সে কি জানে

সে কি জানে ! Part- 23

রেয়ানের কোলে বসে আছি আমি।।হাতে আমার গিটার।।উদ্দেশ্য গিটার শিখবো।।আর আমাকে শিখাবেন রেয়ান!!আমার হাতের উপর হাত রেখে গিটারের এক এক স্টেপ শিখাচ্ছেন উনি।।কিন্তু আফসোস!!এ আধাঘন্টায় আমি একটা কিছুও বুঝি নি।।তবে চোখ বন্ধ করে অনুভব করছি তার স্পর্শ।। আর শুনছি গিটারের মন জুড়ানো আওয়াজ!!
—” মরুভূমি এভাবে চোখ বন্ধ করে থাকলে হবে??দেখো এ সুর-টা সুন্দর আর সহজও।।তুমি শিখতে পারবে।। ”
—” কষ্ট লাগে।।আপনি একটা কাজ করুন আমাকে গান শুনান।। ”
—” অবশ্যই না।।আগে গিটার চালানো শিখো তারপর।। ”
—” না প্লিজ!! ”

প্রতিউত্তরে রেয়ান কিছু বলতে যাবেন তার আগেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ কানে এসে বারি খায় আমাদের।।চটজলদি উঠে দাঁড়ালাম আমি।।দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি মা আর রিহান দাঁড়িয়ে আছে।।আমাকে দেখতেই রিহান করুন গলায় বলে উঠে……
—” মা আমি তোমার আর বাবার সাথে ঘুমাবো।। ”
রিহানের কথায় রেয়ান হেসে দিয়ে বলে উঠেন……
—” অবশ্যই আসো।।আমরা দু’জন মিলে তোমার মাকে অনেক জ্বালাবো।।তাড়াতাড়ি আসো।। ”
কথাটা শুনে রিহানের মুখে হাসি ফুটে উঠে।।এক দৌঁড়ে সে চলে যায় রেয়ানের কাছে বিছানায়।।এটা দেখে এবার আমি মুচকি হাসলাম।।মাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলাম তাদের কাছে।।
.
মাঝরাতের দিকে হঠাৎ অনুভব করি আমাকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে আছে।।তার প্রত্যেকটা নিশ্বাস আমার ঘাড়ে পরছে।।পুরো জমে যাচ্ছি আমি!!তার দিকে ফিরতে নিলে সে ফিসফিস করে বলে উঠে….
—” উহু!!নড়বে না।।এভাবে ভালো লাগছে।। ”
—” কিন্তু!! ”
আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান আমার গলায় আর ঘাড়ে দু-তিনিটে চুমু দিয়ে দিলেন।।ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠলেন…..
—” ভালোবাসি বউ!! ”

—” আমিও ভালোবাসি আমার হিটলার বরকে।৷ ”
বলেই মিটিমিটি হাসছি আমি।।আমার হাসি দেখে নিমিষেই রেয়ানের ভ্রুঁ কুঁচকে এলো।।পরক্ষনেই নিজের মুখ আমার কাছে এনে আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালেন উনি।।সাথে সাথে আমার চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেল।।সে দিকে পাত্তা না দিয়ে উনি দুষ্টোমি কণ্ঠে বলে উঠলেন……
—” বাসর করবে মরুভূমি।।কালকে!!আমার না খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে।। ”
কথাটা শুনে আমার লজ্জা যেন আরও দ্বীগুণ বেড়ে গেলো।।কিন্তু তবুও নিজের রাগি কণ্ঠে তাকে বললাম……
—” অসভ্য!!চরম অসভ্য আপনি।।মুখে কিছু আটকায় না আপনার।।লির্লজ্জ কোথাকার।। ”
বলেই রিহানের দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম আমি।।আমাকে এমন করতে দেখে রেয়ান হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা ।।পরক্ষনে আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলেন উনি।।গলায় মুখ ডুবিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলেন……
—” #সে_কি_জানে কতটা ভালোবাসি তাকে।।আত্মহত্যা বা কোনো খারাপ কাজ করব না তার জন্য।।কিন্তু এমন কিছু করব যা এগুলোকেও হার মানাবে।।তবে সে যদি কখনও ছেঁড়ে চলে যায় আমাকে।।বিশ্বাস করো আটকাবো না তাকে।।তবে তাকে বলে দিও,, তাকে ছাঁড়া আমি এক নিস্তেজ প্রাণ হয়ে থাকবো!!”
কথাটুকু বলেই আরেকটু আগলে নিলেন আমাকে।।আর আমি!!আমি মনে মনে হাসছি।।এত ভালোও কি বাসা যায় কাউকে??প্রশ্নের উত্তরটা হয়তো রেয়ানই তার আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয় আমায় বারবার!!নাহলে প্রশ্নটা এত জ্বালায় কেন আমায়।।ঘুর-পাকই বা করে কেন আমার মাথায়!!
.
সকালের দিকে দু’গালে টান অনুভব করতেই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও চোখ খুললাম আমি।।চোখ খুলে অবাক না হয়ে পারলাম না।।আমার একপাশের গাল রেয়ান তার এক হাত দিয়ে টানছে তো অন্যপাশের গাল টানছে রিহান।।আমাকে দেখে দু’জনেই মিষ্টি হেসে বলে উঠে……
—” ভার্সিটি যাবে না!! ”
তাদের কথায় পার্থক্য শুধু এতটুকুই…শেষের দিকে রেয়ান বৌ বলেছে তো রিহান মা!!তাদেরকে একসাথে দেখে মনটা ভরে গেছে আমার।।কিন্তু ভার্সিটির কথা শুনতেই ভ্রুঁ কুঁচকে এলো আমার।।রেয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললাম…..
—” ভার্সিটি কেন যাবো।।আমার তো নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে।।এখন কিসের ভার্সিটি?? ”
—” বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে??পড়ালেখার কোনো ফাঁকি নেই।।যাও উঠে ফ্রেস হয়ে নাও।। ”
কথাটা শুনে উনার দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম।।কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন হলো না।।উনি উনার সিদ্ধান্তে অটুট।।তাই বাধ্য হয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে।।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি বাপ-ছেলে বিছানায় বসে ফোন নিয়ে মহাব্যস্ত হয়ে আছে।।একজন ব্যস্ত ফোনে গেমস্ খেলছে তো অন্য জন তা মহাব্যস্ত নিয়ে দেখছে।।মূলত রেয়ান খেলছে আর রিহান তা দেখছে।।আর তাদের এই মহাব্যস্ততার কারন হলো পাপজি গেম!!ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি।।পরক্ষনে চলে গেলাম নিচে নাস্তা বানাতে।।
নিচে যেতেই শ্বাশুড়ি মার সাথে দেখা হয় আমার।।উনি আমাকে দেখতেই মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলেন…..
—” রিহান আর রেয়ান উঠেছে মিরা?? ”
—” জ্বী মা।। ”

—” ও আচ্ছা।।তাহলে চলো দু’জনে গল্প করতে করতে নাস্তা বানিয়ে ফেলি।। ”
প্রতিউত্তিরে হাসলাম আমি।।তারপর দু’জনে মিলে নাস্তা বানানো শুরু করে দিলাম।।গল্পে এতই মশগুল ছিলাম আমরা যে কখন নাস্তা বানানো শেষ হয়ে গেছে তা টেরই পাইনি।।প্লেটে নাস্তা বেড়ে পা বাড়ালাম রুমের দিকে।।যাওয়ার আগে মা আমাকে ডেকে মিষ্টি সরে বলে উঠলেন……
—” মিরা!!বিকালের দিকে দিধা আসবে।।তাই তুমি একটু চেষ্টা করো ভার্সিটি থেকে তাড়াতাড়ি আসতে।।কেমন?? ”
মার কথায় শুধু “আচ্ছা” বললাম আমি।।আসলে বুঝতে পারছি না উনি এত ভালো কেন!!বারবার কেন যেন মনে হয় এত ভালোবাসার যোগ্য তো আমি??হয়তো আবার হয়তো না!!তবে এতটুকু বুঝতে পারছি উনারা এত ভালো দেখেই রেয়ান এতটা ভালো।।ইচ্ছে করছে শ্বাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরে বলি…..
—“ধন্যবাদ আপনাকে মা।।নিজের অজান্তেই আপনার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ-টা আমাকে দেওয়ার জন্য।।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!! ”
কিন্তু আফসোস!!আপাতত এমন-টা বলতে পারছি না আমি।।শুধু নির্বাক তাদের ভালোবাসার এক এক-টা রুপ দেখছি!!
.
রুমে যেতেই চরম বিরক্ত হই আমি।।রেয়ান আর রিহান এখনও গেমস্ খেলছেন।।তাদের কাছে গিয়ে নাস্তার প্লেট পাশের টেবিলে রেখে বলে উঠলাম…..
—” গেমস্ খেলা বাদ দিয়ে এখন কি একটু নাস্তা খেতে পারবেন আপনারা।। ”
সাথে সাথে তারা জবাব দিতে প্রস্তুত।।ব্যস্ত ভঙ্গিতে দু’জন একসাথে বলে উঠেন…..
—” আহ!! খাইয়ে দাও আমাদের।। ”
তাদের কথাশুনে এবার রাগ লাগছে আমার।।তবে তা প্রকাশ করলাম না।।খাইয়ে দিতে লাগলাম ওদের।।আসলে রাগ করে লাভ কি??ওরা তো আমারই।।একজনের অস্তিত্ত্ব আমি তো অন্যজন আমারই অংশ!!
.
.
.
#চলবে🍁