The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 119

→রুহীর কথা শুনে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলেন রাভীন রুশান চৌধুরী।মেয়েটা এ বৃদ্ধকে তার সন্তান ফিরিয়ে দিতে এত কিছু করে বেচারী না আবার ঝামেলায় পড়ে যায়।নিজের সন্তানকে যতটুকু দেখেছিলো বুঝতে পেরেছিলো কতো টা রগচটা রোয়েন।অবশ্য ওনার রাগটাই পেয়েছে রোয়েন।তবে ওনি এখন ঠান্ডা হয়ে এসেছেন বয়সের সাথে সাথে সব কিছুতেই কন্ট্রোল এনেছেন।রুহী বলল,
”বাবা কিছু বলছেননা কেন?”
”দেখো মা আমার জন্য এমন করে নিজেদের অশান্তি করোনা।আমি চাই তোমরা ভালো থাকো।”
”বাবা আপনি আসলে ওর ভুল ধারনা ভাঙ্গবে।ও মানে আপনি মাকে মেরে ফেলেছেন।”
”দেখো মা ও নিজের মায়ের ডায়েরীতে যা পেয়েছে সেটাই জানে।আমি আমার সন্তান কে পাঁচটা বছর ও পাইনি।সত্যি টা ও কিভাবে জানতো বলো।”
”বাবা মা কই ছিলো?আসলে কি হয়েছিলো ওনার সাথে?”
”ও মুসলিম নাম ব্যবহার করে অনেক পপুলার হয়েছিল।কারন তখন আমার সুনাম অনেক ছিলো।যেখানে আমার ওয়াইফ ছিলোও।আমার দেয়া নাম ব্যাবহার করেছিলো।জানো বিয়ের পর যেমনই ছিলো প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর এবোরশন করাতে চেয়েছিলো বারবার।এমনকি ওটি থেকে দুবার নিয়ে এসেছিলাম আমার বাচ্চার জন্য।”
রুহীর চোখ ভরে আসে।কান্নার দমক সামলে বলল,
”ওনি মা ছিলেন।”
”নাম মাত্র। রুশ হওয়ার পর ওর উদাসীনতা বেড়ে গিয়েছিলো। ঘরে ফিরতো রাত করে আবার ফিরতো ও না। কল দিলে খুব বিশ্রী ওয়ার্ড ইউজ করতো।কতবার তো রুশের মৃত্যু ও কামনা করেছিলো।জানো ওর পুরো নাম আমিই রেখেছিলাম।রাহীন রুশিদ চৌধুরী।”
”খুব সুন্দর নাম বাবা।তারপর কি হয়েছিলো?”
”ওর অনেক বয়ফ্রেন্ড ছিলো।সবার সাথে ওর লেনদেন ছিলো প্রচুর।সবার কাছেই আমার নাম ব্যাবহার করে স্বার্থ উদ্ধার করতো নিজের। একদিন ঘরেছিলাম না আমি।তখন ওর জার্মানি বয়ফ্রেন্ড আসে আমাদের বাসায়।তারপর ওরা যা করলো বলতে পারছিনা।রুশ কে ওরা একটা রুমে বন্দী করে রেখেছিলো।তখন আমার ছেলের পাঁচ মাস চলে।আমি ঘরে আসার আগে ও নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করে।তারপর আমি ঘরে আসার পর সব ভাঙ্গচুর করলো।ওর সেই জার্মানী বয়ফ্রেন্ড মিলে আমাকে মার ধর করে জেলে পাঠিয়ে দেয়।এবং বলেছিলো আমি অন্য কোথাও পালিয়ে বিয়ে করেছি।সেই সময় গুলো কতোটা কঠিন ছিলো বিশ্বাস করবানা।কিন্তু দেখো যে দোষ করে সে নিজের শাস্তি কোন না কোন ভাবে পায়ই।আমি জেল থেকে দোয়া করতাম আমার বাচ্চাটা যেখানে থাকে যেন ভালো থাকে।জেল থেকেই শুনলাম ওর বয়ফ্রেন্ড সব গুলো মিলে ওকে রেপ করে মেরে ফেলে।কারন যেখানে আমি নেই সেখানে টাকা নেই।ওর রুপ দিয়ে ও কাজ হয়নি।ও নিজে কখনো টাকা জমাতো না।সব টাকা নেশা জুয়ার পেছনে উড়াতো। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নিজের সন্তান কে পাইনি। কতো খুঁজেছিলাম পাইনি। আঠার বছর জেলে ছিলাম।ততোদিনে আমার ছেলে বাংলাদেশে চলে আসে।”
”বাবা ও একথা গুলো আমি বললে বিশ্বাস করবে না।আপনার এমন কোন নিকট আত্মীয় নেই যার কথা রোয়েন বিশ্বাস করবে।”
”রামীনের মা।ফ্লোরার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
রুহী কি জানি ভেবে বলল,
”চলুন ওনার কাছে যাই।”
”আজকে হচ্ছেনা।কাল সকালে আমি আসবো।”
”ঠিক আছে বাবা।”
রাভীন নাতনী কে কোলে নিয়ে ওর হাতে দশহাজার টাকা ধরিয়ে দেন।রুহী বলল,
”বাবা বাচ্চার হাতে টাকা দিয়েননা।”
”তোমাকে দেইনি।আমি আমার নাতনীকে দিয়েছি।”
রুহী হেসে দেয় শ্বশুরের কথায়।সেদিন ঘরে ফিরে চিন্তায় পড়ে যায় রুহী। কিভাবে মানাবে তার লোকটাকে।সে যে মানতেই চায়না।রামীন ভাইয়ের মা বললে কি সব মানবে সে?সব ঠিক হবে তো?রাতে ঘুমের সময় রোয়েন রুহীকে কাছে টেনে নেয় তারপর ওর গাল চেঁপে ধরে বলল,
”এখন আমাকে সময় দিতে হবে।”
রুহী সরে যেতে চাইলো।রোয়েন ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় মুখ ডুবায়।রুহী আর না করতে পারেনা।রুহীকে অসংখ্য ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে রোয়েন।রুহী তার লোকটাকে দেখছে।সে কতোটা অন্ধকারে আছে।নিজের মায়ের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস আর ভালবাসা নিজের পিতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে।নিজের মায়ের আসল রুপ জানলে কি করবে সে?”রুহী হাতের পিঠ দিয়ে চোখের কোনা মুছে নেয়।দ্রিধা আজ ওর বুকে ঘুমিয়ে আছে। মেয়ে কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে যায় রুহী।পরদিন সকালে রোয়েন যাওয়ার পর পরই রাভীন রুশান চৌধুরীকে নিয়ে রামীনদের বাসায় চলে আসে রুহী।রামীনের মা রোয়েনের বাবাকে দেখে অবাক।জলদি হেঁটে এসে বললেন,
”ভাই আপনি?কেমন আছেন?”
”ভালো আছি।আপনি?”
”ভালো।আপনি কই ছিলেন এত বছর?”
”অস্ট্রিয়াতেই ছিলাম।রোয়েনকে খুঁজতে এখানে এলাম।”
”ওহ।”
রুহী হঠাৎ বলল,
”আন্টি ওর মায়ের বেস্টফ্রেন্ড ছিলেন আপনি।”
”রুহী মামনি ওকে বেস্টফ্রেন্ড বলবেনা।সবসময় ও আমাকে ছোট করে দেখে গেছে।যতো রকম অশ্লীল কাজ করতো।না করলে ও শুনতো না।ওকে দেখলে কেউই বলতে পারবেনা ও বিবাহিত ছিলো।কতো লোকের সাথে কি করতো কে জানে?”
কিছুটা রেগে বললেন রামীনের মা।রুহী বলল,
”আন্টি ওর মায়ের সত্য কথা গুলো রোয়েনকে বলুন।ও আপনাকে বিশ্বাস করবে।”
”দরকার কি?ওর মায়ের সম্পর্কে ওর মনে বাজে ধারনা আনার দরকার আছে বলে মনে হয়না।”
”মা এখন এটা করতেই হবে কারন রোয়েন মনে করে বাবাই মাকে মেরেছে।”
আৎকে উঠলেন রামীনের মা।বললেন,
”কি বলো?”
”জি।এতো বছর বাবাকে ঘৃনা করে এসেছে শুধু।”
চিন্তায় পড়ে গেলেন রামীনের মা।তারপর অনেক্ষন সময় নিয়ে বললেন,
”আমি যাবো।”
সেদিন রামীনের মা আর বাবা কে নিয়ে বাসায় চলে যায় রুহী।সন্ধ্যায় ফিরে আসে রোয়েন।ঘরে রামীনের মাকে দেখে বেশ অবাক হলে ও হেসে বলল,
”আন্টি ভালো আছেন?”
”এইতো আব্বু।তুমি কেমন আছো?”
”আলহামদুলিল্লাহ। রামীনরা রওনা হয়েছে তো।”
”হ্যা।তোমার সাথে কথা আছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
রোয়েন পাশে দাঁড়ানো রুহীকে দেখে নিয়ে বলল,
”বলুন।”
”তুমি তোমার বাবার খবর নাও?”
”ওনার কথা আমার সামনে বলবেননা।”
বেশ রেগে বলল রোয়েন।ওনি হেসে বললেন,
”বাবা তুমি শুধু শুধু রাগ হচ্ছো তোমার বাবার ওপর।যেখানে ওনার কোন দোষ নেই।”
”কি বলতে চান?”
বেশ মোটা শোনা গেলো রোয়েনের কন্ঠ।ওনি পুরো টা বলতে শুরু করেন রোয়েনের বাবা মায়ের বিয়ের আগ থেকে সব ঘটনা।এমনকি রোয়েনকে কতবার নষ্ট করতে চেয়েছিলো সব।তারপর ওর হাতে একটা ডায়েরি ধরিয়ে বলল নাও তোমার মায়ের সিক্রেট ডায়েরী। রোয়েন সেটা খুলতেই প্রচন্ড ঝটকা খেলো।লেখা পুরো মিল ওর কাছে যে ডায়েরী আছে সেটার সাথে।যতোটা পড়ছিলো লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছিলো রোয়েন।ওর মা কার সাথে শুয়েছে সেটার অনুভূতি কতো দামী নেশা দ্রব্য নিয়েছে,খ্রীষ্টান হয়ে ও মুসলিম নাম ব্যাবহার করে সুনাম লাভ করেছে সব।রোয়েনের আজ কান্না পাচ্ছে।বুক ফেঁটে চৌচির হচ্ছে।কি দেখছে ও।কাকে বিশ্বাস করেছে এতোদিন?কাকে ভালবেসেছে এতোদিন?নিজের বাবাকে যা না তা বলেছে।রোয়েনের চোখজোড়া লাল হয়ে এসেছে।আর অশ্রু গড়াচ্ছে সেই চোখজোড়া বেয়ে।রোয়েন হাত মুঠ করে সোফার হ্যান্ডেলের ওপর শক্ত করে ফেললো। রুহী কেঁপে উঠে।রোয়েন রেগে বলল,
”ব্লাডি উইছ আই ওয়ান্না কিল ইউ ড্যাম।গোটু হেল মিস ফ্লোরা।আই ডোন্ট ওয়ান্না কল ইউ মম নেভার।ইউ আর ব্লাডি শিট।ক্যারেক্টারলেস লেডি।ইউ স্পয়লড মাই লাইফ!!!”
রুহী কে অবাক করে দিয়ে সজোরে কেঁদে উঠে রোয়েন।রুহী চেয়ে ও যেতে পারছে লোকটার কাছে।পারছেনা তাকে জড়িয়ে ধরতে।রোয়েন চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।রুহী আজ প্রথম স্বামীর এমন করুন রুপ দেখছে।দ্রিধা ও কাঁদতে শুরু করেছে।নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে এমন মায়ের কারনে।নিজের ওপর ঘেন্না হচ্ছে রোয়েনের।কাঁদতে কাঁদতে রোয়েন খেয়াল করলো ওর মাথায় কারোর হাত।মাথা উঠিয়ে বাবাকে দেখে আর কিছু না ভেবেই দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।রাভীন চৌধুরী ও কাঁদছেন খুশির কান্না।রোয়েন বলছে,
”আ’ম সরি বাবা। মাফ করে দাও আমাকে। মেরে ফেলো তোমার হাতে।তোমার ছেলে হওয়ার যোগ্যতা নেই আমার।বাবা আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিও।সারটাজীবন ঘৃনা করে এসেছিলাম তোমাকে।তোমাকে চিনতে পারিনি বাবা।”
”রুশ তুই এভাবে বাবা ডাকছিস।এই হৃদয় থেকে মাফ চলে আসছে।তোর ওপর কখনোই ছিলামনা।খারাপ লাগতো তোকে কাছে পাইনি কখনো।”
”বাবা আমাকে ছেড়ে আর কোথাও যেওনা।”
”কই যাবো রুশ।আমার পুরা দুনিয়া এখানে।তুই আমার দ্রিধা আর রুহী।”
রোয়েন সরে আসে।রাভীন ছেলের চোখ মুছে বলল,
”আমরা সবাই একসাথে থাকবো সবসময়।”
”জি বাবা।”
রোয়েন বলল,
”বাবা তুমি বসো।রুহীকে দেখে আসি।”
রুহী উপর থেকে মেয়ে নিয়ে নিচে এসে রামীলার কোলে দিলো।তারপর সবাই মিলে ডিনার করে নেয়।রামীনের মা চলে যায় ওনার বাসায়।বাবা ও ওনার রুমে চলে যান ঘুমাতে।রোয়েন রুমে এসে দেখলো একটি লাগেজ গুছানো।রুহী মেয়ে কে রেডি করাচ্ছে।রোয়েন দৌড়ে রুহীর হাত চেঁপে ধরে,
”কই যাও?”
রুহী রোয়েনের হাত ছাড়িয়ে বলল,
”আমি এখানে আর থাকবো না।”
”থাকবেনা মানে?কই যাবে তুমি?”
”বলতে হলে তোমাকে নিয়ে যেতাম।কিন্তু এখানে আর থাকবোনা। সম্ভব না থাকা।”
”দেখো রুহী যা হয়েছিলো আমার দোষ ছিলো প্লিজ যেওনা।”
”আমাকে আটকানোর চেষ্টা করবেনা।খুব খারাপ হবে।সরে দাঁড়াও।”
রুহী রোয়েনকে সরিয়ে দিয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে লাগেজ নিয়ে নিচে নামতে শুরু করে।রোয়েন রুহীর পিছন থেকে ওকে শক্ত করে ধরে বলল,
”কোথাও যাবেনা তুমি।”
”বাবু ব্যাথা পাবে।ছাড়ো আমাকে।”
রোয়েন ছেড়ে দিলে ও নিচে নামার পরপরই রুহীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
”রুহী প্লিজ আমি তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবোনা এমন করোনা।”
রুহী রোয়েন কে সরিয়ে দিয়ে বলল,
”তোমার রাগ জেদ সবসময়ই তোমার কাছে বেশি।আমি কখনোই ছিলাম না।”
বলেই রুহী বেরিয়ে যায়।বাহির পর্যন্ত আসে রোয়েন।রুহীকে গাড়িতে ঢুকতে বাঁধা দেয় কিন্তু রুহীকে কোন ভাবেই আটকাতে পারেনা। চলে যায় রুহী।রোয়েন রাস্তায় বসে পড়ে।কি হয়ে গেলো ওর সাথে?শেষ রাতে ঘরে ফিরে আসে ও।রুমের দিকে তাকাতেই বুক ফেঁটে আসতে চাইলো।বাবুর দোলনা,রুহীর জামা কাপড়।সারাটারাত আর দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি রোয়েন।
এদিকে আনিলা এতো রাতে মেয়ে কে দেখে অবাক।রুহীর চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন কিছু হয়েছে।রুহী ভিতরে এসে বসলে দ্রিধা কে কোলে নেন আনিলা তারপর বললেন,
”সব ঠিক আছে তো?”
”জি।”
”স্যার আসেনি?”
”নাহ।ঘুরতে এসেছি আমি।”
”ওহ ভালে।তাহলে কাল স্যারকে বলবো আসতে।সবাই লাঞ্চ করবো একসাথে।”
রুহী নিচে তাকিয়ে রইলো।কিছু বলতে পারলো না।
আনিলা খাবার দিতে চাইলে রুহী জানায় খেয়ে এসেছে।মা বাবার সাথে একটু গল্প করে মেয়েকে নিয়ে রুমে চলে আসে রুহী। দ্রিধাকে খাইয়ে ঘুমপাড়িয়ে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে থাকে।চোখের কোনা বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝড়ছে।এরই মাঝে দ্রিধা কেঁদে উঠে।ওর তো ক্ষুধা লাগবার কথা নয়।খাইয়ে তো ঘুম পাড়িয়ে ছিলো।তাহলে!!!কান্না বন্ধ হচ্ছেনা দ্রিধার।রুহী মেয়েকে বুকে নিয়ে শুয়ে থাকে।রোয়েন ও তো এভাবে মেয়েকে বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতো।
চলবে