Childhood marriage

Childhood marriage ! Part- 16

#পর্ব-১৬
মা: আরে খোকা তুই!
সায়ন : হ্যাঁ মা,হঠাৎ কয়েকদিনের ছুটি পড়ে গেল তাই…(মিথ্যে কথা,আমিই সাপ্তাহিক ছুটির সাথে কয়েক দিনের এক্সট্রা ছুটি নিয়ে নিয়েছি)
মা : তা এসেছিস ভাল করেছিস কিন্তু একটাবার জানিয়ে আসবি না!
সায়ন : আ..আসলে মা এত বিজি ছিলাম যে…
মা : ঐ এক অযুহাত পেয়েছিস,এত কিসের ব্যস্ততা তোর?দিন দিন একেবারে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিস!বাঁদর ছেলে…
সায়ন : আহ্ মা,খালি কি বকাই দেবে নাকি…
মা : আচ্ছা আচ্ছা ভেতরে যা

ছোঁয়া : নিজের রুমে আই মিন উনার রুমে বসে লেকচার শিটগুলো নাড়াচাড়া করছিলাম তখনই উনার কণ্ঠ শুনতে পেলাম।
উ..উনি এখানে কি করছেন?এখন কি করব উনিতো আমাকে…
মাথাটা কোন কাজই করছে না,কানে শুধু একটা কথাই বাজছে,”তোমার মত দুশ্চরিত্রা মেয়ের মুখও আমি দর্শন করতে চাই না…”
কথাটা মনে পড়তেই বুকের বাঁপাশে হালকা ব্যথা অনুভব করলাম তারপর হঠাৎই সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলাম।
উনার রুম থেকে সোজা আমার রুমে চলে গেলাম,তারপর কোন রকমে রেডি হয়েই বেরিয়ে পড়লাম।যাওয়ার আগে আড়াল থেকেই একবার উনার দিকে তাকালাম,মুচকি একটা হাসির রেখা ফুটে উঠল মুখে।হঠাৎই দেখলাম উনি উনার রুমের দিকে এগোচ্ছেন,আমি আর দেরি করলাম না পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম…
সায়ন : রুমে ঢুকছি আর মনে মনে ভাবছি,কদিন ধরে খুব জ্বালিয়েছেন ম্যাডাম।ফোন পর্যন্ত রিসিভ করছিলেন না,কিন্তু এবার কি করবেন ম্যাডাম?এবার পালাবেন কিভাবে?
কিন্তু একি,ছোঁয়া কোথায়?পুরো রুম খালি,ওকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না।বুঝেছি হয়তো নিজের রুমে আছে ভেবে ঐ রুমে চলে গেলাম,কিন্তু না ম্যাডাম এখানেও নেই!তবে কি ও বাড়িতে নেই?মাকে জিজ্ঞেস করব?না এটা কিভাবে সম্ভব!মাকে কি করে এসব জিজ্ঞেস করব?
মা : সায়ন…বাবা তোর হল?তাড়াতাড়ি আয় খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তো…
সায়ন : হ্যাঁ মা আসছি…

ছোঁয়া : ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছি,ক্লাস শুরু হতে এখনও অনেক দেরি।এতটা সময় কিভাবে কাটাব বুঝতে পারছি না,ব্যাগ থেকে একটা খাতা আর কলম বের করে নোট করতে শুরু করলাম।এটলিস্ট টাইমটা এভাবে পাস করা যাবে কিন্তু এখনকার মত তো একটা ব্যবস্থা হল,উনি যখন এসেছেন তাহলেতো দুই একদিন থাকবেন।সন্ধ্যায়তো বাসায় ফিরতেই হবে,তখন কি করব?

মা : ইশ!না খেয়ে খেয়ে আমার ছেলেটা কত শুকিয়ে গেছে!এই জন্যেইতো ছোঁয়াকে তোর কাছে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তুই…দুদিন না যেতেই ওকে পাঠিয়ে দিলি!!!
সায়ন : পাঠিয়েতো দেইনি মা,ও রাগ করে চলে এসেছে(মনে মনে)
মা : সে যা করেছিস করেছিস কিন্তু মেয়েটাকে একা একা আসতে দিলি কেন?তোর কি আর আক্কেল হবে না?
সায়ন : কি করব মা?রাগের মাথায়…এক কাজ করি এই সুযোগে মাকে ছোঁয়ার কথা জিজ্ঞেস করে ফেলি…
মা : কি রে খোকা,কিছুইতো খাচ্ছিস না!এমন করলে কি হবে?এই ছোঁয়াটা আবার কোথায় গেল ছোঁয়া…ছোঁয়া মা…একবার এদিকে আয়…
সায়ন : আচ্ছা মা,ছোঁয়া কি বাসায় নেই নাকি?এসে পর্যন্ত একবারও দেখলাম না…
মা : দেখলাম না মানে কি?কোথায় আর যাবে,ঐ রুমে বসে পড়ছে মনে হয়।দাঁড়া আমি দেখছি ছোঁয়া মা…
সায়ন : ম্যাডাম বাড়িতে থাকলেতো পাবে…(মনে মনে)
মা : ছোঁয়া মা…কোথায় গেলি?ছোঁয়া…
ফুলি : খালা আম্মা আপারেতো বাইরে যাইতে দেখলাম
মা : বাইরে মানে?
ফুলি : মনে হয় ক্লাসে গেল,আমারে কইল ফিরতে দেরি হইব
মা : কই আমাকেতো কিছু বলে গেল না!
ফুলি : হেইডা আমি জানি না,তই মনে হইল কোন জরুরী কাম আছে।খুব তাড়াহুড়া কইরা গেছে
মা : ও…আচ্ছা তুই যা
সায়ন : ও..তারমানে ম্যাডাম আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে!ঠিক আছে,আমিও দেখব কতদূর পালাতে পারেন…

লোপা : কি রে,তুই আবার এই দিকে যাচ্ছিস কেন?তোর বাড়িতো ঐ রাস্তায়…
ছোঁয়া : আমি আ..আসলে আজ ওদিকে যাব না
লোপা : যাবি না মানে?
ছোঁয়া : মানে আজকে আমি মাকে দেখতে যাব,মা মানে আমার মাকে…
লোপা : কেন?
ছোঁয়া : আ..আসলে মার শরীরটা একটু খারাপ তাই…
লোপা : ও…
(সন্ধ্যায়)
মা : হ্যাঁ রে খোকা,কয়টা বাজে রে?
সায়ন : এইতো মা,৬ টার মত বাজে
মা : এত দেরিতো হওয়ার কথা না…
সায়ন : কি হয়েছে মা?
মা : আমি না ঠিক বুঝতে পারছি না,মেয়েটা এত দেরিতো কখনই করে না
সায়ন : কার কথা বলছো মা?
মা : আরে ছোঁয়া,সকালে দেখা না করেই চলে গেল আর এখন এত দেরি হয়ে গেল কিন্তু কোন খবর নেই…
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং…
সায়ন : মা তোমার ফোন,এই নাও ধরো কথা বল
মা : আরে এটাতো ছোঁয়ার মায়ের নাম্বার।হ্যালো বেয়াইন কেমন আছেন?
ছোঁয়া : মা আমি..ছোঁয়া…
মা : ছোঁয়া মা…কি রে মা তুই ঐ বাড়িতে কি করছিস?
সায়ন : মা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিল তারপর আমার দিকে তাকালো
মা : ছোঁয়ার মায়ের শরীরটা একটু খারাপ করেছে তাই আজ আর আসবে না
সায়ন : ওহ্…আচ্ছা মা আমি কালকে গিয়ে উনাকে দেখে আসবো…
মা : সেটাই ভাল হবে,আমি তাহলে এক কাজ করি ছোঁয়াকে আসতে নিষেধ করে দেই।তুই বরং সাথে করে নিয়ে আসিস
সায়ন : আচ্ছা মা
রুমে চলে আসলাম,আমি জানি ছোঁয়া মার অসুখ টসুখ সব বাহানা।তুমি আমার জন্যেই এ বাড়িতে আসছো না,ঠিক আছে আমিও দেখব তুমি আমার থেকে কতদূর পালাতে পারো…

(পরদিন)
সায়ন : দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করেই ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।এত দেরি করে যাওয়ার একটাই উদ্দেশ্য,রাতে ওখানে থাকব কারণ ম্যাডামকে আর আমার বিশ্বাস নেই,দেখা যাবে সারাদিন ওয়েট করেও তার দেখা পাব না কিন্তু রাতে…রাতেতো ওকে বাসায় ফিরতেই হবে,তখনই ম্যাডামের সব রাগ ভেঙ্গে দিব…
লোপা : কি রে,সন্ধ্যাতো হতে চলল তুই এখনও এখানে বসে আছিস কেন?বাড়ি যাবি না?
ছোঁয়া : কেন আজ রাতে তোর বাড়িতে থাকলে কি তোর প্রবলেম হবে?
লোপা : প্রবলেম কেন হবে?তুই এসব কি কথা বলছিস…
ছোঁয়া : তাহলে আর কি,আমি আজকে এখানেই থাকব আর কাল সকালে দুই বান্ধবী একসাথে ভার্সিটিতে যাব
লোপা : এই তাসু,কি হয়েছে সত্যি করে বলতো…
ছোঁয়া : কই আমার আবার কি হবে?
লোপা : তাহলে তুই কাল থেকে এমন অদ্ভূত বিহেভ করছিস কেন?ভাইয়া এসেছে তাইনা?
ছোঁয়া : না মানে…হুম…
লোপা : দেখ তাসু এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে
ছোঁয়া : কিসের বাড়াবাড়ি বলতো?উনি আমার সাথে যা যা করেছেন সেসব বাড়াবাড়ি না?আর এখন আমি যা করছি সেটাই তোদের কাছে বাড়াবাড়ি হয়ে গেল!
লোপা : রাগ করিস না প্লিজ দোস্ত।দেখ আমি মানছি ভাইয়া যা করেছে মোটেও ঠিক করেনি কিন্তু তাই বলে তুই উনার সাথে দেখাটা পর্যন্ত করবি না!তুই দেখা না করলেতো সবাই সন্দেহ করবে,খারাপ বলবে…
ছোঁয়া : এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সোজাসুজি বলেইতো পারিস যে আসি এখানে থাকলে তোদের অসুবিধা হচ্ছে
লোপা : তুই কিন্তু শুধু শুধু রাগ করছিস,আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর এ ব্যাপারে কিছু বলব না।তোর যতদিন ইচ্ছা তুই এখানে থাকিস,কি এবার খুশি তো?
ছোঁয়া : হুম
লোপা : তুই বোস,মারুফ ফোন দিয়েছে,আমি আসছি হ্যাঁ…
ছোঁয়া : আচ্ছা
লোপা : হ্যালো
মারুফ : ওদিকের খবর কি?
লোপা : আর বোল না,পাগলিটাকে কিছুতেই রাজি করাতে পারছি না,প্রচণ্ড রেগে আছে
মারুফ : তাহলে এখন কি করব?সায়নকে তোমাদের ওখানে যেতে বলি?
লোপা : এই না না,এরকম ভুল কর না
মারুফ : কিন্তু কেন?
লোপা : দেখো তাসুকে আমি সেই ছোট থেকে জানি,মেয়েটা খুব শান্ত-শিষ্ট কিন্তু প্রচণ্ড অভিমানী।সহজে রাগে না কিন্তু একবার রেগে গেলে কাণ্ডজ্ঞান সব হারিয়ে ফেলে,রাগ ভাঙ্গানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে…
মারুফ : কিন্তু তাই বলে…
লোপা : ও যদি জানতে পারে ওর অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমরা ওর পার্সোনাল ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করছি তাহলে রাহের মাথায় আরও বাজে কিছু করে বসবে।হয়তো আমার সাথে আর কথাও বলবে না আর আমি আমার বেস্টফ্রেণ্ডকে হারাতে চাই না তাই বলছি…
মারুফ : আচ্ছা ঠিক আছে এক কাজ করি,ওদের ব্যাপারটা ওরাই দেখুক ঠিক আছে?
লোপা : হ্যাঁ ম্যাডামের রাগটা একটু পড়ে আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।তাছাড়া ভাইয়া যা করেছেন তার জন্য একটুতো শাস্তি পাওয়া উচিত তাইনা?
সায়ন : তা যা বলেছো…

