স্বীকৃতি

স্বীকৃতি !! Part- 07

.
আফসানার ব্যাপারে আরহামের কাছে সবটা শুনে মৃদু হাসলো ফাহিম। তার এই হাসির রহস্য বুঝতে পারলোনা আরহাম। নরম স্বরে জিজ্ঞাসা করলো-
হাসছিস যে?
-এসব তুই আমাকে না জানালেও পারতি।
-মিথ্যে দিয়ে কোনো সম্পর্ক শুরু হোক এটা চাইনি আমি।
-তবুও কিছুকিছু বিষয় গোপন রাখাও শ্রেয়।
-তোর কি আফসানার উপর বিশ্বাস নেই?
-আমি না হয়ে অন্য কেউ হলে কি সব সত্যিটা জানাতি?
.
নিশ্চুপ হয়ে গেলো আরহাম। তার বাম হাত টার উপরে নিজের হাতজোড়া রেখে ফাহিম বললো-
বন্ধু বলেই তো বলেছিস। ভাবিস না। তোর বোনকে সুখেই রাখবো।
-তার মানে তুই রাজি?
-আরেব্বাস! তুই বললে এখুনি বিয়ে করে নিয়ে যাবো।
-বয়েই গেলো এভাবে বোন দিতে! অনেক বড় আয়োজন করবো আমার বোনের জন্য।

আরহাম বাড়ির সকলকে ডেকে নিয়ে এলো ড্রয়িংরুমে। মিষ্টিমুখ করতে ব্যস্ত সকলে। ফাহিমের উদ্দেশ্যে খুশবু মৃদু স্বরে বললো-
কটা ছেলে পারে আপনার মতো সব এতো সহজে মেতে নিতে! ভালোবাসা না থাকলে আসলেই সম্ভব নয় এটা। সুখী হোন দুজনেই।
.
খুশবুর এই কথাটি আরহামের কানেও এসেছে। কেননা সে খুশবুর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
আফসানাকে ভালোবাসে বলেই ফাহিম সবটা মেনে নিয়েছে। সে কেনো খুশবুর সব মেনে নিলো? মেয়েটি কি আরহামের হৃদয়ে স্থান পেয়ে গেলো?
.
.
.
সপ্তাহ খানেক কেটে গেলো…..
খুশবুর বাসায় এসেছে মারজানা। মারজানা হলো খুশবুর দূর সম্পর্কের ফুফু। মারাজানা আরহামের প্রতিবেশী। তার মাধ্যমেই খুশবুর সাথে আরহামের বিয়েটা হয়।
.
মারজানা এসে বসলো খুশবুর ঠিক পাশে। খুশবুর শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে বললো-
কি হাল করেছিস নিজের? বিয়ের পরে মেয়েরা সুন্দরী হয়ে যায় সেই জায়গায় তোর এই অবস্থা কেনো?
.
মৃদু হাসলো খুশবু। ফারাজের ব্যাপারে কিছু জানা নেই মারজানার। তাই সে এসব প্রশ্ন করছে। জানলে হয়তো করতোনা।
তার হাসি দেখে মারজানা ভ্রু জোড়া কুচকে বললেন-
তোর মা তোর জন্য কেঁদে
চলেছে আর তুই কিনা হাসছিস?
-মা কাঁদে?
-অনেক বেশি। আমি ফোন করলেই কান্নার শব্দ শুনি। সেদিন তো দেখতে গেলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না! কারণ টা কি অনেক জিজ্ঞাসা করার পর বললো, তুই নাকি বিয়ের পর যাসনি তাই তার তোর জন্য মন খারাপ হয়। হ্যাঁ রে, যাস না কেনো বাবার বাড়ি?
-সংসারে মন দেয়ার চেষ্টা করছি।
-তাই বলে পুরোনো সম্পর্ক ভুলে যাবি?
-মা আসলেও তো পারে।
-তোর অভিমান আছে। তার নেই বুঝি?
.
অফিস থেকে রুমে এসে মারজানার দেখা পেলো আরহাম। আরহামকে দেখে মারজানা বলে উঠলেন-
ওরে আরহাম? তোরে যে এতো ভালো একটা মেয়ের জামাই বানালাম আমার একটা উপহারও দিলিনা।

পকেট থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগ বের করে ছোট টেবিলের উপরে রাখলো আরহাম।
মারজানার পাশে এসে বসে বললো-
বলো আন্টি তোমার কি চায়?
-খুশবুকে নিয়ে ওর বাবার বাড়ি যাবি। ওর মা বড্ড কষ্ট পাচ্ছেন।
-সে কি! আমাকে তিনি কিছু বলেন নি তো।
-আমাকে বলেছে। এবার যাবি কিনা বল?
-নিশ্চয় যাবো।
.
মারজানা চলে যাবার পরে খুশবু বললো-
আমি যাবোনা।
-কেনো?
-এমনিতেই।
.
আরহাম বুঝতে পারলো, বাবার বাড়ির প্রতি খুশবুর মনে প্রচন্ড ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। কারণটাও আরহামের কিছুটা হলেও বোধগম্য। তবে এই বিষয়ে সে খুশবুর সাথে কথা বলতে চায়না৷ অন্যভাবে রাজি করাতে হবে তাকে।
হালকা কেশে আরহাম বললো-
কোনো মা বাবাই সন্তানের ক্ষতি চায়না। তুমি কেনো ওদের উপর রেগে আছো আমি জানতে চাইনা। কিন্তু তোমার নীরবতা ওদের কষ্ট দিচ্ছে। এটা কি উচিত হচ্ছে তোমার?
.
.
রেস্টুরেন্টে বসে আছে অনন্ত ও খুশি।
অনন্তের সাথে অন্য একটি মেয়ের সম্পর্ক ছিলো প্রায় এক মাস। মেয়েটিকে নিয়ে এই রেস্টুরেন্টে এসেছিলো সে। মেয়েটি এতোটাই খাদক ছিলো যে, এক বসাতে প্রায় ২০০০টাকার খাবার খেয়েছে। কিন্তু অনন্তের পকেটে ছিলো ১২০০টাকা।
মেয়েটি বাসায় চলে গেলেও অনন্ত টাকা দিতে না পারায় যেতে পারেনি। রেস্টুরেন্টটি খুশবুর কলেজের পাশেই। তাই সে খুশবুকে ফোন করতেই ছুটে আসে সে। বিল পে করে অনন্তকে বলে-
মাস তো শেষ হয়নি। টিউশনের টাকা নিশ্চয় পাওনি। তাই তোমার পকেটে যে টাকা গুলো আছে ওগুলা তুমিই রাখো। প্রেমিকা যদি আবারো রেস্টুরেন্ট আসতে চায়! আমি চাইনা আমার বন্ধু কোনো মেয়ের কাছে ছোট হোক।
.
সেদিনের ঘটনার কথা মনে করে মুচকি হাসলো অনন্ত। খুশি বললো-
হাসিতে পেট ভরবেনা। কি খাবে বলো?
-তুমি খাওয়াবে?
-হু। কেনো গফ বুঝি খাওয়াতে পারেনা?
.
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে অনন্ত বললো-
আজ কিন্তু খুশবুর বোনের মতোই লাগছে তোমাকে।
.
.
.
সকাল সকাল কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলতে এলেন খালেদা শারমিন। দরজা খুলেই চমকে গেলেন তিনি আরহাম ও খুশবু কে দেখে।
খুশবুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলেন তিনি। খুশবুর চোখেও পানি। তবে মুখে কোনো শব্দ নেই। ইচ্ছে করেই যেনো গুটিয়ে রেখেছে নিজেকে।
তাদের বসিয়ে বাড়ির সকল কে ডাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন খালেদা শারমিন।
খুশবুর উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে আরহাম বললো-
মুখে হাসি তো ফুটান একটু! সবাই ভাববে আমি খুব কষ্টে রেখেছি আপনাকে।

দুপুর বেলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে খুশবু। খুশি এসে বললো-
আমার রুম থেকে আমাকেই যেতে হচ্ছে এখন।
-কেনো?
-তোর স্বামীর জন্য।
-তিনি অন্য রুমে থাকবেন। তুই যাস না।
-হু! তারপর মা আমাকে এতোগুলো বকা দিক।
-বকবে কেনো?
-ভাইয়া আবারো চাকরীর ছুটি নিয়ে তোকে নিয়ে এখানে এসেছে। তাছাড়া বড় মেয়ের জামাই তিনি। স্বামী স্ত্রীকে একসাথে থাকতে দিতে হয়। ভাইয়ার কোনো অযত্ন না হতে দিতে বলেছে মা।
-আরে কিছু হবেনা।
.
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকানো শুরু হলো, আকাশ টা অন্ধকার হয়ে গেলো মুহুর্তেই। খুশি বললো-
ছাদে কাপড় আছেরে আপু। আমি আসছি এখন।
.
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ টার দিকে তাকিয়ে আছে খুশবু। বৃষ্টি হবে কি?
ভাবতে ভাবতেই এক এক করে পানির ফোটা পড়তে লাগলো আকাশ থেকে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তা দেখতে লাগলো খুশবু। হঠাৎ তার চোখ গিয়ে আটকায় সদর দরজার দিকে। কেউ দাঁড়িয়ে আছে ওখানটাই। ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখতে পেলো সে ফারাজকে। লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে সে বললো-
ফারাজ তুমি এসেছো!
.
চলবে

Comments