ভূতের প্রেমে পড়েছে??এটা কোনো কথা??আল্লাহ প্রথম প্রেমই এমন ভয়ঙ্কর হয় বুঝি??সাফা পর্দার দিকে একবার তাকাচ্ছে।নিভ্রর দিকে একবার তাকাচ্ছে। পালাবে কিভাবে ভাবছে।ভূতের তো কত পাওয়ার থাকে।নিভ্র যদি তার ঘাড় বাঁকা করে দেয়।রাক্ষসের মতো🥺🙄
.
.
#চলবে______________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *