পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 13
সাইমুনের অবন্তিকার কথা মাথায় ছিলো না। তাছাড়া সারাদিন না খাওয়ার কারণে ঘুম চোখে অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অবন্তিকা চিৎকার দিয়ে বলল,,
— বাহ! সুযোগ পেয়েছেন স্বামীত্ব ফলাতে চলে এসেছেন। আপনাদের মত মানুষ গুলো বেশিক্ষণ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ছিঃ!! যে একটা মেয়েকে একা রুমে পেয়েছেন এমনি শরীর গরম হই গেলো তাই না।
অবন্তিকার কথায় সাইমুন অবাক হয়ে গেছে। অবন্তিকা এসব কি বলছে।
— দেখো আমি তোমাকে খেয়াল করিনি। আমার শখ জাগেনি কারো উপর ঝাপাই পড়ার। এত বাজে স্বভাব নেই আমার।
— এত সাধু সাজতে হবে না। এগুলো কাছে আসার ফন্দি সব বুঝি। শুনুন যতদিন না আমি নিজেকে নরমাল করতে পারছি আমার ধারে কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাকে স্বামীর অধিকার দিতে পারবে না।
— আমি এগুলো নিয়ে ভাবছি না। আপনি আপনার মত করে থাকুন। আরেকটা কথা আমি নিজে এসবের জন্য প্রস্তুত না।
অবন্তিকা মনে সাহস পেয়েছে। খুব একটা কষ্ট করতে হবে না এ বাসা থেকে বের হতে। মনে হচ্ছে ডিভোর্স পেতে সহজ হবে। আচ্ছা সাইমুনের মনে অন্য কেউ নেইতো! অবন্তিকা খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করছে,,
— প্রস্তুত না হলে বিয়ে করেছেন কেন। আপনাকে তো কেউ ধরে বেঁধে বিয়ে করতে পাঠায়নি। নাকি কোন রমনীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন??
— আপনার এত কিছু জেনে কাজ কি??
— আরে বলুন না প্রেম করে ছ্যাঁকা খেয়েছেন নাকি? আমাকে বলতে লজ্জা কিসের। বন্ধু ভেবে মন খুলে বলে ফেলুন আমি আপনাকে তার সাথে মিলিয়ে দিব।
— ধন্যবাদ এত ভাবার জন্য।
— দূর আজকাল কারো ভালো করতে নেই।
সাইমুন বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,,
“বিয়ের আগে ব্যাপার টা সহজ মনে হয়েছে। এসব করতে গিয়ে আমি আমার মুনতাহা কে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললাম। আমি বুঝতেছি আমি কি হারিয়েছি। এ ঘর টা আমার কাছে বড্ড অচেনা হয়ে গেছে। মুনতাহার দুষ্টুমি গুলো আমাকে এ ঘরে থাকতে দিবে না।
— কিছু বলছেন আমায়??
— না না। আপনি ঘুমান।
— দয়া করে আমার পাশে না শুয়ে সোফায় গিয়ে ঘুমান। আমার পাশে কেউ ঘুমালে আমার ঘুম আসে না।
— আপনাকে বলতে হবে না আমি নিজে ঘুমাব না।
— তাহলে তো খুব ভালো। লাইট টা নিভিয়ে দিন। লাইটের আলো চোখে পড়লে ঘুমাতে পারিনা।
— আপনার দেখছি সব কিছুতে সমস্যা।
অবন্তিকার খারাপ লাগছে সাইমুনের সাথে বেশি কঠোর হয়ে যাচ্ছে নাতো। অবন্তিকার মাথায় একটা ব্যাপার কিছুতেই ঢুকছেনা,,
মুনতাহা এ বাসার আশ্রিতা হবে কেন!! আর যদি আশ্রিতা হবে তাহলে এরকম আচরণ কেন করে। আশ্রয় না দিলে না দিতো আশ্রয় দিয়ে সারাক্ষণ কথা শুনানো অদ্ভুত না। নাকি অন্য কোন ঝামেলা আছে। এ বাড়ির মানুষ গুলো সব পাগল।
আচ্ছা হতে পারে ভালো রান্না জানে কাজের লোক করে রেখে দিছে। ফ্রিতে কাজের লোক পেলে মন্দ কি। কাল সকালে মুনতাহা আপুর সাথে কথা বলতে হবে। তাহলে অনেক কিছু জানা যাবে।
….
দেখতে দেখতে মুনতাহা বাসার কাছে চলে এসেছেম
মুনতাহা ভয় পাচ্ছে না জানি এখানে কি কি সহ্য করতে হয়। মুনতাহার ভাবী পপি মুনতাহা দুচোখে দেখতে পারে না। মুনতাহা যে আসবে মুনতাহার মা ভয়ে বলতে পারেনি।
বাসায় পৌছে কলিং বেল টিপ দিতে গিয়ে মুনতাহার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে কে দরজা খুলবে এ ভেবে। কয়েকবার বাজানোর পর মুনতাহার মা দরজা খুলে দিলো। মুনতাহা ওর মা কে দেখে ঝাপটে মায়ের বুকে চলে গেলো। মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিলো। এটা ঠিক কিসের কান্না মুনতাহা জানেনা। জমানো যত কষ্ট আছে সব যেন অশ্রু জলে সিক্ত হলো।।
মুনতাহার মা মুনতাহা কে কিস করে বলছে,,
— খুব কষ্টে ছিলি তাই নারে মা। আমার মেয়েটা কে কত কিছু না সহ্য করতে হইছে।।
— মা কষ্টে ছিলাম কিন্তু তোমাকে দেখার সব কষ্ট শেষ ।
— আমি মা হয়ে তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
মুনতাহার মায়ের চোখ গুলো যেন থামছে না। একটা মায়ের কাছের সবথেকে বেশি কষ্ট লাগে যখন তার সন্তান কষ্ট পায়।
— মা কেঁদ না সবাই যদি সুখে থাকতে চায় কষ্ট কে পাবে। দেখবা আমাদের ও একদিন সুখ আসবে।
— আমি দোআ করি আমার মেয়েটা যেন খুব তাড়াতাড়ি সুখের মুখ দেখে।
— ভাবী কই?? খুব খুধা পেয়েছে।
— তোর ভাইয়ের সাথে শপিং করতে গেছে। নাহয় এতক্ষণে তুলকালাম করত। তুই আমার ঘরে চল আমি ভাত আনছি।
মুনতাহা অনেক দিন পরে পেট ভরে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে কতকাল ভালো করে ভাত খায়নি।
— খা মা যতক্ষণ পেটে জায়গা থাকে খেতে থাক।
মুনতাহা খাচ্ছে চোখের পানি পড়ছে।।
— একটা কথা মাথায় রাখিস মুনতাহা। আল্লাহ কষ্ট দিয়ে বান্দা কে পরীক্ষা করে। যারা ধৈর্য ধারন করতে আরে তারা সাফল্যের শিখরে পৌছায়। দেখিস তোর জীবন আলো করে সুখ আসবে। শুধু অপেক্ষা করার পালা।
— মা আমিও বিশ্বাস করি আর আমি জানি যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে তাদের সুখের দিন শেষ। খুব তাড়াতাড়ি তারা বুঝবে আমি মুনতাহা কি ছিলাম!
পৃথিবীতে কষ্ট আছে বলেই সুখের এত দাম। মানুষ সুখের জন্য কত কিছু না করে। কেউ দুইবেলা খেতে পারলে সুখি কেউ দামী জামাকাপড় পেলে খুশি, কেউ বা বিলাসবহুল গাড়ি বাড়িতে থাকতে পারলে সুখি।
সুখ, দুঃখ জীবনে ক্ষনস্থায়ী কোনটাই চিরকাল থাকে ন।
প্রতিটি সুখের গল্পের পিছনে একটা কষ্টের গল্প লুকিয়ে থাকে। আমরা কেবল সুখ টা দেখে আফসোস করি। ভাবি অন্যদের কপাল কত ভালো কিন্তু জীবনে সুখ অর্জন করতে গেলে অনেক কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয় সেটা আমাদের চোখে পড়ে না।
মুনতাহার ভাবী এসে মুনতাহা খেতে দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো। চোখ বড় করে ধমকে সুরে বলতে লাগলো,,
— বাহ!! এক বছর যেতে না যেতেই আমার অন্ন ধ্বংস করতে চলে এসেছে।
” মা আপনিও পারেন আসার সাথে সাথে এক থালা ভাত দিয়ে খেতে বসাই দিছেন। আমার আর আপনার ছেলে, নাতির কি খাবে চিন্তা করলেন না “”
মুনতাহার মা নরম গলায় বলে উঠলেন,,
— ভেব না বউ মা আমি ভাত বসাই দিছি। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়ে যাবে।
— হুম এখন আমরা না খেয়ে বসে থাকব। আপনি জানেন না আমার ছেলেটা বিকাল থেকে কিছুই খায়নি। সময় মত না খেলে আমার বিরক্ত লাগে।
মুনতাহা ভাবীর দিকে তাকিয়ে,,
— ভাবী সারাজীবনের জন্য থাকতে আসিনি। ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চলে যাব।
— হুম তাই করিও। আমাদের এত টাকা নাই যে তোমাকে বসে বসে খাওয়াব।
— ভাবী তুমি বোধয় ভুলে গেছ এই বাড়িটা আমার বাবা বানিয়েছেন। উত্তরাধিকার সূত্রেই আমিও অংশীদার।
— তুমি কি এখানে সম্পত্তির ভাগ বসাতে আসছ??
— না ভাগ বসাতে আসি নাই। যেভাবে দূর দূর করছ তাই বাধ্য হলাম বলার জন্য।
— হুম এখন তো বলবাই।৷ নিজের স্বামী কে তো ধরে রাখতে পারলে না। নিজের সংসার রসাতলে গেলো এখন অন্যের সংসারে আগুন জ্বালাতে আসছ।
মুনতাহার মা হাত জোড় করে বলছে,,
— প্লিজ বউ মা আমার মেয়েটা এমনি অনেক কষ্টে আছে ওর কষ্ট আর বাড়াইও না। তুমি এখন যাও।
— হুম হুম সত্যি কথা বললে সবার তিতা লাগে। আপনার মেয়ে ভালো হলে জামাইর সুখ জুটলো না কেন। দোষ না থাকলে এমনি এমনি তাড়ায় দেয়নিম
মুনতাহার ভাবী মুখ বাঁকা করে চলে গেলো। মুনতাহা মা কে ধরে কান্না করছে,,
— মাগো যার সুখ নেই তার কোথাও সুখ নেই গো মা।
.
.
মুনতাহার শাশুড়ী ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে এসে দেখছে মুনতাহা নেই। যত যাই হোক মুনতাহা ভোরে উঠে যায়। মুনতাহা কে নিষেধ করলেও রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। মুনতাহা
কে না দেখে মুনতাহার শাশুড়ী অবাক হলো। মুনতাহার শাশুড়ী তাড়াহুড়ো করে মুনতাহার রুমের দিকে যাচ্ছে।
কালকের কথার জন্য সত্যি চলে যায় নিতো।
মুনতাহা নেই পুরো রুম ফাঁকা। মুনতাহার শাশুড়ীর খুশি হবার কথা কিন্তু মন থেকে কেন জানি খুশি কাজ করছে না। ভালো করে ঘুরে দেখছে মুনতাহা কিছুই নেয়নি। বিয়ের গয়না গুলো ফেলে গেছে।
ভাবছে সাইমুন জিজ্ঞেস করলে কি জবাব দিবে। সাইমুন যদি অবন্তিকার সামনে মুনতাহা কে নিয়ে কিছু বলে তাহলে তো সংসার গড়ার আগে শেষ হই যাবে…
না না এটা আমি হতে দিতে পারি না….
…..চলবে….