The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 82

→রোয়েন অনেকটা দূরে ছিটকে পড়ে।রুহী চিৎকার দিয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা দৌড়ে এলো রোয়েনের কাছে।গাড়িটা ঠিক দেখতে পায় রুহী আর সেই মানুষটাকে ও।কিন্তু রুহীর সেদিকে কোন খেয়ালই নেই।প্রিয় মানুষটা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।রুহীর চোখজোড়া জলে ভরে যাচ্ছে।রোয়েনের পাশে এসে বসে পড়ে রুহী।ওর রক্তাক্ত মাথা টা কোলে নিয়ে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে রুহী।অনেকেই ওদের চারিদিকে ভীড় করেছে।অনেকেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে কিছু করছে ও না।রুহী রোয়েনের মাথা বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদছে।হঠাৎ কেউ যেন বলল,
.
.
-”দ্রুত এডমিট করাতে হবে নয়ত বেশিক্ষন বাঁচবেনা।”
.
.
লোকটার কথায় রুহীর বুক জোরে জোরে ধুকপুক করতে থাকে।না এ হতে দিবেনা ও কি করে বাঁচবে লোকটাকে ছাড়া? না না কিছু হতে দেবেনা লোকটাকে।রুহী উঠে সবাই কে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
.
.
-”প্লিজ হেল্প করেন।আপনারা হেল্প করুন।আমার হাসবেন্ডকে বাঁচান প্লিজ।”
.
.
তখন কয়েকজন লোক স্ট্রেচার নিয়ে আসে।রোয়েন স্ট্রেচারে শুইয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয়।রুহী ওদের পিছু পিছু আসে রোয়েনের সাথে।ওটিতে নেয়ার আগে ওদের সামনে রোয়েনকে জড়িয়ে ধরে ওর মুখে চুমু খায় গভীর ভাবে।রুহীর মুখ ও রক্তে ভরে গেছে।রোয়েনকে ওটিতে ঢুকিয়ে ফেলল।রুহী কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়েছে।বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।একজন নার্স রুহীকে অনেকটা সময় ধরে লক্ষ করেছে।সে এবার রুহীকে ধরে উঠিয়ে দাঁড় করায়।রুহীর হেঁচকি উঠে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।মহিলা ওকে চেয়ারে বসায়।রুহী কেঁদেই যাচ্ছে।নার্স রুহীর চোখ মুছে দিয়ে বলল,
.
.
-”আপনার হাজবেন্ড ওনি?”
-”হুম।”
-”আল্লাহর ওপর ভরসা রাখেন ভালো হয়ে যাবেন।”
-”মাথায় খুব ব্লিডিং হচ্ছে ওর।কিছু হলে আমি বাঁচবোনা।আমার বাচ্চার কি হবে?”
-”আপনার বাবু কার কাছে?”
-”তিনমাসের প্রেগন্যান্ট আমি।তাই আজ এসেছিলাম চেকআপ করাতে।কিন্তু এ কি হয়ে গেলো আমার সাথে।”
.
.
আবার ও কাঁদতে শুরু করে রুহী।নার্স রুহীর জন্য হালকা খাবার আনতে বলল।রুহীকে নার্স আবার ও বলল,
.
.
-”আপনার এখন অনেক সাবধানে চলতে হবে।একদম স্ট্রেস নেয়া যাবেনা।আপনার হাজবেন্ড ভালো হয়ে যাবে।পারলে বাসায় কাউকে কল দিয়ে আসতে বলেন।এভাবে একা থাকা ঠিক হবে না আপনার।”
-”ওকে কল দিচ্ছি আমি।”
.
.
নার্স রুহীর পাশে বসে আছে।রুহী রামীনকে কল দেয়।এদিকে রামীন বাহিরে বের হওয়ার জন্য খুব তাড়াহুড়া করে রেডি হচ্ছিলো।রুহীর কল দেখে ও রিসিভ করে শার্ট পরতে থাকে।রুহীর অনবরত কান্নায় রামীন কিছু বুঝতে পারছেনা।কিন্তু অজানা আতঙ্ক ওকে গ্রাস করেছে।রামীন শার্ট ছেড়ে বলল,
.
.
-”রুহী কাম ডাউন।বলো কি হয়েছে?রোয়েন কই?”
-”ভাইয়া ওর মাথায় প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে।গাড়ি ধাক্কা দিয়ে গেছে ওকে।প্লিজ আসুন জলদি।”
.
.
রুহীর কথায় রামীন হতভম্ব।কি বলে রুহী এটা?রোয়েন কেমন আছে কে জানে।রামীন বলল,
.
.
-”কোন হাসপাতাল?”
-”পপুলার।”
-”রুহী কোথা ও যেও না।ওখানেই থাকো আসছি।কান্না কাটি করোনা।”
.
.
রামীন কান্না করতে না বললে ও নিজের চোখের পানি থামাতে পারেনা।হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে মানিন্যাগ পকেটে ঢুকায়।আশফিনা রুমে আসে।রুহীর সাথে কথা গুলো শুনছিলো ও।তবে সব বুঝতে না পারলে ও এতোটা বুঝেছে যে খারাপ কিছু ঘটেছে।রামীনকে আশফিনা কিছু বললনা কিন্তু ঠিকই ওর পিছু নেবার সিদ্ধান্ত নেয়।এদিকে শামীম কে ও জানায় রুহী।রামীন হাসপাতালে আসার পরপরই আশফিনা চলে আসে।আশফিনাকে দেখে রামীন অবাক হলে ও কিছু বলেনি। রুহীকে আশফিনা জড়িয়ে ধরেছে।রামীন এসে রুহীর মাথায় হাত রেখে বলল,
.
.
-”ও ভালো হয়ে যাবে রুহী।তোমার বাবুটার জন্য হলে ও ওর কিছু হবেনা।”
.
.
রুহী কিছু বলতে পারেনা কান্নার দমকে।কিছুসময়ের মাঝেই সবাই চলে আসে।শামীম ও তার বৌ, রেজোয়ান মাহবুব আর আনিলা।রোয়েনের কয়েকটা বন্ধু ও এসেছে।সবাই রুহীকে সান্তনা দিচ্ছে।এদিকে ডাক্তার এসে জানায় খুব দ্রুত দুব্যাগ রক্তের ব্যাবস্থা করতে।রামীন আর রোয়েনের রক্তের গ্রুপ একই।তাই ও কোন কিছু চিন্তা না করেই রক্ত দিতে রাজি হয়।সাথে রেজোয়ান মাহবুব ও।সন্ধ্যায় রোয়েনের অপারেশন শেষ হয়।ডাক্তার জানায় ও ভালো আছে।রুহী কিছুই খায়নি।নার্স যা আনিয়েছিলো তা সেভাবে পড়ে আছে।সবাই ওকে অনেক জোর করছিলো কিন্তু খাবেনা ও।রেজোয়ান মাহবুব বলল,
.
.
-”রুহী তুই বাসায় চলে যা মা।রামীন আর আমি আছি।”
-”না আমি কোথাও যাবোনা।তোমরা যাও আমি থাকবো ওর সাথে।”
-”ওকে আজ কেবিনে দিবেনা মা।তুই কাল আসিস।”
-”বাবা আমি কোথাও যাবোনা।এখানেই থাকবো।প্লিজ জোর করো না তোমরা।”
.
.
সবাই জানে রুহীকে বলে লাভ নেই।তাই ওরা রুহীকে কেবিনে শুতে দিলো যেটায় রোয়েনকে আনা হবে।রামীন বলল,
.
.
-”আশফিনা তুমি থেকে যাও ওর সাথে।”
.
.
আশফিনা রামীনের কথাকে পাত্তা না দিয়ে রুহী কে বলল,
.
.
-”আমি থাকবো তোর সাথে।”
.
.
রুহী আর আশফিনাকে রেখে ওরা চলে যেতে থাকে।রাতে রুহীকে নিয়ে কেবিনে আসে আশফিনা।আশফিনা ওকে খাওয়ায় খুব জোর করে।রুহী খাবেই না কিন্তু আশফিনা বারবার বলছিলো না বাচ্চাটার জন্য একটু হলে ও খা।তুই না খেয়ে থাকলে বাবুর সমস্যা হবে।রুহী একটু খেয়ে নেয়।কিন্তু সারারাত ঘুমোতে পারেনি।রোয়েনের ওটির সামনে হাঁটছিলো।আশফিনা অনেক চেষ্টা করে ও ওকে নিতে পারেনি কেবিনে।পরদিন সকালে রোয়েনকে কেবিনে নিয়ে আসে।রোয়েনের মাথায় ব্যান্ডেজ করা।রোয়েনকে কেবিনের পেশেন্টের খাটটায় শোয়ানো হয়।কোন হুঁশ নেই ওর।ভিতর থেকে গোঙ্গানোর আওয়াজ আসছে।রুহী রোয়েনের কাছে এসে ওর মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে থাকে।রামীন আর শামীম ও চলে এসেছে।শামীম খাবারের টিফিন ক্যারিয়ার এনে ছোট টেবিলটার ওপর রাখলো।রামীন রোয়েনের কাছে এসে দাঁড়ায়।না চাইতে ও ফুঁপিয়ে উঠে ও,
.
.
-”রোয়েন কেমন লাগছে তোর?কষ্ট হচ্ছে খুব?”
.
.
রোয়েন কিছু বলতে পারেনা কিন্তু চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে রোয়েনের।ওর নাক ফুলে উঠে।নাকের ভিতর পাইপ ঢুকানো।রামীন রোয়েনের চোখ মুছে সোফায় এসে বসে।আশফিনা একবার দেখে নেয় তার লোকটাকে।রুহীর সাথে কিছু কথা বলে রামীন আশফিনাকে একটা প্যাকেট দিয়ে বিকেলে চলে গেলো।এরই মাঝে রোয়েন একবার চোখ খুলেছিলো।খুব ধীরে কথা বলেছে দু একটা।তবে সেটা না বুঝার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। রুহী রোয়েনের পাশে বসে আছে।রাত বারোটা।আশফিনা গোসলে গেলো।রুহী রোয়েনের গালে হাত রেখে বলল,
.
.
-”খাবে কিছু?”
-”উহু।কেমন আছো?”
-”ভালো কিভাবে থাকবো বলো?”
.
.
রোয়েন কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে আস্তে করে রুহীর পেটের ওপর হাত রাখে।রুহীর দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।রোয়েন পেটে হাত রেখে ধীর ভাবে বলল,
.
.
-”আই লাভ ইউ।”
-”আই লাভ ইউ টু পাপা।আই লাভ ইউ টু জান।”
.
.
রোয়েন চোখ বুজে একটু হাসলো।আরো একটা দিন পেরিয়ে গেছে।সেদিন শামীম রোয়েনকে দেখতে আসে।রোয়েন ঘুমিয়ে যাওয়ার পর শামীম রুহীকে বলছিলো,
.
.
-”ভাইয়া লোকটাকে আমি দেখেছিলাম।”
-”কোন লোক রুহী?”
-”আমরা বাঁচিয়েছিলাম যাকে।সে লোকটাই ওকে এ্যাক্সিডেন্ট করেছে।”
-”তুমি দেখেছো তাকে?”
-”জি ভাইয়া।পরিষ্কার মনে আছে।তাকে আমি দেখেছি আগে ও।এর আগে ও দুবার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো আমাদের।তবে এখন আমি নিশ্চিত কাজটা সেই করেছে।আর কেউ নয়।”
.
.
শামীম চিন্তায় পড়ে যায়।রুহী আবার ও বলল,
.
.
-”একটা কাজ করবেন ভাইয়া?”(চোখ ছলছল করছিলো রুহীর)
-”কি রুহী বলো।”
-”লোকটার নাম জয়।তার সব ইনফরমেশন আমার চাই ঠিকানা সহ।”
-”অবশ্যই লোক লাগাচ্ছি আমি।”
.
.
দুদিন পর শামীম জয়ের খবর দেয় রুহীকে।রুহী ঠিক করে ও যাবে জানোয়ারটার কাছে।রোয়েনকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে শামীমকে রেখে যায় রুহী।ও বেরিয়ে পড়ে জয়ের ঘরের উদ্দেশ্যে।রুহী আধঘন্টার মাঝে জয়ের ঘর পেয়ে যায়।ভিতরে ঢুকে চিৎকার করতে থাকে রুহী,
.
.
-”জয় শেখাওয়াত!!!জয় শেখাওয়াত!!!কই আপনি?জলদি নিচে নামুন।”
.
.
রুহীর কথা শুনে বেশ অবাক হয় জয়।রুম থেকে বেরিয়ে নিচে তাকায় ও।রুহীকে দেখে নিচে নেমে আসে।রুহী তেড়ে এলো ওর দিকে তারপর বলল,
.
.
-”আপনার সাহস কি করে হয় আমার হাসবেন্ডকে মারার চেষ্টা করার?”
-”মানে কি?কি করেছি আমি?”
.
.
রুহী এবার সজোরে চড় বসায় জয়ের গালে তারপর বলল,
.
.
-প্রমান নিয়েই এসেছি।এ্যাক্সিডেন্টের সময় আপনাকে ঠিকই দেখেছিলাম আপনি।এতোটা জানোয়ার কি করে হন আপনি?কিভাবে পারলেন আমার হাসবেন্ডকে এক্সিডেন্ট করতে। এটা জানার পর ও যে আমি প্রেগন্যন্ট। ”
-”ভুল করিনি আমি।তোমরা আমাকে ধোঁকা দিয়েছো।সেটার প্রতিশোধ নিয়েছি।”
-”প্রতিশোধ!!কিসের প্রতিশোধ?আপনি আমাকে চিনেন না আর না আমি আপনাকে চিনি।সেদিন আপনাকে বাঁচালাম আর আজ বলছেন ধোঁকা দিয়েছি আমরা আপনাকে?আপনি মানুষ না অন্য কিছু?”
-”ধোঁকা দিয়েছো।ভালবেসে ধোঁকা ছাড়া কিছুই পাইনি আমি।তোমাকে ভালবেসেছিলাম আমি।কিন্তু তুমি ধোঁকা দিয়েছো আমাকে।”
-”একটা মানুষকে আপনি দেখেই ভালবেসে ফেললেন।তার সম্পর্কে জানার চেষ্টাও করেননি যে সে কে?সে তো মেরিড ও হতে পারে।অন্যের জসবনের সাথে সে আগে ও জড়িয়ে যেতে পারে।আমি কি আপনাকে ভালবাসার কথা বলেছি?নাকি বিয়ের আগে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক ছিলো।কোন কিছুই ছিলোনা আমাদের মাঝে।তাহলে সেটা ধোঁকা কিভাবে হলো?নাহ আপনাদের মতো ছেলেরা ভালোবাসার যোগ্য না।কাউকে ভালবাসতেই পারেননা আপনারা।”
জানোয়ার আপনি।আমার হাসবেন্ডের যদি কিছু হয় আপনাকে ছাড়বোনা আমি।কেস করবো আপনার নামে।আমার সন্তানের অভিশাপ থেকে ও বাঁচতে পারবেননা আপনি।”
.
.
বিজলি বেগম সব শুনে এগিয়ে এলেন ওদের কাছে।
চলবে