সায়ন : কথায় বলে শ্বশুরবাড়ি মধুর হাঁড়ি,এখানে আসার পর থেকে কথাটা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি।এসে পর্যন্ত একটার পর একটা খাবার খেতে খেতে আমার অবস্থা খারাপ।শ্বাশুড়ি মা আর আমার একমাত্র শ্যালিকা দিয়া আমার আপ্যায়নের কোন ত্রুটি রাখছে না কিন্তু যার জন্য এখানে এসেছি তারই কোন দেখা পাচ্ছি না!কিন্তু কাউকেতো জিজ্ঞেসও করতে পারছি না,আফটার অল নতুন জামাই!লজ্জা-শরম বলেও তো একটা কথা আছে তাইনা?
মা : এই দিয়া,যা তো ছোঁয়াকে ডেকে নিয়ে আয়
দিয়া : কেন মা,ডাকার কি দরকার?সময় হলেইতো ও চলে আসবে
মা : এটা কেমন কথা দিয়া?জামাই চলে এসেছে,একা একা ঘরের মধ্যে বসে আছে অথচ ওই মেয়ের কোন খবরই নেই!
দিয়া : কিন্তু মা…
মা : চুপ আর কোন কথা না,চুপচাপ ওকে নিয়ে আয়…

(কিছু্ক্ষণ পর)
মা : কি রে,তুই একা এলি যে!ছোঁয়া কোথায়?
দিয়া : আপু আসবে না বলে দিয়েছে
মা : আসবে না মানে?
দিয়া : মানে আপুর নাকি কাল সকালে একটা এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে তাই আজ লোপা আপুদের ওখানে থাকবে।দুজনে মিলে নাকি রাত জেগে কাজ করবে…
মা : এটা কেমন কথা!মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেল,নাহ্ ওকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে
দিয়া : কিন্তু মা…
সায়ন : কি হয়েছে মা?কোন সমস্যা?
মা : না বাবা,তেমন কোন সমস্যা না
সায়ন : তাহলে আপনাদের এমন লাগছে কেন?কি হয়েছে মা,আমাকরতো বলতেই পারেন…
মা : আসলে বাবা,ছোঁয়া…
সায়ন : কি মা?
দিয়া : আসলে দুলাভাই আপু…দুলাভাইকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বললাম
সায়ন : ও…আচ্ছা ঠিক আছে,কোন ব্যাপার না।কালকেই নাহয় ম্যাডামের সাথে সাক্ষাৎ করব,ততক্ষণ পর্যন্ত আমার আধি ঘারওয়ালি মানে তুমিতো আছোই…
দিয়া : Anything for you দুলাভাই…
সায়ন : বাব্বাহ ম্যাডামের তো দেখছি ভালই বুদ্ধি আছে!একেক দদিন একেব রকম ফন্দি এঁটে আমাকে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে!ঠিক আছে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই না হলে লড়াইটা ঠিক জমে না…ডিয়ার বউ তুমি যদি বুনো ওল হও আমিও তাহলে বাঘা তেঁতুল,এত সহজেতো তোমাকে ছাড়ছি না…
To be continued…