স্বীকৃতি !! লেখাঃ সাজি আফরোজ
স্বীকৃতি
বাসর রাতেই বউ এর গালে কষে একটা থাপ্পড় বসালো আরহাম।
একটু আগেই তার ফেবুতে একটি ছবি আসে একটা অপরিচিত আইডি থেকে।
তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে অন্য একজন পুরুষের বুকে মাথা রাখতে দেখে, নিজেকে সামলাতে পারলোনা আরহাম।
পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হলেও খুশবুর সাথে একবার দেখা হয়েছিলো তার। খুশবু সেদিনও বলেনি তার অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে!
অন্য কারো সাথে এতোটা গভীর সম্পর্ক থাকার পরেও তাকে কেনো বিয়ে করলো খুশবু?
(বিঃ দ্রঃ “স্বীকৃতি !! লেখাঃ সাজি আফরোজ ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরহাম।
এদিকে নিচের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে খুশবু।
বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীর কাছে এমন একটা ব্যবহার কোন মেয়েটিই বা আশা করে!
এদিকে খুশবুকে চুপচাপ দেখতে পেয়ে মাথাটা আরো বিগড়ে গেলো আরহামের।
কেমন মেয়ে সে! জিজ্ঞেসও করছেনা এমন করার কারণ কি!
খুশবু সামান্য ঝুকে পায়ে ধরে সালাম করলো আরহাম কে।
আরহাম অবাক হয়ে বললো-
আমি তোমাকে মেরেছি আর তুমি আমাকে সালাম করছো?
মিনমিনে স্বরে খুশবু জবাব দিলো-
আমার মা বলেছে করতে।
.
খুশবুর এমন আচরণ দেখে আরহাম কি করা উচিত তা বুঝে উঠতে পারছেনা।
এই মেয়ে না করলো প্রতিবাদ না আছে তার চোখে মুখে অপমানের ছাপ!
ভালো করে লক্ষ্য করতে থাকলো সে খুশবুকে।
মেকাপের ছাপে শ্যামবর্ণ গায়ের রঙখানা সাদা দেখাচ্ছে।
বউ এর সাজে অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে খুশবুকে। একটা শোনা কথা আজ সত্যিই হলো।
শ্যামবর্ণের মেয়েদের বউ সাজে দারুণ লাগে!
কিছুক্ষণ খুশবুর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকানোর পরে চোখ সরিয়ে ফেললো আরহাম।
মনে পড়ে গেলো তার ছবিটার কথা।
সে খুশবুকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে ঠিক তখনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো খুশবু।
এমন একটা ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা আরহাম।
খুশবু জ্ঞান হারিয়েছে বুঝতে পেরে তাড়াহুড়ো করে ডাকতে লাগলো সে বাড়ির সকল কে।
.
.
.
খালেদা শারমীন বড় মেয়ের রুমে বসে চোখের পানি ফেলছেন।
পেছন থেকে তার ছোট মেয়ে বলে উঠলো-
আপু নেই তো কি হয়েছে? আমি আছিনা!
.
খুশবুর ছোট বোন খুশি।
খালেদা শারমিনের সংসার টা স্বামী ও এই দুই মেয়ে নিয়েই সাজানো।
আজ বড় মেয়ে এই বাড়ি ছেড়ে শ্বশুড়বাড়ি গিয়েছে।
এটা যেনো মানতে তার ইচ্ছেই করছেনা। কিন্তু নিয়ম তো এটাই। মেয়েরা যে বাবার বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকতে পারেনা। চলে যেতে হয় অন্যের বাড়ি!
.
খুশি মায়ের পাশে এসে তার দুচোখ মুছে দিয়ে বললো-
আরহাম ভাইয়া ভালো মানুষ। আপুকে সুখে রাখবে।
.
কপালে চিন্তার ভাজ তুলে খালেদা শারমিন বললেন-
ভুলতে পারবে তো সে ফারাজ কে?
.
মাকে অভয় দিয়ে খুশি বললো-
আরহাম ভাইয়া ভুলিয়ে দিবে সব। দেখিও তুমি।
-তাই যেনো হয়।
-তাই হবে।
.
মুখে এসব বললেও খুশির মনে রয়েছে তার বোনকে নিয়ে ভয়।
ফারাজের প্রতি ভালোবাসা লুকোতে পারবে তো সে আরহামের কাছে?
.
.
.
জ্ঞান ফিরে আসার পরে, বিছানার চারপাশে এতোগুলো মানুষ দেখে বসে পড়লো খুশবু।
তার শ্বাশুড়ী বকুল জান্নাত বলে উঠলেন-
আমরা সবাই অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু।
.
খুশবু শান্ত স্বরে বললো-
আমি ঠিক আছি।
.
আরহামের ছোট বোন আফসানা দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
আমি তো অবাক! বিয়ের রাতেই খুশির সংবাদ পাবো ভেবেছি।
.
আফসানার কথা শুনে ঘরভর্তি মানুষ হেসে উঠলো।
আরহাম কিছুটা বিরক্তি কণ্ঠে বললো-
বিয়েতে দখল গিয়েছে অনেক। তাই হয়তো ক্লান্ত লাগছে। উনার রেস্ট এর প্রয়োজন।
.
বকুল জান্নাত বললেন-
আমিও সেটাই বলতে চাইছি, ওর রেস্ট এর প্রয়োজন। তাই তুই অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়। ওর সাথে আফসানা থাকবে।
-আমি থাকলে কি অসুবিধে?
.
বকুল জান্নাত ছেলের প্রশ্নে চুপ হয়ে গেলেও আফসানা বললো-
তুই কি ভাবী কে রেস্ট নিতে দিবি নাকি!
-দিবোনা কেনো?
-সেটা তোর উতলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
.
আবারো উচ্চ শব্দে সকলে হেসে উঠলে আফসানার উদ্দেশ্যে বকুল জান্নাত বলে উঠলেন-
আহ আফসু! বড়দের সামনে এতো মজা করতে নেই।
.
এদিকে মনে এক গাদা প্রশ্ন জমাট করে ছটফট করছে আরহাম। তার এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে না পারা পর্যন্ত যেনো শান্ত হবেনা মনটা।
তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বকুল জান্নাত বললেন-
এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তুই?
.
ড্রয়ার খুলে একটা টি-শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আরহাম।
রুম থেকে বেরুনোর আগে তাকালো সে একবার খুশবুর দিকে।
সকলের মাঝখানে তাকে রানীর মতো লাগছে।
কিন্তু কে বলবে? এই নিষ্পাপ চেহারার পেছনে অন্য একটি রূপ রয়েছে!
এমন একটি মেয়েকে কখনো সে কি দিতে পারবে স্বীকৃতি?
.
.
.
বিয়ে বাড়ি বিধায় অন্য কোনো রুম খালি নেই। কিন্তু আরহামের ইচ্ছে নেই কারো সাথে থাকার। তাই সে ছাদে এসেছে বিয়ের পোশাক বদলে।
ছাদের মাঝেই ছোট্ট একটা চৌকি রাখা আছে। সেখানে শুয়ে কিছুক্ষণ আকাশ পানে তাকিয়ে রইলো সে।
বিয়ের প্রথম রাত নিয়ে একটা ছেলের কতো স্বপ্নই না থাকে!
আরহামেরও এর ব্যতিক্রম ছিলোনা।
সরকারী চাকরী করে সে। ভালোই বেতন পায়। মা বাবার পছন্দে বিয়ে করতে রাজি হয়।
মা বাবা কি তার জন্য খারাপ কাউকে আনবে!
তার ভাবনাটা এমনি ছিলো। কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো।
.
মোবাইল টা বের করে আইডিতে ঢুকে ছবিটা আবার দেখলো আরহাম।
শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। অস্থির লাগছে তার ভীষণ।
আইডিটা থেকে ছবি পাঠিয়েই ব্লক করে রেখেছে আরহামকে। তাই সে কোনো রিপ্লাইও দিতে পারছেনা।
ছবি পাঠানো ব্যক্তিটা কে হতে পারে?
ভাবতে ভাবতেই ফোনের রিং বেজে উঠলো তার। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো তার বন্ধু ফাহিমের ফোন এসেছে।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো-
কিরে শালা কাজ সেরে ফেলেছিস?
-কি কাজ?
-আরেব্বাস! তোর না আজকে বাসর রাত? এই রাতে কি কাজ থাকতে পারে?
-ওহ।
-ওহ! ওই ব্যাটা কি হইছে তোর? বাসর রাতে অনলাইনে, এখন দেখি হতাশ কণ্ঠ। হইছে টা কি?
.
.
.
-ভাইয়া কে মিস করছো বুঝি?
.
আফসানার কথায় জবাব দিলো খুশবু-
হু।
-আহারে! মা আমাকে শুধু শুধুই কাবাব মে হাড্ডি বানালো।
-ওহ! তুমি উনার কথা বলছো!
.
ভ্রু জোড়া কুচকে আফসানা বললো-
তুমি কার কথা বলেছো?
.
সে কথার জবাব না দিয়ে লাইট বন্ধ করে ডিমলাইট টা জ্বালালো খুশবু।
বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বললো-
এতোক্ষণ বিয়ের পোশাকে দমটা আটকে যাচ্ছিলো। এখন ভালোই লাগছে চেইঞ্জ করতে পেরে।
-হুম। ঘুমাও ভাবী।
.
.
.
ফাহিমের সাথে বেশ অনেকক্ষণ কথা বললো আরহাম। তাকে এসব ব্যাপারে কিছুই বললো না সে। খুশবুর শরীর খারাপ এটা বলেই ব্যাপারটা এড়িয়েছে।
ফোনে কথা বলা শেষ হতেই ওই আইডি থেকে মেসেজ আসলো-
Ami kosto pacci. Take kivabe khusi thakte dei bolen! Tai pic ta pathalam. Khusbo ke sukhi hote dite parina ami.
.
মেসেজ টি পেয়ে এক সেকেন্ডও দেরী না করে আরহাম রিপ্লাই দিলো-
K apni? Ar age keno amak pic ta den ni?
.
ওপাশ থেকে কোনো রিপ্লাই না দিয়ে মেসেজ ব্লক করে দিলো আরহাম কে।
আইডির নামটা হলো Faraj Hoque.
তাহলে কি এই ফারাজের সাথেই খুশবুর সম্পর্ক ছিলো?
.
(চলবে)
বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ সাজি আফরোজ ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন… আমাদের ফেসবুক পেজ