I AM YOUR VILLAIN LOVER

I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 13

মেঘের বাসার বাগানের দোলনায় বসে আছে বর্ষা। আর এক নজরে তাকিয়ে আছে সুইমিং পুলের পানির দিকে। বর্ষা সাতার জানে না। বর্ষার ইচ্ছে করছে সুইমিংপুলের পানিতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে। কিন্তু পেটের সন্তানের কথা চিন্তা করে বর্ষা সেটাও পারছে না। বর্ষার চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে টপ টপ করে পানি। যে পানিতে ভিজে যাচ্ছে বর্ষায় গায়ের ওড়না। সেদিকে বর্ষার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

তিন দিন আগে বর্ষাকে নিয়ে মেঘ বাসায় আসার পর থেকে একটা কথাও বলেনি মেঘ বর্ষার সাথে। সারাটা দিন বোবার মতো বর্ষা এখানে ওখানে বসে কাটায়। বাসায় একটা কাজের মহিলাও নেই যার সাথে একটু কথা বলে সময় কাটাবে বর্ষা। নিজেকে আজ কাল কাঠেরপুতুল মনে হয় বর্ষার। মেঘ সেই সকালে হোটেল থেকে খাবার এনে নিজে খেয়ে বর্ষার জন্যে রেখে চলে যায়। আবার দুপুরে খাবার নিয়ে বাসায় ফেরে। নিজে খেয়ে বর্ষার জন্যে টেবিলে খাবার রেখে অন্য দিকে ঘুরে বর্ষাকে খেতে বলে হন হন করে চলে যায় মেঘ। এর আগে মেঘ বর্ষাকে মারধর করলেও কথা বলতো। বর্ষার কাছে যেনো সেই দিনগুলোই ভালো ছিলো। মেঘ এখন খাওয়ার কথা ছারা একটা কথাও বলেনা বর্ষার সাথে। এই তিনটা দিন যেনো তিনটি বছরের সমান মনে হয় বর্ষার কাছে।

এসব কথা ভাবছে আর অঝোড়ে কান্না করছে বর্ষা।চোখের অশ্রুগুলো যেনো আর বাধ মানছে না।
হঠাৎ মেঘের ডাকে ধ্যান ভাঙলো বর্ষার। মেঘ গেইট দিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকেই বর্ষাকে দেখে বলে উঠলো

— বর্ষা রুমে গিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আয়। এখনি আমার সাথে বেরোতে হবে।

মেঘের কথা শুনে নিজের চোখটা তারাতারি মুছে নিলো বর্ষা। কারন বর্ষা চায় না ওর চোখের পানি, ওর কষ্ট মেঘ দেখুক। বর্ষা চোখ মুছে সুইমিং পুলের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো

— কোথায় নিয়ে যাবি আমায়?

— সেটা গেলেই জানতে পারবি, এখন সময় নষ্ট না করে তারাতারি রেডি হয়ে আয়।

মেঘের কথায় বর্ষা আর কথা না বারিয়ে রুমে চলে গেলো। তারপর কাপড় পাল্টে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো।

লাল টকটকে সালোয়ার কামিজ পড়েছে বর্ষা মুখে কোনো রকম সাজ নেই বর্ষার। মুখটা কেমন যেনো চুপশে গেছে ওর। হারিয়ে গেছে মুখের সব উজ্জলতা।

মেঘ বর্ষার দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। তারপর নিজের হাতটা বর্ষার দিকে এগিয়ে দিয়ে নরম গলায় বলে উঠলো

— চল আমার সাথে,,

বর্ষা মেঘের হাতটা দেখেও না দেখার ভাব করে সামনের দিকে হাটতে লাগলো। মেঘও আর কিছু না বলে বর্ষার সাথে গিয়ে গাড়ির দরজা বর্ষার জন্যে খুলে দিলো। বর্ষা কোনো কথা না বলে সোজা গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।তারপর মেঘও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে লাগলো। গাড়ি চলতে লাগলো আপন গতিতে।

কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের সামনে গিয়ে থামলো গাড়ি। বর্ষা অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো

— আমরা হাসপাতালে কেনো এলাম?

— এসেছি যখন তখন অবশ্যই কোনো দরকার আছে। গাড়ি থেকে নাম আর চল আমার সাথে।

মেঘের কথা শুনে বর্ষার মনে ভয় জেকে বসলো। বর্ষা ভয় করতে লাগলো মেঘ হয়তো ওর পেটের বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার জন্যে ওকে হাসপাতালে এনেছে।

বর্ষা মনে মনে ঠিক করলো মেঘ যদি সত্যিই এমন কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে বর্ষা মেঘকে কখনোই ছারবে না। নিজে হাতে খুন করবে ও মেঘকে।

বর্ষা নিজের মনকে শক্ত করে মেঘের সাথে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকলো। বর্ষাকে একজন নার্সের সাথে একটি কেবিনে পাঠিয়ে দিয়ে মেঘ চলে গেলো ডাক্তারের কাছে।

বর্ষা নার্সটাকে কাছে ডেকে জিগ্যেস করলো

— এই যে সিস্টার শুনছেন, আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন আমাকে হাসপাতালে কেনো আনা হয়েছে?

বর্ষার কথা শুনে নার্সটা বললো

— সেটা আমি ঠিক জানিনা ম্যাডাম, তবে আমার মনে হয় আপনার কিছু একটা পরীক্ষা করাবেন স্যার।

— কিছু একটা মানে? কি পরীক্ষা করার কথা বলছেন আপনি?

— আসলে ম্যাডাম সেটা আমিও সঠিক জানিনা। সরি

নার্সের কথা শুনে হতাশ হলো বর্ষা। তারপর অপেক্ষা করতে লাগলো কি হয় তা দেখার জন্যে।

বেশ কিছুক্ষণ পর একজন মহিলা ডাক্তার আসলো বর্ষার কাছে। তারপর বর্ষাে নিয়ে চলে গেলো অন্য একটি কেবিনে।
,
,
,
বাসার ছাদে উঠে আকাশের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে বর্ষা। মুখে নেই তার হাসি, নেই কোনো প্রাণবন্ততা। বর্ষার চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে নোনা জল। যে বর্ষা সব সময় মাতিয়ে রাখতো সারা বাড়ি। আনন্দে মেতে থাকতো সব সময়। সেই বর্ষা যেনো এখন জীবন্ত লাশে পরিনত হয়েছে।

দুদিন আগে হাসপাতালে ঐ মহিলা ডাক্তার বর্ষার পেটের বাচ্চার ডিএনএ টেস্ট করিয়েছে। সেটা অবশ্য কোনো ডাক্তার নার্স বা মেঘ বলেনি বর্ষাকে। বরং বর্ষা পর্দার আরাল থেকে মেঘের কথা শুনে নেয়।

টেস্টের পর বর্ষাকে আলাদা কেবিনে রেখে ডাক্তার চলে যান মেঘের কাছে। কৌতুহল বসতো বর্ষাও অনেক কষ্টে এগিয়ে যায় ডাক্তারের কেবিনের কাছে। আর পর্দার আরাল থেকে শুধু মেঘের একটা কথাই কানে আসে বর্ষার। মেঘ ঐ ডাক্তারকে বলছে

— ডাক্তার আমার ওয়াইফ এর পেটের বেবির ডিএনএ টেস্ট এর রিপোর্ট কবে আসবে?

— আগামি পরশুদিন পেয়ে যাবেন মিস্টার মেঘ। তবে আমার একটা প্রশ্ন ছিলো আপনি নিজের সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করাচ্ছেন কেনো? নাকি আপনার ওয়াইফের পেটের বেবিটা আপনার নয়? আই মিন, আপনার ওয়াইফের কি অন্য কারো সাথে রিলেশন আছে??

এতটুকু কথা শুনতেই মুখ চেপে ধরে সেখান থেকে চলে আসে বর্ষা। মেঘ আর ডাক্তারের কথা শুনে যেনো পায়ের নিচের মাটি সরে যায় বর্ষার। সেই মুহুর্তে বর্ষার সত্যিই ইচ্ছা করছিলো আত্মহত্যা করে মারা যেতে। কিন্তু বর্ষার ততটাও সাহস নেই।

ছাদে দাড়িয়ে এই সব কথা ভাবছে আর অঝোরে চোখের জল ফেলছে বর্ষা। ওর বুকের ভিতরটা যেনো সব দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মেঘ কি করে পারলো এটা করতে। কি করে পারলো এতটা অবিশ্বাস করতে।

বর্ষা না পারছে মেঘের বাসা থেকে চলে যেতে আর না পারছে এখানে থাকতে। না পারছে মরে যেতে না পারছে বাচতে। দম যেনো বন্ধ হয়ে আসছে বর্ষার।

বর্ষা আকাশের দিকে তাকিয়ে কেদে চলেছে একমনে। হঠাৎ কারো স্পর্শে ধ্যান ভাঙে বর্ষার। মেঘ এসে বর্ষাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরেছে। বর্ষার চুলের মাঝে মুখ গুঁজে কাঁদছে মেঘ। কাঁদতে কাঁদতে বর্ষাকে ছেড়ে হাটু গেরে নিচে বসে পরলো মেঘ। মেঘের এমন ব্যাবহারে অবাক হয়ে মেঘের দিকে ঘুরে তাকালো বর্ষা।বর্ষাকে তাকাতে দেখে মেঘ অপরাধির মতো মাথা নিচু করে বলতে লাগলো

— আম সরি বর্ষা, তুই আমায় ক্ষমা করে দে। আমি না জেনে না বুঝে তোর সাথে অনেক বেশি অন্যায় করে ফেলেছি। প্লিজ বর্ষা ক্ষমা করে দে আমায়। তুই আমায় চিঠি লিখে চলে যাওয়ার পর আমি কেলেজে গিয়ে খোজ নিয়েছি। যেটা আমার আরো আগে করা উচিৎ ছিলো। কলেজে গিয়ে জানতে পেরেছি তুই কিছুই করিসনি সেদিন। অন্য কেউ আমার ওপর ষড়যন্ত্র করে আমায় মার খাইয়েছিলো তোর আর আমার ছবি তুলে। আমি এখনো জানিনা সেই মানুষরা কে। তবে খুব তারাতারিই জেনে যাবো আমি। আমি না জেনে তোকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি বর্ষা তুই আমায় মাফ করে দে বর্ষা মাফ করে দে আমায়।

আমি তোকে সন্দেহ করেছিলাম বর্ষা যে তোর পেটের সন্তান হয়তো আমার নয়। কারন বিশ্বাস কর বর্ষা আমার সেদিন রাতের কথা কিছুই মনে নেই। নেশা করে বাসায় আসার পর তোর সাথে কি করেছি আমি কিছুই মনে নেই আমার। তাই আমি তোকে সন্দেহ করে ছিলাম। কিন্তু এখন আর আমার তোর প্রতি কোনো সন্দেহ নাই। আমি বুঝতে পেরেছি বর্ষা আমি যা করেছি সব ভুল। তোর পেটে আমারই সন্তান। আমায় তুই ক্ষমা করে দে বর্ষা। চল আমরা নতুন জীবন শুরু করি একসাথে। যে জীবনে আমাদের মাঝে কোনো ভুলবোঝা বুঝি থাকবে না। থাকবেনা কোনো বাধা।

কথাগুলো একনাগাড়ে মাথা নিচু করে বসে বলে চলেছে মেঘ। আর বর্ষা পাথড়ের মুর্তির মতো দাড়িয়ে চুপচাপ মেঘের বলা কথা শুনে চলেছে।

মেঘ কথাগুলো বলে উঠে দাড়ালো বর্ষার সামনে। তারপর বর্ষার দুগালে হাত রেখে বললো

— তুই আমায় ক্ষমা করবি না বর্ষা? আমি তোকে ভালবাসি বর্ষা, অনেক ভালবাসি তোকে আমি সেই তিন বছর আগে থেকে। চলনা বর্ষা আমরা এই কয়েকদিনের অতিত ভুলে আবার নতুন করে জীবন শুরু করি।

কথাগুলো বলেই বর্ষাকে জরিয়ে ধরতে নিলো মেঘ।সাথে সাথে বর্ষা নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মেঘকে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিলো। বর্ষার ধাক্কা খেয়ে মেঘ কয়েকপা পিছিয়ে গিয়ে অবাক হয়ে বর্ষার দিকে তাকালো। মেঘকে তাকাতে দেখে বর্ষা মেঘের কাছে এগিয়ে গিয়ে মেঘের শার্টের কলার ধরে রাগি গলায় চিল্লিয়ে বলতে শুরু করলো

— ক্ষমা চাইছিস তুই মেঘ, কিসের জন্যে ক্ষমা চাইছিস তুই। বিনা দোষে দোষি বানিয়ে আমাকে সবার সামনে বাজে মেয়ে প্রমান করার জন্যে ক্ষমা চাইছিস তুই। তোকে ক্ষমা করে দিলে কি আমার মাথায় পরা সেই অপবাদগুলো মুছে যাবে উত্তর দে আমায় মেঘ উত্তর দে?

কিসের জন্যে ক্ষমা চাইছিস তুই মেঘ, রাতের আধারে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এসে নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে বৈধ ধর্ষন করে তার পেটে নিজের সন্তানকে অবৈধ সন্তান বলে স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করার ক্ষমা?

নিজের সন্তানকে পাপের ফসল বলে তার ডিএনএ টেস্ট করে তারপর তোর মনে হলো এ বাচ্চা তোর? আমি তোকে বলছি শোন। আমার পেটের এই বাচ্চা তোর নয়। তোর মতো একটা জানোয়ারের বাবা হওয়ার কোনো অধিকার নেই মেঘ। এই বাচ্চা আমার শুধুই আমার। ও বড় হবে ওর মায়ের পরিচয়ে তোর কোনো অধিকার নাই আমার সন্তানের ওপর।

কথাগুলো এক নাগাড়ে চিল্লিয়ে বলেই মেঘকে জোরে ধাক্কা মারলো বর্ষা। মেঘ দু পা পিছিয়ে গিয়ে আবার বর্ষার কাছে এগিয়ে এসে বললো

— আম সরি বর্ষা প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে। আমি সিকার করছি আমি তোর সাথে অনেক বেশি অন্যায় করে ফেলেছি। তবে আমায় একটা সুজোগ দে বর্ষা আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি আমার ভুলগুলো শুধরে নিবো। তোকে আর আমাদের বাচ্চাকে একটুও কষ্ট পেতে দিবো না আমি। আমি তোকে অনেক ভালবাসি বর্ষা প্লিজ আমায় একটা সুজোগ দে।

— ভালবাসা হা হা হা, ভালবাসা কাকে বলে তুই জানিস মেঘ? মনে আছে মেঘ তোকে আমি বলে ছিলাম। যদি বিশ্বাস করতে না পারিস তাহলে ভালবাসার দাবি নিয়ে আসিস না। কারন ভালবাসার মেইন খুটি হলো বিশ্বাস। তুই অনেক আগেই তোর ভালবাসার যোগ্যতা হারিয়েছিস মেঘ। আমি তোকে জাস্ট ঘৃনা করি মেঘ। তুই চলে যা আমার সামনে থেকে। আমার জীবনটাকে অভিশাপে পরিনত করেছিস তুই।

— প্লিজ বর্ষা এভাবে বলিস না। আমি তোকে ছারা থাকতে পারবো না বর্ষা। আমার তোকে চাই। সারাজীবন প্রতিটা মুহুর্তে তোকে আমার পাশে চাই বর্ষা। প্লিজ বর্ষা তুই এভাবে আমার দিক থেকে মুখ সরিয়ে নিস না। বল তুই কি চাস বর্ষা, তুই যা চাইবি আমি তোকে সব দিবো শুধু তুই আমায় দুরে সরিয়ে দিস না বর্ষা প্লিজ।

— আমি ডিভোর্স চাই, আমাকে তুই ডিভোর্স দে মেঘ। আমি মুক্তি চাই তোর মতো একটা অমানুষের থেকে মুক্তি দে আমায় তুই। ডিভোর্স দে আমায়।

চলবে,,,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *