সত্য ঘটনা অবলম্বনে – জীবনের গল্প !! Part- 05
ঢাকায় যাওয়ার পরে সে এক অন্য রকম জীবন!! ছোট একটা রুম, ৫ পরিবারের একটা বাথরুম! সিরিয়াল দিয়ে রান্না করতে হয়…
~আমি যেহেতু এই ভাবে অভ্যস্ত ছিলাম না, তাই খুব কস্ট লেগেছিলো গুছিয়ে নিতে।
সব মোটামুটি ভালোই চলছিলো, এর মধ্যে বাড়িতে কারো সাথে যোগাযোগ করিনি…
আগেও বলেছি, তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো শ্রদ্ধা, সন্মানের! মানে এতো কিছু করার পরেও আমি তাকে কোনো দিন একটা গালি পর্যন্ত দেইনি। সেও যাই করেছে না কেনো সামনাসামনি কখনো বাজে বিহেভ করেনি….. কোনো দিন তুই পর্যন্ত বলেনি!!যা বলেছি কেবল আমিই বলেছিলাম…
_মেয়েকে নিয়ে সংসার সামলাতে এক প্রকার হিমসিম খেতে হতো!! সে মেয়েকে রাখতো, হেলপ হ্যান্ড হিসেবেও কাজ করতো!!
_এভাবে কিছুদিন চলে যায়, সে টেক্সটাইল এ জব করতো তখন!! নারায়ণগঞ্জ, মে বি জায়গার নাম চাসারা ছিলো!!
তার ফোনে ফোন আসতো, সে বাহিরে গিয়ে কথা বলতো। আমি কখনো খেয়াল করতাম না, সব কিছু তো ঠিকঠাকই ছিলোই…
।
প্রায় ১৩/১৫দিন পরে এক দিন রাতে সে আর বাসায় ফিরছে না!! ফোন দিচ্ছি ফোন অফ।
টেনশনে আমার খারাপ অবস্থা.. মেয়েকে নিয়ে কিভাবে একা থাকবো সে এক ভয়। অচেনা জায়গা, অচেনা মানুষজন.. সে-ই বা কোথায় গেলো!! আমার খুব ভয় মনে,,,. বিড়াল দেখেও ভয় পাই।। তাই লাইট জ্বালিয়ে মেয়েকে নিয়ে বসে আছি, বুজতে পেরেছি আজ আর ঘুম হবে না।।
রাত ১২টার দিকে হঠাৎ ফোন দিয়ে বলতেছে আমি অফিসেই আছি, কাল বাসায় যাবো। তুমি বাবু কে নিয়ে ঘুমিয়ে যাও…
__কি আর করার আমিও তার কথা বিশ্বাস করে তার অপেক্ষায় রইলাম!!
~পরের দিন করে করে তিন দিন তার খবর নেই! তিন দিনের দিন তার মতলব বুজতে পেরেছি.. সে হয়তো আমাকে আবারো একা করে চলে গেছে!! ফোন অফ টোটাল যোগাযোগ বন্ধ।
|
|
_চার দিনের দিন সে অনেক বাজার, প্রয়োজনীয় অনেক কিছু নিয়ে বাসায় ফেরে.. আমাকে এই সেই করে ভুলভাল বুজানোর চেস্টা করতেছে। আমি বললাম আমাকে না লুকিয়ে আপনার সত্যটাই বলেন। দেখবেন আপনার ও ভালো লাগবে। আমারও ভালো লাগবে সত্যটা শুনে!!
~উনার একই কথা, কিছু লুকাচ্ছে না!! সব ঠিক আছে, সে ভুল করেছিলো এখন সে সঠিক পথেই আছে..
আমি বিশ্বাস করিনি, আমি একটু জোড়েই বলে উঠলাম,
এই মিথ্যাবাদীর সাথে আর না। আমি চলে যাবো আজকেই…
।
_সে উঠেই মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলতেছে আমি কোনো মিথ্যা বলিনি, এই মেয়েকে ছুয়ে বললাম!!
আমি চিৎকার করে আমার মেয়েকে ছিনিয়ে নিই, আমি জানি সে মিথ্যে বলছে! শুধু শুধুই আমার মেয়েকে ছুয়ে কসম কাটলো…
যাক সেদিনের মতো সব কিছু ঠিক করে নেই!! বাড়ি যখন ছেড়ে এসেছি তখন তার কিছু অন্যায় ও মেনে নিতেই হবে।।
_পরের দিন সে অফিসে যাওয়ার পরে আমি পুরনো সিম টা ঢুকিয়ে মায়ের নাম্বারে কল দেই। মা রিসিভ করে অনেক কান্না করে, বার বার বলে তোরা ঠিক মতো বেচে আছিস তো? অনেক ক্ষমা চাই, মাফ করে দিতে বলি.. মা কে বুজিয়ে বলি, আমি আমার মেয়েকে বাবার পরিচয় ছাড়া বড় করতে চাই না ইত্যাদি ইত্যাদি…
মা বলে যাই বলিস, তোর আবার ফিরে আসতে হবে। তার জন্য রেডি থাকিস!! আমার ভাবির বাড়ির এলাকার লোকেদের কাছে খবর নিয়েছে সে ঢাকাতেই আমার বরের সাথে আছে। মা অনেক কথা বলে, আমি আসার পরে ছোট ভাই, বড় ভাই নাকি অনেক কান্না করেছে। ছোট ভাই নাকি ঘরেই আসেনা, সারাদিন বাহিরে বাহিরে কাটায়। মেয়েকে, আমাকে খুব মিস করে….
_তারপর থেকে মাকে প্রায়ই কল দিতাম! একদিন শুক্রবার বিকেল টাইমে আমি মেয়েকে খাওয়াচ্ছি, আর উনি শুয়ে আছি। হঠাৎ ফোনে অনেক বার ফোন আসে, উনি ফোন অফ করে দেয়.. তার কিছুক্ষণ পরেই তিনি হাজির!! মানে আমার শ্রদ্ধেয় ভাবি!!!
।
দরজা খুলেই তাকে দেখে তো আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। বর উঠেই বলে তুই কেনো এই খানে আসছিস?
তারপর তো সেও শুরু করে যাত্রাপালা!! এ ওর মা বাপ রে করছে, আবার উনি এর মা বাপরে!!
আমি তো তাদের কাহিনী দেখেই ভয় পাই!! বাসা বাড়িতে মান সন্মানের ভয়, আর তাদের এই ব্যবহার! তারপর আমাকে বলে, তুই কেনো আসছিস ঢাকায়? তুই কেনো আমার স্বামীকে ছিনিয়ে নিলি?
আমি তখন হাসবো নাকি কাদবো নিজেও বুঝছিলাম না… কি যে বলবো তাই চিন্তা করছি,,, আমার উত্তর বরই দিয়ে দিচ্ছে, সে বলে তুই কে? সাথী কে প্রশ্ন করার তুই কে? তুই আমার সংসার ভেঙে ছিলি, এখন তাই তোকে আমি রাস্তায় ফেলে দিলাম..
ভাবি আরো বলে, সেদিন আসার সময় বলে আসছিস বৃহঃস্পতিবার যাবি কেনো গেলিনা। কেনো ফোন ধরলি না এই সব… অনেক কথা!!
আমি শুধু তাদের কাহিনীই দেখে যাচ্ছি, পরে বললাম তোরা বের হবি নাকি আমি পুলিশ ডাকবো? পাব্লিক ডেকে তোদের দুইটারেই গনোধোলাই খাওয়াবো।। আমার মেয়েও এই সব দেখে চিৎকার শুরু করে দেয়।বাচ্চা মেয়ে।ও খুব ভয় পেয়ে যায়!…
তারপর ওই মহিলা বের হয়ে যায়, আর আমি ফোন নিয়ে বাড়িতে কল দিতে যাই। অমনি উনি ফোন নিয়ে যায়, আমাকে বুজাতে যায়।। আমি সেদিন প্রথম তার মুখের উপর একটা প্লেট ছুড়ে মারি। তার নাক থেকে রক্ত পড়া শুরু করে, আমি দেখেও দেখিনা.. মেয়ে খুব কান্না করে তাই মেয়েকে সামলাই!
সে তখন বলে যা করেছি, যা হইছে তুমি একটু সাহায্য করো আমায়। আমি সব কিছু থেকে বেরিয়ে আসতে চাই! আর লুকোচুরি ভালো লাগেনা আমার, আমি তোমাদের নিয়ে সুন্দর ভাবে বেচে থাকতে চাই। এসব বলে আবারো আমার পা জড়িয়ে ধরে.. আমিও লাথি মেরে ফেলে দেই! যতোবার ফেলি সেও ততোবারই জড়িয়ে ধরে।।
~যেহেতু আশেপাশের সবাই সব কিছু শুনে গেছে, তাই আমি খুবই সেন্টিমেন্টাল হয়ে গেছি। এবার কিছুতেই মেনে নিবো না….
|
রাত হয়ে যায়, তাই চিন্তা করেছি সকালে অফিসে গেলেই মেয়েকে নিয়ে চলে যাবো। মা ভাইদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো, তাদের সাথে করা অন্যায়ের জন্য…
রাত ২টার দিকে উঠে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কান্না শুরু করে, বার বার একটা সুযোগ চায়। আমাকে জরিয়ে ধরেও পাগলের মতো হাউমাউ করে কান্না করে… কিভাবে যেনো মনটা আবারো নরম হয়ে গেলো
সিন্ধান্ত পাল্টাবো, না কি করবো বুজতে পারছি না।। সকালে উঠে শুয়েই আছে অফিসে যায় না। বলে আজ অফিসে যাবো না.. আজ তোমাদের নিয়ে বাহিরে ঘুরবো.. আমি তখনো তার সাথে কোনো কথা বলিনা।
সকালে বাহির থেকে পরোটা, ডাল, ভাজি নিয়ে আসে। রান্না করতে নিষেধ করে.. আমি কিচ্ছু খাই না, জোর করে আমার মুখে ঢুকিয়ে দেয়।। এই ভাবে সেই ভাবে আমাকে হাসানোর চেস্টা করে। আমি কোনোভাবেই তার সাথে কথা বলিনা, হাসিও না!!
তারপর জোর করে বাহিরে যাওয়ার জন্য, জোর করেই রেডি করায়। চিন্তা করলাম বাড়িতে যখন যেতেই পারলাম না, তখন বাহিরে যাই। হাজার মানুষের ভিরে তার মুখটা কম দেখতে হবে তাহলে..
|
বাহিরে গেলাম, অনেক দূরে দূরে ঘুরলাম!! মনটা একটু হালকা হলো, দুপুরে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ালো।। মোটামুটি সারাদিন বাহিরে থেকে একটু ফ্রেশ লাগলো।
রাতে সে এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যাচ্ছে বলে আমাকে আর আমার মেয়ে কে তিন তলা ভবনের একটা বাড়িতে নিয়ে গেলো।
সেখানে যাওয়ার পর দুজন মেয়ে আর একজন লোক আসলো।সে বললো,
এ আমার বন্ধু আর এ হলো তার স্ত্রী।
আমি একটু বন্ধুর সাথে বের হবো বলে সে বেড়িয়ে গেলো।
ভালোই গল্প গুজব করছিলাম আমি তাদের সাথে বসে বসে।হঠাৎ দুটো বাচ্চা মেয়ে এসে আমার মেয়ের সাথে খেলবে বলে আবদার করে ওকে কোলে করে নিয়ে চলে গেলো।অনেক সময় তাদের সাথে থেকে আমার বেশ ভালো মানুষ বলেই মনে হলো তাদের কে।
তাই আর কলিজা বাচ্চা টা কে ছাড়তে আপত্তি করিনি।
কিন্তু হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম এই ভবনে যেনো মেয়ে একটু বেশি।
আর সবার পোষাক আশাক খুবই অদ্ভুত রকমের।বিষয় টা আমার একটু খটকা লাগলো।
আমি দ্রুত ফোন নিয়ে সানিতার বাবাকে কল করলাম।
সে কি!
তার ফোন তো বন্ধ।
আমার বুকের ভেতর টা ধুকধুক ধুকধুক করতে শুরু করে।এদিক ওদিক তাকিয়ে শুধু আমার সোনাটার মুখ টা খুজতে লাগলাম।
কিন্তু,,,,,,,,,
সংগ্রহিত জীবন গল্প।
এ যে কোন উপন্যাস নয়।
এক বোনের বাস্তব জীবনি।
এ এপিসোড পড়ে কার কেমন লাগবে সেটা আমি বলতে পারবোনা।কিন্তু সানিতার জন্যে আমার কলিজা টা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।চোখের জলে বুক ভেসে যাচ্ছে।লিখতে অবদি পারছিলাম না।চোখ এতোটাই ঝাপসা হয়েছে😥😥😥😥