আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 14

খানিকক্ষণ পর বিধান আসলো। বিধান এবারও দেখলো বিথী গভীর ভাবনায় ব্যস্ত। আসলে বিথী ভাবছিল বিধানকে সরি কি করে বলবে। কিন্তু বিধান তো এসব জানে না তাই বিথীর এমন ভাবনার সাগরে ডুবে থাকা দেখে ভ্রু কুচকায়।
বিধানঃ এই মেয়ে এতো কি ভাবছে! ( মনে মনে )
বিথীঃ সরি! আল্লাহ কি করে বলবো সরি? কখন এসে পড়ে রুমে! ( মনে মনে )
,
( বিঃদ্রঃ ইগো শুধু ছেলেদের থাকে কে বলেছে ইগো মেয়েদেরও কম না। সরি ছোট্ট একটা ওয়ার্ড। কিন্তু সিচুয়েশন ভেদে এর গুরুত্ব ভিন্ন হয়। অনেক সময় মানুষ সরি বলে কিন্তু মন থেকে তারা গিল্টি থাকে না। এই সরিটা গুরুত্বহীন। আর অনেক সময় নিজের কাজে গিল্টি থাকলেও বলা যায় না তখন কাজ করে ইগো তাই যে সরিটা ইগোটাকে কাটিয়ে মুখে আসে তাইই গুরুত্বপূর্ণ। )
,
,
,
বিধান বিথীকে ভাবনার অথৈ সাগর থেকে বের করার জন্য রুমের দরজাটা বেশ আওয়াজ করেই বন্ধ করলো। ধপাস! বিথী আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে বিধান। বিধান বিথীর দিকে এক পলক তাকিয়ে বেডে শুয়ে পড়ে। বিথী বিছানায় বসে ভাবছে সরি বলার কথা চিন্তা করছে। অনেক জল্পনা কল্পনার পড় শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।
বিথীঃ শুনছেন! মিস্টার চৌধুরী!
বিধানঃ চেচাচ্ছো কেন? আমি কানে কালা না কি বলবে বলো শুনছি! ( বিরক্তি নিয়ে )
বিথীঃ আসলে আমি একটা কথা বলতে চাই!
বিধানঃ হুম বলো!
বিথীঃ আ-আসলে……
বিধানঃ আসলে?
বিথীঃ আ-আসলে আ-আমি……..
বিধানঃ আসলে আমি কি?
বিথীঃ আসলে আমি আ-আপনাকে!
বিধানঃ আমাকে?
বিথীঃ আ-আপনাকে……….
বিধান এবার প্রচন্ড বিরক্ত হয় কারণ রাতের দেড়টা বাজে প্রায় এই সময় এমন করছে বিথী। বিধানের কাল সকালে অফিসও আছে।
বিধানঃ তোমার আর বলা লাগবে না! যে তিনটা শব্দ বলতে দেড় ঘন্টা লাগিয়ে ফেলছে পুরো কথা বলতে রাত পার করে ফেলবে।
বলে বিধান শুয়ে পড়লো বিথীও শুয়ে পড়লো তার সরি বলা আর হলো না।
,
,
,
আজ বিথীর বিয়ের ৭ম দিন। দেখতে দেখতে বিধান-বিথীর আড়ালে ভালোবাসার সংসারের সাতটি দিন পার হয়ে গেলো। তবে বিধান ও বিথীর সম্পর্কের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। বিধান এখনও হঠাৎ রেগে যায় বিথীর
উপর সত্যিটা না জেনে আবার কখনো ভালোবাসার ঘোরে খণিকের জন্য কাছে টেনে নেয় বিথীকে। আর ঐ ঘটনার পর বিথীও বিধানকে বাধা দেয় না। যদিও সম্পর্কটা এখনো ঠিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি। দিপ্তের সাথে এখনো আগের মতোই সম্পর্ক বিথী যা বিধানকে বড্ড পোড়ায়।
,
,
,
বিথী বিধান ফযরের নামায পড়ে ঘুমিয়েছে কিন্তু তাদের ঘুম বেশিক্ষণ স্থায়ি হলো না রূপের জন্য।
রূপঃ ভাইয়ু! বৌআপু! দরজা খুলো! ( জোরে জোরে ডেকে )
বিথীর ঘুমটাই প্রথমে ভাঙলো। বিথী আজও বিধানকে নিজের বুকে আবিষ্কার করলো। এমনকি সে নিজেও বিধানকে জড়িয়ে ধরে আছে। প্রতিদিন এমনটাই হয়। প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় সব ঠিক করে ঘুমালেও সকাল এভাবেই হয়।
বিথীঃ এই যে শুনছেন! উঠুন না!
বিধানঃ উমম! কি হয়েছে!
বিথীঃ রূপ ডাকছে!
তখনই বিধানের কানে আছে রূপের একটানা ডাকাডাকি। তাই বিধান বিথীর উপর থেকে সরে যায়। বিথীও ছাড়া পেয়ে দরজা খুলতে যায়।
,
,
,
রূপঃ কি গো তোমরা এতোক্ষণ লাগে! কতক্ষণ ধরে ডাকছি!
বিথী রূপকে কোলে তুলে গালে আলতো করে চুমু খায় তাই রূপও বিথীর গালে চুমু দেয়।
বিধানঃ বিয়ে করে আনলাম আমি চুমু দেয় আমার বোনকে! বিশাল কপাল আমার! ( মনে মনে )
বিথীঃ বলেন গো মহারানি কি জন্য ডাকছিলেন এই অধমদের?
বিধানঃ হ্যাঁ বল তো কি জন্য সকাল সকাল আমার মধুর ঘুমে মাছির মতো ভ্যান ভ্যান করছিলি?
রূপঃ আমি কি ইচ্ছে করে ডেকেছি নাকি? মা পাঠিয়েছে আমায় তোমাদের নিচে নিয়ে যেতে! ( ভেঙচি কেটে )
বিধানঃ মা! এত্ত সকালে!
রূপঃ হুম কারা জানি এসেছে বৌআপুর সাথে দেখা করতে!
বিথীঃ আমার সাথে? এতো সকালে আবার কে আসবে!
বিধানঃ নিচে গেলেই সব দেখতে পারবো।
বিথী ও বিধান ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। নিচে থাকে ব্যক্তিদের দেখে বিথী দৌড়ে গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে।
,
,
বিধান এসব দেখে থমকে যায় কারণ দুজন মধ্যবয়সী কপতি এসেছেন বিথীকে দেখতে। বিধান উনাদের চিনে উনারা মিস্টার এন্ড মিসেস রহমান। রহমান গ্রুপের মালিক। বিথী ও উনাদের আচার আচারণে মনে হচ্ছে বিথী উনাদের মেয়ে এবং উনারা বিথীর বাবা-মা।
মিস্টার রহমানঃ দিয়া মা কেমিন আছিস? কতদিন দেখি না আমার মেয়েটাকে! ( আবেগপ্রবণ হয়ে )
মিসেস রহমানঃ কিরে মা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস নাকি কেমন শুকিয়ে গিয়েছিস! ( জড়িয়ে ধরে )
বিথীঃ আব্বি আম্মি ধীরে ধীরে! এতো প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো কি করে! আব্বি আমি আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি আর আম্মি কোথায় শুকিয়ে গিয়েছি বলো আগের মতোই আছি।
খাণিক ক্ষণ পরেই দিপ্ত প্রবেশ করে রুমে। হাতে বেশ কয়েক ব্যাগ এবং পিছনে ড্রাইভারও অনেক কিছু নিয়ে আসছে।
দিপ্তঃ মা তুমি তোমার মেয়েকেই বেশি ভালোবাস! এতো করে বললাম সবে মাত্র ৫টা বাজে একটু পরে যেয়ো। কিন্তু তা না এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা এখানে। আজ বুঝলাম বোনু তুই সত্যিই বলিস তোকেই সবাই বেশি ভালোবাসে।

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *