মিঃ নিরামিষ

মিঃ নিরামিষ !! Part- 13

তুলি-যান এখান থেকে,!!!
নিবিড় হাসতে হাসতে চলে গেলো,,
তুলি নিবিড়ের আলমারি খুলে নিজের সব জামা কাপড় রাখতে লাগলো,,
একটা ডায়রি এসে তুলির পায়ের উপর পড়লো,,
তুলি ডায়রিটা হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ ভালো করে দেখলো,,লক ডায়রি,,চাবি কই
তুলি ডায়রিটা লুকিয়ে ফেললো,পরে চাবি খুঁজে দেখবে
নিবিড়ের সব জামা আয়রন করা,আলমারি একদম গুছানো,তুলি হা করে দেখতেছে সব,,ড্রয়ারে ৫হাজার টাকা পেলো,,
তুলি-হুহ বলদ,টাকা যেখানে সেখানে রেখে দেয়,
তুলি আলমারি লক করে রান্নাঘরে গেলো
মা-কিরে,,কিছু লাগবে?
তুলি-আমি রান্না করবো
মা-আরে লাগবে না,আমি আর বুয়া করে নিব,
তুলি-সরো তো,আমি বিরিয়ানি রাঁধবো,,খেতে ইচ্ছে করতেছে
মা-পারিস?
তুলি-খেলেই বুঝবা☺
মা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো
তুলির কাজে আবার স্পিড আছে,নিমিষেই দুপুর ২টোর আগে সব বানিয়ে রেডি করে ফেললো
নিবিড় ২টায় বাসায় আসলো
তুলি খাটে বসে আপেল খাচ্ছে আর কার্টুন দেখতেছে
নিবিড় মুচকি হেসে ব্যাগ রেখে fresh হতে চললো,
তুলি-এই যে শুনুন
নিবিড়-বলো
তুলি-যেখানে সেখানে টাকা রাখেন আবার লক ও করেন না
নিবিড়-টাকা গুলো তোমার জন্য রেখেছি,তোমার লাগলে ওখান থেকে নিবা
তুলি-লাগবে না,আপনার টাকা আপনার কাছে রাখেন
নিবিড় জামা নিয়ে চলে গেলো
ডাইনিংয়ে এসে বিরিয়ানি দেখে নিবিড় খুশি হয়ে গেলো
নিবিড়-আমার আজ বিরিয়ানি খেতে খুব মন চাচ্ছিল,,তুমি জানতে মা??
মা-আরে না রে তুলি রান্না করছে,,ওর নাকি খেতে মন চাচ্ছিল
তুলি রুম থেকে উঁকি মেরে দেখতেছে,উফ খুধায় পেট জ্বালা করতেছে কখন খাবে তারপর আমি খাব
নিবিড় জানে তুলি আরও আগে দুপুরের ভাত খায়,আর আজ এখনও খায়নি,নিশ্চয় ওর খুব খুধা পেয়েছে
নিবিড়-মা বসো একসাথে খাব সবাই
মা-তোর বাবা তো আসেনি এখনও
নিবিড়-বাবার আসতে আজকে রাত হবে,আমাকে বলেছে,
নিরবকে বলো আসতে,,
মা-তুলি, নিরব খেতে আয় তোরা
তুলি এক দৌড়ে প্লেট নিয়ে হাজির
নিবিড় বিরিয়ানি নিয়ে মুখে দিয়ে চোখ বড়বড় করে তাকালো
তুলি সেদিকে তাকাচ্ছে না,খিধায় খেয়েই যাচ্ছে
মা-কিরে?ঝাল বেশি?
নিবিড়-বাহ অনেক মজা হইসে,একদম হোটেলের মতো
তুলি-হুহ,,কি বলেছিলাম মা?এবার তুমি খেয়ে বলো
মা ও খেয়ে অনেক প্রশংসা করলো,,নিরব তো বলেছে ভাবীর restaurant দেওয়া উচিত,,ব্যবসা ভালো হবে
খাওয়া শেষ নিবিড় এক বাটি লেবু কুচি নিয়ে খাটে এসে বসলো
তুলি-কি করবেন?গা মাজবেন?
নিবিড়-নাহ,খাব
তুলি-বাপরে, মরে যাবেন এসব খেলে
নিবিড়-আমার অভ্যাস আছে
নিবিড় অনেক সুন্দর করে লবন মরিচ ছাড়াই লেবু খাচ্ছে কোনো expression ছাড়াই
তুলি নিবিড়ের খাওয়া দেখে এক পিস নিয়ে মুখে দিলো
থু থু করতে করতে গিয়ে চিনি মুখে দিলো
নিবিড়-সবার দ্বারা সব কিছু হয় না
তুলি-যেমন আপনি চশমা ছাড়া ২কে ৬দেখেন😂😂😂
নিবিড়-😒
নিবিড় কাঁথা টেনে শুয়ে পড়লো,তার আগে বললো তুলি যেন বিকাল ৪টায় পড়তে বসে
তুলি উঁকি মেরে দেখলো নিবিড় ঘুমিয়ে গেছে
তুলি-হুহ আমার তো জীবনে দুপুরে ঘুম আসে না😒এখন কি করবো, ওহ হ্যাঁ ঐ ডায়রি টার চাবি খুঁজবো
তুলি নিবিড়ের মানিব্যাগ টা নিয়ে ভালো করে চেক করলো,, পেলো না,,হঠাৎ নিবিড়ের ফোনের দিকে তাকিয়ে তুলির চোখ আটকে গেলো,ফোনের মধ্যে কভারে ডিজাইন আকারে একটা চাবি আটকানো
তুলি-এটা হয়ত ঐ ডায়রিটার চাবি হতে পারে
তুলি আস্তে করে ফোনটা নিয়ে চাবিটা খুলে নিলো,
চুপিচুপি ডায়রিটা বের করে চাবি দিয়ে খুললো,,ওমা এ দেখি গরুর রচনা,কতদিনে পড়ে শেষ করবো,,
তুলি-যা বুঝলাম সব exকে নিয়ে লিখেছে,,
তুলি-এই নিরামিষের আবার ex ও ছিল,বাহ
তুলি ডায়রিটা নিয়ে এক দৌড়ে ছাদে চলে গেলো
নিচে বসে ডায়রিটা পড়া শুরু করলো
♥তুমু ♪জানি তুমি এখন ভালো আছো,,আমি ভালো নেই,,প্রতিদিনের সকালের সেই ঘ্রানটা আমায় বারবার তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়,কারন এই সময়টাই আমি প্রথম তোমায় দেখেছিলাম,,আজও মনে আছে তুমি দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছিলে,,আমি ছিলাম বারান্দায়,,সকালবেলা গেটের পাশের কুকুর দৌড়ানি দিসিলো তোমায়,তুমি ভয়ে দৌড়াচ্ছিলে,,এমন করে ২/৩দিন দেখতাম তুমি সবসময় কুকুর গুলার দৌড়ানি খেতা,একদিন আমি তোমাকে ঐ কুকুর গুলো থেকে সেভ করেছিলাম,,
তুলি-ওরে সাবানা,ভিতরে ভিতরে এত????😱
♥তারপর থেকে শুরু হয় আমাদের আলাপ,,মিষ্টি আলাপ,তখন আমি অনার্সে পড়ুয়া ছাত্র ছিলাম,,তুমি ছিলে আমার ১বছরের জুনিয়র,,কত স্বপ্ন বুনেছিলাম তোমাকে নিয়ে,,তা আর পূরন হলো না,,বিধাতা হতে দিলো না,,কি দোষ করেছিলাম,,আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসতাম,আমি মুখ ফুটে বলতে পারিনি,তুমিও বলোনি কোনোদিন,, কিন্তু আমাদের মন জানত আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি♥
তুলি-আহা উতলাই পড়ে ভালোবাসা,তাহলে আমাকে জোর করে বিয়ে করার কি দরকার ছিলো,,যত্তসব,,😈
রাস্তা দিয়ে একটা রিকসা গেলো মাইকিং করতে করতে,সেটার আওয়াজে নিবিড়ের ঘুম ভেঙে গেলো,৩টা বাজে,,তুলি পাশে নেই,,এই দুপুরে গেলো কই
নিবিড় উঠে ফোনটা হাতে নিতেই ওর গা শিউরে উঠলো,কভারে চাবিটা নেই,নিবিড়ের বুঝতে বাকি নেই যে তুলি ডায়রিটা পড়তেছে
নিবিড় চশমা নিয়ে রুম থেকে বের হলো,বুয়া বললো তুলি ছাদে
♥তোমাকে আমি রজনীগন্ধা কিনে দিতাম প্রতিদিন,কারন তোমার অনেক প্রিয় ছিল,,তোমার কি এসব দিনের কথা মনে পড়ে?আমার তো অনেক মনে পড়ে,,তোমার হাত ধরে হাঁটা তো হলো,কিন্তু কেন সারাজীবনের জন্য ধরতে পারলাম না
তুলি-পারবি কি করে,আমারে জোর করে বিয়ে করার ধান্দা ছিল তোর,😈😈😈😈
নিবিড় তখনই ডায়রিটা নিয়ে নিলো তুলির হাত থেকে
তুলি-কি?আমি পড়লে কোনো সমস্যা??
নিবিড়-হ্যাঁ,পড়ার দরকার নেই
তুলি-ভিতরে ভিতরে তো অনেক কিছুই করেছেন,তা আমাকে জোর করে বিয়ে করার মানেটা বুঝাই দিবেন??
নিবিড়-সেটা আমার অতীত ছিল
তুলি-তো?ডায়রিতে তো লিখা আছে অনেক ভালোবাসতেন,তাহলে নাই কেন??মেয়ের বিয়ে হয়ে গেসে,এখন নিশ্চয় বাবু ও আছে??
সামান্য বিয়ে আটকাতে পারলেন না,কেমন ভালোবাসতেন,shame of you
নিবিড়ের চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে নিচে পড়লো
তুলির কথা সাথে সাথে থেমে গেলো
নিবিড়-সত্যিই আমি নির্বোধ!
নিবিড় চলে গেলো কথাটা বলে
তুলি-বেশি বলে ফেললাম নাকি,আরে মেয়েটাকেই তো দেখা হলো না
তুলি নিবিড়ের পিছন পিছন আসলো
তুলি-আমি আপনার গফরে দেখবো
নিবিড়-ওর ছবি নেই আমার কাছে
তুলি-মিথ্যা বলেন কেন,আর আপনি এত বড় কথা আমার থেকে লুকিয়েছেন কেন?
নিবিড়-অতীত তাই বলা প্রয়োজন মনে করিনি,
তুলি-আমি আপনার মাকে বলে দিব,আপনি আমাকে চিট করেছেন
তুলি হনহনিয়ে গেলো মায়ের রুমে,
মা-কিরে তুলি,আয় বস
তুলি-মা তুমু কে?
তুমু নাম শুনে মায়ের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,,
তুলি-আমাকে ধোকা দিসে তোমার ছেলে😭😭😭
মা-না রে ও এমন নয়
তুলি-তাহলে তুমু কে বলো?,তুমি চিনো না?
মা-আসলে তুমু।।।।।।।
নিবিড় ইশারা করলো মাকে,চুপ থাকার জন্য
মা-চিনি না,কে?
তুলি-ওও,চিনো না
তুলি আবার নিবিড়ের কাছে গেলো
তুলি-ডায়রি দিন আমি পড়বো
নিবিড়-না,বই নিয়ে বসো
তুলি-আগে ডায়রি
নিবিড় রেগে তুলির চুলের মুঠি ধরে টান দিলো,
নিবিড়-কথা কানে যায় না তোমার??
তুলি কাঁদতে কাঁদতে নিবিড়ের হাত ছাড়ালো
তুলি-ex এর উপরের রাগ আমার উপর দিয়ে ঝাড়েন কেন,stupid, পড়বো না আমি কি করবেন??
নিবিড় আবার তুলির চুলের মুঠি ধরে টান দিলো
তুলি রেগে চুল ছাড়িয়ে নিবিড়কে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো
নিবিড় গিয়ে সোজা ফ্লোরে পড়লো
চলবে♥

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *