অবশেষে বিয়ে
দীর্ঘ পথ বাসে ভ্রমণ করে বাসায় ফিরলাম। ভ্রমণ করার পর আমি অনেক ক্লান্ত তাই হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে একটানা ১০ ঘন্টা ঘুম দিলাম। পরদিন সকালে উঠে দেখি বাবার ২০ টা মিসড কল। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমালে বাইরে কি হচ্ছে না হচ্ছে কোনো কিছুর’ই খোঁজ পাওয়া যায়না মোবাইলের ফোন তো দূরের কথা। আমার বাবা প্রচন্ড রাগী। ও বলতে তো ভুলেই গেছি আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার মা আর বাবা কি জানি নিয়ে ঝগড়া লাগছিলো তারপর থেকে বাবা আর মা আলাদা বাড়িতে থাকে। ২০ টা ফোন দেওয়ার কারন খুঁজে পেয়েছি। বাবা আমাকে বিয়ে করাবার জন্য একটার পর একটা প্ল্যান করতেছে। প্ল্যানটা আসলে বিয়ে নিয়ে না। প্ল্যানটা আমাকে অফিসে নেওয়ার। বাবা ভালো করেই জানে বিয়ে হয়ে গেলে তো আমি এমনিতেই বাবার অফিসে যাব। এইসব প্ল্যান বাবা তাঁর বন্ধুর সাথে ফোনে আলাপ করছিল সেই আলাপ আমি শুনে ফেলছি।
আমি বাবাকে পদেপদে ধোঁকা দিয়েছি এইবার মনে হয় আর রেহাই নাই। বাবার জন্য আমার অনেক কষ্ট হয় কিন্তু কি করবো বুঝতেছি না। মাথায় শুধু একটা প্রশ্ন’ই ঘুরপাক খাচ্ছে বাবার কাছে যা চেয়েছি সব দিয়েছে কিন্তু আমি বাবাকে কি দিয়েছি? আমার মনে হয় বাবাকে কিছু দেওয়ার সময় এসে গেছে। ছেলে হয়ে যদি বাবার শেষ বয়সে একটু বিশ্রাম দিতে না পারি তাহলে সেই রকম ছেলে থাকার চেয়ে না থাকায় শ্রেয়। যাই হোক সবকিছু বিবেচনা করে বাবার সামনে গেলাম।
– বাবা আমি আসছি।(মুহিব)
বাবা রেগে গিয়ে কি বলবে বুঝতেছে না।
– বাবা তুমি আসছো, তোর মত কুলাঙ্গার ছেলে আমার দরকার নাই আমার সামনে থেকে দূর হ।(বাবা)
– বাবা আমি রাজি।
– এইটা নিয়া কয়নাম্বার মিথ্যে কথা বাপজান?
– না বাবা মিথ্যে না এইবার সত্যি সত্যি।
– এর আগে তো অনেকবার বলছিস তাহলে আমি ধরে নিব আগের কথাগুলো মিথ্যে ছিল।
– আগের কথাগুলো বলে তোমার সাথে অনেক প্রতারণা করছি,অনেক ধোঁকা দিয়েছি বাবা হয়ে তুমি সব সহ্য করে নিয়েছো। চিন্তা করলাম ছেলে হয়ে বাবার শেষ বয়সে তাকে একটু বিশ্রাম দেই।
– এইতো আমার সুযোগ্য সন্তানের সুযোগ্য কথা। আমি স্বপ্ন দেখতেছি না ত। তাহলে একসাথে দুইটা কাজ সম্পন্ন কর?
– আরেকটা কি কাজ!?
– বিয়ে।
– বিয়েটা বাদ দিলে হয়না বাবা?
– দেখ সবকিছু ঠিকঠাক এখন যদি তুই বিয়ে না করিস তাহলে আমার মানসম্মান কিছুই থাকবে না। আমার মুখে চুনকালি লাগুক এইটা কি তুই চাস?!
– বাবা তুমি যা ভালো মনে করো তাই মাথা পেতে নিব। বাই
– তোর জন্য পায়েস রান্না করছি খেয়ে যা।
– ক্ষিদা নাই।
অবশেষে অফিস যাওয়া থেকে বিয়েও ঠিক। যেই ছেলে দিনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর রাতবেরাত এ এখানে সেখানে ঘুরাফেরা করে বাসায় ফিরতো। সেই ছেলের কাল থেকে দিনের বেলায় অফিস আর রাতবেরাত এ অফিসের ফাইল নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে। একটা মানুষের পরিবর্তন হতে বেশি সময় লাগে না। আজ যেই লোক টাকা-পয়সার মালিক কাল সেই লোক পথের ফকিরও হতে পারে। সময় যাচ্ছে আর মানুষের পরিবর্তন হচ্ছে। কেউ ভালো পথ থেকে খারাপ পথে যোগ হচ্ছে আবার কেউ খারাপ পথ থেকে ভালো পথের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘড়ির কাটা ঘুরতেছে আর সবকিছু আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে। শুদু আমি কেন এই পৃথিবীতে সব মানুষ’ই কাজ করে টাকা উপার্জন করে পার্থক্য এটাই কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা উপার্জন করে, কেউ চেয়ারে বসে পায়ের উপুড় পা তুলে টাকা উপার্জন করে আবার কেউ বাটপারি, বেঈমানি করে টাকা উপার্জন করে। কারো কষ্ট বেশি আবার কারো কষ্ট কম। যাই হোক আমি সৎভাবে কাজ করবো আর এটাই আমার উদ্দেশ্য। আর মাত্র ৩ দিন পর বিয়ে মোটামুটি সবাইকে দাওয়াত দিয়েছি।
বিয়ের দিন….
সবাইকে একসাথে দেখে আমার কাছে খুব ভালো লাগতেছে বিশেষ করে আগেরদিনের স্কুল লাইফের বন্ধুদের দেখে। ভার্সিটি, কলেজের চেয়ে স্কুল লাইফের বন্ধুত্ব সারাজীবন মনে থাকে বিশেষ করে বন্ধুদের কথা,দিনগুলি। স্কুল লাইফের বন্ধুদের আচারব্যবহার খারাপ হলে আমার যখন মন খারাপ থাকে তখন তাঁদের কথা স্বরন করি আর প্রচন্ড হাসি পায়। সবাইকে একসাথে দেখতে পাব কখন’ই ভাবিনি। যাই হোক অবশেষে ধুমধাম ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন হলো। আশ্চর্য এর বিষয় হলো বিয়ের রাত মানে বাসর রাত আমি যখন আমার ইয়ে কে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি? তুমি কি এ বিয়েতে রাজি ছিলে না কি জোর করে বিয়ে দিছে? এইভাবে প্রায় একটার পর একটা প্রশ্ন করতেছি কিন্তু উত্তর নাই। আমি মনে মনে ভাবতেছি মেয়েটা তাহলে বোবা! হঠাৎ মেয়ে জোরে একটা চিৎকার দিলো। চিৎকার শুনে আমি অনেক ভয় পাইছি ভাগ্যিস বাবা মা এ বাড়িতে নেই।
– অই মিয়া কি পাইছেন হ্যাঁ?? একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছেন। (ফারিয়া)
– না আর বলবো না। (মুহিব)
– কি ব্যাপার আপনার সারা শরীর কাঁপতেছে কেন?।
– না মানে শীত করতেছে তো তাই।
– তাহলে আমাকে জড়িয়ে ধরুন দেখবেন আর শীত করবে না।
– নাউযুবিল্লাহ,,আমার লজ্জা করে।
– হায়রে বোকা লজ্জা নারীর ভুষন। এই ফারিয়ার হাত ধরার জন্য কত ছেলে পাগল আর আপনি ভয়ে শেষ। আচ্ছা তাহলে হাতটা ধরেন।
– অভ্যাস নাই রে ভাই। এই ভাই বলার পর ফারিয়া আরো রেগে টগমগ হয়ে গেছে।
– আপনি আসলে কি? নিজের বিয়ে করা বউকে কেউ ভাই বলে?
– ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না।
– লাইফে প্রেম কয়টা করছেন?
– একটা ও না।
-সত্যি না কি মিথ্যা?
– একদম সত্যি।
– আপনি আমাকে এত ভয় পান কেন? আমাকে ভয় পেলে অফিসের লোকদের শাসাবেন কিভাবে?।
– আমি ভয় পাইনা, তোমার চিৎকার এর পর থেকে সারা শরীরের কাঁপুনি এখনো যায়নি।
– হি হি হি হি, আহারে আমার লক্ষী জামাই ভয় পাইছে। তোমাকে আর ভয় দেখাব না।
– আরেকবার ভয় দেখালে আমি কিন্তু বাসার ঘর ছেড়ে চলে যাব।
– আপনার বাচ্চা ছেলেদের মত কথা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে!।
– আমি বাচ্চা হলে তুমিও বাচ্চা।
-আচ্ছা,আচ্ছা আমরা দুইজনেই বাচ্চা ছেলেমেয়ে। এখন ঠিক আছে?
– ঠিক আছে।
-দেখি আপনার হাতটা এদিকে দিন তো।
– হাত দিয়ে কি করবা?
– শপথ করবেন।
– কিসের শপথ?
– বাসর রাতে স্বামীকে কিসের শপথ করায় আপনি জানেন না বুঝি?
– না তো আমি জানি না।
– তাহলে আমি বলি আপনি শুনুন।
– (১) কাল থেকে পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন।(২) সময়মত অফিসে যাবেন অফিস থেকে সোজা বাসায় এদিক সেদিক যাবেন তো দূরের কথা চিন্তাও করতে পারবেন না।
– এক মিনিট।
– কি বলুন।
– ২ নাম্বারটা সম্ভব না।
– কেন কি হইছে?
– অফিসের কাছে অনেকসময় বাইরে যেতে হয়।
– বাইরের কাজটা যে কি সেটা আমি ভালো করেই জানি।
– কি বলো।
– বাইরে গিয়ে মেয়েদের সাথে আড্ডা দেওয়া তাই না?
– আরে না তুমি শুদু শুদু সন্দেহ করছো।
– আচ্ছা আমিও দেখে নিব আমার স্বামীর সাথে কোন মেয়ে দেখা করতে আসে তাঁর চুল আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলব। দরকার পড়লে আমি আপনার পিছনে সিকিউরিটি হিসেবে থাকব।(রাগীকণ্ঠে)
– আচ্ছা থেকো।
অনেক ছেলে আছে সবার সাথে ভালোভাবে কথা বলে কিন্তু মেয়েদের সামনে গেলে গলা শুকিয়ে যায়। কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলে ঠিক নাই। আর স্ত্রী স্বামীর প্রতি একটু সন্দেহ থাকবেই। মেয়েদের প্রতি প্রায় সব ছেলেরাই দুর্বল। লোহা যেমন চুম্বক দেখলেই কাছে যেতে মন চায় তেমনি একটা ছেলে একটা মেয়েকে দেখলেই কাছে গিয়ে মন প্রাণভর দেখতে মন চায় । একটা মেয়ে ইচ্ছে করলে একটা ছেলেকে খারাপ থেকে ভালো বানাতে পারে আবার ভালো থেকে খারাপ ও বানাতে পারে। এ যুগে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে খারাপ পথ থেকে ভালো পথে এনেছে তা প্রায় হাজারে একটা ও হয় কি না সন্দেহ আছে। তবে আমার দেখা কিছু ছেলে বিয়ের পর অনেকটাই পাল্টে গেছে তাঁর একটা কারন তাঁর বউ। অনেকেই দেখি বলাবলি করে বিয়ে করলেই লাইফটা শেষ। এমন মেয়ে আসলে লাইফটা আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। বিয়ে করলেই লাইফটা শেষ আসলে এই কথাটা আমি মানি না। বিয়ের পর তাঁদের লাইফটাই শেষ হয়ে যায় যারা মা-বাবার কথা অমান্য করে বিয়ে করে,প্রেম করে ঘর পালানো তারপর বিয়ে করে,অল্প বয়সে বিয়ে করে তাঁরা বিয়ে করে কখন’ই সুখী হতে পারবে না। সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই কেউ পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবেন না। মা-বাবা অনেক কষ্ট পাবে। আপনারাও সুখী হতে পারবেন না। যারা মা-বাবাকে ভালোবাসেন আমার বিশ্বাস তারা কখনো পালিয়ে যাবে না।
বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!