হারিয়ে খুজবে আমায়

হারিয়ে খুজবে আমায় !! Part- 10

অনু আনমনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে শাফিনের সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্তে কথা চিন্তা করছে। কত ভালোবাসতো সে অনুকে। সব সময় বলতো অনুকে ছাড়া শাফিন অসম্পূর্ণ শাফিনকে সম্পন্ন করতে হলে অনুকে চাই। তাহলে এই তিন সপ্তাহের শাফিন কইছিল একবার একটি ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেনি সে কোথায় আছে ।খবর পর্যন্ত নেইনি। ভালোবাসা নাই ছিল কিন্তু সামান্য দায়িত্ববোধের কারনে তো একবার ফোন দিতে খবর নিতে পারতো। হয়তো এখনো শাফিনকে পূর্ণ করতে অনুর প্রয়োজন নেই এখন তার পূর্ণ করার জন্য তার প্রিয়সি এসে গেছে যে তার যোগ্য ও স্মার্ট । তাই খবর নেওয়া প্রয়োজন মনে করেনি।

কথাগুলো মনে করতে চায় না অনু কিন্তু কিভাবে যেন আপনার আপনি মনে এসে পড়ে যখনই একা থাকে শাফিনের স্মৃতিগুলো তাকে তাড়া করে কিছু সুখমায় স্মৃতি আর কিছু দুঃখের।স্মৃতিগুলো চাইলেও সে কোনদিন ভুলতে পারবেনা।

হারিয়ে যাব একদিন আকাশের এককোণে,
পাবেনা আমায় সেদিন খুঁজবে সব খানে,
হাসবো সেদিন ভাসবো তোমার চোখের জ্বলে, সেদিন বুঝবে কি ছিলাম তোমার জীবনে…

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে শাফিনের ভাবনার মগ্ন থাকা অনুর নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু সে হয়তো জানেনা দূর থেকে কেউ একজন তাকে খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আর সে কেউ একজন আর কেউ না শাফিন নিজেই।

শাফিনের বাসা থেকে ওদের বাসা খুব বেশি দূরে না প্রায় 30 মিনিটের রাস্তা।ভোরের স্বপ্ন দেখার পর শাফিন অস্থির হয়ে পড়েছিল অনুকে দেখার জন্য। নিজের মনকে আর আটকে রাখতে পারল না সে। অস্থির মনটাকে শান্ত করার জন্য হলেও অনুকে একনজর দেখার প্রয়োজন।সকাল থেকেই মনটা তাকে দেখার জন্য আকুপাকু করছে। তাই উনিশ বিশ না ভেবেই নামাজ পড়ে রওনা দেয় ওদের বাসার উদ্দেশ্যে ।সেদিন সাদাতের সাথে দেখেই সে ধারণা করেছিল অনু তার বাবা-মার বাসায় আছে।

সাড়ে পাঁচটার সময় শাফিন ওদের বাড়ির সামনে পৌঁছায়। অনুদের বাড়ি টা খুব বেশি বড় না হলেও মোটামুটি বড় বলা যায় দোতলা বাড়িটি।দোতালায় পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে অনুর ঘর। ঘরের লাগোয়া একটি বারান্দা আছে ।সেখানেই তারা কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি ।শাফিন নিচে দাঁড়িয়ে থাকতো অনু বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার সাথে ফোনে কথা বলত লুকিয়ে লুকিয়ে। একবার তো ধরা পড়ে গিয়েছিল তারপর তাকে বেশ কিছুদিন ঘর থেকে বের হতে দেয়নি বারান্দাও লক করে দিয়েছিল অনুর বাবা।

শাফিন নিজেকে আড়াল করে এমন জায়গায় দাঁড়ায় যেখান থেকে অনুর ঘরের বারান্দা স্পষ্ট দেখা যাবে। অনুর এক নজর দেখতে পাওয়া ও কম কি। শাফিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় 20 মিনিট পর অনু বারান্দায় দাঁড়িয়ে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে অনু কি যেন ভাবছে আবার বিড়বিড় করে কি যেন বলছে ।শাফিন কিছুই শুনতে পাচ্ছ না ।এখন তার আকাঙ্ক্ষাটা আরও বেড়ে গেল তার অনুর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কিভাবে বলবে? সে একবার অনুকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলো। পরনে সাদা রঙের একটি সালোয়ার-কামিজ চুলগুলো ছাড়া এলোমেলো হয়ে আছে ঘুম থেকে উঠার কারণে চোখ গুলো ফুলে আছে।অনুকে বিয়ের পর আর সালোয়ার-কামিজ পরতে দেখা যায়নি।বেশ চিকন হয়ে গেছে দেখলেই বোঝা যায় কিন্তু চেহারায় যেন লাবন্যতা বেড়েই চলছে হঠাৎ যেন অনু খুব সুন্দর হয়ে গেছে।অনু আপন-মনে কিছুক্ষণ বিড় বিড় করে বারান্দা থেকে চলে গেল ওর চলে যাওয়া দেখে শাফিন ধ্যান ভাঙলো।সে চাইল অনুকে একবার ডাকতে যেন এখনই চলে না যায় কিন্তু পরবর্তীতে আবার চুপ হয়ে গেল সে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল অনু বারান্দায় আসে কিনা দেখার জন্য কিন্তু তাকে আসতে না দেখে বাধ্য হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল। সময় নষ্ট করলে চলবে না অফিসে যেতে হবে সামনের সপ্তাহে ইরা আর তার ইংগেজমেন্ট তখন তার ছুটির প্রয়োজন এখন ছুটি নিলে পরবর্তীতে আর পাওয়া যাবে না।

শাফিন বাসায় গিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সেখানে ইরার সাথে দেখা হলকিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে যার যার কাজে মনোযোগ দিল।

লাঞ্চ আওয়ারে ইরার জন্য অপেক্ষা করছে শাফিন। অন্যদিন হলে ইরা অপেক্ষা করত তারপর একসাথে লাঞ্চ করত ।তারপর সে বেরিয়ে পড়ে ইরাকে খুঁজতে কিন্তু কেবিনে তাকে পায় গেল না । তাই সে একাই লাঞ্চ করে নিল।লাঞ্চ আওয়ারের 10 মিনিট ওভার হওয়ার পর ইরা ডেস্ক এল।শাফিন তার কাছে জিজ্ঞেস করল এতক্ষণ কোথায় ছিল হঠাৎই শাফিনকে সামনে থেকে ইরা হতচকিয়ে গেল।

শাফিন: লাঞ্চ আওয়ারে কই ছিলা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

ইরা চোখ লুকিয়ে জবাব দিল ,এইতো সামনে একটা আর্জেন্ট কাজে গিয়েছিলাম।

শাফিন:কি এমন একজন কাজ ছিল আমাকে বলে যেতে পারলে না? আমাকে বললে আমি হেল্প করতাম। একসাথে লাঞ্চ করতাম।

ইরা: তুমি কি আমাকে জেরা করছো শাফিন?এখন আমি কোথায় যাবো না যাবো সেটা তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে যেতে হবে?

শাফিন: আমি সে কথা বলিনি ইরা। আমি এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম আচ্ছা বাদ দাও লাঞ্চ করেছো?

ইরা: হ্যাঁ।এখন যাও নিজের ডেস্কে যাও এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে সমস্যা হবে।

শাফিন নিজের ডেস্কে ফিরে এল আর ইরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ছুটির সময় ইরা ওভারটাইম করবে বলে থেকে গেল তাই শাফিন আর কথা বাড়ায়নি একাই বেরিয়ে গেল।

বেশ কিছুদিন ধরেই ইরার পরিবর্তন লক্ষ্য করছে শাফিন।আগে ফোন দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে চাইতো।শাফিনের সাথে এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়া রেস্টুরেন্টে খাওয়া শপিংয়ে যাওয়া কখনোই মিস করেনা সে আর এখন শাফিন আগ বারিয়ে বললেও সে ভালো লাগছেনা বলে এড়িয়ে যায়। প্রায় সময় ফোন এনগেজ থাকে। জিজ্ঞেস করলে চিল্লাপাল্লা করে নানান বাহানা দেয়। এসব বিষয়ে সাফিনা কোন আগ্রহ নেই কিন্তু কোথায় যেন একটা খটকা লাগে।ইদানিং ইরা ওভারটাইম বেশি করে অফিস ছুটির পর শাফিন একাই বের হয়। কিন্তু হঠাৎ একদিন কিছু কাজ থাকায় সে আশে পাশে থাকে ।হঠাৎই তার চোখ যায় একটা বাইকে করে আয়াজ আর ইরা যাচ্ছে। সে প্রায় সাথে সাথেই ইরাকে ফোন দেয়

শাফিন: হ্যালো এটা কই তুমি?

ইরা: কই তুমি মানে আজব প্রশ্ন। আধঘন্টা আগেই তো বললাম তোমাকে আজকে ওভারটাইম করব তাই অফিসেই আছি।

শাফিন: ও সরি ভুলে গিয়েছিলাম আচ্ছা রাখি পরে কথা বলব। শাফিন স্পষ্ট দেখেছে আওয়াজের সাথে এটা ইরাই ছিল তাহলে সে কেন মিথ্যা বলছে? একবার কি অফিসে গিয়ে খোঁজ নেবে? তারপর সে আবার অফিসের দিকে রওনা দেয়। ভিতরে যেতে চাইলে দারোয়ান তাকে বাধা দেয়

দারোয়ান: জ্বি কাকে চাই অফিসে ঢুকতে পারবেন না। অফিস টাইম শেষ।

শাফিন:আমি এখানে কাজ করি। এইযে আমার আইডি আসলে আমার এক ফ্রেন্ড ভিতরে আছে ওভারটাইম করছে জরুরী কিছু প্রয়োজনে তার সাথে দেখা করতে এসেছি।

আইডি থেকে দারোয়ান আর তাকে আটকায় না। সে ভিতরে গিয়ে দেখে অনেকেই রয়েছে কিন্তু সেখানে ইরাকে দেখতে পেল না তাই সে অন্য এক কলিগ জিজ্ঞেস করল,আসিফ ইরা কই ওর তো ওভারটাইম করার কথা ছিল । কিন্তু ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না? আসিফ কিছুক্ষণ ভেবে বলল

আসিফ: ইরা নাহ ইরাকে তো বস ওভারটাইম দেয়নি। তো সে এখানে কেন থাকবে?

শাফিন: কি বলিস আজ 5 দিন যাবৎ ইরা ওভারটাইম করছে আর তুই বলিস বলছিস ইরাকে ওভারটাইম দেয়নি। তুই বোধ হয় খেয়াল করিস নি।

আসিফ:দিলে তো জানতামই আমি দেখলাম ইরাকে একটা ছেলের সাথে বাইকে করে চলে যেতে। প্রায় প্রতিদিনই তো যায়।

শাফিন: কখন বের হয়?

আসিফ: অফিস ছুটি হওয়ার ঠিক দশ মিনিট পর।

শাফিন: ধন্যবাদ দোস্ত ।আজ তাহলে আসি পরে কথা হবে।

শাফিন ভাবনায় পড়ে যায় ইরা তাকে এতদিন মিথ্যা কথা বলে আসছে ।সে আয়াজের সাথে প্রতিদিন অফিসারের পরে বেরিয়ে যায় আর তাকে মিথ্যে বলে ?কেন? সে কি কখনোই তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে? শাফিন তো বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করতে বাড্ডা দিতে তাকে নিষেধ করিনি তাহলে কেন লুকোচুরি ? শাফিনকে খুঁজে বের করতে হবে।

পরেরদিন যথাসময়ে অফিস ছুটি হয় ও রীতিমতো ইরা শাফিনকে ওভারটাইম বলে বিদায় করে কিন্তু শাফিন নিচে অপেক্ষা করে থাকে কখন ইরা নামবে। সবার ছুটির প্রায় দশ মিনিট পর ইরা ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে আসে এক দু মিনিটের মধ্যেই আয়াজ একটা বাইক নিয়ে আসে আর ইরা তাকে পেছন থেকে চেপে ধরে বাইকে উঠে পড়ে। ইরা কে ফলো করার জন্য শাফিন তার বন্ধু থেকে একটা বাইক নিয়ে আসেছে। তার মন বলছে পিছু করাটা অন্যায় কিন্তু আবার এটাও বলছে অন্তত ডাউট ক্লিয়ারের জন্য হলেও ফলো করা উচিত। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই শাফিন ইরাদের পিছনে যাওয়া শুরু করলো।

তাদের বাইক একটা রেস্টুরেন্টে সামনে থামালো এটা তারা আর ইরার প্রিয় রেস্টুরেন্ট। ইরা আয়াজকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ঢুকলো এবং প্রাইভেসির জন্য একটা কর্নারের টেবিলে বসলো। শাফিন তাদের পিছু পিছু একটা টেবিলে বসলো যেখান থেকে তাদের দেখা যায়। রেস্টুরেন্ট হালকা আলো জ্বলছে। আসে হালকা আলোয় শাফিন দেখতে পাচ্ছে দুজন ছায়ামূর্তি একে অপরকে আলিঙ্গন করে আছে এবং আস্তে আস্তে আরও গভীরে যাচ্ছে বাকিটুকু দেখার মত শক্তি শাফিন জোগাতে পারল না দ্রুত রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করল।

সে বিশ্বাস করতে পারছে না ইরা তাকে এভাবে ধোকা দিল ।সে তার জন্য অনুকে ছাড়লো। আর এক সপ্তাহ পর তাদের এঙ্গেজমেন্ট সে কিভাবে এই কাজ করতে পারল ?না তার সাথে কথা বলতে হবে সবকিছু মিটমাট করেই আগাবে সে। তা জানতে হবে ইরা কি চায়?

পরেরদিন অফ থাকায় সে ইরাকে বাসায় আসতে বলল কিন্তু সে আসতে নারাজ তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বলে এড়িয়ে যেতে চাইল তবুও শাফিন জোর করলো শাফিনের সাথে না পেরে ইরাকে আসতে হল। ইরা বাসায় হাজির হলো সকাল দশটায়।

শাফিন:তা কি খবর কেমন চলছে দিন কাল? আজকাল তো দেখি আমাকে মনে পড়ে না। তোমায় আমি ফোন না দিলে ফোন দাও না খোঁজখবর নাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না। সামনের সপ্তাহে আমাদের এঙ্গেজমেন্ট তোমার তো কোনো এক্সাইটমেন্ট দেখতে পাচ্ছি না তুমি সত্যি কি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন তো?

ইরা: এগুলো কি ধরনের হেঁয়ালি কথা শাফিন। আর বিয়ে করতে চাইবো না কেন ?একটু ঝামেলায় আছি অফিসে ব্যস্ত কাজের চাপ বেশি তাই তোমার সাথে বেশি কথা হয় না বাইরে যেতে পারি না।তার মানে এই না যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই না।

শাফিন ইরার দুই হাত নিজের হাতে নিল,

শাফিন:ইরা আমি আজকে তোমার কিছু কথা বলব আগে আমার সম্পূর্ণ কথা শুনবে তারপর কথা বলবে। রাগ করতে পারবে না। কারণ আমি কোন কিছু প্রমাণ ছাড়া করিনা। ওকে আমাকে প্রমিস করো।

ইরা:কি এমন কথা বলবে যে আমাকে প্রমিস করতে হবে। ওকে যাও রাগ করবো না বল কি বলবে?

তারপর শাফিন তাকে গত দুই দিনের ঘটনা বলে ও ইরা এসব কিছুই সরাসরি অস্বীকার করে। কিন্তু পরবর্তীতে শাফিন আসিফের কথা রেকর্ডিং রেস্টুরেন্টে ঢোকার সময় আয়াজ ও ইরান ছবি দেখায়। তারপর আর কোন রাস্তা না পেয়ে ইরা সব স্বীকার করে।

ইরা: প্লিজ শাফিন আমাকে মাফ করে দাও।আমি চাইনি তোমার সাথে এমন করতে ।কিন্তু কিভাবে যেন আমি ওর কথায় এসে যাই। সে আমাকে বলে তুমি আমার যোগ্য না ।আমি তুমি তুমি ডিভোর্সি তুমি নাকি বিয়ের পর আমাকে অনুর মত করে মারবে। বকবে আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নেবে।আমি যেন তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেই ।তারপর আস্তে আস্তে আমি ওর সাথে ক্লোজ হয়ে যাই। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি শাফিন। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমাকে এবারের মত মাফ করে দাও আর হবেনা। প্লিজ আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।

শফিনও ইরাকে মাফ করে দেয় আর আয়াজের সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দেয়। আর ইরাও সব মেনে নেয়।

তারপরে আবার সবকিছু আগের মতোই হয়ে যায়।অফিসে যাওয়া ইরার সাথে লাঞ্চ ছুটির পর ইরাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া। আর রাতে অনুর বাড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা।

এক সপ্তাহ পর,

এই দু সপ্তাহ শাফিন প্রতিদিন রাতে অনুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো সকালে চলে যেত মাঝে মাঝে অনুকে রাতেও দেখা যেত। আবার মাঝে মাঝে শুধু সকালে। তার অভ্যাস যেন একদিনেই খারাপ হয়ে গেছে। অনুর ঘুমু ঘুমু চেহারাটা দেখা তার নেশা হয়ে গেছে।

আজ তার এনগেজমেন্ট আর তাই হয়তো আর আসা হবে না ভেবেই চলে যেতে নেবে হঠাৎই সে সাদাতকে দেখল বাড়ির ভিতরে যেতে হাতে কিছু কাগজপত্র সে ভাবল বাইরে অপেক্ষা করা যাক। সাদাত কে অনুর থেকে দূরে থাকতে বলতে হবে। তাই সে অপেক্ষা করতে লাগল এক ঘন্টা পর সাদাত বের হল যেই সেদিকে এগোবে পেছনে অনুকেও বেরোতে দেখল।তারা কোন বিষয়ে জানি কথা বলছে কথা বলছে বললে ভুল হবে সাদাত বলছে আরনু মনোযোগ সহকারে শুনছে। তারপর সাদাত একটা রিক্সা নিল। শাফিন ও তাদের ফলো করতে শুরু করলো। সাদাতের রিক্সা গিয়ে থামল সিটি হসপিটালের সামনে ।তারা নেমে পড়ল তারপর অনু গাইনি বিভাগের ডাক্তারের কেবিনের সামনে বসে পরলো।শাফিন চুপিচুপি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে সেখানে দাঁড়ালো দেখার জন্য অনু হসপিটালে কেন এসেছে।কিছুক্ষণ পর অনুর ডাক পড়লো সে সাদাতকে নিয়ে ভিতরে গেল এবং 10 মিনিট পর বেরিয়ে পড়ল আর ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধপত্র কিনে আবার বাড়ির দিকে রওনা দিল।

শাফিন প্রথমে ফার্মেসিতে গেল জিজ্ঞেস করতে অনু কিসের ওষুধ নিয়েছে সেখান থেকে জানা গেল কিছু ভিটামিন ও আয়রন ট্যাবলেট নিয়েছে। সে সঠিক তথ্য নেওয়ার জন্য কেবিনে গেল এবং পিওনকে কিছু টাকা দিয়ে ঢুকলো তারপর ডক্টরকে জিজ্ঞেস করল,

শাফিন:আসসালামুয়ালাইকুম ম্যাম আমি শাফিন আহমেদ কিছুক্ষণ আগে যে পেশেন্ট কেবিনে আসলো তার হাজবেন্ড।আসলে আমার ওয়াইফ দু মাস যাবৎ আপনার কাছে আসে কিন্তু আমাকে বলছে না তার কারণ কি? আপনি কি কাইন্ডলি একটু বলবেন অনুর কি কোন সমস্যা হয়েছে? শাফিন কৌশলে জিজ্ঞেস করল যেন ডক্টর সব তথ্য দিয়ে দেয়। সফিনা কথা শুনে ডক্টর জবাব দিল,

ডক্টর: আপনি কোন পেশেন্টের কথা বলছেন? শাফিন অনুর পুরো নাম বলল।ও অনু কথা বলছেন আপনি ।কেন আপনি জানেন না অনু আপনাকে বলেনি যে ও প্রেগনেন্ট। আপনার ওয়াইফ থ্রি মান্থস প্রেগন্যান্ট আর আপনি জানেন না। কেমন হাজব্যান্ড বউয়ের খোঁজ খবর রাখেন না অনু শরীরে প্রচুর ভিটামিন এ’র অভাব আর রক্তশূন্যতা ও আছে। আর প্রচুর দুশ্চিন্তা করে মেয়েটাকে দেখে রাখবেন ডেলিভারির সময় নয়তো সমস্যা হবে। মা ও বেবি দুজনেরই লাইফে রিস্ক।

অনু প্রেগন্যান্ট কথাটা শুনে শাফিন আকাশ থেকে পড়ল। তার চোখ থেকে দু ফোটা জল অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়ল।সে বাবা হতে যাচ্ছে আর অনু একবার তাকে বলার প্রয়োজন মনে করেনি। এত বড় কথাটা সে কিভাবে লুকাল। তার কি অধিকার নেই তার বাচ্চার কথা জানার। এতদিনে সে তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বুঝতে পেরেছে।তাহলে কে স্বপ্নের মতো সত্যি সত্যি অনু তার সন্তানকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে শাফিন চাইলেও তাদের ধরে রাখতে পারবে না?

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *