রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৭
জান্নাতুল ফেরদৌস
“কতটা বছর অপেক্ষা করেছেন!মানে?”
“কিছু না,তুমি বুঝবে না।”
“(আজব না বুঝালে কি করে বুঝবো)”
“সময় আসলে বুঝবে,এখন না বুঝলেও চলবে।”
রাতে,
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৬
বাসায় এসে উনার কথাগুলো ভাবলাম।
উনার কথাগুলো শুনে মনে হল উনিও
আমাকে ভালবাসেন।কিন্তু কই কখনো তো
এই কথাটা উনি নিজের মুখে বলেননি
যে,উনিও আমাকে ভালবাসেন।যদি
একটাবার আমার কাছে এসে এই কথাটা
বলতেন তাহলে…. হয়ত উনাকেও আমি
আমার মনের কথাটা বলতে পারতাম।
“এটা তোমার জন্য,”
“কি এটা”
“বক্স খুলে দেখ”
“মোবাইল!”
“হুম এখন থেকে কোন সমস্যা হলে আমাকে
কল দিতে পারবে”
“থ্যাংকস আপনাকে”
.
.
ইশ এখনি কারেন্ট চলে গেল।খুব গরম
লাগছে।
“মেঘ একটা কাজ করি চল আজকে ছাদে
গিয়ে গল্প করি।তুমি দুইটা বালিশ,আর
চাদর নিয়ে আসো।আজকে ছাদে গিয়ে
আকাশের চাঁদ তারা দেখে দেখে গল্প
করবো।”
“হুম ভালো আইডিয়া।”
তারপর ছাদে গিয়ে সেখানে বালিশ আর
চাদর বিছিয়ে দুইজনে সেখানে শুয়ে
গেলাম।বাহ কি সুন্দর বাতাস বইছে আর
তার সাথেতো আছে আকাশের চাঁদ
তারা।
“মেঘ আকাশের এই তারাগুলো দেখে
তোমার কি মনে হয়?”
“কিছুই মনে হয় না।আপনার কি কিছু মনে
হয়।”
“হুম অনেককিছু।খুব অল্পবয়সে যখন বাবা
আর আমার ছোট বোনটাকে হারায় তখন
আমার সমবয়সীরা,আমার মা প্রায় বলত
ওরা নাকি আকাশের তারা হয়ে গেছে।
এত তারাদের মধ্যে কোন তারাটা যে
আমার বাবা আর বোন সেটা খুঁজে
বেড়ায়।জানি এইসব কথা আমাকে তখন শুধু
সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলত।কিন্তু এখন
কেন জানি মনে হয় আমার বাবা,বোন এত
তারাদের ভীড়ে কোন এক তারা হয়ে
আছেন।আর হয়ত আমাকে সেখান থেকে
দেখছেন।মাঝে মাঝে খুব চেষ্টা করি
তাদেরকে এই তারাদের ভিতর থেকে বের
করতে।”
“আপনার বোনও ছিল!?”
“হ্যা,”
“আপনার বাবা আর বোনকে খুব
ভালবাসতেন তাই না?”
.
.
“হুম খুব ভালবাসতাম।জানো আজকে
তোমাকে কিছু গোপন কথা বলতে ইচ্ছে
করছে।
আমার মা বাবা একে অপরকে খুব
ভালবাসতেন।আমার মা রক্ষণশীল
পরিবারের মেয়ে ছিলো তাই মায়ের
পরিবার আমার বাবা আর মায়ের
সম্পর্কটা মেনে নেয়নি।মায়ের পরিবার
অন্য আরেক জায়গায় তার বিয়ে ঠিক
করে।কিন্তু আমার মা বাবা একে অপরকে
খুব ভালবাসতেন।এই বিয়ে মায়ের পক্ষে
মেনে নেওয়া যেমন সম্ভব ছিলো না ঠিক
তেমনি আমার বাবারো।তাই তারা
সিদ্ধান্ত নেয় ওরা পালিয়ে বিয়ে করবে।
বিয়ের পর বাবা যখন মাকে নিয়ে বাবার
বাড়িতে যায় বাবার পরিবারো এই
বিয়েটা মেনে নেয়নি।বরং বাবাকে
ত্যাজ্যপুত্র করে দেয় কারণ তারা
জানিয়ে দিয়েছিলো হয় এই মেয়েকে
ছাড়তে হবে আর নাহয় তাকে ত্যাজ্যপুত্র
করা হবে।বাবা এই অবস্থায় মাকে
ছাড়তে পারেনি তাই মাকে নিয়ে সেখান
থেকে চলে আসে।
এরপর তারা তাদের স্বপ্নের সংসারটা
চালাতে থাকে।এর ২বছর পর আমি হয়।আর
বাবা আস্তে আস্তে এর কয়েকবছর পর
নিজের কষ্টের অর্থ দিয়ে একটু একটু করে
বাড়ি বানায়।ভালোই চলছিলো সব কিছু।
এর কয়েকবছর পর আমার ছোট বোন আসে।
ছোট্ট একটা পুতুল লাগতো ওকে।এই ছোট
পুতুলকে নিয়ে খেলতাম সারাদিন।কিন্তু
আমাদের কপালে এই সুখ বেশিদিন
টিকলো না।কারণ কয়েকবছর পর আমার
বাবা আর এর পরপরি আমার ছোট বোনটা
আমাদের ফেলে চলে যায়। খুব
ভালবাসতাম ওদের।এইভাবে আমার
ভালবাসার আপন মানুষগুলো আমাকে
ছেড়ে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি।
বর্তমানে আমার আপনজন বলতে শুধু আমার
মা আর তুমি।”
.
.
এরপর হঠাৎ করে উনি আমাকে শক্ত করে
জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখলেন।
“মেঘ বিশ্বাস করো ওইদিন আমি
তোমাকে ইচ্ছা করে থাপ্পড় মারতে চায়
নি।আমি তোমাকে বলে গিয়েছিলাম
গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতে আর তুমি ও হ্যা
বলেছো।তাই ক্লাস শেষ করে সেখানে
তোমার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টার পর
অপেক্ষা করার পরও যখন তোমার আসার
কোন হদিস পেলাম না খুব ভয় পেয়ে
গিয়েছিলাম।মনে হল এই বুঝি তোমাকে
হারিয়ে ফেলেছি।জানো কি পরিমাণ
ভয়,দুশ্চিন্তা আর খারাপ ভাবনা আমাকে
যন্ত্রণা দিচ্ছিল তা তোমাকে বলে
বুঝাতে পারবোনা। তোমার কাছে যে
মোবাইল নেই সেটা পরে মনে পড়ল। কি
করবো বুঝতে পারছিলাম না তখন।আর
তোমার বান্ধবী তাসপিয়ার নম্বরও আমার
কাছে নেই।হঠাৎ মনে হল তুমি বাসায় যাও
নিতো।তাই তড়িঘড়ি করে বাসায় এসে
পৌঁছলাম।বাসায় এসে তোমাকে দেখে
অনেক শান্তি পেলাম যে তোমাকে আমি
হারায়নি।তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়ে
গেলাম আর পরক্ষণেই তোমার ওই ভুল
কাজের কথা মনে পড়ে আমার রাগ উঠে
গেল।রাগ সামলাতে না পেরে সেদিন
তোমাকে আমি থাপ্পড় দিয়ে দিলাম।
তোমাকে থাপ্পড় মারাতে যতটা না তুমি
ব্যথা আর আঘাত পেয়েছ তার থেকেও
অনেক বেশি ব্যথা আমার বুকে এসে
লেগেছে।ভিতরে ভিতরে কি পরিমাণ
কষ্ট পাচ্ছিলাম তা তোমাকে দেখাতে
পারছিলাম না।”
.
.
বউ আমি জানি আমার রাগ যখন নিজের
কন্ট্রোলে থাকে না তখন কি করে ফেলি
আমি নিজেও জানি না।শুধু যাদেরকে
আপন ভাবি তাদেরকে আঘাত করে ফেলি।
মাঝেমাঝে আমার খুব ভয় হয় জানো?শুধু
মনে হয় আমার এই রাগ আর কড়া কথা শুনে
তুমি কোনদিন না আমাকে ভুল বুঝে
আমাকে ছেড়ে চলে যাও।বউ আমি যেমনি
হই না কেন প্লিজ আমাকে ছেড়ে কখনো
চলে যেও না।
.
.
বুঝতে পারছি কথাগুলো বলার সময় উনার
গলা ধরে আসছিলো।কান্নাও করছেন
সেটা বুঝতে পারছি কারণ উনার চোখের
পানিতে আমার গলা ভিজে যাচ্ছে।
অনেক চাপাস্বভাবের মানুষ উনি এতদিন
উনার সাথে থেকে তা বুঝে গেছি। “সরি”
সামান্য একটা শব্দ বলতে যে মানুষটার
ইগোতে অনেক লাগে আজ সেই মানুষটা
নিজের গোপন কথাগুলো এইভাবে আমার
সামনে প্রকাশ করবে,আর সেই ভুলের জন্য
গোপনে কাঁদবে আমি তা ভাবতেই
পারিনি।
.
.
মুখটা উপরে তুলে উনি বলতে শুরু করলেন বউ
প্রমিস করো আমাকে না বলে আর
কোথাও যাবে না।এই ভুল আর দ্বিতীয়বার
করবে না।কোথাও গেলে আমাকে অবশ্যই
জানাবে।
মাকে অনেক বলেছিলাম এখানে থাকতে
কিন্তু উনি থাকেননি।বাবার বাড়িতে
উনার প্রাণ পড়ে আছে তাই সেখানে
তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।এই বাসায় এখন
আমার সাথে একমাত্র তুমি আছো।
তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত
আমার কাছে অনেক স্মরণীয়।বাসার
বারান্দায় তোমার আর আমার আমাদের
অনেক স্মৃতি জমে আছে।আচ্ছা তুমি
চাইলে কি সে স্মৃতিগুলো মুছে ফেলতে
পারবে?আমি কোনদিনও সে স্মৃতিগুলো
ভুলতে পারবো না।ওইদিনগুলো যখনি মনে
পড়ে নিজেকে অনেক সুখী মনে হয়।মনে
হয় আমার সবকিছুতে তুমি জুড়ে আছো।
নিজেকে তখন আর একা লাগে না।
এরপর উনি আমার ডান গালের কাছে এসে
সেখানে চুমো দিলেন।আমাকে ভুল বুঝে
কখনো ছেড়ে চলে যেও না প্লিজ।তাহলে
বড্ড একা হয়ে যাবো আমি।
.
.
“হ্যা আপনাকে ছেড়ে কখনো যাবো না।
এবার ঘুমিয়ে যান।”আমার এই কথায় মনে
হল যেন তিনি তার প্রাণ ফিরে
পেয়েছেন।
“হুম,আমার লক্ষ্মী বউ “বলে আমার কপালে
ভালাবাসার স্পর্শ দিলেন।
আজকে নিজের থেকেও অনেক হাল্কা
লাগছে।দিন দিন উনাকে যতই দেখছি ততই
অবাক হচ্ছি।এই লোকটার ভিতরের মনটা
যে এত কোমল উনার সাথে না থাকলে না
মিশলে বুঝতে পারতাম না।
.
.
সকালে,,
প্রতিদিনকার মতন আজকেও ভার্সিটি
গেলাম।আজকে তেমন ক্লাস নেই।মাত্র
৩টা ক্লাস ছিলো।তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ
হয়ে যাওয়ার পর আমি আর তাসপিয়া গল্প
করতে করতে গেইটের বাইরে চলে
আসলাম।
“এই মেঘ কি খবর,”(সাব্বির)
“এইতো ভালো,”
“চলো না আজকে কোথাও থেকে ঘুরে
আসি,তাসপিয়া তুমিও চলো। ২জনকে
আজকে আমি খাওয়াবো,”(সাব্বির)
“না, না তা লাগবে না,আমি এখন বাসায়
চলে যাব।”
“মেঘ তুই এমন করছিস কেন?চল না একটু ঘুরে
আসি।দোস্ত আমার দিকটাও বুঝার চেষ্টা
কর।”(তাসপিয়া)
আমি তাসপিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে
আছি।বেচারি, সাব্বিরের সাথে থাকার
জন্য এখন ও আমাকে টানছে।সাব্বিরের
প্রেমে পুরা দিওয়ানা।
“আচ্ছা চল,”
“থ্যাংকস দোস্ত,,”(তাসপিয়া)
“তাহলে চলো,”(সাব্বির)
ওদের সাথে ঘুরাঘুরি করার পর ভার্সিটির
গেইটে চলে আসলাম।এখনি উনি বের
হবেন।
“এই তো মেঘ কোথায় ছিলে?ক্লাসে তো
তোমাকে দেখলাম না।”
“আমাদের তো আজকে তিনটা ক্লাস
ছিলো।তাই ক্লাস শেষ করে ফ্রেন্ডদের
সাথে ঘুরতে গেলাম।”
“ও…তাই নাকি?ভালো।চলো বাসায়
যাওয়া যাক”
হুম”
রাতে,,
উফ ম্যাথগুলো কি কঠিন। মাথা ব্যথা
করছে খুব।মাথার চুল ধরে অনেকক্ষণ বসে
আছি।
“কি ব্যাপার মেঘ,কি হয়েছে?”
“মাথা ব্যথা করছে”
“আসো মাথায় তেল দিয়ে দিই।মাথা
ব্যথা সেরে যাবে।”
“না লাগবে না।”
“লাগবে, বেশ লাগবে।চলো বলছি,,”
উনি কি সুন্দর করে মাথায় তেল দিয়ে
দিচ্ছেন।সাথে দুইটা বেনিও করে দিলেন।
নাও দুই বেনি করে দিলাম এই বলে আমার
এক বেণী ধরে টান দিলেন আর বললেন
গুলোমুলো মিষ্টি লাগছে।
উনার কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে
দিলাম।
“জানেন আপনার এই কথা শুনে আমার
একটা ছেলের কথা মনে পড়ে গেল।”
“কি! কোন ছেলে আবার?”
“আমি যখন ক্লাসে এইটে পড়তাম তখন তো
গ্রামের বাড়িতে থাকতাম।তখন একটা
ছেলে আমাকে ঠিক একিভাবে আমার এক
বেণী ধরে টেনে আমাকে গুলোমুলো
মিষ্টি বলেছিলো”
“তাই নাকি?তা ছেলেটা কে?তোমাকে
এই কথা কেন বলেছিলো”
“ওকে তো আমি চিনি না।তবে কোন না
কোনভাবে কিভাবে জানি ওর সাথে
দেখা হয়ে যেত। আসলে ওইদিন আমাকে
শাস্তি দেওয়া…ইশ কি বলে ফেললাম,”
“শাস্তি!কিসের শাস্তি!”
“না কিছু না,”
“দেখো আমাকে পুরো ঘটনা জানতে হবে।
নাহলে খুব অস্বস্তি লাগবে।তোমাকে
কেন শাস্তি দিয়েছিলো।নিশ্চয় তুমি
কিছু করেছ”
“না, আমি তেমন কিছু করে নি তো।
আসলে…আমি কলা খেয়ে কলার ছোলকা
রাস্তায় ফেলে দিয়ে বান্ধবীদের সাথে
কথা বলছিলাম।আর তখনি ওই ছেলেটা
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে কলার
ছোলকার সাথে পিচলিয়ে পড়ে যায় ।আর
এটা দেখে আমরা সবাই হাসতে হাসতে
শেষ। এরপর খেয়াল করি ওই ছেলেটা
রেগে আমার দিকে আসছে।আমি ভয়ে
দৌড় দিয়ে পালাতে গেলে সে আমাকে
ধরে ফেলে। এরপর সে রাগে আমাকে
৫০বার কান…”
“কান উঠ বস করিয়েছে”
“হ্যা(মাথা নিচু করে)।আর এরপরেই সে
আমার বেণী ধরে টেনে এই কথাগুলো
বলেছিলো।কিন্তু আমিও কম যায় না হুম।
একদিন ওই ছেলেটার দেখা আমি
পেয়েছিলাম।আমাদের বাড়ি থেকে ওর
বাড়ির রাস্তা ৩০ মিনিটের।বান্ধবীর
বাসায় এসেছিলাম কাজে।পুকুর পাড়ে
ঘুরতে গিয়ে দেখি সে ছেলেটা পুকুরে
গোসল করছে।আর আমিও সে সুযোগ কাজে
লাগিয়ে ওর সব কাপড় গাছের সাথে
ঝুলিয়ে রেখে চলে আসছি হিহিহি”
“কি পাজি মেয়ে?ছেলেটা তোমাকে
দেখি নি।”
“হ্যা দেখেছিলোতো। কত অনুরোধ করেছে
ওর কাপড়গুলো দেওয়ার জন্য।আমি দেই
নি।আমাকে কান ধরিয়েছে না আমিও
ওকে শাস্তি দিয়ে চলে আসছি।হিসাব
বরাবর”
.
.
“হুম, আচ্ছা ছেলেটার নাম জানো না।”
“না, তো”
“ধরো কখনো যদি ওই ছেলেটার সাথে
তোমার দেখা হয় আর ওইদিনের সেই দুষ্টু
কান্ডের জন্য আবার তোমাকে শাস্তি
দেয়?”
“এরকম হবেই না।আমি তো ঢাকায় চলে
আসছি।অনেক আগের ঘটনা। তাই ওই
বজ্জাতটার চেহারা আমার মনেও নেই।ওর
ও মনে থাকবে না।”
“আর যদি মনে থাকে?ওই দিনের ঘটনার
জন্য তোমাকে আবার শাস্তি দেয়।”
“মনে থাকলে আর কি করার কিন্তু এবার
যদি ও আমাকে শাস্তি দিতে আসেও
পারবে না।কারণ আপনি আছেন না।আমি
আমাকে প্রোটেক্ট করবেন।”
“তা আমি কেন তোমাকে প্রোটেক্ট
করতে যাব শুনি।”
“কারণ আমি আমার স্ত্রী তাই।”এই কথা
বলতে কেমন জানি লজ্জা লজ্জা
লাগছিলো।
“কি জানি বললে শুনতে পাইনি?”
“আমি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছি।”
“কথা ঘুরাচ্ছো কেন।আমার প্রশ্নের উত্তর
কিন্তু এটা না।”
আমি তাড়াতাড়ি করে লজ্জায় বাইরে
চলে আসলাম।
.
.
কয়েকদিন পরের কথা,
উনি লুকিয়ে লুকিয়ে কি জানি
দেখছিলেন।আমি সেটা দেখার জন্য একটু
আগালাম।আর তখনি তিনি সেই জিনিসটা
লুকিয়ে ফেললেন।
“লুকিয়ে লুকিয়ে কি দেখছিলেন হ্যা”
“কিছ..ছু…না,”
“কিছু না মানে, নিশ্চয় কিছু দেখছিলেন।
দেখান কি দেখছিলেন।”
“বললাম না কিছু না” (রেগে)
উনি এরকম কেন?দেখালে কি এমন হত?
আমি কি উনার জিনিস কেড়ে নিয়ে
যেতাম। ছোটবাচ্চাদের মতন একদম।দূর
ভালো লাগে না।
কি করি কি করি আমার তো দেখতেই
হবে।কি লুকিয়ে রেখেছেন উনি।কিন্তু
দেখবো কি করে উনি তো বাসা থেকে
বের হচ্ছেন না।এক কাজ করি এক বালতি
কাপড় ধুয়ে রেখে দিয়েছিলাম।এই
কাপড়গুলো উনাকে দিয়ে আসি।বলবো
কাপড়গুলো ছাদে দিয়ে আসতে।বাহ কি
আইডিয়া তোর মেঘ,বাব্বাহ।
উনি জিনিসটা কোথায় লুকিয়ে
রেখেছেন সেটা আমি লুকিয়ে দেখেছি।
উনি ছাদে চলে যাওয়ার পর আমি
তাড়াতাড়ি করে লুকানো জিনিসটা বের
করলাম।
এটা কি মাটির পুতুল!বর বউয়ের পুতুল।এই
জিনিস আবার লুকিয়ে দেখার কি হল।
পুতুলটা মনে হয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো।
কোনরকম করে সেটা আবার জোড়াতালি
দিয়ে ঠিক করা হয়েছে।
“মেঘঘঘঘঘঘঘ……..(রেগে)।বলেছিলাম না
আমার জিনিসে হাত না দেওয়ার জন্য।
কেন হাত দিলে?”
“আম..মি…,মা..মা.. মা.. মানে,”
“এটাই শেষ ওয়ার্নিং আমাকে না বলে
আমার কোন কিছুতে হাত দিবে না।”
“আচ..চছা…।”
.
.
“মুড অফ,”
…………
“কথা বলবে না,”
………….
“আচ্ছা গান শুনবে,”
“আপনার কাকের কণ্ঠের গান না শুনাই
ভালো,”
“তাই নাকি,তুমি এত্ত শিউর কেমন করে
হলে আমার গানের কণ্ঠ কাকের মতন,”
“হুহ মুখ ভেঙ্গিয়ে,শাওয়ারে গিয়ে যে গান
গায়লেন তাতেই বুঝে গেছি।”
“আচ্ছা তাহলে কষ্ট করে এই গানটা শুনে
বিচার করিও আমার গানের কণ্ঠ কেমন।
দাঁড়াও গিটার টা নিয়ে আসি।”
পেয়ার হুয়া হে জাব তুজসে,
রাঙ্গোনে বলা মসামসে……..
ইস পেয়ারকি বাহারমে
হাম ভি বিখার জায়ে……….
দিলনে তোজে জাব আপনা মানা
বোলি হাওয়া তো হে দিওয়ানা
জিসকে পেয়ার মে হো উমরেভার
তোজসা তুজে চাহে……
আচ্ছা লাগতাহে তেরা নাজদিক
রেহনা…..
তেরা এহসাস বারা লুভাতাহে……
ইন জাগোয়ি লামহোমে কারিশমাহে……
জো কাহে তো বহত মুজকো চাহতাহে……
“আপনি এত্ত ভালো গান গান!?আমাকে
তো কখনো বলেননি”
“তোমাকে বললে তো তোমার কাছ থেকে
আমি গান শুনতে পারতাম না। আমার তো
তোমার গান শুনতেই ভালো লাগে।তাই
বলে নি”
“আচ্ছা,আপনি কি পরিমাণ চালাক!নিজে
গান শুনবেন বলে আমাকে এই সত্য কথাটা
কোনদিন বলেন নি”
“হুম”
“আজকে রাতে আপনার খাওয়া বন্ধ
যান….।আমার সাথে আর চালাকি করতে
আসবেন হুম”
“সত্যি তো।হুম ঠিকাছে, যাও খাবো না”
এরেরে…আমি তো আরও ভাবছি উনি
বলবেন প্লিজ এরকম করোনা,না খেলে
আমার রাতে ঘুম আসবে না। উনি তো
দেখি পুরাই উল্টা।
“আর..রে…খাবেন না মানে।চলেন খেতে
চলেন”
“না আমি খাবো না।আজকে নিজ হাতে
খেতে ইচ্ছে করছে না”
“কি!নিজ হাতে না খেলে আপনাকে কে
খাইয়ে দিবে শুনি”
“কেন আমার বউ”
“কিহ!!(চোখ বড় বড় করে)।আমি পারবো না।
খিদে লাগলে এমনেই খেয়ে নিবেন।”
“ওকে তাহলে আজকে আর খাচ্ছি না।
ঘুমিয়ে পড়লাম”
এতো দেখি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে যাচ্ছে।
কেন যে ওই সময় নিজের চালাকিটা
দেখাতে গেলাম,
“আচ্ছা না খেয়ে ঘুমাবেন না,শরীর
খারাপ করবে। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
আপনাকে খাইয়ে দিবো”
“হুম”(মুচকি হেসে)
নিজ হাতে উনাকে খাইয়ে দিচ্ছি।আর
উনি মুচকি মুচকি হাসছেন।মনে হয় যেন
আমাকে আমার কথার ফাঁদে ফেলতে
পেরে উনি রাজ্য জয় করে ফেলেছেন।
উনার এই মুচকি মুচকি হাসি দেখে আগে
ফিদা হয়ে যেতাম আর এখন এই হাসি
দেখে অসহ্য লাগছে।
.
.
দিনকাল ভালোই চলছিলো।কিন্তু ভালো
দিনকাল বেশিদিন থাকে না।কষ্ট যে
কোন মুহূর্তে চলে আসতে পারে।উনাকে
নিয়ে আমার ভালো লাগার অনুভূতি
এখনো প্রকাশ করতে পারি নি।যাকে এখন
ভালবেসে ফেলেছি এখন সেই আমাকে
মনে মনে অনেক কষ্ট দিচ্ছে।এখন ক্লাসে
আসলে বান্ধবীদের মুখ থেকে প্রায়ই শুনি
উনি আর প্রিয়া ম্যাডামের মধ্যে নাকি
রিলেশন চলছে।উনার সাথে প্রিয়া
ম্যাডামকে এখন প্রায়ি দেখা যায়।
প্রিয়া ম্যাডামের সাথে উনাকে দেখি
কিন্তু ওদের মধ্যে রিলেশন চলছে সে কথা
মেনে নিতে পারছি না।এই কথা ভাবতেই
এখন কষ্ট হচ্ছে।এই বিষয় নিয়ে উনাকেও
কিছু বলেনি।কারণ ভালো তো আমি
উনাকে বেসেছি উনি তো কখনো আমাকে
এই কথা বলেননি মেঘ আমিও তোমাকে
ভালবাসি।এখন কেন জানি মনে হয় প্রিয়া
ম্যাডামি উনার পছন্দের সেই মেয়ে।হয়ত
আমিই ভুল করে ওদের মাঝে চলে এসেছি।
.
.
বাসায় আসার পর মাথা ব্যথা করছে খুব।
কোন কিছুতেই ভালো লাগছে না।মনে
হচ্ছে উনাকে বুঝি আমি হারিয়ে
ফেলবো।
এই সময় আবার মোবাইলে কল দিচ্ছে কে?
“হ্যালো,”
“হ্যালো,মেঘ,”
“কে বলছেন?”
“মেঘ আমাকে চিনতে পারছো না।আমার
কণ্ঠ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?”
“হ্যালো আমি সত্যিইই আপনাকে চিনতে
পারছি না।দয়া করে পরিচয়টা দিন।
নাহলে আমি কল কেটে দিচ্ছি।”
“না না,এইরকম করিও না। প্লিজ কল
কেটো না।মেঘ আমি সাগর।”
“সাগর!কোন সাগর আমি কোনও সাগরকে
চিনি না।”
“মেঘ প্লিজ তোমার এই কথা বিশ্বাস
করার মতন নয় যে তুমি আমাকে চিনো না।
৩ বছরের রিলেশন ছিলো আমাদের।এত
তাড়াতাড়ি নিশ্চয় আমাকে ভুলে যাওয়ার
কথা নয়।”
“হ্যা আপনার দেওয়া কষ্ট এত সহজে কি
করে ভুলি। আপনার সাথে আমার রিলেশন
ছিলো সেটা অতীতের কথা। অতীতের
কথা মনে রাখা উচিত নয়।আপনাকে ভুলে
গেলেও আপনার দেওয়া কষ্টগুলো এখনো
ভুলতে পারিনি।যাই হোক আমি কোন
অপরিচিত মানুষের সাথে মোবাইলে কথা
বলি না,রাখছি।”
.
.
এতদিন পর কি মনে করে ও আমাকে কল
দিলো। আমার নম্বর কোথা থেকে পেল
আজব!
সারারাত টেনশনে ঘুমাতে পারেনি।
একদিকে প্রিয়া ম্যাডাম আর আমার
স্বামীকে নিয়ে টেনশনে আছি আর
আরেকদিকে সাগর।জানি না এখন আমার
জীবনটা কোন দিকে মোড় নিবে।
সকালে,,
“আচ্ছা মেঘ তোমার কি কিছু হয়েছে?”
“কয় না তো।আমার আবার কি হবে?কিছু হয়
নি আমার।”
“সত্যি বলছ তো।”
“হ্যা মিথ্যা কেন বলব?”
“কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি
আমাকে মিথ্যা বলছ।মনে হচ্ছে কোন
একটা বিষয় নিয়ে তুমি অনেক চিন্তিত।”
“না আমার আবার চিন্তার কিসের?এইতো
ভালো আছি।সারাদিন ভার্সিটি,
পড়ালেখা আর রান্নাবান্না নিয়ে আছি।
আলতো ফালতো চিন্তা করার সময়
কোথায়।”
“ও,, আচ্ছা রেডি হয়ে নাও।একসাথে যাব।”
“আপনি আজকে আগে চলে যান। আমার
ক্লাস তো ১১:০০ টা থেকে।আপনার সাথে
এত সকালে গিয়ে কি করবো।”
“ও…আজকে ১১:০০টায় ক্লাস। আচ্ছা
তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। সাবধানে যেও।
বাসা থেকে বের হয়ে কিছুদূর হাঁটলাম।
রিক্সাও পাচ্ছি না।হঠাৎ কোথা থেকে
সাব্বির এসে হাজির।
অনেকবার ওর বাইকে উঠার জন্য
বলছিলো।কিন্তু আমি মানা করে দিই।
এদিকে আমার ক্লাস একটু পরে শুরু হয়ে
যাবে। ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত না
হলে উনি আবার রেগে যাবেন। ক্লাস শুরু
হওয়ার আগে পরে উনি চেক করে যান
আমি ঠিকভাবে ক্লাস করছি কিনা।অযথা
উনার রাগ বাড়াতে চাই না।এদিকে
সাব্বির ও অনেক জেদ করছে।ভাবলাম
ক্লাসে উঠার জন্য ফ্রেন্ডের থেকে
লিফট নিতেই পারি।তাই এরপরে আর না
করলাম না।ওর বাইকে করে ভার্সিটি
পৌঁছলাম।থ্যাংক গড ঠিক টাইমের অনেক
আগেই পৌঁছে গেছি।
.
.
ক্লাসের ভিতর যখন ঢুকতে যাব তখন দেখি
উনি বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।মনে হল
আমাকে কিছু বলার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে
আছেন।
“কি ব্যাপার মেঘ এখানে দাঁড়িয়ে গেলে
যে?ক্লাসে যাবে না।”(সাব্বির)
“তুমি ক্লাসে যাও আমি এখনি আসছি।”
“তাড়াতাড়ি আসো।তোমাকে ছাড়া
ক্লাসে মন বসে না “(আস্তে করে)…..
(সাব্বির)
“কিছু বললা তুমি?”
“কয় না,কিছু বলি নাই।বলছি তাড়াতাড়ি
ক্লাসে চলে আসিও।”(সাব্বির)
আমি উনার কাছে গেলেই উনি আমার হাত
ধরে টেনে একটা ফাঁকা ক্লাসে নিয়ে
গেলেন।
“আরে আমাকে এখানে কেন নিয়ে
আসছেন?৫ মিনিট পর আমার ক্লাস শুরু হয়ে
যাবে।”
“আমার বউয়ের সাথে প্রেম করবো তাই
এখানে নিয়ে আসছি।কোন সমস্যা।”
“কিহ!”(জোরে চিল্লিয়ে)
উনার হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে, এই
আস্তে।
“এত জোরে চিল্লানোর কি হলো?”
“সরি।আপনার ক্লাস নেই এখন।”
“না এখন আমার অফ টাইম চলছে। আচ্ছা
মেঘ এত দেরি করলে যে?কতক্ষণ ধরে
তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।বাসা
থেকে এখানে আসতে এত টাইম লাগে।
তোমাকে আর সাব্বিরকে একসাথে
আসতে দেখলাম।তুমি কি ওর বাইকে করে
আসছ?”
“আসলে আজকে বাসা থেকে রওনা দিতে
দেরি হয়ে গেছে।তাই…”
“আর…..”
“আর কি?”
“সাব্বিরের সাথে আসলে যে?তুমি কি ওর
বাইকে করে….?”
“না, ওর বাইকে কেন উঠতে যাব। গেইটে
এসে দেখি সেও আসছে। দুইজনে একসাথে
এসে পৌঁছছি।তার মানে এই নয় যে ওর
বাইকে করে আসছি।”(মিথ্যা বললাম কারণ
আমি এখন কিছু বুঝাতে চাইলে উল্টা
আমার উপর রাগ করে বসবে।)
“ও আচ্ছা….।মেঘ ওই ছেলের সাথে
তোমাকে যাতে আর মিশতে না দেখি।
ওকে আমার বেশি সুবিধার মনে হয় না।
তোমার দিকে ওর চোখের দৃষ্টি জানি
কেমন।”
“মানে!?”
“তুমি বুঝবে না।ওর সাথে মিশতে বারণ
করে দিয়েছি তার মানে ওর সাথে আর
মিশবে না।বুঝতে পারছ?”
“হ্যা….”(মাথা নিচু করে)
হঠাৎ ই উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে
ধরলেন।
“আরে করছেনটা কি?”
“কিছু না আমার বউটাকে জড়িয়ে ধরছি।
কোন সমস্যা তোমার?”
“হুহ ঢং!মুখ ভেঙ্গিয়ে। আলগা পিরিত।এখন
প্রিয়া ম্যাডাম নাই তাই আমার সাথে
আলগা পিরিত দেখাতে আসছে।বুঝি বুঝি
সব বুঝি…….”
“মেঘ, ক্লাসে যাবে না”
“এরকম করে ধরে রাখলে কেমন করে যাব।”
“ও আচ্ছা, (মুচকি হেসে)।যাও ক্লাসে
যাও।”
“হুম”
“মেঘ শুনো।”
“(আবার কেন ডাকে)।জ্বী”
আমার কাছে এসে কপালে ভালবাসার
স্পর্শ দিলেন।
“সকালে এটা দিতে ভুলে গেছি।এখন
দিয়ে দিলাম।যাও”
.
.
অফ টাইমে ক্লাসের বাইরে এসে দেখি
উনি আর প্রিয়া ম্যাডাম গল্প করছেন।
আমি বুঝতে পারি না ম্যাডামের সাথে
উনার এত কথা কিসের?খুব রাগ উঠে যায়
মাঝেমাঝে এইসব সীন দেখলে।না পারি
কাউকে এই দূঃখের কথা বলতে না পারি
সইতে।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।ভালো লাগছে না
কিছু। আবার এদিকে সাগরের টেনশন মনের
ভিতর কাজ করছে।ও আমার মোবাইল নম্বর
কি করে পেল? ওকে আমার নম্বরটা কে
দিলো?
“কি রে মেঘ এত কি ভাবছিস?”
“কিছু না।”
“শুন না ২দিন আগে না সাগর ভাইয়া
আমাকে কল দিয়েছিলো।”
“কি!”
“হ্যা উনি আমাকে বলল,জরুরী কাজে
তোকে কল দিতে হবে।তোর নতুন নম্বরটা
নাকি উনি মোবাইলে সেইভ করতে ভুলে
গেছেন।আর নম্বরটাও ভুলে গেছেন।তাই
আমার থেকে তোর নম্বরটা চাইলো। কেমন
বর রে তোর মোবাইল নম্বর সেইভ করতে
মনে থাকে না, নম্বর ভুলে যায়।”
“কি!ও চাইলেই তোকে নম্বর দিতে হবে
নাকি?”
“এরকম রিয়েক্ট কেন করছিস।তোর বরকেই
না নম্বর দিয়েছি অপরিচিত কাউকে তো
দেয় নি।”এই বলে রাগ করে ও চলে গেল।
কি করে যে বলি সাগর আমার কেউ না।
আর আমার স্বামী তাসপিয়াকেও বলেনি
যে আমরা দুজন সম্পর্কের দিক দিয়ে এখন
স্বামী-স্ত্রী। কি করে এখন তাসপিয়াকে
এই কথাটা বলি তন্ময় স্যার আমার কি হয়?
অবশ্য এই কথা বলবো কি করে? উনি
নিজেও তো কাউকে কিছু বলেননি।
তাহলে এত বড় সত্য কথা বলার দুঃসাহস
আমি কি করে দেখায়।চুপচাপ থাকা ছাড়া
আমার যে আর কিছু করার নেই।
.
.
“মেঘ, are u ok?”
“yap.”
“তাহলে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
কিছু হয়েছে?আর তাসপিয়াকে দেখলাম
রেগে চলে গেল?”
“না তেমন কিছু না।ওই আরকি একটু রাগ
করেছে।”
“আসো তো দেখি কেন রাগ করল?ওর রাগ
কমানোর ঔষুধও আমার জানা আছে।চলো
ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে আসি।”
শেষে অনেক কষ্টে ওর রাগ ভাঙ্গাতে
পারলাম।অবশ্য আমি না সাব্বিরি এই
কাজটা ভালো করে করেছে।আজকে
তাসপিয়া,আমি আর সাব্বির ঘুরতে যাব
ক্লাস শেষে।মহারানী এই খুশিতে রাগ
ভেঙ্গে ফেলেছ।যেহেতু ওর লাভারের
সাথে ঘুরতে যাবে। তাই ওর মনে লাড্ডু
ফুটেছে।
.
.
“হ্যালো,”
“হুম বলো মেঘ,”
“বলছিলাম যে,আজকে আমি আপনার
সাথে যাচ্ছি না।তাসপিয়ার সাথে
বাসায় যাব।ওর মনটা খারাপ।তাই ওকে
নিয়ে আজকে ঘুরতে যাব। এরপরে বাসায়
চলে আসবো। আপনি বাসায় চলে যান।”
“আচ্ছা, এই ব্যাপার।আমিও তোমার সাথে
যাই।”
“হুহ “(আপনি আমার সাথে আসলে
তাসপিয়ার মনে অনেক প্রশ্ন আসবে।মনে
মনে অনেক কিছু ভাববে।আপনি যদি
সবাইকে বলতেন আমি আপনার স্ত্রী
তাহলে আজকে আমাদের সাথে ঘুরতে
পারতেন।শুধু শুধু আপনাকে ঝামেলায়
ফেলতে চায় না)।না আপনার আসা লাগবে
না।আপনি এখন অনেক ক্লান্ত, বাসায়
চলে যান। ”
“আচ্ছা।সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসবে।
দেরি যাতে না হয়।নাহলে আমি খুব
টেনশনে থাকবো।”
“জ্বী”
.
.
“জানিস মেঘ একটু আগে দেখে আসলাম
তন্ময় স্যারের গাড়িতে করে স্যার আর
প্রিয়া ম্যাডাম যাচ্ছে। তোকে বললাম
না উনাদের মধ্যে রিলেশন চলছে।এবার
বিশ্বাস করলিতো আমার কথা।নাহলে
স্যারের গাড়িতে করে ম্যাডাম কেন
যাবেন।”
“কিহ!”
“হুম,দুইজনের জুড়ি ভালো জমবে রে…।”
“আরে,মেঘ কি ব্যাপার কি ভাবছ।চলো
দেরি হয়ে যাচ্ছে। নাহলে বাসায়
পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে
তোমার।”(সাব্বির)
“হ্যা চলো,,”
রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে ৩জনে
পার্কে ঘুরতে গেলাম।কেন জানি মনে
হচ্ছে সাব্বির আমার দিকে বারবার
তাকাচ্ছে।ওর তাকানোর ধরণটা আমাকে
খুব অস্বস্তিতে ফেলছে।আর আমার
পাগলি বান্ধবী তাসপিয়া একমনে ওর
জীবনের গল্পগুলো শুনিয়ে সাব্বিরের
দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।বেচারী বান্ধবী
আমার কত কি না করছে এই ছেলেটার মন
পাওয়ার জন্য।কিন্তু দেখো এই ছেলেটার
কোন পাত্তাই নেই।শুধু আমার দিকে
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। অনেক
ঘুরাঘুরির পর তাসপিয়া আর আমি বাসার
দিকে রওনা দিলাম।বাসায় পৌঁছতে
পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
.
.
বাসায় এসে দেখি উনি অনেক রেগে
আগুন হয়ে আছেন।সারছে আজকেও মনে হয়
উনাকে রাগিয়ে দিলাম।
“কি ব্যাপার মেঘ, এত লেট কেন?তোমাকে
বলেছিলাম না সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে
আসতে।”
“আসলে,,রাস্তায় জ্যাম ছিলো, তাই,,”
উনার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি রাগ
এখনো কমে নি।
“মেঘ তুমি যে আমার বউ সেটা কি বারবার
ভুলে যাও। বাড়ির বউ সন্ধ্যা পর্যন্ত
বাইরে থাকবে সেটা কি ভালো দেখায়।
আজকাল রাস্তাঘাটে কত কি ঘটে।
মেয়েমানুষ হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তায়
ঘুরাফেরা করলে কত কি বিপদ হতে পারে
সে খবর তোমার জানা আছে।এত বড় মেয়ে
হয়ে গেছ এগুলো কি এখনো বুঝ না।”
“সরি আসলে বুঝতে পারি নি এত দেরি
হয়ে যাবে। আর কখনো এরকম দেরি করে
বাসায় আসবো না।”
“হুম মনে থাকে যেন কথাটা।”
“জ্বী মনে থাকবে।”
.
.
অনেক রাত করে আমার মোবাইলে
unknown নাম্বার থেকে কল আসলো। এত
রাতে আবার কে কল দিলো
“হ্যালো,”
“হ্যালো মেঘ”
“আপনি!এত রাতে অন্য ঘরের বউকে কল
দিতে আপনার লজ্জা লাগে না।”
“না, করে না। কারণ আমি তোমাকে
ভালবাসি।”
“আমার সাথে এত অন্যায় করার পরও এইসব
কথা বলেন।আপনার লজ্জা থাকা উচিত
এই বলে কল কেটে দিলাম।”
.
.
ঘুম আসছে না কিছুতে। বারান্দায় চলে
আসলাম।কি হচ্ছে এইসব আমার সাথে।
এতদিন পর সাগর কেন আমাকে কল দিয়ে
বিরক্ত করছে।কি চায় ও আমার কাছে?
হঠাৎ মনে হল কেউ আমাকে পিছন থেকে
জড়িয়ে ধরেছে।
আমি ভয়ে যখনি চিৎকার দিতে যাব তখনি
আমার মুখ চেপে কেউ ধরল।
“এই আমি আমি।
……(অবাক হয়ে)
“উফ এত ভয় পাও কেন?”
“আপনি!এত রাতে এখানে কি?”
“একি প্রশ্নতো আমারও।তুমি এখানে এত
রাতে কি করছ?”
“ঘুম আসছে না তাই।আপনি ঘুমাতে যান।”এই
বলে একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে
আছি।
উনি আমাকে পিছন থেকে শক্ত করে
জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে চুমো দিলেন।
এক অজানা শিহরণে কেঁপে উঠলাম।
“মেঘ তুমি কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত।
এমন কোন বিষয় কি আমার থেকে লুকাচ্ছ
যা তোমাকে মনে মনে কষ্ট দিচ্ছে।দেখো
যদি এরকম কিছু হয় আমাকে বলতে পারো।
আমি তোমাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার
চেষ্টা করবো।”
“না, তেমন কিছু না।”
“জানতাম আমাকে বলবে না।”
“আচ্ছা চলো আর রাত জাগতে হবে
না,নাহলে শরীর খারাপ করবে।”
“আমার ঘুম আসবে না।”
“আচ্ছা আমিও দেখি কেমন করে তোমার
ঘুম আসে না “এই বলে আমাকে কোলে
তুলে নিলেন।আমাকে উনার বুকে নিয়ে
চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন অনেক্ষণ ধরে।
এরপরে এমনিতেই চোখে ঘুম চলে আসলো।(চলবে)
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৮