আমার আমি যে তুমি !! Part- 09
৬ মাস পর…..
রুহি তার কেবিনে বসে কাজ করছিলো,,,হঠাৎ রুহির কেবিনের দরজায় কেউ নক করে,,,রুহি তাকে আসতে বলতেই সে রুহির কাছে এসে তাকে একটা কার্ড ধরিয়ে দেয়,,,,আর বলে,,,
সেঃ শ্রদ্ধেও ডাক্তার রুহি,,,পরশুদিন আমার এঙ্গেজমেন্ট,,,তাই,,,[ বলতে না দিয়ে ]
রুহিঃ কি তোর এঙ্গেজমেন্ট পরশুদিন,,আর তুই আমাকে এখন বলছিস,,,,😠😠
সেঃ তুই তো জানিস,,, আমি একটা কাজে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম,,সেখান থেকে আস্তে দেড়ি হওয়ার কারনে কাউকে তেমন বলতে পারি নি,, আজকে সময় আছে,, তাই এখন তোকে দিতে আসলাম,,,আচ্ছা শুন তুই কালকে আমার বাসায় তোর লাগেজ নিয়ে আসবি,,,মোট ৭ দিন থাকবি আমাদের বাসায়,,,
রুহিঃ কিন্তু রোদ,,,
রোদঃ কোনো কিন্তু না,,,আমি স্যার থেকে আমাদের ২ জনের ছুটি নিয়ে নিবো,,,এখন তোর আসার পালা,,,,
রুহিঃ আমি তোর এংগেজমেন্ট এর সময় আসবো রোদ,,,কালকে পারবো না,,,আমার কালকে একটা মিটিং আছে,, আর সেটা অনেক জরুরি,,,,
রোদঃ না তুই কালকে আসবি,,,
রুহিঃ প্লিজ রোদ,,,
রোদঃ না!!
রুহিঃ প্লিজ,,,,,
রোদঃ আচ্ছা ঠিকাছে,,, কিন্তু তোকে আমার বউভাত পর্যন্ত থাকতে হবে,,,
রুহিঃ আচ্ছা ঠিকাছে,,,
রোদঃ আচ্ছা আমার এখন যেতে হবে,,, তুই কিন্তু আমার এংগেজমেন্টের সময় চলে আসবি,,,,
রুহিঃ হুম,,,,
এরপর রোদ চলে যায়,,, আর রুহি তার কাজ করতে থাকে,,,, অনেক কাজ বাকি রুহির,,, তার একমাত্র বেস্টুর বিয়ে হবে,,,অনেক খুশি খুশি লাগছে তার,,,
রোদ হলো রুহির বেস্ট ফ্রেন্ড,, তবে তাদের দেখা হয়েছে আজ থেকে ৫ মাস আগে,,,, কিভাবে কিভাবে যেন তারা ২ জন ২ জনের সাথে পরিচিত হয়,,, তারপর বন্ধুত্ব হয়ে যায়,,,এখন তারা বেস্ট ফেন্ড,,,,রোদ পেশায় রুহির মতোই একজন ডাক্তার,,, রুহি আর রোদের মধ্যে অনেক মিল আছে,,, যা তাদের বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করে,,,,
,
,
,
,
,
রাত ৮ টা বাজে,,, রুহি তার কাজ শেষ করে মাত্রই হাসপাতাল থেকে বের হয়েছে,,,, বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছে,,, কিন্তু কোনো রিকশাই আজকে পাচ্ছে না রুহি,,,তাই বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করে সে,,,,, হঠাৎ বেখেয়ালি ভাবে হাঁটতে গিয়ে রুহি পায়ে হচট খেয়ে পড়ে যেতে নেয়,,, ঠিক তখনই কেউ একজন রুহির হাত ধরে ফেলে,,,, রুহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়,,,,কিছু অনুভব করতে না পেরে চোখ খুলতেই দেখে,,, একটা ছেলে তার হাত ধরে আছে,,, কিন্তু ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না,,, কারন সে মাক্স পড়ে আছে,,, কিন্তু ছেলেটার চোখ গুলো কেন যানি না,, রুহির অনেক চিনা চিনা লাগছে,,,, হঠাৎ-ই রুহি অস্পষ্ট ভাবে বলে উঠে,,,
রুহিঃ রুহান,,,,
রুহির কথা হয়তো ছেলেটা শুনেছিল,,,ছেলেটার চোখ দেখে মনে হচ্ছিল সে হাসছে,,, রুহিকে সোজা করে দাড় করিয়ে তাকে কিছু বলতে না দিয়েই ছেলেটা সেখান থেকে চলে যায়,,,,
আর রুহি হাবলার মতো করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষন,,,, ” আচ্ছা ও-ই ছেলেটা কি রুহান ছিল,,,হয়তো না,, ও কোথা থেকে আসবে,,,কিন্তু কেন যানি মনে হলো……দূর কি ভাবছিআমি,,,এসব ফালতু ভাবনা বাদ দিয়ে বাসায় যেয়ে রেস্ট নিতে হবে আমার,,কালকে বহুত কাজ আছে,, তারপর আবার রোদের এংগেজমেন্ট এর জন্য ওদের বাসায় যেতে হবে,,, উফফফ,,,,”
তারপর রুহি অনেক কষ্টে একটা রিকশা জোগার করে বাসায় চলে যায়,,,,
.
.
.
.
.
.
.
পরেরদিন সকালে রুহি নিজের সকল কাজ শেষ করে রাতের দিকে নিজের সব পেকিং শেষ করে,,, কালকে বিকেলের দিকে তাকে রোদ এর বাসায় যেতে হবে,,,তাই ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,,,,
তারপরে আসে রোদের এংগেজমেন্ট এর দিন,,,, রুহির কথা ছিল রোদের বাসায় বিকেলের দিকে যাওয়ার,, কিন্তু হঠাৎ ই রুহির একটা কাজ পড়ে যায়,,,একজন বৃদ্ধ মহিলার চেকআপ করতে হয় তার,,,তাই সে বিকেলের দিকে রোদের বাসায় যেতে পারে নি,,,একেবারে রেডি হয়ে সন্ধ্যার দিকে রোদের বাসায় যায়,,,,সেখানে গিয়ে রুহি যেন থমকে যায়,,,অনেক সুন্দর আর বিশাল বড় বাড়ি রোদদের,,,সেখানেই এংগেজমেন্ট হবে রোদের,,,
রুহি কিছুক্ষন বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থেকে গেটের ভিতরে ডুকে,,,অবাক করা বিষয় হলো,,,রুহি রোদের বাড়িতে ঢুকতেই রোদের মা তাকে জড়িয়ে ধরে,,,রুহি রোদের মাকে ছবিতে দেখলেও সামনাসামনি কখনও দেখেনি,, তাহলে এভাবে জড়িয়ে ধরলেন কেন তিনি তা রুহি বুঝতে পারছে না,,,, রুহি কিছু বলতে যাবে,,, তার আগেই তিনি বলে উঠে,,,,
রোদেত মাঃ কেমন আছো রুহি,,,??[ অমায়িক একটা হাসি দিয়ে ]
রুহিঃ জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি,,আচ্ছা আন্টি আপনি কি আমাকে চিনেন,,না মানে আমাদের কখনও তো দেখা হয়নি,,,
রোদের মাঃ আমি তোমাকে ছবিতে দেখেছি মা,,রোদের কাছে তোমার ব্যপারে অনেক কিছু শুনেছি,,,
রুহিঃ ও,,,[ মুচকি হেসে ]
রোদের মাঃ আচ্ছা চলো,,,তোমার রুম দেখিয়ে দি,,,তুমি ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি আসো,,,রোদকে আবার আংটি পড়ানো হবে,,,তোমার জন্যই এতক্ষন আমরা অপেক্ষা করছিলাম,,,,
উনার কথা শুনে রুহি অনেকটা অবাক হয়,,,” আমি কে উনাদের,,,আমার জন্য কেন অপেক্ষা করছেন তারা,,,??,,, ”
রোদের মাঃ রুহি মা,, আসো তাড়াতাড়ি,,,পরে দেড়ি হয়ে যাবে,,,
রুহিঃ আন্টি আপনারা অনুষ্ঠান শুরু করেন,, আমি তো রেডিই আছি,,,
রোদের মাঃ রুহি মা,,,আমরা তো তোমার জন্য একটা গাউন কিনে রেখেছি,,,এখন যদি তুমি ওটা না পড়ো,, তাহলে আমরা কিন্তু রাগ করব,,,
রোদের মার কথা রুহি কিচ্ছু বুঝতে পারছে না,,সে তো একজন পর,,তাহলে এত যত্ন কেন নিচ্ছে তারা,,সব কিছু কেমন ঝাপ্সা লাগছে রুহির,,,ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রোদের মার জোড়াজোড়িতে রুহির গাউনটা পড়তে হয়,,,হালকা সেজে রেডি হয়ে যায় রুহি,,,রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখে স্টেজের দিকে অনেক ভীর,,,হয়তো আংটি পড়ানো হচ্ছে,,,রুহি আগ্রহ নিয়ে স্টেজের কাছে যেতেই তার মাথায় বাজ ভেংগে পড়ে,,,
কারন রোদ সাহেলকে আংটি পড়াছে,,, আর সাহেল রোদকে,,,তার চেয়েও অবাক করা বিষয় হলো সাহেল আর রোদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে রুহান,,,,রুহির দিকেই তাকিয়ে বাঁকা হাসছে সে,,,,
এসব দেখে রুহি নিজেকে সামলাতে পারছে না,, অজানা এক কৌতূহল কাজ করছে তার,,স্টেজের কাছে যেতে নিবে তার আগেই রোদের মা রুহির হাত ধরে তাকে উনাদের আত্বিয়দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে,,যেন রুহি তাদেরই মেয়ে,,,!!
রুহি অনেক কষ্টে রোদের মার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে এদিক ওদিক রুহানকে খুঁজতে থাকে,, হঠাৎ কেউ পেছন থেকে বলে উঠে,,,
—-আমাকে খুঁজছ বুঝি জান,,,
রুহি পেছনে ফিরতেই দেখে রুহান দাঁড়িয়ে আছে,,,কেমন যেন এক ভয় কাজ করা শুরু করে রুহির মাঝে,,,,,আবার কেমন যেন মুগ্ধতাও কাজ করছে রুহির,,,আগের থেকেও বেশি সুন্দর হয়ম্যে গেছে রুহান,,,অনেক সুন্দর লাগছে তাকে,,,
রুহানঃ আমি জানি আমি সুন্দর জান,,যদি চাও আমাকে নানা ভাবে টেস্ট করতে পারো,,কিন্তু এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছ কেন,,,?? [ বাঁকা হেসে ]
,,” অসভ্য,, তুই সুন্দর হইলে কি হইসে,,তুই জীবনেও সুধরাইতি না,,, ”
প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রুহির রুহানের উপর,,,তবে তা এখন দমিয়ে নিজের কৌতূহল মিটানোর জন্য কিছু বলতে যাবে,, তার আগেই রুহান রুহির হাত ধরে সবার আড়ালে একটা রুমে নিয়ে যায়,,,
রুহিঃ আপনি এখানে কিভাবে,,,??😠😠
রুহানঃ গুন্ডারা তো সব জায়গায় থাকে,,,তাই না😏😏
রুহিঃ আপনি গুন্ডা না মাফিয়া,,এখন বলুন আপনি এখানে কিভাবে,,,,??
রুহানঃ গুন্ডা আর মাফিয়া কি আলাদা,,,🤨🤨
রুহিঃ হুম,,যেমন লেবুর সরবত ১০ টাকা আর লেমন জ্যুস ৫০ টাকা তেমন,,,,,এখন যা জিজ্ঞেস করছি,, তার উত্তর দিন,,,,
রুহানঃ কি জিজ্ঞেস করেছিলে যেন,,,?? 🤔🤔
রুহিঃ আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন,,,??
রুহানঃ আমি এখানে [ কিছুক্ষন ভেবে ] মনে নেই,,,কিভাবে যেন এসেগেছি,,,,😏😏
রুহিঃ উফফফ,,,,বলুন,,!!
রুহির কথা শেষ হওয়ার আগেই রুহান রুহির গালে একটা চুমু দেয়,,,তারপর বাঁকা হেসে সেখান থেকে চলে যায়,,,
এদিকে রুহি কিছুক্ষন দম মেরে দাড়িয়ে থাকে,,,,পরক্ষনে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ এখানে আছে কিনা,,,” না কেউ নেই,,আল্লাহ জানে এ গুন্ডাটা এখানে কিভাবে এসেছে,, আমার জীবনটাই শেষ করে দিবে এখন,,,আচ্ছা ওয়েট,, রুহান হয়তো সাহেলের সাথে এসেছে,,, কারন সাহেল তো রুহানের ফ্রেন্ড আর সাহেলের সাথেই তো রোদের বিয়ে হচ্ছে,,,কিন্তু তাও একটা প্রশ্ন রয়ে যায়,,,তার উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না,, আর এর উত্তর শুধু আমাকে রুহান দিতে পারবে,,কিন্তু উনি গেল কই,,,??”
ভেবেই রুহি তাড়াতাড়ি রুমটার থেকে বের হয়ে নিচে আসে,,তারপর এদিক সেদিক রুহানকে খু্ঁজতে থাকে কিন্তু পায় না,,,,
প্রায় অনেক্ষন পরও যখন রুহি রুহানকে পায় না,, তখন সে সাহেলের কাছে স্টেজে যায়,,,কিছু প্রশ্নের উত্তর নিতে,,,কিন্তু কপাল,,যখনই কিছু বলতে যায়,,,তখনই রোদ আটকিয়ে দেয় তাকে,,,আর রুহি বেশ বুঝতে পারছে সাহেল তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না,, হয়তো উত্তরগুলো সে দিতে চায় না,,,,
ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে রুহি,,,কিছুক্ষন আগেই অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে,, আর সবাই যার যার রুমে চলে এসেছে,,,কিন্তু রুহি এখনো রুহানকে খুঁজে পাই নি,,যা রুহির জন্য অত্তন্ত কষ্ট দায়ক,,,কারন সে তার প্রশ্নের উত্তর পাই নি,,যার ফলে তার কৌতূহল এখনও রয়ে গেছে,,, আর এতে তার আর ঘুম আসবে না,, হয়তো সারারাত জেগেই কাটাতে হবে তার,,,,
হঠাৎ রুহির মনে হলো তার রুমের দরজায় কেউ টোকা দিচ্ছে,, দরজা খুলতেই আচকা কেউ তার হাত ধরে কোথাও যেন নিয়ে যাচ্ছে,,,,
,
,
,
,
,
,
#চলবে🌸🌸