অন্তরালে ভালোবাসা

অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 09 (শেষ)

“দুই দিন উনাকে আমি অফিসে যেতে দিলাম না।বিছানা থেকেও উঠতে দিলাম না।বলে দিয়েছি, আপনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এই রুম থেকেই বের হবেন না।আমার কথামতো উনি সারাদিন রুমে বসে থাকে আর আমি বাড়ির সব কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে উনাকে এসে দেখে যায়।”

“ওদিকে অফিসের সব ইমপ্রটেন্ট ফাইল পুরিয়ে তপু সেদিন যেই ভুলটা করেছিলো তার জন্য আজ মাসুল দিচ্ছে। ক্লাইন্টরা এসে তার কাছে জবাবদিহিতা চাচ্ছে আর সে ভ্যাব্যাচ্যাকা খেয়ে বসে আছে।কি উত্তর দেবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।নিরুপায় হয়ে উনাকে ফোন করে ছিলো।কিন্তু তপুতো এটা যানে না উনার ফোনটা আমার কাছে।যতোবারই তপু ফোন করেছে আমি কেটে দিয়েছি আর মেসেজগুলোও সিন করে রেখে দিয়েছি।এখন এসেছে সময় তপু বুঝবে উনি ওর জীবনে কি!”

“ও বাড়িতে শ্বাশুড়ি আম্মা এখনো সেই ভাঙা কোমড় নিয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছে আর চিৎকার করছে।সবাইকে ডাকছে কিন্তু কেউ তার ধারে কাছেও আসছে না।এখন তার আমাদের কথা মনে পরছে আর ভাবছে উনাকে আর আমাকে বাড়ি থেকে বের করে ভুল করেছে।”

“নিশি আছে আধুনিকতার যুগ নিয়ে। আগে যেমন মায়ের কথায় ভয় পেতো।মায়ের চোখ রাঙানিতে কেঁপে উঠতো এখন আর তা করে না।বরং মাকে উঠতে বসতে কথা শোনায় বাড়িটা তার সে যা ইচ্ছা তাই করবে।কেউ বাঁধা দিতে আসবে না।নইলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।”

“আজ উনি সম্পূর্ণ সুস্থ। আমাকে বলেছে ওবাড়িতে একটু যেতে চায় আমি আর না করলাম না।শুধু শর্ত দিয়েছি আমাকেও সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।উনি রাজি।দুজনে একসাথে ওবাড়িতে গেলাম।”

“বাড়ির কলিং বেল টিপলাম। দেখি দরজাটাই খোলা।খেয়াল করি ভেতর থেকে জোড়ে মিউজিকের আওয়াজ আসছে।দুজনে ভেতরে গিয়ে দেখি ছোট ছোট ড্রেস পরে মদ খেয়ে নিশিকে তার ফ্রেন্ডের সাথে ঢুলে ঢুলে ড্রান্স করতে।হয়তো পার্ট চলছে।পাশ থেকে একটা ছেলে নিশিকে বাজে ভাবে স্পর্শ করছে। নিশি অস্বস্তি বোধ করে তাকে ধাক্কা দিতে যায় আর সে নিশির হাতটা ধরে টেনে নিশিকে ওর রুমে নিয়ে যায়। মাতাল অবস্থায় নিশি তো ছেলেটাকে বাঁধাও দিতে পারছে না।ছেলেটার শক্তির কাছে নিশি যে কিছুই না।এমন সময় উনি গিয়ে নিশির উপর থেকে ছেলেটা টেনে ইচ্ছা মতো পিটাটে থাকে।আর বলে, তোর সাহস হয় কি করে তুই আমার বোনকে স্পর্শ করিস?”

“ছেলেটার হাতটাই উনি ভেঙে দিয়েছে।আর এমন কেলানি দিয়েছে যে চাইলেও ছেলেটা আর কোনো দিন অন্য মেয়েকে স্পর্শ করার সাহস পাবে না।এই মাইরটার কথা মনে পরবে।উনার ভেতরে যে এতোটা তেজ আছে তা আমি আজকে জানলাম।যাক গে যা হয় ভালোর জন্য ননদটা আমার ভাইয়ের ভালোবাসা বুঝেছে।সে এখন তার ভাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।ক্ষমা চাইছে ভাইয়ের কাছে।”

“উনি বোনের সাথে কোনো কথা না বলে বাইরে এসে পার্টির মিউজিকটা অফ করে দেয় আর সবাইকে বের হয়ে যেতে বলে বাড়ি থেকে।সবাই বের হয়ে গেলে উনি আর আমি তৃষ্ণার্থ কন্ঠে কাউকে বলতে শুনি পানি..পানি।শ্বাশুড়ি আম্মার রুম থেকে আওয়াজটা আসছে।আমি আর উনি ছুটে গেলাম।দেখি শ্বাশুড়ি আম্মা বিছানায় ছটফট করছে। উনি গিয়ে তাকে ধরে উঠিয়ে বসায় আর কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে।উনার কান্না দেখে শ্বাশুড়ি আম্মার মন গলে।তিনি উঠে উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর বলে, আমাকে ক্ষমা করে দে উদয়।তুই আমার ছেলে।তপু, নিশি ওরা আমার কেউ না।নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি ও মাথাটা নিচু করে আছে।উনি নিশিকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, মায়ের এই অবস্থা কি করে হলো বল নিশি? বল? নিশির মুখে কোনো উত্তর নেই। নিশি কেঁদে উঠে উনার কাছে ক্ষমা চায় তারপর শ্বাশুড়ি আম্মার কাছে এসে পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাই আর বলে, আমি ভুল করেছি মা।আমায় ক্ষমা করে দাও।শ্বাশুড়ি আম্মা কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।যখন জ্ঞান ফেরে তিনি হসপিটালে।নিশি আবার তার কাছে ক্ষমা চাইলে উনি নিশিকে ক্ষমা করে না তারপর উনি আর আমি বুঝায় নিশি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।ওকে ক্ষমা করে দিন।আমাদের কথায় শ্বাশুড়ি আম্মা নিশিকে ক্ষমা করে দেয়।”

“ওদিকে ক্লাইন্টের কোনো হিসাব মিলিয়ে দিতে পারছে না তপু।বিজনেসের কিছু না বোঝা শর্তেও এমন খাম খেয়ালীপনায় ফাইলগুলো পুরিয়ে ভুল করে বসলো।তারা পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় তপুকে।আর পুলিশ উনাকে ফোন করে তপুকে এ্যারেস্ট করা হয়েছে সেই খবরটা জানাতে।উনি খবরটা পাওয়া মাত্র ছুটে যায় পুলিশ স্টেশন। আর সব ক্লাইন্টদের সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলে তপুকে ছাড়িয়ে আনে।তপুও নিজের ভুল বুঝতে পারে আর উনার কাছে ক্ষমা চাই।উনিও ক্ষমা করে দেয়।”

“শ্বাশুড়ি আম্মা আমাদের আর যেতে দেয় না।এবাড়িতেই থাকতে বলে।সেই দিন উনাকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া দলিলটা শ্বাশুড়ি আম্মা ছিঁড়ে ফেলে।আর বলে, এই বাড়িটা উদয়ের ছিলো আর উদয়েরই থাকবে।উনি মুচকি হেসে শ্বাশুড়ি আম্মাকে বলে, এই বাড়িটা শ্বশুর আব্বা মৃত্যুর আগে শ্বাশুড়ি আম্মার নামে লিখে রেখে গেছে।শুধু তাই নয় সকলের নামেই একটা করে বাড়ি রেখে গেছে।তার মধ্যে একটা বাড়িতেই আমরা এতোদিন ছিলাম।”

“শ্বাশুড়ি আম্মা কথাটা শুনে বিশ্বাস করতে পারে না।উনাকে জিজ্ঞাসা করে শ্বশুর আব্বা এমনটা কেন করেছে? উত্তরে উনি বলে আমাদের সবাইকে এক সংসারে বেঁধে রাখতে।আমরা যাতে একসাথে মিলেমিশে থাকি এইজন্য করেছে।”

“যাক আজ শ্বশুর আব্বার সেই ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে।সবাই একসাথে আছি।উনিও আগের থেকে অনেকটা চালাক হয়েছে।তবে আমার সাথে উনার এখন প্রচন্ড আকারে ঝগড়া হয়।মাঝে মাঝে তো ঝগড়া করে শ্বাশুড়ি আম্মার রুমে গিয়ে ঘুমায়।তারপর উনি আমাকে মাঝ রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় উঠিয়ে রুমে এনে শুইয়ে দেয়। সকালে উঠে যখন নিজেকে উনার বুকে আবিষ্কার করি তখন বলি, এটা আপনার কেমন ভালোবাসা? কাল রাতেই তো ঝগড়া করে বের করে দিলেন।আবার নিজেই নিয়ে এলেন।”
—“ওহহ ইশানি এতো রাগ করো কেন? এভাবে কেউ রাগ করে চলে যায় নিজের রুম থেকে?”
—“তো কি করবো? আপনি তো আমায় ভালোইবাসেন না।কখনো বলেনই না ভালোবাসি।”
—“ভালোবাসি বলাটা কি খুব জরুরি? এটা #অন্তরালে_ভালোবাসা ইশানি।এটা মুখে বলা যায় না।বুঝে নিতে হয়।”

“আমি মুখ টিপে হাসি।বাহহ! উনি তো দেখছি রোমান্টিক ভাষায় কথা বলাও শিখে গেছে।”

।।।।।সমাপ্ত।।।।।

One thought on “অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 09 (শেষ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *