আমার ঘটনা টা ২০০২ সালের।
আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমরা একটা নতুন বাসায় উঠি। বাড়িটা ৪ তলা ছিল। ৪ তলা থেকে সোজা একটা লোহার সিঁড়ি ছিল ছাদে উঠার জন্য। ৪ তলায় মোট ফ্ল্যাট ছিল তিনটা। আমরা ৪ তলার একটা ফ্ল্যাটে উঠলাম। আমরা উঠার কিছুদিন আগে বাড়িওয়ালার মা মারা যান। ঘটনা টা শুরু হয় এর ও ৩/৪ মাস পর থেকে। অনেক রাতে মাঝে মাঝেই ছাদ থেকে লাফানোর আওয়াজ আসতো। বেশির ভাগই হতো রাত ১টার পর।
আস ্তে আস্তে সমস্যাটা বাড়তে থাকলো। লাফানোর আওয়াজের সাথে প্রায়ই কান্নার আওয়াজ অথবা বিদঘুটে হাসির আওয়াজ পাওয়া যেত। প্রথম দিকে শুধু আমরা ৪ তলায় যারা থাকতাম, তারাই আওয়াজ টা পেতাম। এর পর আস্তে আস্তে ব্যাপারটা সবাই টের পেল। এক দিন আমার ফুফাতো ভাই রাতে ছাদে যায় ফোনে কথা বলার জন্য। পানির ট্যাংকের পাশে দাড়িয়ে সে কথা বলছিল, হথাৎ তার পিছন থেকে কেউ ধমক দিয়ে বলে যে, এতো রাতে ছাদে কি?? সে চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নাই। তখন সে ভয় পেয়ে নেমে আসে এবং পরদিন থেকে আমাদের সবাইকে ছাদে যেতে নিষেধ করে। এর কিছু দিন পর এক দিন রাতে আমি পড়ছিলাম। পড়ার খুব চাপ ছিল তাই পড়তে পড়তে প্রায় ২ টা বেজে যায়। হঠাৎ শুরু হয় ছাদে লাফানো, কান্নার, হাসি, আর গরু পানি খেলে যেমন আওয়াজ হয় অমন আওয়াজ। আমি ভয় পেয়ে যাই। আম্মু ও আমার সাথে জেগে ছিল।
আম্মু তাড়াতাড়ি লাইট নিভিয়ে আমাকে নিয়ে মশারির মধ্যে ঢুকে ভয় পেয়ে। হঠাৎ মনে হল যে আমার পড়ার টেবিল থেকে কেউ চেয়ার টা টেনে আমার মাথার কাছে নিয়ে আসলো। এমন বিদঘুটে আওয়াজ হল যে আম্মু আর আমি ভয়ে এক জন আরেক জন কে ধরে কাপছিলাম। উঠে যে লাইট জ্বালাবো, সেই সাহস পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্টে যখন লাইট টা জ্বালালাম, তখন দেখলাম যে চেয়ার আগের জায়গাতেই আছে। এরপর একদিন পাশের ফ্ল্যাট এর ২ টা ভাইয়া প্ল্যান করল যে ছাদে কি আছে দেখবে। প্ল্যান অনুযায়ী রাত জেগে অপেক্ষা করতে থাকলাম। রাত প্রায় ২ টার দিকে শুরু হল লাফানোর আওয়াজ। তখন তারা ২ জন আস্তে আস্তে ছাদে উঠলো। সিঁড়ির মাথা পর্যন্ত উঠেই তারা চিৎকার করে নেমে আসে। তারা যেই জিনিসটা দেখে তা হলো, ১ টা বুড়ি মহিলা সাদা কাপড় পড়া অবস্থায় পুরা ছাদে লাফাচ্ছে এবং তার চেহারা টা খুবই ভয়ংকর। সবচেয়ে interesting ব্যাপার ছিল, ট্যাঙ্কে যতই পানি তোলা হতো রাতে, ট্যাঙ্কে পানি থাকতো না। এমন অনেক দিন হওয়ার পর, বাড়িওয়ালা এক হুজুর নিয়ে আসে। সে বিভিন্ন দোয়া পড়ে মিলাদ দিয়ে যায় ছাদে আর কোরবানির গরুর রক্ত ছিটিয়ে দেয় পুরো ছাদে আর গরুর মাথার খুলিতে কি যেন তাবিজ লাগিএ টাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়। এর পর থেকে আর ঐ সমস্যা টা হয়নি। তবে তার কয়েকদিন পরেই বাড়িটা উত্তর দিকে সামান্য হেলে যায়। এখনো মাঝে মাঝে সেই ঘটনা মনে হলে গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।