ভালোবেসে মরেছি – Part- 12
ক্লাসের মধ্যে একা দাড়িয়ে যেখানটায় প্রতিদিন মিহু বসে সেখানটায় তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে এক ফোটা হাসির ঝিলিক নিয়ে আছে অর্নব। মিহুকে যে ও ভালোবাসে এর মাঝে কোন সন্দেহ নেই,তবে কতটুকু বাসে তা যদি মিহু জানতো তাহলে হয়ত ওর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতো না।
আজ সেখানেই সেই নদীর পাড়েই মিহুকে নিয়ে যাবে সে।মিহুর মাঝে যে কি আছে তা অর্নব ভেবে পায়না।মেয়েটি সবার থেকে আলাদা।
আসলে কি আর বলা যাবে,হয়তো যাকে ভালোবাসা যায় তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা মনে হবে এটাই নরমাল।তবে কি, মিহু মেয়েটা একদমই আলাদা।ওর মুখে হাসি থাকলেও ওর ভেতরে কিছু তো একটা আছে।মনে হয় যেন, হাসিটা ওর মুখে একটা পর্দা মাত্র।আর সেই পর্দাটা কেউ সরাতে পারেনি বলে ও নিজেই হাসিটা দিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছে।
‘তবে যদি আমি সরাতে পারি? তাহলে?’যদি ওর মুখে সত্যিকারের হাসিটা ফোটাতে পারি?
ক্লাসরুমে দাড়িয়ে আনমনে এসব বলছিল অর্নব, তবে ওর কথাও যে কেউ শুনছিল তা ও যানেনা।যে এসব কিছু শুনছিল সে অর্নবের কাছে অপরিচিত হলেও অর্নব তার কাছে ভীষন পরিচিত,এমন পরিচিত যে কখনো ভোলার নয়।
আচ্ছা সেটা কি মিহু?যে অর্নবের সব কথা শুনছিল?
*
ক্লাসরুমের বাইরে দিয়ে আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছিল মিহু। ক্লাসরুমে একা কারও কথার আওয়াজে থেমে যায়। কথাগুলোর মাঝে মিহু নাম শুনতে পাওয়ায় দরজার কাছে কান পেতে থাকে।
অর্নবের বলা কথাগুলো শুনে মিহুর মুখে একটা বিজয়ের হাসি ফুটে ওঠে।
আর যাই হোক শেষমেশ ও নিজের কাজে সফল হতে পেরেছে।
এটাই সেই টাইমটা যার জন্য মিহু এতটাদিন ওয়েট করে এসেছে।
কপালের সামনে আসা চুলগুলোকে ফু দিয়ে সরিয়ে স্বাভাবিক পায়ে হেঁটে কোন একজায়গার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয় সে।
__________________
রাত আটটা বাজতে চলল,
নদীর তীরে একটা সুন্দর সাদা রংয়ের গোলাপ হাতে দাড়িয়ে আছে অনেক্ষন।কারন অর্নবের প্রেয়সী আজ সাদা রংয়ের একটা ড্রেস পড়ে আসবে।ওর প্রেয়সী যখনই মাটিতে পা রাখবে ঠিক তখনি নিজের মনের কথাগুলো তাকে উদ্দেশ্য করে বলে দেবে অর্নব।
প্রথমবার তবে কেমন একটা সুরসুরি কাজ করছে ওর।আর একটা নার্ভাস ফিলিং।
অর্নব চেয়েছিল মিহুকে সাথে করে আনবে,তবে মিহু ফোনে জানিয়ে দেয় ওর ফ্রেন্ডের সাথে আসবে এখানে।
মিহুর ফ্রেন্ডের কথা বলায় আর কথা বাড়ায়নি অর্নব।
তবে এতক্ষন তো লাগার কথা না।তাই একবার ফোন করলো মিহুর নম্বরে।কিন্তু নাম্বারটাও সুইচড অফ বলছে।বারবার ট্রাই করছে অর্নব। তবুও মিহুর ফোনে কল যাচ্ছেনা। অর্নব এবার অনেকটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।”ঠিক আছে তো মেয়েটা?”
কিছুক্ষন পর একটা আননোন নম্বর থেকে অর্নবের ফোনে কল আসে,কলটা ধরে কানে নিতেই ওপাশ থেকে খুব চেনা একটি মেয়েলি কন্ঠ ভেষে আসে,
‘ডোন্ট ওয়ারি মি.শায়েখ অর্নব,মিহু ইজ অ্যাবস্যুলুটলি ফাইন,যাস্ট ওয়েট ফর ফাইভ মিনিটস্,শি ইজ অন হার ওয়ে”
কন্ঠটা প্রচুর চেনা,তবে কথা বলার স্টাইল ও অ্যাটিটিউড অনেকটা আলাদা বলে ফোনে কে ছিল, ঠিক বুঝতে পারছেনা অর্নব।
‘মিহু ঠিক আছে’এটাই অর্নবের জন্য এনাফ।তাই বাকিসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে প্রোপোজ কিভাবে করবে সেদিকে মন দেয়।
ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় রাস্তায় অনেকগুলো গাড়ির লাইট জ্বালানো অবস্থায় আসতে দেখা যায়।এতগুলো গাড়ী আসতে দেখায় অর্নবের খানিকটা খটকা লাগে।তীর থেকে রোড এর মাঝে এসে দাড়ায় অর্নব।
ওর থেকে ঠিক পাঁচ ফিট দূরে সবগুলো গাড়ি একে একে থেমে যায়।
সবমিলিয়ে দশ বারোটার মতো কালো গাড়ি হবে হয়তো।এর মাঝে সেকেন্ড গাড়িটা কালো মার্সিডিজ।
সবগুলো গাড়ি থেকে কালো স্যুট ও প্যান্ট পড়া ছেলেরা বেরিয়ে লাইনে দাড়িয়ে যায়।দেখলেই বোঝা যায় ট্রেইনিং প্রাপ্ত সবাই। ছেলেগুলোর মাঝে একজন ওই ব্লাক মার্সিডিজ এর ড্রাইভাবের পাশের সিট এর দরজার পাশে গিয়ে দাড়ায়।
অর্নব সবকিছু মনোযোগ সহকারে দেখছে।কি হতে চলেছে তার জন্য একদমই প্রস্তুত নেই সে। তবে যা হবে এতে অর্নবের যে কতটা ক্ষতি হবে তা সে যানেনা।
কিছু একটার সিগনাল পেয়ে গাড়ির দরজার কাছে দাড়ানো ছেলেটি গাড়িটির দরজা খুলে দেয়।
প্রথমে একটি হাই হিল বুট পরা পা বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। গাড়ির দরজায় কালো লেডিস গ্লাভস পরা হাত রেখে পরনে সম্পুর্ন কালো আউটফিটে বেরিয়ে আসে একটি মেয়ে।গ্লাভস পরা হাতদুটো কালো জিন্সের পকেটে ঢুকিয়ে হাই ক্ল্যাসি লুক নিয়ে অর্নবের দিকে এগোতে থাকে।চোখে থাকা কালো সানগ্লাসটি সরিয়ে অর্নবের চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে একটা ডেভিল হাসি দেয়।
যিনি সামনে আছেন তাকে দেখে অর্নবের চোখ স্বাভাবিক থাকলেও হাত পা কাপছে।সে ভাবতেও পারেনি এভাবে কেউ তাকে হার মানাবে।
যে মেয়েটি সামনে দিয়ে হেটে আসছে সে যে মিহু তার মাঝে কোন সন্দেহ নেই,কিন্তু যে লুকে এসেছে সে সেটা যে অর্নবের অনেকটা পরিচিত একটা মানুষের।
এতদিন পর যে সেই চেহারা আবারও দেখবে তা আশা করেনি অর্নব।হাত থেকে সাদা গোলাপটি পরে যায় অর্নবের।
মেয়েটি অর্নবের ঠিক এক হাত ফাঁকাফাকি এসে দাড়ালো।পকেট থেকে ডান হাত বের করে অর্নবের দিকে বাড়িয়ে দিল।এবং মুখ খুললো,
‘আই অ্যাম নট লেইট,পাঁচ মিনিট বলেছিলাম,দেখুন পাঁচ মিনিটের মাঝেই আপনার সামনে এসে দাড়ালাম।বাই দ্যা ওয়ে,আমায় এখন কি বলে ডাকবেন?,(চোখ ঘুড়িয়ে আবারও বলল)অপর্না মেহেজাবিন ওরফে মিহু?নাকি (অর্নবের কিছুটা কাছকাছি গিয়ে)আয়েশা মেহেজাবিন ওরফে অর্নি?’
অর্নব এটারই আশংকা করছিল।ওকে দেখেই বুঝেছিল এটা অর্নি।
মেয়েটি আবারও বলল,
“অর্নি নামটা আসল হলেও মিহু নামে ডাকলে আমি মাইন্ড করবোনা,(বাকা হেসে)এট লিস্ট এতটা দিন এ নামে বাচলাম,নামটাকে একটু হলেও তো রেসপেক্ট দিতে হয় তাইনা?(শয়তানী হাসি দিতে দিতে)
.
.
.
#চলবে____