Psycho is Back

Psycho is Back !! Part- 19

খুব সকালে চোখটা খুলে যায় আমার।।
বাহিরের আজানের মিষ্টি সুর কানে আসচ্ছে।।
ধীরে ধীরে উঠে বসি আমি,,মাথাটা কেমন ভার ভার লাগচ্ছে।।রাতের কথা গুলো মনে পড়তেই আবার চোখটা ঝাপসা হতে লাগলো।।চোখের কোন থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো অনর্গল।। চোখটা মুছে বিছানা থেকে ওয়াশরুমে চলে যাই।।শাওয়ার টা ছেড়ে কিছুক্ষণ ভিজতে থাকি।।মনের মাঝে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে,, সকল প্রশ্নের উত্তর যে বের করতে হবে আমার…!!
ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে নেই।।এই একটি জায়গায় যেন কোনো কষ্ট, দুঃখ নেই শান্তি আর শান্তি।।মনের সকল অভিযোগ, অভিমান, মোনাজাতের মধ্যে আল্লাহর কাছে তুলে ধরি।।নামাজ শেষে,, নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নি।।
এখানে যে আর এক মুহুর্তে থাকা সম্ভব না আমার।।আমি তো না…জায়েজ, অশুভ আত্মা।।আমার মতো মানুষ গুলোর এ ভদ্র পরিবেশে কোনো জায়গা নেই যে…!!
ব্যাগপত্র হাতে নিয়ে বের হতেই রুমের বাহিরে দেখা হয় আমার মা মানে সৎ মা তিনি আমাকে দেখে দাড়ালেন, আর ভ্রু কুচকে জিগাসা করলেন,,
—–এই মেয়ে এত সকালে কই যাও?
আমি মুচকি হেসে জবাব দিলাম,,
—–চলে যাচ্ছি,, মা,,, সরি আন্টি।।
—–চলে যাচ্ছো মানে কি? তাও এতো সকালে?? বাহিরে আলোও ফুঁটে নি এখনো!!
—–না আন্টি সমস্যা নেই চলে যেতে পারবো,,এমনিতে না চাইতো অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি।।তার জন্য ক্ষমা করবেন।।আর চেষ্টা করবো আপনাদের সবার থেকে দূরে থাকতে।।
বলেই সামনে পা বাড়ালাম।।
তখনি তিনি বলে উঠেন,,
—–ঠিক মার মতো হয়েছো,,, সে ডং করতো তুমিও তাই!! তোমার এখন এখান থেকে চলে যাওয়ার সকল দোষ আবার এসে পরবে আমাদের গায়।।কেন শান্তি দেও না তোমরা।।
আন্টির কথায় পা থেমে গেল আমার,,আমার আর মার জন্য তার মনে কতো ক্ষোভ তার মনে।। আমি হেসে বললাম,,
—–আন্টি চিন্তা করবেন না আমি বলে দিবনে ভাইয়াকে।।
—–তোমার কি মনে হয়? তোমার এভাবে চলে যাওয়া হাজার বার তুমি বললেও সব দোষ পড়বে আমাদের।।তার উপর দেখা যাবে এহসান এঙ্গেজমেন্টটাই করবে না।। যা রুমে যাও তোমার, আর অনুষ্ঠানের পর চলে যেও দয়া করে আর কোনো তামাশা করো না প্লিজ,, আর হে আজকের পর থেকে তোমার এই চেহারা আমাকে দেখিও না।। তোমাকে দেখলে আমার ভিতরে ক্ষত গুলো তাজা হয়ে যায়।।
বলে তিনি চলে গেলেন।।
আমি কি করবো ভাবচ্ছি থাকবো না চলে যাবো তখন চাচি আম্মু এসে হাজির,,,।।
—–কুহু তুই কই যাচ্ছিস??
—–বাসায়।
—–মারবো এক চড়! যা ঘরে।।এহসান এ গুলো শুনলে কত রাগ করবে জানিস তুই।।বলে তিনি আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে এসে বেডে বসিয়ে দেন।।আর শাসনের সুরে বলেন,,
—-আনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে এক পা বাড়ালে ভুলে যাস আমাকে…!! বলে চলে গেলেন।।
তাই বাধ্য হয়ে থাকতে হলো।।আর যাই হোক ছোট থেকে চাচা চাচি আম্মু, এহসান ভাইয়া অনেক করেছেন আমার জন্য,, তাদের খুশির জন্য এতটুকু করতে পারি।।
সন্ধ্যা হতেই সবাই চলে এসেছে।।চারিদিক খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছ।।এহসান ভাইয়া, আর নুহা আপুকে স্টেজে বসানো হয়েছে।।নুহা আপুকে অনেক সুন্দর লাগচ্ছে।।পার্লার থেকে সেজেছে।।আমি এক কর্ণারে দাড়িয়ে সব দেখছি।।
এদিকে ইউসুফ, তার বাবা-মা, আর তার দাদু গাড়িতে বসে পড়ে,, গন্তব্য এহসানের বাসা।।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নানান রকম কথা বলছেন তারা।।কিন্তু দাদু যেন চুপ,, আজকে না এহসান যবে থেকে কুহুকে নিয়ে গেছে তবে থেকেই তার মনটা কেমন খচখচ করছে।।
এহসানদের বাসার রাস্তায় এসে গাড়ি থামায় তারা।।আজকেই প্রথম এসেছে তাই বাড়ি চিনে না।।
সামনের লোকটিকে জিগাসা করতেই বাড়ি দেখিয়ে দিল।।
বাড়িতে ঢুকতেই ইউসুফ কারো সাথে ধাক্কা লাগে।।
দু জনেই বলে উঠে এক সাথে,, সরি!!বলে দুজন দুজনের দিক তাকায়।।আবার দুজনেই বলে উঠে,,
—-তুই?? বলে দু জন দু জনকে জড়িয়ে ধরে।।আর ইউসুফ বলতে লাগে,,
—তুই এখানে??
—-হে আমার ভাইয়ের এঙ্গেজমেন্ট।।আর তুই?
—-এহসান তোর ভাই??ওই আমাদের ইন্ভাইট করেছে।।
—-হে চাচাতো ভাই আমার।।তুই এহসানকে কিভাবে চিনিস??
—-আমার ফুপাতো বোন কুহুর চাচাতো ভাইসে।।
আয়মান এবার চমকে গেল।।কিছু না বলে হেসে দিল।। আর পিছন থেকে ইউসুফের আব্বু আম্মুকে দেখে সালাম দিয়ে ভিতরে যেতে বলেন।।আর তার পিছনে নানু মা কে দেখে আয়মানের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়।।কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইউসুফ বলতে লাগে,,
—-ওহো তোকে পরিচয় করিয়ে দেই?? দাদু আমার।।আর দাদু ও হচ্ছে আয়মান আমার বন্ধু বিদেশে আমরা এক সাথে পড়াশুনা করেছি।।
আয়মান কি বলবে বুঝতে পারছেনা।।সে চুপ থেকে কিছুক্ষণ,, তার হেসে বলতে লাগে,,
—-আসসালামু আলাইকুম দাদু।।আসেন ভিতের।।
এদিকে ভিতরে গিয়ে ইউসুফ তার বাবইপাখিকে খুঁজতে লেগে পড়ে।।এবং দেখলো কুহু একটি কোনায় দাড়ানো।।ইউসুফ সেখানে গিয়ে পিছন থেকে কুহুর চোখ ধরে ফেলে।।
—-ইউসুফ ভাইয়া?? আপনি…! আমি জানি। কখন আসলেন??
ইউসুফ আমার চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে সামনে এসে বলে,,
—-কেমনে বুঝলি বাবুইপাখি, হালকা গাল টিপে দিয়ে বলল ইউসুফ।।
—–আমি বুঝতে পারি।।
—–কিভাবে??
—-বলবো না,, সিক্রেট।।
—-বাহ আপনার সিক্রেট ও আছে??
—-হুম আছে অনেক,, আনমনে বলে দিলাম।।
ইউসুফ ভ্রুকুটি কুচঁকে বললো,,
—-মানে??
—-না না কিছু না।। ভাইয়া সবাই এসেছেন??
—-হুম এসেছে।।তুই কি বলতে….!!
ইউসুফের কল চলে আসে।।
তখন আমি বলি,,
—-আপনি কথা বলুন আমি নানু মাদের সাথে দেখা করে আসি।।
—-হুম।।বলে ফোন রিসিভ করেন।।
ফোনে কথা বলে পিছনে ঘুরতেই মুড খারাপ হয়ে যায় ইউসুফের।।খুব বিরক্তি নিয়ে নাক মুখ কুচঁকে বলতে লাগে,,,
—–তুমি!!!
আয়মানের বাবা-মা, আর ইউসুফের বাবা-মা কথা বলতে থাকেন।।এত বছরের সম্পর্ক তাদের সম্পর্ক শুধু শুনেছে যে আয়মানের একটি ছোট চাচা আছেন।।তারা বাংলাদেশে থাকেন।।আর তার উপর এহসানের বাবাই যে তার ছোট জানা ছিল না তাদের।।তার উপর এখানে কিছু জিনিস কেমন জানি ঘোলাটে লাগছে তাদের কাছে।।যেমন, আয়মানের বাবা আর এহসানের বাবা দু ভাই আর এক বোন হলে..!! কুহু তাহলে আয়মানের বাবার সন্তান কিন্তু।।ইউসুফের বাবা-মা যতটুকু জানে,, তার বোনের মৃত্যুর পর তার বাবা বিয়ে করেছে তাহলে,, কুহুর বাবা কে???
আর এদিকে আয়মানের ফ্যামিলি পুরাই শকড,,, কুহুর মা তাদের পরিবারের অংশ??কিন্তু এত বছর সাথে ছিল তারা বিদেশে শুধু তাদের সম্পর্কে যানত মা আর বোন আছে,,বোনটা মারা গেছে,,তার নাকি একটা বাচ্চা রেখে গেছে।।এর থেকে বেশী জানা হয়ে উঠেনি কারো।।সকলেই এখন শুধু অনুষ্ঠান শেষের অপেক্ষায়।।
দু পরিবারের মাঝে অনেক প্রশ্ন হলেও,, সবচেয়ে বেশী প্রশ্ন কুহুর মামা-মামীর।।কি হচ্ছে মাথায় কিছু আসচ্ছেনা।।এ সকল প্রশ্নের উত্তর শুধু আছে নানু মার কাছে।।এদিকে নানু মার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসচ্ছে।। যা এত দিন যাবৎ লুকানো ছিল তা এভাবে সবার সামনে আসবে জানা ছিল না তাঁর।।এখানে আসার পর থেকেই কেমন জানি লাগচ্ছে তাঁর,,তিনি স্টেজের একটু দূরে বসে আছেন।।তখনি দেখেন তাঁর ছেলের বউ আর ছেলে তার দিকে আসচ্ছে।।তাঁরা এসেই প্রশ্ন ছুড়লো!!
—–মা এসব কি হচ্ছে??কুহুর বাবা কে?
নানু মা হয়তো এই ভয়ে করছিলেন।।তিনি ঘামতে লাগলেন।।আর তাঁর সাথে উনা কথা গুরো কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে।।
—–আমি,, আমি…!!
—–কি হয়েছে মা।।
নানু মা আর কথা বলতে পারলেন না সেখানেই জ্ঞান হারালেন।।
_________________________
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।