চন্দ্রাবতী আসছে ! Part- 04
কারন প্রফেসর বিশ্বাস বললেন
-মিসেস অধরা আপনার পেট টা খেয়াল করলাম অনেক ফুলে গিয়েছে।তা গ্যাসের প্রবলেম হয়েছে নাকি?
উনার এরমক গা ভাসানো কথা শোনে আমার বেশ রাগ উঠল।কারন উনি সবটা জেনেও এরকম মজা করছেন।আর এদিক দিয়ে আমার অস্থিরতার মাত্রা বাড়তে থাকল।বেশ রাগান্বিত হয়েই উনাকে জবাব দিলাম
-আপনি মাঝে মাঝে খুব হেয়ালি করেই কথা বলেন।আপনি নিশ্চয় সবটা জানেন তাহলে এমন কেন বলছেন?আমাদের এরকম অবস্থায় এমন মজা করা আপনার উচিত হচ্ছে কি?
উনি একটু কাশি দিয়ে আমাকে বলল
-আপনি একটু বেশিই অস্থির হচ্ছেন।এরকম অনেক কথায় আছে আপনি শোনলে আরও অস্থির হবেন।এবার আসি কাজের কথায়।মিসেস অধরা আমি জানি আপনি বুঝতে পারছেন না আপনার পেটের বাচ্চাটা কার?আর যে বাচ্চাটা সুখীর পেটে ছিল সেটা আপনার পেটেই বা কিভাবে আসল?আপনার নিশ্চয় এ প্রশ্নের উত্তর গুলো জানতে ইচ্ছা করছে।তার জন্য আপনাকে একটা ছোট্র কাজ করতে হবে।
আমি একটু হতাশ হয়েই বললাম
-বলুন কি কাজ করতে হবে?
উনি বললেন
-বলছি তবে আগে বলুন পাশের ব্যাক্তিটি কি আপনার স্বামী অরন্য?
আমি মাথা দিয়ে হ্যা সূচক মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
এবার উনি অরন্যকে বললেন
-আচ্ছা আপনাকে এখন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে আপনি দয়া করে ভয় পাবেন না।
অরন্য বেশ ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল
-কি এমন হতে পারে আমি কি জানতে পারি।
প্রফেসর বিশ্বাস উত্তর দিলেন
-ঠিক সময়েই বুঝতে পারবেন।এখন অস্থির না হয়ে শান্ত হয়ে বসুন।আর মিসেস অধরা।
আমি উত্তর দিলাম
-হ্যা বলুন।
-আপনি টেবিলের সামনে একটা চেক বোর্ড দেখতে পারছেন আশা করি।
উত্তরে আমি বললাম
-হ্যা দেখতে পারছি।
-আপনাকে চেক বোর্ডটায় হাত দিতে হবে।আর চেক বোর্ড টিতে হাত দেওয়ার পর আপনি যা অণুভব করবেন আমাকে বলবেন।
আমি একটু ভয় পেলেও নিজেকে সামলে বললাম
-আচ্ছা আমি এক্ষুনি হাত দিচ্ছি।
এ বলে হাতটা দিতে যাব ঠিক ঐ সময় প্রফেসর বিশ্বাস আমার হাতটা সরিয়ে বলল
-এখন না মিসেস অধরা।
-তাহলে?
-আমি সারা ঘর মোমবাতি দিয়ে জ্বালিয়ে তারপর আপনাকে ধরতে বলব।
এরপর প্রফেসর বিশ্বাস সারা ঘরে মোমবাতি জ্বালাল।আর আমাকে বলল
-মিসেস অধরা এবার আপনি চেকবোর্ডে হাত দিন।আর অরন্য সাহেব অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলেও আপনি ভয় পাবেন না, ঠিক আছে।
অরন্য হ্যা সূচক মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।আর আমি চেক বোর্ডটায় হাত দিলাম।আর চেকবোর্ডটাতে হাত দেওয়ার সাথে সাথে সারা ঘর কাঁপতে লাগল।ঠিক এ সময় প্রফেসর বিশ্বাস আমাকে বলল
-মিসেস অধরা এবার আপনি চোখটা বন্ধ করুন।
আমি প্রফেসর বিশ্বাসের কথা অণুযায়ী চোখটা বন্ধ করলাম।চোখটা বন্ধ করার সাথে সাথে আমি সেই স্বপ্নে দেখা পুড়া বাড়িটা খেয়াল করলাম।আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি পুড়া বাড়িটার ভিতরে ঢুকছি।আস্তে আস্তে বাড়িটায় ঢুকতে লাগলাম আর সেই মোমের পুতুলটা দেখতে পেলাম।মোমের পুতুলটা ধরার সাথে সাথে খেয়াল করলাম সুখী আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু এখানে সুখী আসল কিভাবে আমি এর উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না।খেয়াল করলাম সুখী কোথাও দৌঁড়ে যাচ্ছে।আমি সুখীর পিছন পিছন যেতে লাগলাম।খেয়াল করলাম সুখী একটা রুমের মধ্যে ঢুকল।আমিও রুমের মধ্যে গেলাম।পরক্ষণেই রুমটা বেশ অন্ধকার হয়ে গেল।আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমটা আলোকিত হয়ে গেল।খেয়াল করলাম সুখী একটা সিংহাসনে বসে আছে।সুখীকে এমন অবস্থায় দেখে আমি বেশ অবাক হলাম।ঠিক এ মুহুর্তে ঘরটা আবার কাঁপতে লাগল আর মোমবাতি গুলো সব নিভে গেল।প্রফেসর বিশ্বাস ঘরের লাইট টা অন করল আর আমাকে বলল
-মিসেস অধরা এবার চোখটা খুলুন
আমি চোখটা খুললাম আর দেখলাম অরন্য বেশ শান্ত হয়ে আমার পাশে বসে আছে।আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম সবকিছু ঠিক আছে।এবার প্রফেসর বিশ্বাস আমাকে বলল
– সুখীকে এ অবস্থায় দেখে কেমন লাগছে?
আমি হতবাক না হয়ে পারলাম না।কারন প্রফেসর বিশ্বাস কিভাবে বুঝল আমি কি দেখেছি।আমি হতবাক হয়ে প্রফেসর বিশ্বাসকে জিজ্ঞেস করলাম
-আপনি জানলেন কিভাবে আমি সুখীকে দেখেছি।আর সুখী ঐখানে বসে আছে কেন?আর সুখী কোথায় গেল?
প্রফেসর বিশ্বাস একটু দম নিয়ে বলল
-সুখী কে জানতে চান?আর কোথায় গেল জানতে চান?
-হ্যা জানতে চাই বলুন।
প্রফেসর বিশ্বাস শান্ত স্বরে জাবাব দিল
-সুখী কোন সাধারণ মানুষ না।সুখী একটা অতৃপ্ত আত্না।
আমি কথাটা শোনে বেশ অবাক হলাম আর বললাম
-অতৃপ্ত আত্না মানে?
প্রফেসর বিশ্বাস জাবাব দিল
-হ্যা অতৃপ্ত আত্না।
-তাহলে সুখী আমার বাসায় কেন আসল আর সুখীর সাথে এমন কেন হল?আর আমার পেটে সুখীর বাচ্চা কিভাবে আসল?
প্রফেসর বিশ্বাস এবার জবাব দিল
-সুখীর যে বাচ্চাটা আপনার পেটে এসেছে সেটা সুখী চেয়েছিল যে আসুক।আপনার পেটের এ বাচ্চাটা হলো চন্দ্রাবতী।
আমি অবাক হয়ে বললাম
-চন্দ্রাবতী।এ চন্দ্রাবতী কে?
-চন্দ্রাবতী হল সুখীর সেই মৃত বাচ্চা যে বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসার আগেই মরে গিয়েছিল।
আমি আর অরন্য কিছুটা হতবাক হয়ে জবাব দিলাম
-আপনি ঠিক কি বলছেন আমরা বুঝতে পারছি না।
উনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমাদের জবাব দিল
-সুখী তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার বাচ্চা চন্দ্রাবতীকে এ পৃথিবীতে আনতে চাচ্ছে।আর সুখী তার মেয়ে চন্দ্রাবতীকে দিয়েই তার প্রতিশোধ পূরণ করবে।আর সুখীর বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসার জন্য একটা মানব শরীরের দরকার ছিল।আর সেজন্যই সুখী ছলনার আশ্রয় নিয়ে আপনার বাসায় এসেছিল।আর সুখী জানত যে তার বাচ্চার যখন তিন মাস বয়স হবে তার পেটে তখন বাচ্চাটা একটা মানব শরীরে প্রবেশ করাতে হবে।আর মানব শরীরে প্রবেশ করলেই বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসতে পারবে।তাই বাচ্চাটা মিসেস অধরা আপনার পেটে স্থান্তারিত হয়েছে আর স্তানাস্তরিত হওয়ার পর সুখী সুখীর জায়গায় চলে গিয়েছে।বাচ্চাটার জন্মের পর সুখী তার প্রতিশোধ নিবে।আর মাঝখানে যা ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলার মধ্যে কিছু মায়া আর ছলনাও ছিল।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে প্রফেসর বিশ্বাসকে বললাম
-কি এমন প্রতিশোধ নিবে সুখী।আর সুখী মেয়েটাই বা কে?আর বাচ্চাটা কি আমাকে জন্ম দিতেই হবে।জন্ম যেন না হয় তার কি কোন উপায় নেই।
প্রফেসর বিশ্বাস নিরাশ হয়ে জাবাব দিল
-বাচ্চাটাকে জন্ম দিতেই হবে।জন্ম দেওয়া ছাড়া কি কোন উপায় নেই।আর সুখী কে জানতে চান?
-হ্যা জানতে চাই।বলুন সুখী কে?আর কিসের প্রতিশোধ নিতে চায়?
এবার প্রফেসর বিশ্বাস যা বলল আমি আর অরন্য আবারও হতচকিয়ে গেলাম।কারন প্রফেসর বিশ্বাস বলল
লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা।