প্রেমাতাল —-পর্ব ৬
লেখা- মৌরি মরিয়ম
-“এত হাসছেন কেন, শুনি?”
-“এমনি।”
-“এমনি না, আপনি খুব খারাপ। খালি মনে মনে কি যেন ভাবেন আর হাসেন।”
মুগ্ধ একথার পর আবার হাসলো। তিতির এবার রেগেমেগে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আপনি আসলেই খুব খারাপ!”
তারপর হাটা শুরু করলো। মুগ্ধ দৌড়ে ওকে ধরলো। পাশাপাশি হাটতে হাটতে বলল,
-“সরি সরি, আর হাসবো না। বলো কি জানতে চাও।”
-“দরকার নেই।”
-“বাপরে! তোমার দেখি অনেক রাগ! তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমাকে সামলায় কিভাবে?”
-“আমার বয়ফ্রেন্ড নেই।”
-“সেকি! এত সুন্দরী মেয়ের কিনা বয়ফ্রেন্ড নেই।”
তিতির চোখ বড় করে তাকালো মুগ্ধর দিকে। মুগ্ধ ঢঙ করে দূরে সরে গেল। তারপর এক লাইন গাইলো,
“ওই চোখে তাকিয়ো না, আমি লুটপাট হয়ে যাব। আমি বরবাদ হয়ে যাব!”
তিতিরের কি হলো কে জানে রাগ ধরে রাখতে পারলো না গানটা শুনে। হেসে ফেলল। তারপর মুগ্ধ আবার তিতিরের পাশাপাশি হাটতে শুরু করলো। তিতির কিছু বলছিল না। মুগ্ধ বলল,
-“আসলে আমার ফার্স্ট গার্লফ্রেন্ড হয় ভার্সিটি তে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময়। ৫ মাস পর ব্রেকাপ। তারপর আবার সেই বছরই আরেকটা গার্লফ্রেন্ড হয়, ৩ মাস ছিল। তারপর আবার থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় আরেকটা গার্লফ্রেন্ড হয়। ১০/১২ দিনেই চলে যায়। ব্যস শেষ আমার কাহিনী।”
-“আপনি যে বলেছিলেন ৭/৮ টা?”
-“আরে ওটা তো মজা করে বলেছি।”
-“ও।”
-“থার্ড ইয়ার মানে তো অনেক আগের কথা, না?”
-“হ্যা, তিন বছর প্রায়।”
-“এতদিন ধরে একাই আছেন?”
-“হ্যা, তারপর থেকে আর রিলেশনশিপে যাইনি। একবারে বিয়ে করবো। শুধু শুধু এক্সদের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ কি? তারপর হয়তো বিয়ে করতে গিয়ে দেখবো আমার বউ এক্স এর ছোট বোন। কি ভয়ঙ্কর হবে বুঝতে পারছো?”
একথা বলেই মুগ্ধ হো হো করে হেসে দিল। তিতির হেসে বলল,
-“আপনার খারাপ লাগে না কোনো এক্স এর জন্য?”
-“খারাপ লাগবে কেন? ওরা ভাল আছে, এটাই তো বড় কথা। আমি বয়ফ্রেন্ড হিসেবে খুব খারাপ। যখন বুঝেছে আমার সাথে রিলেশন করে ভুল করেছে তখন চলে গেছে। দুজনের জন্যই ভাল হয়েছে।”
-“ব্রেকাপ গুলো কি কি কারনে হয়েছে জানতে পারি?”
-“সবগুলো ব্রেকাপ সেইম কারনে হয়েছে।”
-“কি কারন?”
-“আমি কেয়ারলেস, আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন, আমি অগোছালো, আমি ভাব মারি, আমি বোরিং,ব্যাগডেটেড। আমার সাথে থাকা আর গাছের সাথে থাকা সমান।”
-“কি বলছেন? আপনি কেয়ারলেস, দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে আমি এতক্ষণে ডাকাতদের হাতে খুন হয়ে যেতাম।”
মুগ্ধ হাসলো। তিতির আবার বলল,
-“আপনি অগোছালো এটা নিয়ে আর কি বলবো? আপনি সবকিছু আমার আগে গুছিয়েছেন! পেঁপে কাটতে পারেন, রান্না করতে পারেন। এগুলো অগোছালো ছেলেরা পারে?”
-“ওরা তো আর কেউ আমার সাথে কোথাও ট্রিপে যায়নি আর বিয়ে করে এক বাড়িতেও থাকিনি তাই এসব দেখার বা জানার সুযোগ পায়নি। যা জেনেছে যা দেখেছে তা হলো, আমি কেয়ারলেস কারন, আমি ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দেইনা। প্রতিবেলায় ফোন করে খবর নেই না খেয়েছে কিনা। শুধুমাত্র রাতে একবার ফোন দেই। কি হেয়ার কাট দিল, কি লিপস্টিক লাগালো, কি ড্রেস পড়লো কিছুই খেয়াল করিনা বলিও না কেমন লাগছে! একচুয়েলি আমার এত সাজগোজ পছন্দ না। বাট আনফরচুনেটলি সবগুলোই সাজুনী ছিল। তিতির হেসে বলল,
-“তারপর?”
-“আমি ব্যাগডেটেড কারন, আমি ফেসবুকের ছবিতে কমেন্ট করিনা এটা একজনের অভিযোগ ছিল। আমি নাকি ভাব মারি কারন রেস্টুরেন্টে গেলে অন্য কাপলদের দেখিয়ে বলতো, ‘দেখো ছেলেটা মেয়েটাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর তুমি জীবনেও আমাকে খাইয়ে দিলে না।’ আমি হেসে বলতাম ‘ও’ কিন্তু খাইয়ে দিতাম না।”
-“আচ্ছা, আসলেই আপনি তাহলে একটু অন্যরকম। সব মেয়েরাই এসব কম বেশি চায়। যেমন ধরুন একটা মেয়ে তো অবশ্যই চাইবে যে তার বয়ফ্রেন্ডটা তাকে একটু খেয়াল করে দেখুক। একটু প্রশংসা করুক। কিন্তু আপনি তা করতেন না।”
-“মুখে এক ইঞ্চি মেকাপ থাকলে বুঝবো কি করে কঙ্কাবতী না কৃষ্ণকলি? ফরসা কালো নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তবে আসল ব্যাপারটা জানলে হয়তো সেটা নিয়ে গান শুনিয়ে প্রশংসা করতাম। তারপর ধরো একটা ছেলের মন পর্যন্ত পৌঁছতে যেমন পেটের দিকে আই মিন খাওয়ার দিকে নজর দিতে হয়, তেমনি একটা মেয়ের মন পর্যন্ত যেতেও তার চোখের দিকে নজর দিতে হয়। সুন্দর চোখের প্রতি আমার দূর্বলতা আছে। আমি অবশ্যই সেটা নিয়ে তাকে কিছু বলতাম কিন্তু চোখের উপর এক্সট্রা আইল্যাশ লাগলে আর কি কি সব দিয়ে চোখটাকে ভুতের মত রঙিন করে রাখলে বুঝবো কি করে যে কোন উপমাটা খাটবে? তাই কিছুই বলিনি।”
-“তো আপনি তাদেরকে বলতে পারতেন যে আপনি ওসব পছন্দ করেন না। আপনি না বললে তারা বুঝবে কি করে?”
-“বলবো কেন? যে যেরকম তার সেরকমই থাকা উচিৎ। আমার তো কোন রাইট নাই নিজের পছন্দ অপছন্দ অন্য কারো উপর চাপিয়ে দেয়া। আমি তো আর এসবের জন্য কাউকে ছাড়িনি। আর এসব অভিযোগ থাকলেও এসবের জন্য আমাকেও কেউ ছাড়েনি। ছেড়েছে আমার ট্রাভেলিং এর জন্য।”
-“সেকি! কেন?”
-“এইযে এরকম পাহাড়ে, জঙ্গলে আসলেই নেটওয়ার্ক থাকে না। কথা হয়না, তার জন্য নাকি অস্থির লাগে। গার্লফ্রেন্ডের চাইতে আমি ট্রাভেলিং কে বেশি ভালবাসি, আমি নাকি গার্লফ্রেন্ড ছাড়তে পারবো কিন্তু ট্রাভেলিং ছাড়তে পারবো না তাই ব্রেকাপ!”
-“আচ্ছা আপনি যখন ৪/৫ দিনের ট্রিপে যেতেন তখন আপনার গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়েনি? খারাপ লাগেনি?”
-“নাহ! প্রকৃতি আমার সবচেয়ে বড় আর ইম্পরট্যান্ট প্রেমিকা। প্রকৃতির কাছে গেলে আর কিছু লাগেনা।”
-“আমার তো মনে হচ্ছে আপনার কারো সাথেই সম্পর্কটা তেমন গভীর ছিলনা। কাউকেই আপনি সত্যিকার অর্থে ভালবাসেননি।”
-“সেটাও হতে পারে। তবে আমি লয়াল ছিলাম।”
-“ওহ!”
-“অনার্সের পর থেকেই মা আমার জন্য মেয়ে দেখছে। আমার মা ভীষন সৌখিন, সে বড় ছেলেকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমি অনেক চুজি বুঝলে? মায়ের দেখা একটা মেয়েও পছন্দ হয়নি। মা তো পুরো বিরক্ত আমার উপর।”
-“তাই? আচ্ছা, কিরকম মেয়ে আপনার পছন্দ আমাকে বলুন তো। আমি আপনার জন্য মেয়ে দেখে দেব।”
-“বলছি তার আগে শোনো কেন আমার মায়ের দেখা মেয়ে পছন্দ হয়নি।”
-“ওহ, অবশ্যই… বলুন।”
-“দলবেঁধে মেয়ে দেখতে যাওয়া, সালামি দেয়া, এই ব্যাপারটা আমার কেমন যেন লাগে। যেকোনো মেয়ের জন্য খুবই অসম্মানজনক। তাই আমি মেয়ের ছবি দেখে ফোনে কথা বলেছি কিংবা বাইরে দেখা করেছি।”
-“তারপর?”
-“আমার সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট প্রশ্ন ছিল ট্রাভেলিং কেমন লাগে?”
-“ওয়াও, এন্সার কি ছিল?”
-“অনেক ধরনের এন্সার ছিল। একটা শুধু বলি। একজন বলেছিল, ‘ওয়েস্ট অফ মানি। তার চেয়ে সেই টাকায় ঘরের একটা জিনিস বানানো যায়, ড্রেস কেনা যায়’।”
তিতির হাসতে লাগলো। মুগ্ধ বলল,
-“আমি ট্রাভেলিং ছাড়া থাকতে পারবো না। তাই এটাকে সহজভাবে নেবে এমন কোনো মেয়েকেই বিয়ে করতে চাই। সবচেয়ে ভাল হয় তারও যদি ট্রাভেলিং এ ইন্টারেস্ট থাকে। দুজন মিলে সারা দুনিয়া ঘুরব। খুব বেশি সুন্দরী না হলেও চলবে। শুধু চোখ দুটো সুন্দর হলেই হবে, ডুব দেব সেই চোখে।”
তারপর পাশাপাশি হাটতে হাটতেই তিতিরের চোখের দিকে তাকালো। তিতির সে দৃষ্টির অর্থ বুঝলো না। খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে বলল,
-“তারপর আর কি কোয়ালিটি চাই?”
-“বেশি সাজগোজ করেনা এমন কোনো মেয়ে হলেই ভাল হয়। মেকাপ দেখলেই আমার একটা নেগেটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েট হয়।”
-“আর?”
-“রান্নাবান্না না জানলেও চলবে। আমি মোটামুটি সবই রাঁধতে পারি, আর রাঁধতে ভালও লাগে। ফ্রি টাইমে আমার কাছ থেকে হেল্প পাবে। আর বোকা, ইমোশনাল মেয়ে চাই। ওরা অনেক ভালবাসতে জানে।”
-“আর?”
-“বেশি লম্বা না হলেও চলবে। ফরসা, কালো কোনোটাতেই প্রব্লেম নেই।”
-“কিন্তু আপনি তো লম্বা। লম্বা মেয়েদেরই আপনার পাশে ভাল লাগবে।”
মুগ্ধ হাসলো। তিতির বলল,
-“হাসছেন যে?”
-“এমনি।”
-“ও ভাল কথা, সবই বললেন কেন এক্স রা আপনাকে কেয়ারলেস, দায়িত্বজ্ঞানহীন, ভাব মারা আর ব্যাগডেটেড বলত। কিন্তু বললেন না তো কেন আপনাকে বোরিং বলতো। আপনি তো মোটেই বোরিং না। দুদিন ধরে তো দেখছি।”
-“ওহ ওটা তো ইচ্ছে করেই স্কিপ করেছি।”
-“কেন?”
-“বললে তুমি লজ্জা পেয়ে যাবে। আর আমি এটা তোমাকে বলেছি বলেও অনেক কিছু ভাবতে পারো।”
-“আরে ধুর! কিছুই ভাববো না। আপনার এক্স আপনাকে বোরিং বলার কারনে আমি কেন লজ্জা পাব?”
-“আমরা তো অতটাও ফ্রি হইনি।”
তিতির কিছু না বুঝেই বাচ্চাদের মত বায়না করতে লাগলো। আরে বলুন না। আমি মোটেই লজ্জা পাব না। আপনার মত মানুষকে কেন বোরিং বলবে আমি তো ভেবেই পাচ্ছিনা।”
-“সবাই না শুধু সেকেন্ড গার্লফ্রেন্ডটা বোরিং বলেছিল যার সাথে ৩ মাস রিলেশনশিপ ছিল।”
তিতিরের মেজাজটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। বলল,
-“ইন্ট্রোডাকশন টা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে।”
-“বলার পর আবার রাগ করোনা কিন্তু।”
-“আরে না না বলুন।”
-“আই নেভার কিসড হার… বিকজ অফ হার লিপস্টিক!”
তিতির পুরো হা হয়ে গেল। ও ভাবতেই পারেনি এমন কিছু। ওরা হাটছিল। তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে ছিল। মুগ্ধ অন্যদিকে ফিরে কথাটা বলল। তিতির সাথে সাথে সোজা হয়ে অন্যদিকে তাকালো। লজ্জা পেয়ে পুরো চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। মুগ্ধর একবার ইচ্ছে হলো বলুক, ‘জানতাম এমনটাই হবে।’ কিন্তু কেন জানি আর বলল না।
৩ ঘন্টা হেটে ওরা মাত্র ৪ কিলোমিটার এসেছে। হঠাৎ দূর থেকে একটা গাড়ির আওয়াজ আসছিল। পিছনে ফিরতেই দেখলো একটা বাস আসছে। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-“তিতির, বাসে যেতে পারবে?”
তিতিরের চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠলো। বলল,
-“হ্যা পারবো।”
-“লোকাল বাস কিন্তু! দাঁড়িয়েও যেতে হতে পারে।”
-“নো প্রব্লেম। হাটতে তো আর হবে না।”
মুগ্ধ বাসটা থামালো। বাসের হেল্পার জানালো যায়গা নেই। অলরেডি অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। তখন মুগ্ধ ওদের বিপদের কথা বলতেই বাস ওদের তুলে নিল। বাসে উঠে মুগ্ধ বাসের হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়ালো। আর তিতির তা নাগাল পেলনা। তাই মুগ্ধর হাত ধরে দাঁড়ালো। মুগ্ধও তিতিরের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো। কিন্তু একটা ডাউনহিল পার করতেই বাস নিচের দিকে যেতে শুরু করলো আর তিতির পড়ে যাওয়ার ভয়ে মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো। মুগ্ধও অবশ্য তিতিরকে ধরে ফেলেছিল। এরকম শত শত আপহিল, ডাউনহিল ছিল রাস্তায়। পুরো রাস্তাই মুগ্ধ একহাতে হ্যান্ডেল ধরে আরেক হাতে তিতিরকে নিজের বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। তিতিরের তখন মনে হচ্ছিলো, ও বোধহয় মুগ্ধকে ভালবেসে ফেলেছে! আবার ভাবলো দুদিনের পরিচয়ে কি ভালবাসা সম্ভব? নাকি এটা শুধুই ভালোলাগা! কিন্তু ভালবাসা যদি নাই হয় তাহলে ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকতেও কেন অস্বস্তি হচ্ছে না?”
থানচির সরকারি গেস্ট হাউজের মাঠে ওদের তাঁবু গেড়ে থাকার কথা ছিল। মুগ্ধ বাস থেকে নেমেই ফোন বের করলো। এখানে তো নেটওয়ার্ক থাকার কথা। হ্যা নেটওয়ার্ক পাওয়া গেল, কিন্তু সাফির ফোন বন্ধ। তাড়াতাড়ি একটা অটো নিয়ে গেস্ট হাউজে গেল মুগ্ধ-তিতির। তখনও ওরা জানতো না কি বিপদ ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল থানচিতে!
মুগ্ধ-তিতির আলো ফুটতেই মানে ৫ টার দিকে রওনা দিয়েছিল। ৩ ঘন্টা হাটা আর প্রায় ১ ঘন্টা বাস জার্নির পর ওরা থানচি পৌঁছেছিল। থানচি গেস্ট হাউজে ঢুকেই মুগ্ধ রিসিপশনের দিকে গেল। পিছন পিছন গেল তিতির। ঘড়ির কাটা ছিল তখন ৯ টার আশেপাশে। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-“আচ্ছা ২৬ জনের একটা দল এসেছে না কাল?”
-“ওনারা তো আজ ভোরেই রেমাক্রি রওনা দিয়ে দিয়েছে। তা প্রায় ৩/৪ ঘন্টা হবে। আপনারা ওনাদের খুঁজছেন কেন?”
-“আমরাও ওই দলেই নাফাখুম ট্রিপে এসেছি। পথে আমরা ওদের হারিয়ে ফেলি।”
-“ওহ হ্যা। ওনারা তো ২৮ জনেরই বুকিং দিয়েছিল।”
-“হ্যা। এত আগে রওনা দিয়েছে। এখন তো ধরতেও পারবোনা ওদের।”
-“ওনারা যদি টানা নৌকায় যেত তাহলে আপনারা ইঞ্জিন নৌকায় গিয়ে ধরতে পারতেন। কিন্তু ওনারা তো ইঞ্জিন নৌকা নিয়েছে সবগুলোই।”
-“ওরা কোনো মেসেজ দিয়ে গেছে আমাদের জন্য?”
-“না কিছু বলেনি।”
তিতির বলল,
-“এখন কি হবে?”
-“দাড়াও দেখছি।”
তারপর মুগ্ধ আবার ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো,
-“একটা ঘর হবে?”
-“দুজনের জন্য?”
-“হ্যা।”
-“আপনাদের সম্পর্ক?”
-“আমরা স্বামী-স্ত্রী।”
তিতির অবাক হয়ে চাইলো মুগ্ধর দিকে। মুগ্ধ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। ম্যানেজার বলল,
-“সব রুম বুকিং দেয়া আছে। দিব কিভাবে বলুন।”
-“আমরা রাতে থাকব না। জাস্ট গোসল করে ফ্রেশ হবো, খাবো এটুকু সময়।”
-“ওহ তাহলে একটা রুম দেয়া যাবে। যদিও বুকিং আছে কিন্তু ওনাদের আসতে বিকাল হবে।”
-“ওহ, থ্যাংকস।”
রুমে খুলে দিতে দিতে ম্যানেজার জিজ্ঞেস করলো,
-“নতুন বিয়ে করেছেন বুঝি?”
-“হ্যা। গত সপ্তাহে।”
-“হানিমুনে এলেন এই জঙ্গলে?”
-“আসলে আমাদের দুজনেরই পাহাড়, জঙ্গল পছন্দ!”
ম্যানেজার সবগুলো দাঁত বের করে বলল,
-“ভাবীর তো দেখি একদম কম বয়স।”
তিতিরের বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘তাতে তোর কিরে ব্যাটা!’ কিন্তু বললনা। মুগ্ধ বলল,
-“হ্যা, এরেঞ্জ ম্যারেজ তো।”
-“ও। আচ্ছা ভাই ৩ টার মধ্যে রুম ছেড়ে দিতে হবে কিন্তু।”
-“হ্যা হ্যা নো প্রব্লেম।”
ম্যানেজার বেড়িয়ে যেতেই মুগ্ধ দরজা লাগিয়ে দিল। তিতির বলল,
-“এটা কি হলো?”
মুগ্ধ কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে বলল,
-“কি হলো?”
-“স্বামী-স্ত্রী বললেন কেন?”
-“তো? তোমাকে বউ বলেছি বলে কি তোমার জাত গেল?”
তারপর নিজের কলারটা একটু ঠিক করে বলল,
-“আমি কি ফেলনা নাকি?”
-“এসব বলার কি দরকার ছিল?”
-“না বললে রুম পেতাম না। আর তুমি রিয়াক্ট করছো কেন? বলেছি বলেই কি আমি রুমে ঢুকেই স্বামীদের মত বিহেভিয়ার শুরু করেছি?”
তিতির আর কথা বাড়ালো না। মুখে যাই বলুক কথাটা শুনে তো ওর ভালই লেগেছে। বরং কাজের কথা বলা যাক। বলল,
-“আচ্ছা আচ্ছা। এখন আমরা কি করবো?”
মুগ্ধ বিছানায় শুয়ে বলল,
-“গোসল করবো, খাব। তারপর বান্দরবান ফিরে যাব। আর তুমি যদি চাও তো রেমাক্রিও যেতে পারি। কারন, ওরা তো দুপুরে রেমাক্রি পৌঁছে ওখানকার গেস্ট হাউজে থাকবে। ভোরে নাফাখুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা। আর আমরা এখন রওনা দিলে সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছে যাব।”
-“ফিরে যাওয়ার জন্য কি এত কষ্ট করে এসেছি নাকি? আমি নাফাখুম যাবই যাব।”
-“আচ্ছা। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে কিভাবে যাব সেটা নিয়ে।”
তিতির চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
-“কেন নৌকা ছাড়া অন্য কোনভাবে যাওয়া যায় নাকি?”
-“নাহ, একমাত্র উপায় নৌকা। কিন্তু দলছাড়া শুধু দুজন নৌকার জন্য রিস্কি হয়ে যায়। তার উপর একটা ছেলে একটা মেয়ের জন্য তো রিস্কটা আরো বেশি হয়ে যায়।”
-“এখানেও ডাকাত আছে?”
-“ডাকাতরা এদিকে আসেনা। এদিকটা জলদস্যুদের।”
-“ওমাগো! জলদস্যু!”
-“হুম, তবে জলদস্যুরা কাউকে ধরেছে এরকমটা কমই শোনা গেছে। ওরা সমুদ্রেই যায় বেশি। যখন ওখানে সুবিধা করতে পারেনা তখন এদিকে আসে। আর এদিকে এসে করবেই বা কি বলো? এদিকের মানুষের তো আর অত টাকা পয়সা নেই। ট্যুরিস্টও খুবই কম।”
-“ওরাও কি ডাকাতদের মত মেয়েদের প্রতি… ?”
থেমে গেল তিতির। তারপর মুগ্ধ বলল,
-“মেয়েদের প্রতি লোভ কার নেই বলো? ডাকাত, জলদস্যুরা না হয় বুঝলাম অশিক্ষিত, অভাবে বড় হওয়া। তাই শিক্ষা পায়নি, মানবিক বোধ জন্মেনি। কিন্তু আমাদের শিক্ষিত সমাজে এমন অমানবিক পিশাচ কি নেই? সব মুখোশ পড়ে ঘুরছে। সুযোগ পেলেই মুখোশটা টেনে খুলে ফেলছে।”
-“কই আপনার তো কোনো লোভ নেই।”
কথাটা বলে ফেলে কি যে ভাল লাগছিল তিতিরের! ইশ, সব ছেলেই যদি মুগ্ধর মত করে ভাবতো। মুগ্ধ হেসে বলল,
-“আসল ব্যাপারটা কি জানো?”
-“না তবে জানতে চাই।”
-“সব পুরুষ মানুষ খারাপ না। কিন্তু ওদের জন্য পুরো পুরুষ জাতটাকেই কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়। ওদের জন্যই সবার খারাপ কথা শুনতে হয়। অথচ প্রোপরশন টা কিন্তু ওই এক বাটি দুধে একটা মাছির মতই।”
-“কিন্তু রাস্তায় বেরোলে তো স্টেপে স্টেপে ছেলেরা পাশ দিয়ে আয় আর খারাপ খারাপ কথা বলে। তাহলে প্রোপরশনটা কোথায় গিয়ে দাড়ায় ভাবুন তো?”
-“ওটা তো টিজিং। টিজিং তারাই করে যারা রাস্তায় রাস্তায় থাকে। ওদের সংখ্যা তো কমই। ওদের দেখছো কিন্তু যারা রাস্তায় নেই বাসায় আছে তাদেরকে কি দেখতে পাচ্ছো?”
-“তা অবশ্য দেখছি না।”
-“আর ওদের দেখলে মনে হবে ওরা ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে। কিন্তু আদৌ তা না। আমি তো কখনো ১ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার টাইম পাইনি। আমার ছোটভাই দৌড়ের উপর থাকে স্কুল, কোচিং নিয়ে। সেও টাইম পায় না। আমরাও আড্ডা দেই তবে বাসায় কাজিনদের সাথে। বাইরে আড্ডা দেই স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে বন্ধুদের সাথে ক্লাসের ফাঁকে। রাস্তায় রাস্তায় টাইম পাস করার মত সময় আমাদের মত ফ্যামিলির ছেলেরা পায়না। আর আমাদের মত ফ্যামিলিই দেশে সবচেয়ে বেশি।”
মুগ্ধ ঘড়ি দেখে বলল,
-“দেরী হয়ে যাচ্ছে আমাদের। পরে গল্প করবো। এখন বাসায় একটা ফোন করো। তারপর গোসলে যাও।”
-“ও হ্যা। কিন্তু আপনি গোসল করবেন না?”
-“তুমি আগে করো।”
-“বাসায় ফোন করলে সবার সাথে কথা বলতে হবে আলাদা করে। তখন অনেক সময় লাগবে ততক্ষণে আপনি বোধহয় গোসল করে ফেলতে পারবেন।”
-“ও। ঠিকাছে তাহলে আমি আগে যাচ্ছি।”
তিতির মোবাইল বের করে দেখলো নেটওয়ার্ক নেই। মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“নেটওয়ার্ক নেই তো। আমার বাবা তো টেনশনে হার্ট অ্যাটাক করবে।”
মুগ্ধ ব্যাগ থেকে কাপড় বের করছিল। তাকিয়ে বলল,
-“এয়ারটেল?”
-“হুম!”
-“কোন ভরসায় যে পাহাড়ে এয়ারটেল নিয়ে আসতে পারো!”
-“জানতাম না তো!”
-“আচ্ছা প্রব্লেম নাই আমারটা নাও।”
পকেট থেকে মোবাইল বের করে এগিয়ে দিল মুগ্ধ। তারপর গোসলে ঢুকে গেল। তিতির মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো সিম্পল লক। কোনো প্যাটার্ন নেই। বাবার নাম্বারে ডায়াল করলো। বাবা চিন্তায় ছিলো। বাবাকে বুঝিয়ে বলল যে ও ভাল আছে আর আগামী ৬/৭ দিন কথা হবে না। কারন, এদিকে নেটওয়ার্ক নেই। বাবা বলল ভাইয়া নাকি আগেই বলেছে এসব। তারপরেও মন কেমন করছিল, এখন কথা বলে ভাল লাগছে। মায়ের সাথেও হাই হ্যালো করে রেখে দিল।
ফোন রাখতেই তিতিরের কেন যেন ইচ্ছে করলো মোবাইলটা ঘাটতে। জানে এটা ঠিক না। তবু সোজা মেসেজ অপশনে চলে গেল। সব ফোন কোম্পানি আর মায়ের, বোনের, ভাইয়ের আর ফ্রেন্ডদের মেসেজ। সত্যিই কি ওর গার্লফ্রেন্ড নেই? তখন হঠাৎ একটা মেসেজে চোখ আটকে গেল। নাম্বারটা “প্যারা” দিয়ে সেভ করা। কনভারসেশন টা এরকম ছিল,
Pera: Mugdho, ami tor proti mugdho!
Mugdho: Being mugdho is good for health.
Pera: I love you!
Mugdho: So? what can i do for u?
Pera: You should love me too.
Mugdho: Ken ami ki tor kase matha bandhaisi?
Pera: Emn korish kn always?
Mugdho: Ami emn e..
Pera: Eto vab kisher tor?
Mugdho: Tui e ajaira msg diya vab baraisos.
Pera: kauke valobasha ki dosh?
Mugdho: Na onk boro gun. ei onk boro gun onno kono channel e dekha ga.. kame dibo! Amr piche somoy noshto korish na amma.. khema de!
Pera: Amare amma boltesish kn tui? amare to amma koibo tor polapain.
Mugdho: Amr polapainer ki theka porseni tore amma koibo?
Pera: Ami jonmo dimu tyle ki arek betire amma koibo?
Mugdho: U are mad.. chaogol ekta.
Pera: Chagol pagol ja mon chay ko.. kintu ami shotti tor bacchar ma hoite chai
Mugdho: Tar mane tui amar loge sex korte chash?
Pera: sex, biya, baccha shob korte chai.
Mugdho: Biye to 100 miles dure.. tor moto behayar loge ami sex o korina.
বাথরুমের দরজা খোলার শব্দে তিতির তাড়াতাড়ি ব্যাকে গিয়ে গিয়ে কাটল। যাতে হাইলাইটসে মেসেজ অপশনটা এসে না থাকে। ভাগ্যিস মুগ্ধ দরজাটা খুলে বের হওয়ার আগেই তিতির ফোনটা হাত থেকে রাখতে পেরেছিল।
মুগ্ধ শুধু জিন্স পড়ে বেড়িয়ে এসেছে খালি গায়ে। এটা কোন কথা? সদ্যভেজা লোমগুলো প্রথমবারের মত দেখে তিতির চোখ ফেরাতে পারছিল না। মুগ্ধ তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিল।
মুগ্ধ শার্ট পড়তে পড়তে বলল,
-“তিতির তুমি গোসলে যাও। আমি খাবার কিনে নিয়ে আসি। আর আমাদের তো রেমাক্রি পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। দুপুরে নৌকায় রান্না করার জন্য কিছু বাজার করতে হবে। ওটাও করে নিয়ে আসি।”
-“নৌকায় রান্না কিভাবে সম্ভব?”
-“এখানের নৌকাগুলো তো অনেক দূরে দূরে যায়। নৌকাতেই রান্নার সব ব্যবস্থা থাকে। চুলা, হাড়ি, বটি, ইভেন মশলা বাটার পাটা সব থাকে মাঝিদের কাছে।”
কথা শেষ করেই একটা হাসি দিল মুগ্ধ। তিতির বলল,
-“ওহ।”
-“এখন কি খাবে সেটা বল?”
-“ভাত। যা দিয়ে হোক ভাত হলেই হবে। খুব ক্ষিদে পেয়েছে।”
-“একদম মনের কথা বলেছো। আমার মনটাও এখন ভাত চাইছিল।”
-“সকালে ভাত খেতে পারিনা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভাত না খেতে পেলে মরেই যাব।”
-“এক্সাক্টলি! আচ্ছা এখন তো সাড়ে নয়টা বাজে। আমি আধা ঘন্টার মধ্যে ফিরবো। তুমি গোসল করে একেবারে রেডি হয়ে নেবে। আর হ্যা, সালোয়ার-কামিজ পড়বে।”
-“আচ্ছা।”
বের হতে গিয়ে আবার ফিরলো মুগ্ধ। জিজ্ঞেস করলো,
-“আচ্ছা তোমার কি কোনো স্কিন প্রব্লেম আছে? মানে এলারজি কিংবা অন্যকিছু?”
-“নাহ। কেন বলুন তো?”
-“এসে বলছি। দরজা লাগাও। আর কেউ আসলে দরজা খোলার আগে জিজ্ঞেস করবে কে? আমি না হলে দরজা খুলবে না। যেই হোক। ম্যানেজার আসলেও না, কোন অজুহাত দিয়ে দেবে।”
-“আচ্ছা।”
মুগ্ধ বেড়িয়ে যেতেই তিতিরের মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। যেই ছেলেটা অন্য মেয়েদের সাথে ওইভাবে কথা বলে সেই ছেলেটাই ওর এত খেয়াল রাখছে! সেটা কি শুধুই ওর সাথে আছে বলে নাকি অন্য কিছু!
মুগ্ধ বাইরে যেতে যেতে মাকে ফোন করে কথা বলল। বাবাকে ফোন করে ৫ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলল ইন্সট্যান্ট। কখন কিসে লাগে বলা যায়না। এরপর সামনে কি আছে কে জানে! কিন্তু আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া জানালো মুগ্ধ! ভাগ্যিস সাফিদের হারিয়েছিল। নাহলে হয়তো এসব কিছুই হতোনা। গতকাল সারাদিন আর সারারাত.. ভয় ছিল, বিপদ ছিল তবু জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ের অন্যতম একটা সময় ছিল। তিতিরের জন্য অন্যরকম একটা ফিলিং হচ্ছে যা কখনো অন্য কারো জন্য হয়নি! কিন্তু তিতিরেরও কি কোনো ফিলিং হচ্ছে? নাকি হচ্ছে না? ফিলিং না হলে কি কাল রাতে ওভাবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতো? ফিলিং না হলে কি জিজ্ঞেস করতো কিরকম মেয়ে ওর পছন্দ? মুগ্ধ সিওর যে তিতিরেরও কিছু ফিল হচ্ছে। যদি না হয় তাহলে ও বুঝবে ভালবাসার কিছুই বোঝেনা ও। ব্যাপারটা আরেকটু ঘাটিয়ে দেখতে হবে ১০০% সিওরিটির জন্য।
কেনাকাটা শেষ করে এসে মুগ্ধ দরজায় নক করলো। তিতির জিজ্ঞেস করলো,
-“কে?”
মুগ্ধর মাথায় দুষ্টুমি চাপলো তাই কিছু বলল না। আবার নক করলো। তিতির বলল,
-“কে?”
এবারও মুগ্ধ কথা বলল না। নক করলো। তিতির বলল,
-“না বললে খুলবো না তো!”
-“আরে বাবা খুলো।”
তিতির দরজা খুলে বলল,
-“ঢং তো ভালই করতে পারেন।”
মুগ্ধ কিছু বলতে পারলো না। ওর চোখ আটকে গেছে। তিতির গোসল করে হালকা বেগুনী মানে জারুল ফুলের রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে। ওর গায়ের হালকা গোলাপী রঙের সাথে মিশে যাচ্ছে সব। কোনো প্রসাধনী নেই মুখে। চুলগুলো এখনো আঁচড়ায়নি। এলোমেলো চুল বেয়ে বেয়ে ফোটা ফোটা পানি পড়ছে। এত স্নিগ্ধ রূপ কেবল বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর প্রকৃতিতেই দেখেছে ও, কোনো মানুষের মাঝে দেখেনি। এক ফোটা পানিকেই তখন খুব হিংসে হচ্ছিল। কারন সেটা ছিল তিতিরের চোখের বরাবর গালের উপর।
মুগ্ধকে এভাবে হা করে চেয়ে থাকতে তিতির অপ্রস্তুতবোধ করছিল। আবার কেন জানি ভালও লাগছিল খুব। কত মানুষই তো ওকে হা করে চেয়ে দেখেছে। এত ভাল তো লাগেনি কখনো।
কিছুক্ষণ কারো মুখে কোনো কথা ছিলনা। মুগ্ধর হঠাৎ খেয়াল হলো ও বেহায়ার মত অপলক দৃষ্টিতে দেখছে তিতিরকে। স্বাভাবিক হয়ে বলল,
-“চলো খেয়ে নেই। ভাত পাইনি। রুটি-ভাজি চলবে তো?”
-“হ্যা, ঠিক আছে।”
-“বাজার করে এনেছি। নৌকায় উঠেই ভাত রান্না করবো।”
-“আচ্ছা।”
খেয়েদেয়ে সব গুছিয়ে ফেলার পর মুগ্ধ বলল,
-“তুমি কি সুতির ওড়নাওয়ালা কোন সালোয়ার-কামিজ এনেছো?”
-“হ্যা কেন?”
-“আসলে ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিতে হবে। জর্জেট দিয়ে দিলে তো আর লাভ নেই। কিছু মনে করোনা এভাবে বলছি বলে। এই যায়গাগুলো দুজনের জন্য রিস্কি। একবার যে বিপদে পড়েছি তাতে আবার পড়তে চাইনা।”
-“বুঝেছি। আচ্ছা চেঞ্জ করতে হবেনা আমি ওড়নাটা রেখে শাল নিয়ে নিচ্ছি।”
তিতির একটা শাল বের করে মাথায় ঘোমটা দিল। মুগ্ধ শালটা মাথা থেকে খুলে ওর গায়ে পেঁচিয়ে দিয়ে বলল,
-“মাথা ঢাকা কম্পলসারি না। গা ঢাকাটা কম্পলসারি, সরাসরি না বললে কিছুই বোঝোনা দেখছি।”
তিতির লজ্জা পেয়ে গেল। মুগ্ধ বাজারের ব্যাগ থেকে একটা কাজলের কৌটা বের করে তিতিরের হাতে দিল। তিতির অবাক হয়ে বলল,
-“কাজল লাগাবো? কিন্তু আমি তো পেনসিল কাজল ছাড়া দিতে পারিনা।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“মুখে আর হাত পায়ে যতটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে এই কাজলটা ভাল করে ব্লেন্ড করে লাগাবে।”
-“মানে মুখে কালি মেখে কালো সাজব?”
-“জানি এখন তুমি আমাকে অনেক খারাপ ভাববে। সন্দেহবাতিক ভাববে বাট আমি তোমার সেফটির জন্য এটা করতে বলছি। পাহাড়ে লুকানোর যায়গা ছিল লুকিয়েছিলাম। নদীতে কিন্তু চারপাশে পানি বিপদ এলে কোথাও যেতে পারবো না।”
তিতিরের বুকের মধ্যে হু হু করে লিলুয়া বাতাস বয়ে গেল। এতটা ভাবে মুগ্ধ ওকে নিয়ে! তিতির মুগ্ধর কথা মতই কাজলের কালি দিয়ে মুখ, হাত, পা, সব কালো করে ফেললো। তারপর মুগ্ধর দিকে ফিরে বলল,
-“ঠিক আছে?”
মুগ্ধ এগিয়ে এসে একটু কাজল নিজের দুহাতের অঙুলে ব্লেন্ড করে তিতিরের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে বলল,
-“কানে লাগাবে কে সুন্দরী?”
তারপর মুগ্ধ তিতিরের দুই কানে কালি লাগালো। ওর ছোঁয়া পেয়েই তিতির শিউরে উঠলো। তা দেখেই মুগ্ধর ভেতরে কি যেন হলো। সরে গিয়ে বলল,
-“তুমি নিজেই লাগাও।”