The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 115

অপারেশনের সময় রামীন পুরো অস্থির হয়ে ছিলো। কখন আশফিনাকে দেখবে ও?ও কখন কথা শুনতে পাবে আশফিনার?সব ঠিক হয়ে যাবে তো?ওরা ও কি বাবা মা হওয়ার সুখ পাখি টা কি ওদের হাতে ও ধরা দিবে?কিছুই খায়নি ছয় ঘন্টা যাবৎ।প্রচন্ড ভয় আর টেনশনে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে রামীনের।দুরাকাত নফল নামাজ ও পড়েছে অন্য সব নামাজের সাথে।ওর আশফিনা কে চাই যেভাবে হোক।অপারেশন শেষ হলো।একজন ডাক্তার বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে।রামীন দৌড়ে এলো তার কাছে।লোকটার মুখে আন্তরিতার হাসি।সে বলল,
”মিঃ রামীন তোমাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।”
”স্যার আমার ওয়াইফ ভিতরে।তাই একটু আধটু এমন লাগছে।ও কেমন আছে?”
”পার্ফেক্টলি গুড।ওর সাথে দেখা করতে পারো।তবে কথা বলোনা।”
”শিওর স্যার।”
”তার আগে চলো তোমাকে একটা জামা দেই।এটার ওপর পরবে।তোমার স্ত্রীর যেহেতু অপারেশন হয়েছে সো ওর কাছে এভাবে না যাওয়া ভালো।রোগ জীবানু আসতে পারে।”
রামীন কিছু না বলে ডাক্তারের ঠিক করে দেয়া নার্সের সাথে চলে গেলো।নার্স তাকে সাদা একটা পোশাক মাথার ক্যাপ আর মাস্ক দিলো।তারপর ওকে নিয়ে চলল আশফিনার ওটিতে।কাঁচের ভিতর রাখা হয়েছে আশফিনাকে।মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।রামীন গিয়ে কাঁচের ওপর হাত রেখে তাকায় স্ত্রীর দিকে।ভাঙ্গা স্বরে ডেকে উঠলো,

‘আশু আমি এসেছি তোমার পাশে।তাকাও আমার দিকে একটা বার।”
পাশের নার্স বলল,
”ওনাকে ডাকবেননা।কাল কেবিনে দেয়া হবে তখন কথা বলে নিয়েন।”
”ওকে।”
অনেকটা সময় আশফিনার সাথে থেকে বেরিয়ে আসে রামীন। তারপর মা বাবা কে কল দিয়ে জানায় আশফিনার কথা।আশফিনার মাও কল দিয়েছিলো রামীনকে। রামীন জানিয়ে দিয়েছিলো ভালো আছে আশফিনা।রামীনকে অবশ্য হাসপাতালে থাকতে দেয়া হয়নি।কারন আশফিনাকে কেবিনে না দেয়া পর্যন্ত হাসপাতালে থাকতে পারবেনা রামীন।কিন্তু রামীন প্রায় জোর করেই থেকে গিয়েছিলো।
এদিকে রুহীর সাথে রোয়েনের সম্পর্কের তেমন কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছিলোনা।রুহী প্রয়োজন ছাড়া তেমন কোন কথাই বলেনা।প্রচন্ড অস্থিরতায় সময় গুলো কাঁটছে রোয়েনের।রুহীকে কাছে টানলে ও আসেনা।রোয়েন আর পারছেনা এসব নিতে।কতো আর থাকা যায় এভাবে?
অফিসে বসে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে দুহাতে কপাল চেঁপে ধরে রোয়েন।রুহী কেন এমন করছে এর কারন জানা নেই ওর।যদি রাগ থাকতো তাহলে কথা বলতো না আর সেদিন জিজ্ঞাসার পর রুহী বলেছিলো অতীত নিয়ে ভেবে বসে থাকা চলে না।তাহলে কেন এমন করছে রুহী।
কোথা ও কি কোন ভুল হচ্ছে ওর?
এদিকে আরমান হামিদ পর দিন বিকেলে মেয়ের রুমে আসেন।সামায়রা পড়ছে।আরমান হামিদ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।সামায়রা বাবার দিকে একটু হেসে জিজ্ঞাস করলো,
”কিছু বলবে?”
”হ্যারে মা।একটু কথা ছিলো।তুই পড়ছিস তাহলে এখন আর না বলি।”
”না বাবা বলো।”
”আচ্ছা শোন তোর রহমান আঙ্কেল ওনার ছেলে দিরহানের জন্য তোকে পছন্দ করেছে।দিরহান নিজেই তোকে পছন্দ করেছে। দেখ মা বড় হয়েছিস একসময় না একসময় বিয়ে হবেই তোর।তোর মায়ের ও হয়েছে তোর আপুর ও হয়েছে তাইনা?তোকে ও তো করতে হবে।তোর মত মা।তুই যা বলিস তাই হবে।ছেলে জাপানে থাকে অনেক ভালো ওরা।”
সামায়রা কিছু বলতেই পারেনা।চুপচাপ হয়ে যায়।একদম থমকে যায় ও।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।এত জলদি এসব খবর শুননে ভাবতেই পারেনি ও।বুক ভার হয়ে আসে ওর।আরমান হামিদ মেয়েকে আরো কিছু বলে বেরিয়ে যান কিন্তু কোন কিছুই ওর কানে যায়নি।
বিয়ের সম্বন্ধ আসার পর থেকেই সামায়রা একে বারে চুপ হয়ে যায় কারোর সাথে কথা বলে না তেমন।
ফাহমিনের সাথে ও যোগাযোগ করেনি ও।কারোর সাথে কথা বলার উৎসাহটাই হারিয়ে ফেলেছে ও।সেদিন ফাহমিন অনেকবার কল দেয়ার পর একসময় কল রিসিভ করে সামায়রা।ফাহমিন রেগে বলতে শুরু করলো।
”কি হলো?করছোটা কি?কথা বলছোনা।ডাকলে ও শুনোনা। কি হয়েছে তোমার?”
”ভালো লাগছেনা আমার।”
একটু শান্ত গলায় ফাহমিন বলল,
”কি হয়েছে সামায়রা?”
”বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমার মত জানতে চাইছে।
মজার সুরে ফাহমিন হেসে বলল,
”অভিনন্দন।হ্যা বলে দাও।তাহলে আমরা দাওয়াত পাবো তোমার বিয়ের।”
সামায়রা প্রচন্ড বিরক্ত হয় ফাহমিনের কথায়। আসলেই কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা ওর ফাহমিনের সাথে।লোকটা এ পরিস্থিতিতে এমন কথা কিভাবে বলতে পারে?জানেনা সামায়রা।ও বিরক্তি নিয়ে বলল,
”ধ্যাত।আপনাকে এসব বলে কোন লাভ নেই।”
বলে কল কেঁটে দেয় সামায়রা।ফাহমিন ফোন রেখে হাসতে থাকে মেয়েটার বাচ্চাপনায়।কিন্তু পরপরই অজানা অাতংক চেপে ধরে ওকে।সামায়রার বিয়ে অন্য কারোর সাথে হবে সেটা ভাবতেই পারেনা ও।সামায়রাকে তো ও ভালবাসে।কি করে আরেকজনের সাথে ওকে দেখবে ফাহমিন?চিন্তিত হয়ে পড়ে ফাহমিন।কি করবে এখন ও?কিছু বুঝতে পারছেনা কি করা উচিৎ এ সময়ে।
হঠাৎ ফাহমিন রোয়েন কে কল দেবার কথা চিন্তা করে কারন সামায়রাকে ও ভালবাসে সেটা রোয়েন জানে।রোয়েনের নম্বরে ডায়াল করে ফাহমিন।
অফিস থেকে বের হবার সময়ে ফোন বেজে উঠে রোয়েনের।কালো কোটটা গায়ে জড়িয়ে কল রিসিভ করে ও।
অপরপাশ থেকে ফাহমিন বলল,
”তোর সাহায্য লাগবে।”
”বল কি হয়েছে?”
”সামায়রার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করছে।আমি ওকে ভালবাসি রোয়েন।তুই জানিস।”
”আরমান আঙ্কেলের সাথে তোদের নিয়ে কথা হয়েছিলো আমার।ওনি কিছুই বলেননি।তুই ওনাদের বাসায় আঙ্কেল আন্টিকে পাঠা।”
”যদি কোন প্রবলেম হয়।জানিসই তো বাবা সহজে রেগে যায়।”
”রিল্যাক্স ওনারা কোন সমস্যা করবে বলে মনে হয় না।রুহীর মামা মামী ভালো মানুষ।তাই পাঠায়ে দে আঙ্কেল আন্টিকে। পারলে বড় আপাকে ও পাঠায় দে।”
”ঠিক আছে।”
”হুম।সামায়রার সাথে কথা হয়েছে তোর?ওকি বলেছিলো ও তোকে ভালবাসে।”
”কখনো বলেনি বাট ওর কথায় ওর আচরনে মনে হয় ও আমার জন্য ফিল করে।”
”হুম।আচ্ছা শোন বাসায় গিয়ে তোকে কল দিচ্ছি।”
”ওকে।”
রোয়েন ফোন কেঁটে ঘরে যাবার জন্য বেরিয়ে যায়।ঘরে পৌছে দরজার সামনে আসতেই দ্রিধার কান্না শুনতে পায় রোয়েন।ঘরে ঢুকে দেখে বাবু শুয়ে কাঁদছে আর রুহী ওকে কোলে নিয়ে হাঁটছে এরুম ওরুম।রোয়েন রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করে,
”কি হলো ওর?”
”পেট ভালো নেই।পেট ব্যাথা হচ্ছে।”
রোয়েন চিন্তায় পড়ে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।রুহী নিচে খাবার গরম করতে গেছে।
মেয়েকে কোলে তুলে নিজের পার্সোনাল ডাক্তারকে কল দেয় রোয়েন।
ডাক্তার জানায় চিন্তার কোন কারন নেই।রুহী যেন ঝাল কিছু না খায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।তবে গুড়া মরিচ টা এখন খাবার তালিকায় রাখা যাবেনা। আর বাবু যেহেতু বাহিরের খাবার খাচ্ছেনা তাহলে ওর খাবারে কোন প্রকার পরিবর্তন আনতে হবেনা।রোয়েন ডাক্তারের সাথে কথা শেষ করে নিচে নেমে আসে।রুহী মেয়ে কোলে নিলে রোয়েন খেতে বসে।খাবার টেবিলে বসেই রোয়েন বলল,
”ডাক্তারকে কল দিয়েছিলাম।ওনার মতে তুমি গুড়ামরিচ টা কয়েকদিন এভয়েড করো।আর ওকে স্যালাইন খাওয়াতে পারো।”
”হুম ঠিক আছে।”
রুহী আর কিছু বলেনি।চুপ চাপ বসে থাকে রোয়েনের পাশে।রোয়েন আবার ও বলল,
”ফাহমিন কল দিয়েছিলো।সামায়রার জন্য মামা মামী ছেলে দেখেছে।সামায়রা ও কিছু টা চুপচাপ হয়ে গেছে।”
বলে চুপ হয়ে যায় রোয়েন।এবার রুহী বলল,
”ফাহমিন ভাই কিছু করবেননা?”
”ওকে বলেছি ওর বাবা মাকে মামার বাসায় পাঠাতে।”
”হুম।”
দুজনের মধ্যে তেমন কোন কথাই হয়নি।এদিকে আশফিনাকে কেবিনে শিফট করা হয়।রামীন ওর পাশে বসে আশফিনার হাত নিজের হাতে তুলে নেয়।আশফিনা দূর্বল চোখে তাকায় স্বামীর দিকে।রামীন বলল,
”কেমন আছো?”
”ভালো।”
”আশু এবার আমরাও বাবা মা হতে পারবো।”
”ইনশাল্লাহ।”
রামীন মুখ বাড়িয়ে আশফিনার কপালে চুমু খায়।তারপর নিজ হাতে আশফিনাকে খাইয়ে দেয়।
এদিকে ফাহমিন বাবা মায়ের কাছে এসে বসে।ওনারা দুজনে চা খাচ্ছেন।একমাত্র ছেলেকে দেখে মা হেসে বললেন,
”আব্বু চা খাবি?”
”না মা একটা কথা ছিলো।”
”বল।”
”তোমাদের মনে আছে রোয়েনের শালীর কথা?”
”হুম আছে তো। সামায়রা না?”
”হুম।ওর না বিয়ের কথা চলছে।”
”আলহামদুলিল্লাহ ভালো তো।”
”কিন্তু আমি….. ”
লজ্জায় ফাহমিন কিছু বলতে পারেনা।তখন ওর বাবা বলল,
”কি হলো?কিছু বলতে চেয়ে ও চুপ কেন তুই?”
”বাবা আমি ওকে খুব ভালবাসি।”
”ওর বয়স কতো?”
”সতের আঠারো হবে।”
”আর তোর?”
”ত্রিশ বাবা।তাতে কি হয়েছে?আমি তো ভালোবাসি ওকে।”
”হুম।এখন কি করতে হবে?”
”ওর বাসায় তোমাদের যেতে হবে।”
”যদি না করে দেয় ওরা।”
”রোয়েন ওর বাবার সাথে কথা বলেছিলো।তোমরা যাও আমার জন্য প্লিজ।যদি কিছু হয় সেটার দায়ভার আমি নিবো।”
”হুম।আচ্ছা সময় করে আমরা যাবো। ”
”থ্যাংক ইউ বাবা।”
”বাসার এ্যাড্রেস দিস।”
”জি বাবা। আনছি আমি।”
ফাহমিন বেরিয়ে আসে।ওর বাবা ইসলাম খান একজন প্রফেসর।প্রচুর আধুনিক মনোভাবাপন্ন ওনি।ওনাদের ও প্রেমের বিয়ে তাই ফাহমিন জানতো ওর ব্যাপারটায় বাবা আপত্তি জানাবেননা। নিজেকে ভীষন ভাগ্যবান মনে হয় ওর।
চলবে