স্বীকৃতি

স্বীকৃতি !! Part- 11

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেলো আফসানার। সময় বেশি নেই! বিয়ের শপিং এ মহাব্যস্ত সে। আজও শপিং করতে বের হয়েছে। তার সাথে এসেছে খুশবু, আরহাম ও ফাহিম।
আরহাম ও ফাহিম চা খেতে গেলো। খুশবুর সাথে বসে বিয়ের শাড়ি দেখছে আফসানা। হঠাৎ আগমণ ঘটলো আফাসানার প্রাক্তন প্রেমিকের। তাকে দেখে খুশবুর উদ্দেশ্যে আফসানা বললো-
ভাবী এখান থেকে চলো।
.
সাদেক আফসানার উদ্দেশ্যে বললো-
সেদিন আমি তোমার পাশে ছিলাম না, তার জন্য আমি লজ্জিত। কি করবো বলো! মাকে যে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।
.
আফসানা গম্ভীর গলায় জবাব দিলো-
খুবই ভালো! এখন কি বলতে চায়ছেন আপনি?
-আমি তোমাকেও ভালোবাসি।
-সেটার নমুনা তো দেখলামই! আর কিছু?
-বিয়েটা করবেই?
-কেনো? আপনি প্রস্তাব দিবেন?
-না মানে, আসলে…

সাদেক কে আমতাআমতা করতে দেখে আফসানা বললো-
থাক, কিছু বলতে হবেনা। এমন কিছুতো বলবেনই না, যা শুনলে আমার মন ঘেমে যাবে করার কিছু থাকবেনা।
.
আফসানা বেরিয়ে গেলো।
খুশবু তাকালো সাদেকের দিকে।
আফসানার বিয়ের কথা শুনে হয়তো কষ্ট পাচ্ছে সে।
খুশবু নরম স্বরে বললো-
ভালোবাসার মানুষটাকে প্রাপ্য সম্মানই যদি দিতে না পারো, সে ভালোবাসার মূল্য কি? তোমাদের জুটি হয়তো আল্লাহ মিলিয়ে রাখেন নি। এমন কিছু করোনা যাতে আফসানা দ্বিধায় পড়ে যায়। যদি সত্যিই তাকে জীবনে ফিরিয়ে নিতে চাও, প্রাপ্য সম্মান দিতে পারবে মনে হলেই এসো। ফাহিম ভালো মানুষ। সব বুঝে। তবে আফসানা এখন আর প্রেমে অন্ধ নয় তবুও তার মনে তোমার জন্য জায়গা রয়েছে। তাই ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নাও।
.
সাদেক চলে গেলো। খুশবু দাঁড়িয়ে রয়েছে একই জায়গায়।
কতো সহজে সাদেক কে বলে দিলো সে, তাদের জুটি হয়তো আল্লাহ বানায়নি। এই কথাটি নিজের মাথায় কেনো ঢুকাতে পারেনা সে?
মানুষকে বোঝানো যতোটা সহজ নিজেকে বোঝানো ততটা কঠিন। কার উপর কি বয়ে যায়, সে ছাড়া কেউ বোঝার নেই। আসলেই অদ্ভুত প্রকৃতির এই নিয়ম!

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন খুব নিকটে চলে এলো।
আজ গায়েহলুদ আফসানার। ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো।
খুশবু একা হাতে সব সামলে নিচ্ছে। তাকে দেখে বেশ মুগ্ধ হচ্ছে আরহাম। আফসানার বিয়েটা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হয়তো ফারাজের কথা মনে নেই তার। এভাবে সংসারের মায়া জালে আটকে গেলে হয়তো একদিন ফারাজকে ভুলেই যাবে সে।
.
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আরহামের। এখানে অনেক শোরগোল হওয়াতে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো সে।
স্টেজে উঠার জন্য তৈরী হয়ে এলো আফসানা। বাসায় পার্লার থেকে মেয়ে আনা হয়েছে তাকে সাজানোর জন্য। খুশবুকে দেখে সে বলে উঠলো-
এ কি ভাবী! আমি ভেবেছি তুমি আগেই তৈরী হয়েছিলে।
-নাহ আফসানা। এসব সাজগোজ আমার তেমন পছন্দ নয়।
-তাই বলে এভাবে থাকবে! আমি তোমার সাথে স্টেজে উঠবো। তাই তুমি তৈরী হয়ে এসো।
-আমি…
-প্লিজ ভাবী! কোনো বাহানা নয়।
.
আফসানার কথামতো খুশবু এগিয়ে গেলো রুমের দিকে।
.
খুব যত্ন করে শাড়ি পরছে খুশবু।
আরহাম যে ওয়াশরুমে এটা সে জানেনা।
আরহাম ওয়াশরুমের দরজা খুলে খুশবুকে এভাবে দেখে থমকে গেলো।
খুশবুর সম্পূর্ণ মনোযোগ শাড়ির দিকে থাকার কারণে সে কিছু বুঝলোনা।
বকুল জান্নাত এই শাড়িটি আজ পরার জন্য দিয়েছেন খুশবুকে। একেবারেই নতুন কাতান শাড়ি হওয়াতে খুশবুর পরতে বেশ অসুবিধেই হচ্ছে। আফসোস হচ্ছে তার, কেনো যে পার্লার থেকে আসা মেয়েটিকে আনলো না সাথে!
কিছুক্ষণ খুশবুর দিকে তাকানোর পরে চোখ সরিয়ে নিলো আরহাম। এ কি করছে সে! এভাবে পোশাক বদলানোর সময় একটা মেয়েকে দেখা কি ঠিক?
পরক্ষণেই আরহামের মনে এলো, খুশবু তো বাইরের কোনো মেয়ে নয়। তার বিবাহিতা স্ত্রী। তাকাতেই পারে সে! শুধু তাকানো নয়, আরো অনেক কিছুই করতে পারে।
মুচকি হাসলো আরহাম।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে খুশবুর দিকে তাকিয়ে বললো-
আমি কি কোনো সাহায্য করতে পারি?

পেছনে ফিরে আরহাম কে দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠলো খুশবু-
আপনি এখানে! কি করে?
-তোমার আগেই তো
এলাম আমি।
.
খুশবু শাড়ির আঁচল বুকের উপরে দিতে দিতে বললো-
এখুনি ওদিকে ফিরুন।
-আরে…
.
খুশবু কড়া গলায় বললো-
ফিরুন বলছি!
.
আরহাম অপর দিকে ফিরলো।
ফিরেই ফিক করে হেসে দিলো। কেননা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় খুশবুকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
খুশবু তাড়াহুড়ো করে রুমের লাইট টা বন্ধ করে দিলো।
আরহাম বললো-
এই অন্ধকারে তুমি শাড়ি পরতে পারবে?
-পারবো।
-দেখেছি তো কতো পারো! দেখে দেখেই পারছিলে না, না দেখে কি করে পারবে!
-আপনি রুম থেকে বেরিয়ে যান, ঠিকই পারবো আমি।
-তুমি চায়লে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
-আপনি শাড়ি পরাতে পারেন?
-ইউটিউব থেকে দেখে নিবো।
-গুড আইডিয়া!
.
খুশবুর বুদ্ধিটা পছন্দ হয়েছে! কথাটি শুনেই খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো আরহাম।
কিন্তু তার খুশি আর বেশিক্ষণ স্থায়ী রইলো না। খুশবু বললো-
ভিডিও টা দিয়ে আপনি চলে যান, আমি দেখে নিচ্ছি।
.
শাড়ি যে খুশবু পরতে পারেনা তা নয়। সে পারে, তবে এই শাড়িটির ক্ষেত্রে একটু সময় লাগছে। ভিডিও এর কথা ইচ্ছে করেই আরহামকে বলেছে সে।
আরহামের সাথে মজা করতে যেনো ভালোই লাগছে তার!
আরহাম মৃদু হেসে জবাব দিলো-
তুমি আস্তেধীরে তৈরী হয়ে নাও। আমি বাইরে আছি।
.
.
.
স্টেজে বসে আছে ফাহিম। আজ তারও গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে।
তবে তার মনটা পড়ে রয়েছে আরহামের বাড়িতে। আফসানা কি তার দেয়া হলুদ শাড়িটি পরেছে? ফুলের গহনা দিয়ে সেজেছে সে? কেমন লাগছে দেখতে তাকে?
উফফ…. এতো চাপ নিয়ে বাঁচা যায়!
আর না ভেবে ফাহিম ডায়েল করলো আফসানার ফোন নাম্বারে। এক বার রিং হতেই যে আফসানা রিসিভ করবে ভাবতে পারেনি সে।
-হ্যালো।
-সে কি! অনুষ্ঠান শুরু হয়নি?
-নাহ। ভাবীর জন্য অপেক্ষা করছি। আপনাদের?
-স্টেজ থেকেই কথা বলছি।
-ওহ! লোকে দেখলে কি বলবে?
-জরুরী ফোন ভাববে।
-আসলেই কি জরুরী?
-অনেক বেশি।
.
ফাহিমের কথা শুনে মুচকি হাসলো আফসানা। ফাহিম বললো-
একটা ছবি দাও তোমার।
-কেনো?
-বারেহ! সবাই দেখছে তোমাকে। আমি দেখবোনা?
-নাহ।
-কেনো?
-একেবারে কালই দেইখেন। এখন আমি ব্যস্ত। রাখলাম।
.
ফোনের লাইন কেটে দিলো আফসানা।
ফাহিম বিড়বিড় করে বললো-
এইটা কিছু হইলো! হলুদের সাজে তোমাকে দেখার জন্য মনটা কেমন আকুপাকু করছে বুঝলেনা তুমি। হুহ্!
.
.
লাল পাড়ের হলুদ একটা শাড়ি পরে বেরিয়ে এলো খুশবু। খোপায় গাধা ফুলটা বেশ মানিয়েছে তাকে৷ সাজ বলতে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ছাড়া কিছুই নেই।
নিজের বউ বলেই কি এতো সুন্দর লাগছে খুশবুকে তার?
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে আনমনে হেসে চলেছে আরহাম।
আরহামের দিকে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো খুশবু।
একটু আগে যা ঘটলো বিষয়টা মজার হলেও স্বাভাবিক নয়। আরহাম তাকে এমন একটা অবস্থায় ইচ্ছে করে দেখেছে, তবুও সে তাকে কিছুই বললো না। কেনো? আরহাম তার স্বামী বলে নাকি…
ভাবনার গতি আর বাড়ালো না খুশবু।
আফসানা কে ডাকতে তার রুমের দিকে এগুলো সে।
.
.
আফসানাকে নিয়ে বেরিয়ে আসতেই তাদের দিকে এগিয়ে এলো আরহাম। আফসানার মাথায় হাত রেখে বললো-
তুই সুখে থাকবি অনেক।
.
ভাইকে জড়িয়ে ধরলো আফসানা। দুই ভাই বোনের এই বন্ধন দেখে ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটলো খুশবুর।
হঠাৎ সামনের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলো সে।
সাদেক কেনো এসেছে? তবে কি সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে এসেছে এখানে? এখন কি হবে!
.
চলবে