নীরবতা

নীরবতা !! Part- 35

সুখের সময় দ্রুত ফুরিয়ে গেলেও দুঃখের সময় এগোই ধীরেধীরে। অনার মৃত্যুর একদিন পেড়িয়ে গেলেও মনে হচ্ছে কত যুগযুগান্তর পেড়িয়ে গেছে অনাকে হারানোর। হারানো জিনিসটি সর্বসময় দুঃখকর কেন হতে হবে? কিছু হারিয়ে কি জীবনে সুঃখের সন্ধান পাওয়া যায় না? বুকচিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মুবিনের। চোখে তার অজস্র ঘুম। কাল সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি সে। অজস্র হিংস্র পাখি ঠুকড়ে ঠুকড়ে খেয়েছে তার বুকের ভেতরটা। বারবার চোখজোড়া ভিজে উঠেছে। পুরুষদের কাঁদতে নেই, তবে আঁধারে কাঁদার বারণও নেই। পাশ ফিরে শুয়ে লম্বা একটি দম ছেড়ে চোখজোড়া বুজলো মুবিন। ভর এই দুপুরে ঘুমের দেখা পাওয়া অসম্ভব। তবে আজকাল অসম্ভব জিনিসগুলোই খুব ভাবে আঁকড়ে ধরছে তাকে।
-“আমি চলে এসেছি…”
আচমকা কানে চৈতালির স্বর ভেসে আসলেও তা আমলে নিল না মুবিন। কোলবালিশ চেপে গভীর ঘুমের তোড়জোড় করতেই আবারও তার কানে এল চৈতালির আওয়াজ।
-“আমি যাবো না। তুমি আমাকে না চাইলেও আমি যাবো না।”
শোনামাত্র হুড়োহুড়িয়ে উঠে বসলো মুবিন। চৈতালির দিকে তাকিয়ে রইলো ড্যাবডেবে চোখে। লাল টকটকে একটি শাড়ি পড়েছে সে। কোমরসমান চুলগুলো খুলে ছড়িয়ে দিয়েছে পিঠময়। ঠোঁট ভর্তি করে লাগিয়েছে টকটকে লাল লিপস্টিক, চোখে এঁকেছে গাঁঢ় কাজলের রেখা। তবে তার চাওয়া মতো কপালটা রেখেছে খালি। যেমনটি সে দেখতে চেয়েছিল বধু বেশে তার চৈতালিকে। বুকের ভেতরটা হুঁ হুঁ করে উঠতেই নিজেকে সামলে নিল মুবিন। দ্রুত পায়ে দরজার কাছে গিয়ে বারান্দায় নজর দিল। তবে আশপাশটায় কোথাও কাওকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির সঙ্গে দরজা বন্ধ করে সে এগিয়ে এল চৈতালির দিকে।
-“তুমি এভাবে হুটহাট আসবে না চৈতালি।”
-“আর কখনোই আসবো না। আজই শেষ। এখন থেকে এইঘরই হবে আমার আবাসস্থল।”
কপাল কুঁচকে ফেললো মুবিন। ধীর গলায় বললো,
-“পাগলামো করো না!”
-“আমি পাগলামো করছি না!”
-“বাড়ি ফিরে যাও চৈতালি।”
-“ফিরে যাবো বলে তো আসিনি।”
-“কিন্তু তোমার যেতে হবে।”
-“আমি যাবো না।”
-“তুমি যাবে।”
-“না.. আমি কখনোই যাবো না।”
-“প্লিজ চৈতালি! পাগলামো না করে বোঝার চেষ্টা করো। আমি পারবো না তোমাকে নিজের সঙ্গে জড়াতে।”
-“তাহলে কথা দিয়েছিলে কেনো আমায়? স্বপ্ন দেখিয়েছিলে কেনো আমায়? ছোট্ট সেই চৈতালি কখন তোমার দৃষ্টিতে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছিল তা সে নিজেও বোঝেনি। কিন্তু তুমি তাকে বুঝিয়েছিলে। কেনো বুঝিয়েছিলে? আজ এই কথা বলার জন্য? মানুষের মন নিয়ে খেলার জন্য?”
সেকথার জবাব না দিয়ে শক্ত গলায় মুবিন বললো,
-“কেঁদো না.. কাঁদার মতো কিছু হয়নি।”
-“অহ.. তাই তো। কাঁদবো কেন? আজ আমার বিয়ে। খুশির দিন। কাঁদবো কেনো আমি?”
কলিজায় টান অনুভব করলো মুবিন। তার চৈতালি আজ থেকে অন্য কারো সম্পদ হয়ে যাবে। এমনটা হবার তো কথা ছিল না। তবে হচ্ছে। কারণ জগৎ-সংসার চলে তার নিজস্ব গতিতে..
-“তোমাকে আমি ঠিক কতটা ভালোবাসি, কিভাবে ভালোবাসি জানিনা। তবে এটুকু জানি তোমাকে ছাড়া আমি একপাও চলতে পারবো না। আজ যদি আমাকে এবাড়িতে থেকে বেরিয়েই যেতে হয়, তাহলে শুধু চৈতালির দেহটাই বেরুবে। তার মনটা নয়।”
-“তুমি ফিরে যাও।”
-“আমি যাবোনা, মুবিন। একটাবার বিশ্বাস করো। আমাকে অনা কিচ্ছুটি জানায়নি। কেনো তোমরা বিশ্বাস করছো না?”
-“কারণ এখানে বিশ্বাস করার মতো কোনো অপশন নেই।”
-“বাদবাকিদের না থাকলো। কিন্তু তোমার? পুরো গ্রাম শুদ্ধ মানুষ যেখানে আমাকে নিয়ে যা নয় তাই কথা ছড়াচ্ছে সেখানে সবুজ স্যার সেই সব কথা গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে তার বাড়ির সদস্যকে নিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চলে এসেছে। আর সেখানে তুমি? অনার মৃত্যু, পারিবারিক পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে আমাকে বারবার দূরে ঠেলে দিচ্ছো। কেনো মুবিন? তাহলে কি আমি ধরে নেব তোমার চেয়ে বেশি আমায় সবুজ স্যার ভালোবাসে?”
-“হয়তো..”
-“আমি মানি না। কেউ আমাকে তোমার মতো করে ভালোবাসতেই পারেনা।”
-“তার চেয়ে বেশি তো পারেতেই পারে।”
-“না.. পরিস্থিতি জটিল। তবে তুমি আমার পাশে থাকলে আমি সবটা সামলে নিতে পারবো মুবিন।”
চৈতালির কান্নার বেগ ক্রমশ বাড়ছে। সাথে গলছে মুবিনের মনের ভেতরটা। নিজেকে সামলে নেয়া দরকার। কিন্তু কিভাবে? উদ্বিগ্ন গলায় মুবিন বললো,
-“অনেক হয়েছে। কেউ দেখে ফেলার আগে তুমি বাড়ি ফিরে যাও।”
-“আমি যাবো না।”
-“তুমি যাবে.. তুমি এখন তোমার বাড়িতে ফিরে গিয়ে সবুজকে বিয়ে না করলে আমার মরা মুখ দেখবে।”
বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো চৈতালির। চোখভর্তি জল নিয়ে অবাক চোখে মুবিনের দিকে তাকাতেই সে বললো,
-“তুমি যাও চৈতালি।”
-“তুমি এতবড় কথা বলতে পারলে? এই কথা বলতে একবারও তোমার বুক কাঁপলো না?”
-“না কাঁপেনি।”
-“তুমি এটা বলতে পারো না। না না না।”
মুবিনের বুকে আছড়াতে আছড়াতে চৈতালি মেঝেতে বসে পড়তেই তার পাশে বসলো মুবিন। গোপনে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
-“সব ভালোবাসাই পূর্ণতা পেতে হবে এমন নয়। মানুষের জীবনেই জড়িয়ে রয়েছে অপূর্ণতা। জানো, যেসব ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যায় সেই ভালোবাসার গভীরতা মেপেও শেষ করা যায় না?”
-“মিথ্যে কথা।”
-“ভালোবাসার জগতে অনেক স্বপ্ন দেখা হয়, অসংখ্য কথপোকথনে ফোটানো হয় হাজারো আশা আকাঙ্খা। কিন্তু জীবন! প্রিয় মানুষটাকে ভালো রাখতে, ভালোবেসে অপূর্ণতাকেই না হয় আমি মেনে নেই।”
নাক টেনে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে চৈতালি বললো,
-“মনটা তো তোমার সৃষ্টি নয়, তাহলে ধ্বংস করার অধিকার কে দিল তোমায়?”
-“ধ্বংস নয় চৈতালি। গড়া.. নতুনভাবে জীবন গড়ে নাও।”
-“আমি সেই জীবন চাইনা যে জীবনে তুমি নেই।”
-“আমি আছি। তোমার মনে আছি। তোমার কপালে আছি। কই টিপটা? কোথায় রেখেছে?”
চৈতালি হাত পাততেই তার হাত থেকে টিপ উঠিয়ে কপালে পড়িয়ে দিল মুবিন। ম্লান হেসে বললো,
-“অপূর্ব লাগছে।”
-“আমাকে যেতে দিও না। আমাকে তোমার কাছে রেখে দাও। কষ্ট হচ্ছে আমার। মরে যাবো আমি।”
লম্বা একটি নিঃশ্বাস ফেলে চৈতালিকে আঁকড়ে ধরে কপালে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিল মুবিন। চোখজোড়া বুজে আস্বস্ত করে বললো,
-“সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি সুখে হবে।”
-“আমার সুখ দুঃখ সব তুমি মুবিন।”
কান্নার দরুন কেঁপে কেঁপে উঠছে চৈতালির শরীর। তাকে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো মুবিন। চুলের মাঝে হাত দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে বললো,
-“এসবও স্থানান্তর হবে।”
-“হবে না। কখনোই হবে না।”
-“আর হলে?”
জবাব দিল না চৈতালি। খানিকক্ষণ নীরবে মুবিনের বাহুডোরে বন্দী থাকার পর মুখ উঠালো সে। তার চোখের জলে মুবিনের টিশার্ট ভিজে উঠেছে। সেদিকে তাকিয়ে তার উপর হাত বোলালো চৈতালি। ব্যাকুল সুরে বললো,
-“একটাবার চেষ্টা করে দেখতে!”
-“না আমি মানতে পারবো আর না আমার পরিবার। পরিস্থিতি আমাদের প্রতিকূলে। আমরা হয়তো একজন অপরের জন্য তৈরিই হইনি। নয়তো আমাদের কেনো এমন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে?”
-“তাহলে ভালোবাসার বন্ধনে কেনো জড়ালো আমাদের?
-“পরীক্ষা। দুনিয়ার জীবনে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেই না তুমি সফল!”
-“তাহলে আমি সফল হতে চাই না।”
-“কিন্তু আমি চাই। কিছু সম্পর্কে তিক্ততা প্রবেশ করার আগেই সেই সম্পর্কের ইতি টানা উচিৎ। যেখানে আমাদের সম্পর্কে যথারীতি সময়ের স্রোতে তা আরও বাড়বে। তুমি কেনো একটিবার বারণ করলে কেন অনাকে! তুমি চেষ্টা করলে আজ হয়তো অনা আমাদের মাঝে থাকতো। এসব ভেবে আমার মনে তোমাকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। তবে রাগ নয়। কাল অনার মৃত্যুর পর এই ক্ষোভের পরিমাণ এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছিল যে আমি একটিবারও তোমার অবস্থান বোঝার চেষ্টা করিনি। পরবর্তীতে এমন আরও হবে না তার গ্যারান্টি কী? আর আমি চাইনা আমার মাঝের এই ক্ষোভ ক্রমেই রাগে পরিবর্তন হয়ে তোমাকে নিয়ে আমার মনে খারাপ ধারণা জন্ম নিক। আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম.. আর এই ভালোবাসা নিয়েই আমি আমাদের সম্পর্কের ইতি টানতে চাই। সবুজ নামের লোকটি ভালো। পরিবার ভালো। তুমি ওখানে ভালো থাকবে। অপরদিকে আমি.. কখনোই ভালো রাখতে পারবো না তোমায়। আব্বা আম্মা কেউ তোমাকে মেনে নেবে না। কথা শুনতে হবে কষ্ট পেতে হবে। আজীবনের দুঃখ কষ্টের চেয়ে দুইদিনের ক্ষনস্থায়ী কষ্টই না হয় আমি তোমায় দিলাম।”
-“তোমাকে না পেলে আমি কখনোই ভালো থাকবো না।”
-“থাকবে। সময় তোমাকে ভালো রাখবে।”
-“তুমি তাহলে আমাকে তোমার কাছে রাখবে না?”
সময় নিল না মুবিন। স্বাভাবিক গলায় বললো,
-“না..”
-“আমি উনাকে মেনে নিতে পারবো না।”
-“তুমি পারবে.. আমার জন্য হলেও তোমাকে সুখী হতেই হবে।”
-“আর তুমি?”
দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুবিন। কী করবে সেই এই পরিস্থিতিতে? পরিবার কখনোই মানবে না চৈতালিকে। আর না সে বোনের শোক কাটিয়ে উঠে চৈতালিকে বিয়ের করার কথা ভাবতে পারবে। তার দ্বারা এতটা নির্দয় হওয়া সম্ভব নয়। মৃত্যু শোক বড় শোক। এর কাছে দুনিয়ায় প্রেম ভালোবাসা তুচ্ছ জিনিস। তবে কেনো যেনো দুটোকেই একই সুতোর বাঁধন মনে হচ্ছে মুবিনের। একমুহূর্ত একদিকে তীব্র টান অনুভব করলেও পরমুহূর্তেই অপরদিক থেকে তাকে টানতে থাকে সমানতালে।
-“আমিও সুখী।”
আবারও মুবিনের বুকে মুখ গুঁজে দিল চৈতালি। তীব্র আর্তনাদ ধ্বনি মুখে ফুটিয়ে বললো,
-“এত ভালোবাসলাম কেনো তোমায় মুবিন? জীবনটা আমার ছারখার হয়ে গেল।”
রোদ্র ভরা দুপুর। চারিপাশে রোদের প্রখরতায় তাকানোই দায় হয়ে পড়েছে। এরই মাঝে সুহার বায়নার জন্য বাইরে বেরুতে হলো মেসবাহকে। মেয়ে আইসক্রিম খাবে। এই গরমের ভেতর আইসক্রিম মন্দ নয়। তবে দোকানপাট খোলা থাকলে তো! কিছুপথ হেটে আবারও বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিল মেসবাহ। সূর্যের প্রখর তাপ গায়ে এসে লাগতেই পুরো শরীর জ্বলে উঠছে। ভর দুপুরে ছাতা ছাড়া বেরুনো একদম উচিৎ হয়নি তার। বাড়ির সামনে আসতেই চৈতালিকে দৌড়ে তাদের বাড়ির থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে চোখমুখ কুঁচকে গেল মেসবাহর। মেয়েটির পরণে লাল শাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘসময় হলো কেঁদেকেটে ফুলিয়ে ফেলেছে চোখমুখ। কাছাকাছি আসতেই চৈতালিকে ডেকে উঠলো মেসবাহ। তবে চৈতালি তা উপেক্ষা করে দ্রুত ছুটে চললো রাস্তা ধরে। চিন্তিত মনে চৈতালির যাত্রা পথের দিকে তাকাতেই ফোন বেজে উঠলো মেসবাহর।
-“হ্যালো..”
-“হ্যাঁ.. কী অবস্থা তোমাদের?”
-“আছি..”
-“তোমার আব্বা আম্মা?”
-“আছে একরকম।”
-“তোমরা ছেলেমেয়েরা ভেঙে পড়োনা। তোমরা ভেঙে পড়লে তাদের কারা দেখবে বলো?”
-“জ্বি..”
মুন্নি সরকারের শান্তনা সূচক বাণী শুনে বিরক্ত হলো মেসবাহ। কেনো যেনো কাল থেকে শান্তনার বাণী একদমই নিতে পারছে না সে।
-“কালই তোমায় একবার কল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মনে হলো এই অবস্থায় তোমার সাথে কথা বলা ঠিক হবে না। তাই আজ কল করলাম।”
-“অহ..”
-“তা অনার হত্যাকারীর ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছো?”
বুকের ভেতর হুঁ হুঁ করে উঠলো মেসবাহর। কষ্টগুলো দলা পেকে জড়ো হলো গলায়। নিজেকে সামলে কোনোমতে ধরা গলায় মেসবাহ জবাব দিল,
-“না।”
-“আমার একটা তথ্য জানা আছে। অনা যখন ঢাকায় এসেছিল প্রায় সময়ই তো আমার সাথে বসে আড্ডা দিত। তখনই ও বলেছিল। জানিনা কতখানি হেল্প হবে তোমাদের তবে আমার মনে হলো বিষয়টি তোমাদের জানানো উচিৎ।”
কপাল কুঁচকে মেসবাহ বললো,
-“কোন বিষয়?”
-“অনার প্রেমিকের ব্যাপারে। ও তোমাদের পাড়াতেই থাকে। নাম ইমাদ.. না না। ইমাদ নয় এমাদ।”
-“আপনি সিউর?”
-“হ্যাঁ.. ওই ছেলে তো এখানেও এসেছিল। অনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতো আর ওই ছেলে নিচে। এত মাখোমাখো প্রেম দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল! তখন যদি একবার তোমাদের জানিয়ে দিতাম তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না!”
-“থ্যাংকইউ ভাবি। থ্যাংকইউ সো মাচ। আমি আপনাকে একটু পর কল করছি।”
ফোন কেটেই মেসবাহ দ্রুত পায়ে ছুটলো বাড়ির ভেতরে। পুরো শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে তার। কিছু একটা করতে হবে তার। খুব দ্রুত করতে হবে।
-“চাচা, আমি আজ থেকে যাই?”
-“বড্ড বেলেহাজ পোলা তুই!”
বড় চাচা হাসানুর মিয়ার কথা শুনে মুখ নিচু করে ফেললো সবুজ। চোখেমুখে একরাশ অস্বস্তি ফুটিয়ে ক্ষীণ গলায় বললো,
-“জ্বি না। মানে ঠিকাছে।”
-“কিয়ের ঠিকাছে? থাকতে চাইলে থাকপি। তোর শ্বশুর বাড়ি তোর বউ এর মধ্যে আমি কেডায়?”
-“না না। ঠিকাছে।”
-“ঠিক নাই। বিয়া করছু বউরে ছাড়া থাকপি ক্যা? তোর এই বেলেহাজ পানা আমার ফাইন লাগছেরে! যাই তোর শ্বশুরের লগে কথা কইয়া আসি।”
হাসানুর মিয়া পা বাড়াতেই চৈতালির ঘরে প্রবেশ করলো সবুজ। বিছানার মাঝখানটায় ঘোমটা টেনে চুপচাপ বসে আছে চৈতালি। যাকে কিছুক্ষণ আগেই তিন কবুলের মাধ্যমে সারাজীবনের জন্য নিজের নামে করে নিয়েছে সে। বুকের ভেতরটায় অদ্ভুত এক তৃপ্তি অনুভব করতেই চৈতালির পাশে এসে বসলো সবুজ। আশেপাশে চেয়ে ইতঃস্তত করে বললো,
-“আজ আমি এখানে থাকলে তোমার কোনো সমস্যা হবে?”
-“না।”
-“অহ.. ঠিকাছে।”
এপর্যায়ে চৈতালির দিকে তাকালো সবুজ। বিয়ের পর মেয়েদের ভেতর কি খুব বেশি পরিবর্তন হয়? আগে যে মেয়েকে একদন্ড থামিয়ে রাখা যেত না আজ সে নীরবতা পালন করে বসে রয়েছে। বিষয়টি কি সন্দেহজনক? নাকি সে নিজেই বেশি ভাবছে চৈতালির নীরবতা নিয়ে? হয়তো লজ্জা পাচ্ছে সে। সংকোচে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। ভাবনার গতিপথ থামিয়ে মুখ খুললো সবুজ। বললো,
-“খেয়েছো দুপুরে?”
-“হুম।”
-“অহ.. সুন্দর লাগছে তোমায়।”
-“ওই চৈতালি.. চৈতালি? খবর শোন। অনার ধর্ষণকারীরে পাওয়া গেছে। ওই যে এমাদ আছে না? তোগো কলেজের মাস্টার সাহেবের পোলা? ওর সাথেই অনার প্রেম ছিল৷ ওই ছ্যাড়াই ওরে ভাগাই নিয়া গেছিল। পুলিশ ওর বাড়ি থেইক্যা মাত্র ওরে ধইরা নিয়া গেল।”
শেফালি বেগমের মুখ থেকে এমন কথা শুনে পুরো শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো চৈতালি। এক দৌড়ে দৌড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে হাজীবাড়ি। অনার ঘরে ঢুকে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে সে যাবেনা। ওই বাড়ির সাথে যে সকল বন্ধন বিসর্জন দিয়ে এসেছে সে…
(চলবে)