তোকে চাই

তোকে চাই !! Part- 28

আলসেমীর চরম পর্যায় বলতে একটা কথা আছে,,এই মুহূর্তে আমি সেই চরমে অবস্থান করছি।।কম্বল আর বইয়ের স্তুপ সরিয়ে,, বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার মতো তুচ্ছ জিনিসটা আমার কাছে রীতিমতো মহামারী বলে বোধ হচ্ছে।।।তারউপর দিনটি যদি শুক্রবার হয় তাহলে তো কথায় নেই।।কিন্তু তবুও আমায় উঠতে হলো,,,এবং চরম অনিচ্ছা সত্যেও বাসার দরজা পেরিয়ে রাস্তায় পা ফেলতে হলো।।।গন্তব্য আফরান স্যারের বাসা।।ভদ্রলোক খুব কড়া হুকুম জারি করেছে,,, আমাকে তার বাসা থেকে সিট কালেক্ট করতে হবে,,,,আর আমি তো বরাবরই ভদ্র মেয়ে,, তাই চুপচাপ মাথা হেলিয়ে নাচতে নাচতে উনার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।।।৫ মিনিট যাবৎ আমি স্যারের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।।এই পর্যন্ত দুবার কলিংবেল চেপেছি,,,তৃতীয়বার চাপবো কিনা ভাবছি।।কলিংবেল দুবারের বেশি চাপা উচিত না,,,এটা নাকি ম্যানারের মধ্যে পড়া না,,,,এই মুহূর্তে আমি নিজেকে কোনোমতেই ম্যানারলেস প্রুব করতে রাজি নই,,,আমাকে আর বেশিক্ষণ ভাবতে হলো না তার আগেই একজন বৃদ্ধা মহিলা দরজা খুলে দিলো।।মহিলাটির মুখে একটা চাকর চাকর ভাব আছে,,,উনাকে দেখেই মনে হচ্ছে উনি এবাড়ির কাজের লোক,,,,তাও যেই সেই কাজের লোক নয়,,,যারা সারাদিন মালিকের তোষামুদে ব্যস্ত থাকে তেমন কাজের লোক।।

জি,,স্যার বাসায়,আছে?

জে স্যার আছে,,,আপনি ভিতরে আহেন,,

আরে,,ব্যস কি মারাত্মক শুদ্ধভাষা,,,,(মনে মনে) না আমি ঠিক আছি,,স্যারকে একটু ডেকে দিবেন??স্যার আসতে বলেছিলো(হালকা হেসে)

আচ্ছা,,,

মহিলাটি মাথা হেলিয়ে স্যারকে ডাকতে চলে গেলেন,,,যাওয়ার আগে পুরো দরজাটা আম্মুর ভাষায়”হা” করে খুলে রেখে গেলেন।।।আমি চোর হলে এটাই হতো আমার জন্য সুবর্ন সুযোগ।।আমাকে এই সুবর্ন সুযোগের অধিকারী করে মহিলাটি ভিতরে ডুকেই চেঁচিয়ে উঠলেন,,,

আব্বা??তোমার ইস্টুডেন্ট এসেছে।।

“ইস্টুডেন্ট”,, বাহ দারুন উচ্চারন।।ইংরেজির ভুল উচ্চারণ করাটাও রীতিমতো একটা আর্ট।।সবাই কিন্তু পারে না,,,কলেজের ইংরেজি প্রফেসর কখনোই স্টুডেন্ট কে ইস্টুডেন্ট উচ্চারন করতে পারবেন না,,,মূলত এই উচ্চারণ করাটা ওদের এবিলিটির মধ্যেই পড়ে না।।ওপাশ থেকে স্যার কি জবাব দিলো তা আমার কান পর্যন্ত পৌছালো না,,,তার উত্তরটা হয়তো এমন হবে,,” ওয়েট করতে বলো”।।হ্যা আমিও ওয়েট করছি,,বেশ উৎসাহ নিয়েই ওয়েট করছি,,,একজন প্রফেসর তার ছাত্রীকে ওয়েটিং লিস্টে না রেখে দেখা করবে তা তো হতে পারে না,,,,তাতে প্রফেসর প্রফেসর ফিলিংস আসবে না।।।প্রায় দশমিনিট পর স্যার বাইরে বেরিয়ে এলেন।।ভদ্রলোককে বড্ড ইম্বারেসড্ বলে মনে হচ্ছে,,,,তার অস্বস্তির কারনটা হলো তার লুঙ্গি।।।একজন সম্মানীয় প্রফেসর তার স্টুডেন্টের সামনে লুঙ্গি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্যাপারটা সত্যিই অস্বস্তিকর,,, আর স্টুডেন্টটা যদি মেয়ে হয় তো কথায় নেই।।উনি এমন ভাবে লুঙ্গি চেপে ধরে দাড়িয়ে আছেন যেন,,এখনি খুলে গিয়ে কেলেংকারী হয়ে যেতে পারে,,,

আসসালামু আলাইকুম স্যার,,,

ওয়ালাইকুমুস আসসলাম,,,রোদেলা এই নাও দুটো সিট আর বাকি সাজেশনটা কোচিং থেকে নিয়ে নিও,,,ওখানে গিয়ে আমাকে ফোন দিও,, আমি বলে দিলেই হবে,,,(হালকা হেসে)

ওকে স্যার।।

স্যারকে সালাম জানিয়ে বেরিয়ে এলাম।।।বেশ বিরক্ত লাগছে,,ইচ্ছে করছে নিজের চুল ধরে টানি।।ভাইয়ার এতো বলা সত্তেও ফোনটা যে কেনো সাথে নিলাম না,,,উফফ্,,,যে সাজেশনের জন্য এতোকিছু সেটা না নিয়েই এবার বাড়ি ফিরতে হবে,,,সব সব নষ্ট,,,গাড়ি ভাড়া,,দেড় ঘন্টা সময় দুটোই ওয়েস্ট,,,চরম বিরক্তি নিয়ে সিএনজিতে বসে আছি,,,রাস্তায় একটা সাইনবোর্ড দেখে বিরক্তিটা আরো কয়েক ধাপ উপরে উঠে গেলো,,,,বাসস্ট্যান্ডের পাবলিক টয়লেটে বড় বড় করে বাংলায় লেখা “বার্থ রুম”।।। কি সব আজগুবি ওয়ার্ড,,,বার্থ রুমটা আবার কি??একেই হয়তো বলে আধুনিক বাংলার শুদ্ধ প্রয়োগ,,মূর্খরা হঠাৎ ঞ্জানী হয়ে গেলে যা হয় আর কি।।।সব কটাকে ধরে চড়ানো উচিত,,,,লিখতে না জানলে লিখতে যায় কেন এরা,,যত্তোসব।।।বার্থ রুম টপিকস হয়তো আরো কিছুক্ষণ চলতো,,,কিন্তু হঠাৎ ব্রেক কষায়,,” “বার্থ রুম” টপিকস ও ব্রেক কষলো।।।

কি মামা??সমস্যা কি??মার্ডার করতে চান??এখনি তো মুখ থোবড়ে রাস্তায় গিয়ে পড়তাম(রাগী চোখে)

আমি কি করুম আফা,,,সামনে এমন কইরা গাড়ি দাঁড় করাইলে তো আমার আর কিছু করার নাই,,,,

কিহ,,,কোন শালায় রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করায়,হ্যা??গাড়ি থাকলেই কি কলিজায় উঠায় দিতে হবে নাকি???

কথাগুলো বলতে বলতে সিএনজি থেকে নেমে এলাম,,ব্যাপক মোডে আছি,,,,গাড়িওয়ালার কলার ধরে বড়দের মতো একটু ঝেড়ে দিবো,,,কিন্তু তা আর হলো কই??উল্টো নিজেই চুপসে গেলাম,,,শুভ্র গাড়ির দরজা ধরে দাড়িয়ে আছে,,,এই ব্যাটার এক্চুয়াল প্রবলেমটা যে কি তাই বুঝতে পারছি না।।।সেদিন রিক্সার সামনে তো আজ সিএনজি,,,উফফফ।।।মাথা থেকে সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে উনার দিকে তাকালাম,,,,উনাকে খুব উশকোখুশকো লাগছে,,,মনে হচ্ছে কতোদিন ধরে ঘুমোয় না,,,এখন আমার মনে হচ্ছে মামানি হয়তো ঠিকই বলেছিলো,,,,,এই তো সেদিন মামানি ফোনে বলেছিলো,,

রোদ???

কেমন আছো মামানি?

ভালো,,চলে আয় না মা,,,

এডমিশনের পরই চলে আসবো,,,

আজই চলে আয়,,আই থিংক,,শুভ্র তোকে অনেক মিস করছে রে,,,আমার ছেলেটার চোখ-মুখ একদম শুকিয়ে গেছে,,,আগের মতো কেমন যেনো শুধু ঘরের মধ্যেই থাকে,,,

তেমন কিছুই না হয়তো কাজের চাপে আছে তাই ওমন লাগছে,,,


কারো ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো,,,শুভ্র তার দুহাতে আমার দু’গাল জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছেন।।আমি উনার দিকে তাকাতেই এক ঝটকায় কোলে তোলে নিলেন আমায়।।।আমি কিছুই বললাম না,,,শুধু উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,,উনার চোখদুটো টলমল করছে,,,চুলগুলো এলোমেলো,, দাড়ি বেড়ে গেছে অনেক,,,তবুও কি সুন্দরই না লাগছে।।।আমাকে গাড়িতে বসিয়ে সীট ব্যাল্ট লাগিয়ে দিলেন,,,
।।
আমাকে গাড়িতে কেন বসালেন??আমি সিএনজি করেই যাবো।।

বলেই গাড়ীর দরজা খুলতে গিয়েই বুঝলাম দরজা লকড।।

কি সমস্যা??দরজা লক করেছেন কেন??খুলুন বলছি,,,,(রাগী চোখে)

উনার কোনো ভাবান্তর হলো না,,,উনি চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলেন,,,,আমি উনাকে ক্রমাগত গাড়ি থামাতে বলছি,,তার উত্তরে উনি শুধু একটা কথায় বলেছেন,,,,

উইথআউট রিজন যে আমার থেকে এতোদিন দূরে থাকলে তার জন্য ইউ ডিজার্ব আ পানিশমেন্ট,,,, আর তোমার পানিশমেন্ট হলো,,আগামী একবছর বাপের বাড়ির নাম মুখেও নিবে না,,,

হোয়াট???বললেই হলো,,,

হুম,,বললেই হলো,,তোমারও বুঝা উচিত দূরে থাকাটা কতো কষ্টের,,,,

কষ্ট??আমি না থাকাতে আপনার কষ্ট হয়েছে??আর ইউ কিডিং উইথ মি???

#চলবে,,,,