সাঁঝের প্রেম

সাঁঝের প্রেম !! Part- 19

বাড়ির সবাই ডিনার শেষ করে যার যার ঘরে যায়। বুয়া তখন সব গুছিয়ে রাখে আর নিশি ছোট মা আর মাহবুবকে মেডিসিন খাইয়ে দেয়। মাহবুব শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে আর নিশি দরজা বন্ধ করে এসে মাহবুবের পাশে বসে। মাহবুব তখন ফোনটা হাত থেকে রেখে নিশির হাত ধরে। নিশি মাহবুবের দিকে তাঁকায়। মাহবুব তখন বলে,

-আমার ভাগ্যটা কি দেখো!
-কেন কি হয়েছে?
-এই মুহুর্তে আমার তোমার পাশে থাকা উচিৎ, তোমার সেবা করা উচিৎ আর তুমি করছো আমার সেবা। আমি বিছানায় বসে আছি আর তোমার সেবা নিচ্ছি। (মন খারাপ করে মাহবুব)
-এইভাবে বলছো কেন? তুমি অসুস্থ, নিশ্চয়ই ইচ্ছা করে অসুস্থ হও নি? তাই এভাবে বলো না প্লিজ। (মাহবুবের হাতের উপর হাত রেখে নিশি)
-একটু তোমার কোলে শোয়াবে আমাকে? আমি তোমার পেটে একটু হাত রাখব।
-কেনো?
-মন চেয়েছে তাই।

মাহবুব বালিশের উপর পা রেখে সোজা হয়ে টান করে নিশির কোলের উপর মাথা রাখলো। নিশি মাহবুবের টি শার্ট ঠিক করে দিলো। মাহবুব নিশির পেটের উপর হাত রাখলো। নিশি নড়েচড়ে উঠলো। নিশিও মাহবুবের হাতের উপর হাত রাখলো।

-আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা এখানে আমার ছোট্ট বাচ্চাটা আছে। (নিশির পেটে চুমু দিয়ে মাহবুব)
-হ্যা আমারো ভাবনার বাইরে। আমি কোনোদিন ভাবিই নাই যে আমার বিয়ে হবে আর সেখানে বাচ্চা তো ভাবনার বাইরে ছিলো।
-যা হয় ভালো হয়, আল্লাহ সবই ভালো করে। কিন্তু নিশি আমার এইটা ভেবেই কষ্ট লাগছে যে আমি তোমার কোনো যত্ন নিতে পারছি না। (নিশির কোমড় জড়িয়ে ধরে মাহবুব)
-আবার এইসব বলছো তুমি? এইবার আমি বকবো কিন্তু।
-আচ্ছা আর বলব না। কবে আমি ঠিক হব নিশি?
-খুব তারাতারিই। (মাহবুবের মাথায় চুমু দিয়ে নিশি)

দেড় মাস কেটে গেলো। নিশির গর্ভে বড় হচ্ছে মাহবুবের সন্তান আর মাহবুব এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সম্পূর্ণ সুস্থ ও। ব্যান্ডেজ ও খোলা হয়ে গেছে। একটা কিডনী নিয়ে চলতে কোনো সমস্যা হচ্ছেনা ওর। ছোট মা ও সুস্থ আছে তুর্না আর নিশির সেবায়। এই দেড় মাস তুর্না ই প্রায় সব সামলেছে। ছোট মা তুর্নাকে ভীষণ পছন্দ করে ফেলে। সায়েমের জন্য তুর্নার কথা বলবেন তিনি নিশিকে। কিন্তু দুই বোনকে একই বাসায় কি দিতে চাইবে তুর্নার আম্মু? এই কথা ভেবেই তিনি এগোতে পারছেন না। এইদিকে সায়েম আর তুর্না প্রায় ফ্রি হয়ে যায় একজন আরেকজনের সাথে।

এক সন্ধ্যায় নিশি সবার জন্য স্ন্যাকস বানাচ্ছিলো আর তখন সায়েম ঘরে আসে।

-কি ব্যাপার আজকে তোমার এত দেরি হলো? (ছোট মা)
-রাস্তায় জ্যাম, এসাইনমেন্ট এর প্যারা। আর বলো না! (সায়েম বিরক্ত)
-যাও ফ্রেশ হয়ে এসে বসো। (নিশি)
-যাচ্ছি। ভাবি ভাইয়া কই?
-ও তো ঘরে।
-আচ্ছা।

সায়েম ফ্রেশ হয়ে এসে বসে। মাহবুব ও ড্রইংরুমে আসে। তুর্না, নিশির আম্মু সবাই ই এসেছে। অফিস থেকে মাহবুবের বাবা ও চলে এসেছে। নিশি শ্বশুরকে পানি দিলো আর তুর্না নিশির সাথে রান্নাঘরে দাঁড়ালো। সবাইকে স্ন্যাকস সার্ভ করে দিয়ে নিশি বসলো। সবাই খাচ্ছে আর তখন ছোট মা সবার উদ্দেশ্যে বলেন,

-আমি সবার সামনে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই৷ আমি আর মাহবুবের আব্বু মিলে ভেবেছি বলা উচিৎ কথাটা।
-কি কথা ছোট মা? (মাহবুব)
-হ্যা আম্মু বলো কি কথা? (সায়েম)
-বেয়াইন আত্মীয়তার সম্পর্ক টাকে আরেকটু জোড়ালো করতে চাই আমি। তুর্নাকে আমি সায়েমের বউ করে আনতে চাই যদি আপনি আপত্তি না করেন তো।

এই কথা শুনে সায়েম মুখ থেকে পানি ফেলে দিলো। পানি গিয়ে পরলো সোজা তুর্নার উপর। এই কান্ড দেখে নিশি আর মাহবুব হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরছে। ছোট মা ও হাসছে। সবার হাসি দেখে তুর্না ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। সায়েম তো অনেক লজ্জা পেলো। সায়েম বলল,

-মা আমি এখনো ছোট। কি বলছো এসব? মাত্র অনার্স থার্ড ইয়ারে আমি।
-তোমার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে? (ভ্রু কুঁচকে ছোট মা)
-ছিহ এইসব পাপ সায়েম করেনা। সায়েমের উপর মেয়েরা ক্রাশড বাট সায়েম নট ইন্টারেস্টেড! (একটু ভাব নিয়ে সায়েম)
-তাহলে তুমি আপত্তি কেন করছো? তুর্নাকে কি তোমার পছন্দ না? (কড়া গলায় ছোট মা)
-এই মেয়ে পিচ্চি। পিচ্চি বউ চাইনা আমি। আমার সিনিয়র বউ লাগবে। (ফাইজলামি করে সায়েম)
-টেনে মারব এক চড়। ছোট মা তুর্না ই ফিক্সড ওর জন্য। আর কারো না আমি শুনবো না। মা আপনার কি কোনো আপত্তি আছে? (তুর্নার আম্মুকে জিজ্ঞেস করে মাহবুব)
-আমি কি বলব এইজায়গায়? তুর্না কি বলে সেইটা শোনো। (আম্মু)
-তুর্না? (মাহবুব)

তুর্না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর নখ খুটছে। তুর্না কিছু বলছে না। মাহবুব তুর্নাকে খোচা মেরে বলল,

-ওই কথা বলছো না কেন?
-ভাইয়া আমি কিছু বলব না। তুমি আর আপু যা ভাল বুঝবা তাই কর। (তুর্না)
-মানে কি? তোমার ইচ্ছা জানতে চেয়েছি আমি। (মাহবুব)
-ভাইয়া বাদ দাও তো। আমি রাজি বিয়ে করতে। এই মেয়ে করলে করুক নাইলে নাই। (খেতে খেতে সায়েম)
-এইত আমার ভাই। ছোট মা তুমি প্রিপারেশন নেওয়া শুরু কর। (মাহবুব)
-আয়হায় অনার্স শেষ করব না? (সায়েম)
-আগে বিয়ে পাস কর এরপর অনার্স পাস করিস। তাছাড়া তুই কি খাওয়াবি নাকি বউকে? তোর মতো ছেলেকে দিয়ে কিছুই হবেনা। (বাবা)
-এইভাবে অপমান! (সায়েম)
-না, তুমি বাড়ির ছোট ছেলে। তোমার ক্যারিয়ার আমি দেখবো, তুমি না। তুমি বিয়ে কর, পড়াশোনা কর, ঘুরো আর এঞ্জয় কর। (বাবা)
-লাভ ইউ বাবা। ভাইয়া এমন বাবা পাবি আর? (সায়েম)
-হ্যা তোরই বাবা! (মাহবুবের মন খারাপ হয়ে গেলো)
-কে বলেছে? তোমার বাবা নই আমি?
-আচ্ছা সেসব বাদ দাও। আমায় তো অফিসে জয়েন করতে হবে। চিটাগং ব্যাক করতে হবে তো। (মাহবুব)
-চুপ একদম। তোমরা দুইভাই বউ নিয়ে এখানেই থাকবে। ওই চাকরি ছেড়ে দাও। রেস্ট নাও আরো। বেয়ান ও থাকবে আমাদের সাথেই। বিশ্বাস কর এই দেড় মাসের মতো ভালো সময় আমি আমার জীবনে কাটাই নি। বুঝিনি ছেলের বউদের সেবা কেমন হয়! একবার যখন এই পরিবার জোড়া লেগেছে তো আমি সেইটা ভাঙতে দিবনা। (ছোট মা)
-ছোট মা ঠিক কথা বলেছে। আমিও চাইনা এই পরিবার রেখে একা থাকতে। আমি আমার সন্তানকে একটা সুস্থ পরিবার দিতে চাই যেখানে ও সব পাবে। (নিশি)
-দেখো তোমাদের যা ভাল মনে হয়। (মাহবুব ও মনে মনে চাইছে সবার সাথেই থাকবে)

নিশি ও তুর্নাকে সায়েমের বউ হিসেবে দেখতে চায়। সায়েম অনেক ভালো ছেলে। বোনকে চোখের সামনেই রাখতে চায় নিশি। নিশি আর তুর্না মিলে সবাইকে ডিনার সার্ভ করে দিচ্ছে। নিশি মাহবুবকে বলে,

-আরেকটু ভাত নাও।
-আরে না। রাতে এত খাওয়া যায় নাকি? (মাহবুব)
-ডক্টর কি বলেছে ভুলে গেছো?
-না। বাট এত খাওয়া যায় নাকি তুমিই বলো?
-আচ্ছা শেষ কর।

মাহবুব খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিশির জন্য হেলথ ড্রিংক বানায়। নিশি ঘরে শুয়ে শুয়ে নোবেল পড়ছে। নিশির সামনে হেলথ ড্রিংক এনে দিতেই নিশি ঝটকা মেরে সরে গেলো আর নাক চেপে ধরে আছে।

-প্লিজ এগুলো সরাও। আমি খাব না। আমার বমি আসছে। (নিশি)
-তোমায় খেতেই হবে। একদম না শুনবো না আমি। অনেক অবহেলা করছো নিজের। আজকে থেকে আমি দেখবো নিজেকে কিভাবে অবহেলা কর তুমি! আমার বাবু যে আছে তোমার শরীরে সেইটা ভুলে গেছো তুমি? (খাটের উপর উঠে মাহবুব)
-এতকিছু শুনব না। খাব না আমি ব্যাস!
-দেখা যাক।

মাহবুব নিশির মুখ চেপে ধরে নিশিকে জোর করে খাওয়ায়। নিশির বমি আসছে খাওয়ার পর। নিশি ওয়াশরুমে যাওয়ার আগেই মাহবুবের উপর বমি করে দেয়। মাহবুব নিচে দাঁড়ায় আর নিশিকে বলে,

-তুমি উঠো না। আমি পানি নিয়ে আসছি। (মাহবুব ফ্রেশ হয়ে নিশির জন্য পানি নিয়ে এলো যাতে নিশি মুখ ধুতে পারে)
-স্যরি। (নিশি)
-ফর হোয়াট?
-এই যে তোমার উপর বমি করেছি। বুঝিনি আমি।
-বোকা নাকি তুমি? আমার বউ তুমি, বাইরের কেউ নও। (নিশির মুখ মুছে দিয়ে মাহবুব)

চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *