Love Right

Love Right ! Part- 16

নিশু:আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নীলের মেজাজ চরম খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এ কথাটা বলার জন্য ওকে মিটিং রুম থেকে বের করে এনেছে।
নীল:(নীল শান্ত হো!…তুই তো জানিস ও একটা পাগল!)
নিশু:কি হলো বলো?
নীল:কি বলবো?(প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে)
নিশু:I love you too!
নীল রাগি লুকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
নিশু:এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
নীলের রেগে নিশুকে সবে কিছু বলতে যাবে এমন সময় লারা এসে ডাক দিলো….স্যার!..সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে।
নীল নিশুর দিকে তাকিয়ে বললো…তোমাকে তো আমি পরে দেখছি।আগে মিটিং এটেন্ড করে আসি।
ও লারাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো।নিশুও পেছন পেছন ঢুকলো।
নীল প্রেজেন্টেশন শুরু করে দিলো।নিশু থম মেরে বসে আছে।টি.কে.কম্পানির এম.ডি মি.আরমান এর হাবভাব নিশুর মোটেও ভালো লাগছে না।কিছুক্ষণ পর পর ওর দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে।নীলও ব্যাপারটা খেয়াল করলো।
মিটিং শেষ হতেই আরমান নিশু ডাক দিলো।নিশু নীলের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।আরমান ডাক দিতেই ও বিরক্ত হয়ে নীলের দিকে তাকালো।
নীল:যাও!..কি বলে শুনে এসো।
নিশু চলে গেলে লারা বললো…স্যার!…আমার মনে নিশিতা ম্যামকে পাঠানো ঠিক হয়ে নি।
নীল:তুমি তোমার নিশিতা ম্যামকে চেনো নি লারা।হাড়ে হাড়ে বজ্জাত এই মেয়ে।আমি তো ভাবছি আরমানের কথা।আজকে ওর মাথা খারাপ করে দেবে।
লারা চুপ করে আছে।
নীল:তুমি কি আর কিছু বলবে লারা?
লারা:জ্বি না স্যার!

লারা চলে গেলে নীল বেরিয়ে গেলো নিশু কি করছে দেখার জন্য।ও কেবিন থেকে বেরোতেই দেখলো নিশুর কেবিনের সামনে সব স্টাফরা দাঁড়িয়ে আছে।নিশু আরমানের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলছে।নীল গিয়ে সামনে দাঁড়াতেই সব স্টাফরা সরে গেলো।
নীল:কি হচ্ছে এখানে?
নিশু:স্যার ও আমাকে ইনফরমেশন লিক করার প্রপোজাল দিচ্ছে।…..হারামি…আবার বলে আমাকে বিয়ে করবে?
নীল:তাই নাকি?
নিশু:জ্বি স্যার!…লুচুর বাচ্চা লুচু…মেয়ে দেখলেই হুশঁ থাকে না।
নীল:এসব কি ধরনের ব্যাবহার নিশু?
নিশু:তো কি করবো?
আরমান:ও মিথ্যে কথা বলছে।
নীল এগিয়ে গিয়ে দিলো আরমানের গালে কষে এক চড় বসিয়ে।নিশু হাঁ করে আছে।নীল হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে।
নীল:এভাবে!…ওকে মুখে বলে লাভ হবে না।
নিশু:স্যার!…আমি একটা মারি?
নীল:(একেবারে বাচ্চা!).
ও হাসতে হাসতে বললো….মারো!
থাপ্পড় খেয়ে আরমান লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।মনিকা এগিয়ে এসে বললো…স্যার!…আরমান স্যার আমাদের অনেক পুরোনো বিজনেস পাটনার।একজন নতুন এমপ্লয়ি কে কি আমাদের এতটা রিলায়েবল ভাবা ঠিক হচ্ছে?…না মানে এমনও তো হতে পারে আরমান স্যার সত্যি বলছেন।
অপমানে নিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
মনিকা না থেমেই বললো…প্রথম থেকেই এই মেয়েকে আমার ভালো লাগে নি…এই মেয়ে একটা মতলববাজ মেয়ে!
নীল এতক্ষন হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে ছিলো।রাগে ওর চোখ মুখ প্রচন্ড লাল হয়ে গেলে।কান দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে।ও সামনে থাকা চেয়ারটা নিয়ে তুলে প্রচন্ড রাগে আছাড় মারলো।মনিকা সহ বাকি সবাই ভয়ে কাপঁছে।
নীল:You have crossed your limits!…How dare you to talk to her like that?….ও কবে এসেছে না এসেছে সেটা আমি তোমার চেয়ের বেটার জানি।আর বিশ্বাস?…আমি ওকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।….আর কি বলেছিলে?…প্রথম দিন থেকেই তোমার ওকে ভালোলাগে নি?…তোমার ভালোলাগার ওপর ডিপেন্ড করবে নাকি ও কি করবে না করবে?…কোন সাহসে তুমি ওকে এসব বললে?…খবরদার যদি আর কখনো তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলেছো।
মনিকার চোখমুখ লাল হয়ে আছে।ও কোন কথার বলার সাহস পাচ্ছে না।
নীল:কি হলো?…দাঁড়িয়ে আছো কেন?..মাফ চাও ওর কাছে।(ধমক দিয়ে)
মনিকা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।অপমানে ও লাল হয়ে গেছে।
ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে নীল রাগে চিৎকার দিয়ে বললো….এক্ষুনি আমার অফিস থেকে বেরিয়ে যাও তুমি।
মনিকা ভয়ে তাড়াতাড়ি নিশু কাছে গিয়ে মাফ চাইলো।
এরপর নীলের দিকে তাকিয়ে বললো…আই এম সরি স্যার!
নীল:দাঁড়াও!
মনিকা:জ্বি স্যার!(আল্লাহ এবারের মত বাঁচাও!)
নীল লারার দিকে তাকিয়ে বললো….সিসি টিভি ফুটেজ টা একবার দেখান তো।..আমার মনে হয় নিশুর সাথে কি কি হয়েছিল আমাদের দেখা উচিৎ।
লারা সিসি টিভি ফুটেজ চেক করতেই দেখলো আরমান সত্যি সত্যিই নিশুকে ইনফরমেশন লিক করার প্রপোজাল দিচ্ছে।নিশু কে বিয়ে করারও প্রস্তাব দেয় ও।লারা নীলের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।কতটা ভরসা করলে না দেখেই একটা মানুষের মুখের কথা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে?
মনিকা:সরি স্যার!
নীল:এবার সবাই নিজের কাজে যান।আরমান নিশুর কাছে মাফ চেয়ে বেরিয়ে গেলো।
লারা নিশুর কাছে গিয়ে ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
নীল:লারা??
লারা:জ্বি স্যার?
নীল নিশুর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো..মনিকার কথা কিন্তু যুক্তি ছিলো?…কি বলো?
লারা হাসছে ওর কথা শুনে।আজকেই প্রথম নীলকে হাসতে দেখলো ও।আর আজকেই প্রথম এতটা রাগতে দেখলো।
নিশু:লারা?
লারা:বলো।
নিশু:উনাকে বলো আমার সাথে যেন মজা না করে।আমার মন মেজাজ ভালো নেই।
নিশু এখনো ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাদঁছে।
নীল:লারা?
লারা:জ্বি স্যার?
নীল:তুমি আমার জন্য একমগ কফি বানিয়ে আমার টেবিলে রেখে এসো।
লারা:জ্বি স্যার!
লারা চলে গেলে নীল নিশুর সামনে বরাবর এসে বসলো।
নীল:সারাদিন আমার মাথা খেয়ে ফেলো।আর জায়গা মত এসে একেবারে চুপ?
নিশু কেঁদেই চলেছে।
নীল একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে শুরু করলো…ও যখন তোমাকে এতগুলো কথা শুনালো তুমি চুপ করে ছিলে কেন?
নিশু:আমি জানতাম তুমি ওকে উচিৎ জবাব দেবে!
নীল:তাহলে কাদঁছো কেন?
নিশু:আমি অন্য কারনে কাদঁছি!
নীল:(😐ড্রামার শেষ নেই এই মেয়ের!)…তো কি জন্য কাদঁছো তুমি?
নিশু:তুমি আমাকে আই লাভ ইউ টু বলো নি তখন।
নীল:সেরকম কি কোন কথা হয়েছিলো যে আমি তোমাকে আই লাভ ইউ টু বলবো?
নিশু ওর মুখের দিয়ে তাকিয়ে বাচ্চাদের মত অসহায় গলায় বললো…কেন তুমি আমাকে ভালোবাসো না?
নীল:এই একটা কথা ছাড়া তোমার মুখে আর কোন কথা নেই?
নিশু:আমার প্রশ্নের উত্তর দাও!
নীল:আমি দিতে বাধ্য নই।
নিশু:….But I had loved you, I love you and I will love you!
নিশু উঠে কাদঁতে কাদঁতে চলে গেলো।নীলের মাথায় ঢুকছে না ও কি করবে?…এক দিকে ওর ইগো আরেকদিকে নিশু!…মন বারবার বলছে নিশু কোন মিথ্যে কথা বলছে না।নিশ্চই কিছু একটা হয়েছিলো সেদিন।

নীল ওর চেম্বারে বসে কাজ করছিলো।নিশু এসেছে ওকে ফাইল দেখাতে।এমন সময় রুশা অফিসে এসেই নীলের রুমে ঢুকলো।ঢুকেই সবে নীলকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই নিশু এসে নীলের সামনে বরাবর দাঁড়ালো।নীল ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।রুশা দেখতে পায় নি যে নিশু রুমে আছে।
রুশা অবাক হয়ে বললো…নিশু??..তুমি?
নিশু:হ্যাঁ আমি।
রুশা:এত কিছুর পরও তুমি নীলের কাছে আসার সাহস কি করে পাও?
নিশু পেছন থেকে নীলের হাত দুটো নিয়ে ওর কোমরে রেখে বললো….অসভ্য!…শয়তান মেয়ে!…তোকে আমি খুন করবো যদি আমার নীলের কাছে আসার চেষ্টা করিস!…ও শুধু আমার!
নীল অবাক হয়ে আছে নিশুর কান্ডে কিন্তু হাত সরালো না ওর কোমর থেকে।রুশা রাগে ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু এই মুহূর্তে নিশুকে কিছু বলা ঠিক হবে না।
নিশু:যাও বেরোও বলছি,অসভ্য মেয়ে!
রুশা পার্স নিয়ে রেগে বেরিয়ে গেলো।
নীল:কি হয়েছে বলতো?…তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বললে কেন?
নিশু:আমি একটু আসছি।

নিশু দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো রুশাকে খুঁজতে।ওকে আরো কিছু কথা বলতে পারলে ভালো লাগতো।শয়তান মেয়ের জন্য নীল ওকে ভুল বুঝে আছে।
রুশা:কি ব্যপার নিশু?…আমাকে খুজঁছিলে?
নিশু:লাজ লজ্জা বলে কিছু নেই তোমার?
রুশা:কেন সেটা দিয়ে কি হবে?
নিশু:বেহায়া মেয়ে!….আমি আজকেই নীলকে তোমার সব কথা খুলে বলবো!তুমি আমার সাথে গেইম খেলেছিলে!
রুশা:তারমানে রুশাকে ছাড়া তোমার তোমাদের লাভ স্টোরি এগোলো না।
নিশু:মানে?
রুশা:মানে তোমার ভালোবাসা শুধু মুখের কথা।
নিশু:একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবে না।
রুশা:সেটাই তো।..তুমি নীলকে সত্যিটা বলবে তারপর ও তোমাকে ভালোবাসবে….তারমানে তো আমিই তোমাদের ভালোবাসার কারন..আমি ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করছি তাই না?
নিশু:তুমি কি ভাবছো?…তুমি এসব কথা বললে আমি নীলকে সত্যিটা বলবো না?
রুশা:আমি কিছুই বলছি না।জাস্ট তোমাকে একটা চ্যালেঞ্জ দিতে চাই!
নিশু:তোমার চ্যালেঞ্জে আমি থুথু মারি!
নিশুর রাগে গা কাপঁছে।
রুশা:ভীতুর ডিম!…যাই হোক….আমার চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে নীল নিজে তোমাকে ভালোবাসি বলবে তবে তুমি ওকে সত্যটা বলতে পারবে না।দেখি তোমার ওপর কত বিশ্বাস ওর?
নিশুকে চুপ করে থাকতে দেখে ও বললো..কি?…সাহস নেই না?
নিশু ভালো করে বুঝতে পারছে যে রুশা নিজের সত্যিটা ঢাকার জন্য এসব বাহানা করছে।কিন্তু তারপরও ওর মনে হচ্ছে চ্যালেঞ্জটা এক্সেপ্ট করা উচিৎ।রুশাকে ও দেখিয়ে দিবে!….হারামিটার এত কনফিডেন্স ওর সহ্য হচ্ছে না।
নিশু:ঠিক আছে তোমার চ্যালেঞ্জ আমি এক্সেপ্ট করলাম।
রুশা:এবার দেখো তোমার চোখের সামনে দিয়ে কিভাবে আমি নীলকে বিয়ে করে নেই জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
নিশু ওর দিকে তাকিয়ে ঠাট্টার সুরে বললো…আমি যখন ছিলাম না তখনই তুমি নীলকে ভোলাতে পারো নি।আমি থাকতে সেই সাহস কি করে দেখাও বলতো?
রুশা:(তোমাকে তো আমি শান্তিতে থাকতে দেবো না নিশু!)…সেটাই সময় হলেই দেখবে।
রুশা বেরিয়ে গেলে নিশু সেখানে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে।লারা এসে ওর পাশে দাঁড়ালো।
লারা:এনিথিং রং?
নিশু চুপ করে আছে।
লারা:যদি বন্ধু ভাবো তো আমাকে খুলে বলতে পারো।আমি তোমার একজন ওয়েলউইশার।
নিশু ওকে শুরু থেকে সব খুলে বললো।সব শুনে লারা হাসছে।
নিশু:হাসছো কেন?
লারা:রুশা মেয়েটা আসলেই বোকা।এটা কোন চ্যালেঞ্জ হলো?
নিশু:মানে?
লারা:মানে খুব সিম্পল।স্যারের যা বেহাল দশা করেছো তুমি।উনি যে তোমাকে ভালোবাসে এটাতো আমরা সবাই বুঝে গেছি।…আসলে তুমি আসার পর থেকে মনে হচ্ছে উনার ইমোশন আছে এর আগে তো মনে হতো উনি একটা হিউমেন রোবট।
নিশু মন খারাপ করে বললো…ও তোমাদের সাথে অনেক রুড বিহেভ করতো না?…সব আমার জন্য।আমার নীল কারো সাথে কখনো খারাপ করতো না।
লারা: উনি কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে নিশু।আর যাই হোক উনি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।তবে তোমার ওপর অনেক অভিমান উনার।কিন্তু সেটা শুধু বাইরের।ভেতরে ভেতরে উনি তোমাকে অনেক ভালোবাসে।প্রবলেম শুধু এটাই যে উনি প্রকাশ করতে চান না।
নিশু:আমার তো সহ্য হয় না লারা।
লারা:ডোন্ট ওরি।আমি তোমার সাথে আছি।

রাতের বেলা নীল বাসায় আসতেই নিশু প্রথমে গেট খুলে দিলো।
নীল:তুমি এখানে কি করছো?
নিশু:খালামনি ফোন করে বললো চলে আসতে তাই চলে এলাম।
নীল:কখন এসেছো?
নিশু:অফিস ছুটির পর বাসায় গেলাম।ব্যাগ গুছিয়ে সোজা চলে এলাম।
নীল:ব্যাগ নিয়ে এসেছো মানে থাকেবে নাকি?
ইলারা বেগম:ও এখন থেকে এখানে থাকবে।
নীল:উফফফ মা!….এ অফিসে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ আমার মাথা খারাপ করে দেয় আর তুমি একে চব্বিশ ঘন্টা আমার চোখের সামনে রাখার ব্যবস্থা করছো?
নিশু হাসছে নীলের কথা শুনে।নীল বিড়বিড় করতে উপরে চলে গেলো।
ইলরা বেগম:কি রে এবার পারবি তো আমার ছেলেটার মান ভাঙাতে?
নিশু ইলারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো….এবার খালি দেখো না তোমার ছেলেকে কেমন আমার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াই!
ইলারা বেগম:যাহ!
নিশু উনার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো….সঙ্গে ছেলের মাকেও খাওয়াবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *