Love Right

Love Right ! Part- 15

দুজনে অফিস থেকে বেরোতেই নীল সিকিউরিটি গার্ডকে বলে দিলো মেইনগেইটে তালা দিয়ে দিতে।নিশু মনে মনে ভাবছে নীল নিশ্চই গার্ডকে বলে দিয়ে ছিলো গেইট খোলা রাখতে তা না হলে এতরাত পর্যন্ত উনি গেইট খোলা রাখবে কেন?
নিশু নীলের দিকে তাকিয়ে বললো…তুমি উনাকে আমাদের জন্য ওয়েট করতে বলেছিলে?
নীল:তো কি করবো?
নিশু:ও মাই গড!…তা হা হলে আমি তো আটকা পড়ে যেতাম।
নীল বিড়বিড় করে বললো.. পড়লেই মনে হয় ভালো হত!
নিশু ওর দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বললো…কি বললে?
নীল:কিছু না!
নিশু:মিথ্যে কথা বলবে না।…বলো তাড়াতাড়ি কি বলেছো?
নীলের মেজাজা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এই মেয়ে একেকবার এক এক বাহানা বানাচ্ছে।এদিকে যে রাত হয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল নেই।
নীল দাঁতেদাঁত চেপে বললো…এক কাজ করি।…তুমি এখানে দাঁড়াও আমি কিছু খাবার দাবার কিনে নিয়ে আসি।তারপর দুজন মিলে খোশালাপ শুরু করে দেই কেমন?
নিশু ইচ্ছে করেই নীলকে আরো রাগিয়ে দিচ্ছে।ও অবাক হওয়ায় ভান করে বললো…অভ্যাস দেখছি এখনো বদলায় নি।মেয়ে দেখলে হুশঁ থাকে না,লুচু একটা!….একা একটা মেয়ের সাথে কি উদ্দেশ্যে রাত কাটাতে চাইছো তুমি?
নীল:😐…খবরদার বাজে কথা বলবে না।
নিশু এবার ভাব নিয়ে বললো….সত্য বলা থেকে কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না নীলাস হাসান।জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি সত্যের জন্য লড়ে যাবো😁।

নীল:(তোমাকে কি করে সোজা করতে হবে আমি ভালো করেই জানি!)
নীল হাতদুটো ভাঁজ করে একহাত মুখের ওপর দিয়ে বললো….খুবই বেশি সাহস তোমার তাই না নিশিতা জামান?….আমি কথা দিচ্ছি এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো।প্রতিশোধের আগুন আমার বুকে দাউ দাউ করে জ্বলছে।
নিশু গালে হাত দিয়ে হাঁ হয়ে আছে।নীল এগুলো কি বলছে?
নীলের থামার কোন লক্ষণ নেই ও বলেই যাচ্ছে….ছাড়বো আমি তোমাকে নিশিতা জামান।আমার হাত থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
নিশু বুঝে গেলো নীল ইচ্ছে করেই এমন করছে।কিন্তু ও দমে যাওয়ার পাত্রী নয়।ও জোরে চিৎকার দিয়ে শুরু করলো….খামোশ!…যত বড় মুখ নয় ততবড় কথা!
নীল:😮
ওর চিৎকারে নীলের কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
নিশু:😁কেমন দিলাম?
নীল:ড্রামাকুইন একটা!
নিশু ওকে একটা ভেংচি কেটে বললো…নিজেও তো কম ড্রামা করো নি।
নীল:এবার কি যাবে?
নিশু:কেনো গো তোমার অন্য কিছু করার ইচ্ছা আছে নাকি?
নীল:তুমি কি একটা কথার উত্তরও সোজাভাবে দিতে পারো না?
নিশু:পারি কিন্তু তোমাকে দিবো না।
নীল হতাশ হয়ে বললো….ঠিক আছে দেওয়া লাগবে না।চলো এগোই।

নিশু গাড়িতে উঠতেই নীল সীটবেল্ট বেধে দিলো।নীল গাড়ি স্টার্ট দিতেই নিশু ওকে থামিয়ে দিয়ে সীটবেল্টটা খুলে নিলো।
নীল:কি হলো?…সীট বেল্ট কেন খুলেছো?(ভ্রু কুঁচকে)
নিশু:আমার ইচ্ছা!
নীল ওকে আবার সীটবেল্ট বেধে দিতে গেলে ও নীলের হাতটা সরিয়ে দিলো।
নীল চোখ রাঙিয়ে বললো…নিশু?
নিশু:নীল!
নীল:নিশু?
নিশু:নীল!
নীল বিরক্ত হয়ে বললো….কি চাও তুমি বলতো?…এত রাতে কেন এমন পাগলামি করছো?
নিশু:আমি চাইলে দিবে!
নীল:না!(দৃঢ় গলায়)
নিশু:তাহলে জিজ্ঞেস করলে কেন?…মিথ্যেবাদী!
নীল দাঁতেদাঁত চেপে বললো…আমি বুঝতে পেরেছি তুমি ইচ্ছে করে আমার সাথে ঝগড়া করতে চাইছো!
নিশু:হ্যাঁ তুমি তো সব বুঝো!…কিন্তু গাড়িতে যে সীটবেল্ট লাগিয়ে বসতে হয় সেটাই শুধু বোঝ না।
নীল:নিজে সীটবেল্ট খুলে আমাকে এ কথা বলছো?
নিশু:আমি তো বেধেছি তুমি তো বাধোই নি।
নীল এতক্ষনে খেয়াল করলো তাড়াহুড়োতে ও সীটবেল্ট বাধতে ভুলে গেছে।
নীল:সাধে কি আর ড্রামাকুইন বলি?…সোজাসুজি বলতেই তো হত।….নাহ,উনি নাটক শুরু করে দিয়েছেন।
নিশু:এজন্যই বলে মানুষের উপকার করতে নেই!

অবশেষে নিশু বাসার সামনে এসে নীল গাড়ি থামালো।কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যখন বাড়িওয়ালা গেইট খুলছে না।
নীল:কি হলো?…গেইট খুলছে না কেন?
নিশু:আমি তো ভুলেই গেছি সাড়ে বারোটার পর গেইট বন্ধ করে দেয়।
নীল:এক্সট্রা কি দেয় নি তোমাদের?
নিশু:তারজন্য তো বাসায় কেউ থাকতে হবে যে এসে খুলে দেবে।
নীল:তো কি করবে?
নিশু:কি আর করবো?…তোমার সাথেই যেতে হবে?
নীল:😮মানে?….তুমি কি ভাবছো আমি এতরাতে তোমাকে নিয়ে বাসায় যাবো?
নিশু:তো কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছো তুমি?
নীল:আমি তোমাকে আমার সাথেই নিতে রাজি নই।
নিশু:দেখো আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।আজকে সারাদিন আমাকে যা খাটিয়েছো,পুরো শরীর ব্যথা হয়ে আছে।প্লিজ তাড়াতাড়ি বাসায় চলো!
নীল:না।
নিশু:কেন বলতো?…আমাকে বাসায় নিতে ভয় পাচ্ছো নাকি?
নীল:তোমাকে বাসায় নিতে ভয় পাচ্ছি না।কিন্তু যাওয়ার পথে তুমি যে আমার মাথাটা খেয়ে ফেলবে তার ভয়ে আছি।
নিশু ফিক করে হেসে দিলো।
নিশু:ঠিক আছে যাও।এই আমি চুপ করলাম।
নীল:তোমাকে আমি একটুও বিশ্বাস করি না।
নিশু:😐
ওকে এভাবে তাকাতে দেখে নীল বাধ্য হয়ে বললো….চলো।তাছাড়া তো আর কোন উপায়ও নেই।

বাসার বেল বাজাতেই ইশু এসে দরজা খুলে নিশু বলে এক চিৎকার দিয়ে উঠলো।
ইশু:নিশু??
ইলারা বেগমও ছুটে এসে নিশুকে জড়িয়ে ধরলেন।নীল সোজা উপরে চলে গেলো।
ইলারা বেগম নিশুর দিকে তাকিয়ে বললেন…সব কথা পরে শুনবো আগে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।ইলারা বেগম চলে গেলে ইশু নিশুকে একটা খোঁচা মেরে বললো….মান ভাঙাতে পারলি?…আয়াত আমাকে সব বলেছে।
নিশু হতাশ হয়ে বললো…..না রে!…
ইশু:তুই কিন্তু ঠিক করিস নি।অন্তত আমাকে সব খুলে বলতে পারতি…আমি হেল্প করতাম!…অবশ্য আজকে আমি আর মা ভাবছিলাম কালকে তোর সাথে দেখা করে তোকে বাসায় নিয়ে আসবো।
নিশু মনে মনে হাসছে।হা!হা!…একবার খালি আসতে পারলেই হয়েছে নীলের কি হবে ভাবতেই ওর হাসি পেয়ে গেলো।ওকে এভাবে হাসতে দেখে ইশু বললো…কি রে ড্রামাকুইন আবার কি বাঁদরামি করার চিন্তা করছিস?
নিশু:😁
ইশু মোনাজাতের ভঙ্গি করে বললো…আল্লাহ আমার ভাইকে হেফাজত করো তুমি!
এরপর দুজনে একসাথে হেসে উঠলো।
খেতে বসে নীলের সামনাসামনি নিশু বসেছে।নীল টেবিলে বসতে বসতে বললো…ইশু খেয়েছিস?
ইশু:আমি অনেক আগেই খেয়ে নিয়েছি।মা বসে ছিলো তোর জন্য।
নীল ইলারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো….তোমাকে কতবার বলেছি এতরাত পর্যন্ত বসে থাকবে না।শরীর খারাপ হয়ে যাবে।
নিশু:ঘরে বউ থাকলে তো খালামনিকে বসে থাকতে হয় না।…এইজন্যই তো বলি একটা বিয়ে করে নাও।
নীল:(কোথায় কি কথা বলতে হবে সেই জ্ঞানটা পর্যন্ত নেই!…মাথামোটা একটা!)
ইলারা বেগম আর ইশু হাসছে।নিশু লজ্জায় আর মুখ তুলতে পারছে না।
নীল নিশুকে রাগানোর জন্য বললো..মা আমার হবু বউয়ের ছবিটা নিশুকে দেখাও নি?
ইশুও এই সুযোগে নিশুর সাথে মজা করা শুরু করে দিলো।
ইশু:আমরা তো ভুলেই গেছিলাম।ঠিক আছে ঘুমানোর সময় দেখানো যাবে।
ইলারা বেগম এই দুইভাইবোনের চক্করে পড়ে ইলারা বেগম আর কিছু বললেন না।
নিশু খাওয়া ছেড়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
নীল:(অনেক জ্বালিয়েছো!বেশ হয়েছে)
নিশু অসহায় গলায় বললো..মেয়েটা কে রে ইশু?
ইশু:ভাইয়ার সাথে ঐদেশে একসাথে পড়েছে,আনারা!
নিশু:আনারা??
নীল:কেন তোমার কোন সমস্যা?
নিশু রাগে খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেলো।ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর এতকিছু হয়ে গেলো ইশু ওকে কিচ্ছু বলে নি?
ইশু:চলে গেলো।
নীল:মাথামোটা হলে যা হয় আর কি!
ইশু:তুই শুধু শুধু ওকে কষ্ট দিচ্ছিস!
নীল:আমি??…..ও কোনদিন আমাকে সেই অধিকার
দিয়েছে যে আমি ওকে কষ্ট দিতে পারি।আমাদের মধ্যে জায়গা কি আছে?
ইশু:সবটা না শুনে একতরফা বিচার করা ঠিক না।
নীল: এখন এসব কথা থাক।আমার মাথা ধরে আছে,সারাটা রাস্তা আমার মাথা খেয়ে নিয়েছে।
নীলের কথা শুনে ইশু হাসছে।নিশু তাহলে ভালোই পাগলামি শুরু করেছে।নীলের খাওয়া শেষ হলে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।
নীল:খাবারটা উপরে নিয়ে যা!
ইশু:আমি জানি ও এখন খাবে না।
নীল:আর আমিও জানি তোর পেটে কথা থাকবে না।….খাবারটা নিয়ে যা নাটক না করে।
ইশু হাসছে নীলের কথা শুনে।নিশুটা কি বোকা ভাবছে সত্যি সত্যি নীলের বিয়ে? আহা বেচারি!

সকালবেলা নীল রেডি হয়ে রুম থেকে বেরোতেই দেখলো ইশুদের রুমের দরজা খোলা।ইশু ঘরে নেই ,নিশু ঘুমোচ্ছে।নীল না চাইতেও এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।একেবারে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে।অফিস যেতে হবে সেই খবটাও নেই।নীল গিয়ে ওর মাথার পাশে বসলো।ওর কপালের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে গায়ের জামাটা টেনে ঠিক করে দিলো।তারপর ওর কাধে হালকা ঝাঁকি দিয়ে আস্তে করে ডাক দিলো….নিশু অফিস যাবে না?
নিশু ঘুমঘুম কন্ঠে জবাব দিলো….না যাবো না!…ঐ হনুমানটা আমাকে সহ্য করতে পারে না গিয়ে কি হবে?
নীল:(😐ঘুমের মধ্যেও আমাকে ধুয়ে দেয়!)…নিশু ওঠো?
নিশু:না উঠবো না।
নীল ওকে কোনরকমে টেনে তুলতেই ইশু এসে হাজির।নিশু ওর কাধে মাথা দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
ইশু:ভাইয়া?(শয়তানি হাসি দিয়ে)
নীল থতমত খেয়ে বললো…আজকে অফিসে একটা জরুরি মিটিং আছে তাই।
নীলকে অপ্রস্তুত হতে দেখে ইশু বললো…তুই যা আমি ওকে নিয়ে আসছি।
নীল সরে যেতেই নিশু আবার ঠাস করে বিছানায় সুয়ে পড়লো।

অনেক কষ্টে ইশু ওকে ঘুম থেকে তুলে রেডি করে এনেছে।ব্রেকফাস্ট করেই নীল আর নিশু বেরিয়ে গেলো।গাড়িতে বসে নিশু ইচ্ছেমত নীলকে বকছে।নীল বুঝতে পেরেছে যে ইশু তাহলে নিশুকে কিছু বলে নি?…নীল নিজেও কিছু বললো না।পাক কষ্ট ওর কি?…ওকে যখন কষ্ট দিয়েছিলে তখন?…নীল বিয়ে করলে ওর কি?…বলবে না নীল,কিচ্ছু বলবে না।
নীল:দয়া করে এবার তোমার টেপরেকর্ডারটা থামাও!
নিশু:না থামাবো না।….অসভ্য লুচু একটা!….মেয়ে দেখলেই হুশঁ থাকে না!

অফিসে এসে নীল মিটিংরুমে ঢুকে গেলো।ওরমধ্যেই নিশু ওকে ডাক দিলো।নীল সবে প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশন শুরু করেছে এর মধ্যেই নিশু ডেকে বসলো।
নিশু:Sir!…it’s urgent!
নীল তাড়াতাড়ি মিটিংরুম থেকে বেরিয়ে এলো।
নিশু:তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।
নীল:আমি মিটিংটা শেষে করে আসি?
নিশু:It’s urgent!
নীল:ঠিক আছে বলো!
নিশু:আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নীলের মেজাজ চরম খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এই কথাটা বলার জন্য ওকে মিটিংরুম থেকে বের করে এনেছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *