সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 17

-তাই? চলে যাবো আমি? সত্যিই চলে যাবো? যাবো না আমি কোথাও।ডিভোর্স কেন দিবেন আমাকে? ভুলে যাবেন না আমি এখনো আপনার স্ত্রী।আমাকে ডিভোর্স আপনি কিভাবে দেন সেটা আমি দেখে নিবো।মজা করেন সবমসময় আমার সাথে। রাতে বলেন ভালোবাসি আর সকাল হলে বলেন ভালোবাসি না।মিস্টি মিস্টি কথা বলে আদর করে আবার ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেন মুভির ডায়লগ। এই তাকান আমার দিকে।আপনার রাগ আছে আর আমার অভিমান নেই? আপনি রেগে আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন।আমার সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলতে পারেন আর আমি কিনা কি বলে ফেলেছি সেটা ধরে রেখেছেন? নিজেকে অসুস্থ করে নিয়েছেন?
-আরু
-চুপপ করুন। আমাকে বলতে দিন। মা আমাকে সব বলেছে।
বিশ্বাস করুন আহান আমার কিচ্ছু মনে নেয় ছোটবেলায় কি করেছি।যার শাস্তি আপনি আমাকে এখন দিচ্ছেন।
উনি অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে ফেললেন।উনাকে অক্সিজেন মাস্ক খুলতে দেখে আমি চুপপ হয়ে গেলাম। ধীরে ধীরে উনি উঠে বসার চেস্টা করছেন।আমি উনাকে ধরে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসিয়ে দিলাম।উনার ঘন সাদা কালো চোখ দুটোই পানি টলমল করছে। আমি আরও কিছু বলতে যাবো উনি এবার আমার ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে চুপপ করতে বললেন।
-আর একটা কথাও বলো না আরু।দু’হাত মেলে দিয়ে আমাকে নিজের বুকে আসতে ইশারা করলেন।
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।উনাকে বললাম,
-আসবো না আমি আপনার বুকে। কস্ট দেন না আপনি আমায়? শুধু মারেন আবার খুব খারাপ খারাপ কথাও বলেন।আপনাকে আমি ডিভোর্স ও দেবো না।আর কাছেও আসবো।অনেক জ্বালাবো আমি আপনাকে।
উনার গলা ধরে কথাগুলো বলে ছেড়ে দিলাম।উনি আমার দিকে খুব অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আস্তে করে বললেন,
-প্লিজ আরু।একবার?
-বললাম তো না।
-ঠিক আছে।
উনি মুখটা কালো করে বসে আছেন। একবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন আবার আমি তাকালে চোখ দুটো নিচে নামিয়ে নিচ্ছেন। হুট করেই আমি উনাকে টেনে নিজের মাথাটা উনার বুকে চেপে ধরে রাখলাম।উনি দু’হাতে যেন আরও শক্ত করে চেপে ধরলেন আমার মাথাটাকে।উনি কাঁদছেন।আমারও কান্না পাচ্ছে খুব।কিন্তু উনার কান্নাটা আজ শব্দ করে হলেও। আমি নিরবে কাঁদছি।উনাকে কিছুতেই জানতে দেবো না আমি কাঁদছি উনার জন্য। কারণ উনি সকালে ভালোবাসে আর সন্ধ্যায় ভুলে যায় আমাকে।এবার উনাকে বুঝতে হবে আমার জায়গাটা কতটুকু উনার জীবনে! যেন আর কখনো আমার সাথে এমন না করেন।উনি কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন,
-আমাকে একটু ভালোবাসবে আরু? আমি..আমি আর কঅখনো কস্ট দেবো না তোমাকে।কখনো না।
জবাবে আমি বললাম,
-নাহ! আপনাকে ভালোবাসবো না আমি।ছেড়েও যাবো না কখনো।কস্ট দেন না আমায়? আপনাকে কি ভালোবাসা যায়? আপনি বলেছেন আপনার বুকে আসতে তাই এসেছি।নইলে আসতামই না।স্বামীর আদেশ আমি তো আর ফেলতে পারি না তাই এসেছি।ভালোবেসে আসি নি আপনার কাছে।
উনি আমাকে আরও শক্ত করে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিলেন। আমাকে ঝাপটে ধরে বললেন,
-আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পারছো আরু?
-এটা আপনার কোন মুভির ডায়লগ?
-আমার ভালোবাসাটা তুমি দেখতে পারছো না আরু।কিন্তু সত্যি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
-এটা আবার কোন মুভির ডায়লগ দিচ্ছেন?
উনি টেনে আমাকে নিজের সামনে আনলেন।আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-আমার অনুভুতিগুলো তোমার কাছে মুভির ডায়লগ মনে হচ্ছে? সত্যি বলছি বিশ্বাস হচ্ছে না? এই আরু খুব ভালোবাসি তোমাকে আমি।
-না বাসেন না।আপনার স্বভাব আমার জানা হয়ে গেছে। কতো মেরেছেন আমাকে বলুন তো?আমাকে ভালোবাসি কথাটাও তো কত্তবার বলেছেন।পরমুহূর্তে বলেছেন সব অভিনয় আপনার।
উনি কিছু বলবেন এমন সময়ে কেবিনের দরজায় নক পরলো। মাইশা রুহান দাড়িয়ে আছে কেবিনের সামনে।ওদেরকে দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন আর আমি কিছু না বলে উনার কাছ থেকে উঠে দূরে সরে আসলাম।রুহান এসে উনার পাশে বসলেন।আর মাইশা আমার পাশে এসে দাড়ালো। ফিসফিসিয়ে বলল আমাকে,
-আপু তোমাদের মধ্যে কি সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে? মানে রোমাঞ্চ করছিলে এতোক্ষণ? দেখে নিয়েছি আমরা।
মাইশার কথায় শুনে আমি বিস্ময় নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকালাম।ভাবছি কি বলছে এগুলো মাইশা? মাইশার কাছে জানতে চাইলাম।
-কি দেখেছিস তোরা? আমরা তো শুধু কথা বলছিলাম।
-হয়েছে হয়েছে আর বোঝাতে হবে না।আমি সব বুঝি।কাল রাতে বুঝিয়েছে আমার স্বামীটা।
-কি বুঝিয়েছে?
-ওই যে স্বামী স্ত্রী হেসে কথা বললে সেটাই রোমাঞ্চ।
শেষের কথাটা মাইশা একটু জোড়েই বলে ফেলেছে।যেটা রুহানের কানে গিয়ে পৌঁছায়।আর রুহান হতভম্ব হয়ে গলা ঝেড়ে কেশে উঠেন।রুহানকে কাশতে দেখে মাইশা এগিয়ে গিয়ে রুহানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-একি কাশি হচ্ছে কেন আমার স্বামীটার? ঠান্ডা লেগেছে বুঝি? ডাক্তারকে ডাকবো?
রুহান বাঁকা চোখে মাইশার দিকে তাকিয়ে রইলো।মাইশা আবার কিছু বলতে যাবে রুহান বসা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে পরে।চোখের ইশারায় কিছু বোঝালো মাইশাকে।যেটা দেখে মাইশা মুখে আঙুল ঠেকিয়ে চুপপ হয়ে গেলো।
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
রুহান বসে পড়লেন। আহানের সাথে আবার কথা বলতে শুরু করলেন।আহানের খোঁজ খবর নিচ্ছেন।মিডিয়া সম্পর্কিত অনেক কথা বলছেন।আহান আর রুহান নিজেদের মধ্যে কথা বলে চলেছেন।আমি আর মাইশা পাশাপাশি দাড়িয়ে আছি।মাইশা আস্তে করে আমার কানের কাছে এসে আবার বলছে,
-আচ্ছা আপু।বাসর রাতে নাকি অনেক রোমাঞ্চ হয়? তোমরা কি সারা রাত হেসে কথা বলেছিলে? একটুও ঘুমাও নি?
মাইশার প্রশ্নে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।ভাবছি কিসের মধ্যে কি বলছে এসব মাইশা?এ কেমন প্রশ্ন? ওর এ প্রশ্নের কিবা জবাব দেবো আমি তাই ভাবতে থাকলাম।ওদিকে রুহান আড় চোখে দেখতে লাগলো মাইশা আমাকে কিছু বলছে কিনা। যদিও রুহানের কানে পৌঁছাচ্ছে না।তাই রুহান পাত্তা না দিয়ে আহানের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।হুট করে মাইশা আবার জোড়ে বলে উঠলো,
-বল না আপু? বাসর রাতে কি কি করেছিলি? মানে কেমন কেমন কথা বলেছিলি? আমি তো সারারাত চেয়েছিলাম বাসর করতে। কিন্তু যতবারই উনাকে হাসানোর চেস্টা করেছি উনি শুধুই আমাকে বকেছেন।
আহানের সাথে কথা বলে হাসতে হাসতে মাইশার কথা শুনে রুহানের বিষম লেগে যায়।লজ্জায় রুহান চুপপ হয়ে গেলেন।অস্বস্থি আর নিরবতা কাটিয়ে উঠে এসে মাইশার সামনে দাড়ালেন।মাইশা রুহানের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে বলল,
-কিছু বলবেন?
রুহান আমার দিকে তাকিয়ে মুখে চাপা হাসি ফুটিয়ে মাইশার হাতটা ধরে বললেন এসো আমার সাথে। মাইশাকে টানতে টানতে রুহান নিয়ে যেতে লাগলেন আর মাইশা যেতে যেতে বলতে থাকলো রোমাঞ্চ করে আসি আপু।তারপর অনেক কথা বলবো তোর সাথে।
মাইশা, রুহান কেবিন থেকে বের হয়ে যেতেই উনি হাসিতে কুটিকুটি হয়ে পরেছেন।পেট চেপে ধরে হাসছেন উনি।আমি উনার পাশে এসে বসলাম।উনি হাসতে হাসতে চোখ টিপ মেরে বললেন আমাকে,
-তোমার বোনকে আমাদের বাসরের কথা বলেছিলে নাকি?
-কি বললেন আপনি? আপনার মনে হয় আমি এসব কথা ওকে বলেবো? আমাদের বাসর হলোই বা কখন যে বলবো? যাই হয়েছে আপনি আমাকে হয় জোড় করে করেছেন নয়তো বোকা বানিয়ে। ভালোবেসে একবারও আপনি আমার কাছে আসেন নি।আমি যতোবারই গিয়েছি আপনার কাছে আপনি আমাকে চড় মেরে মেরে গালদুটোর কি অবস্থা করেছেন দেখুন।
আমি মুখটা এগিয়ে দিয়ে দেখালাম। উনি আমার দুই গালে উনার আলতো হাত রাখলে উনাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে আসলাম আমি।
-ছোঁবেন না আমাকে আপনি।
-আরু
-চুপপ করুন।যেদিন সম্মান দিতে পারবেন সেদিন আসবেন আমার কাছে আপনি।শুধু ভালোবাসা দিয়ে সংসার হয় না আহান।তার জন্য স্ত্রীকে ভালো রাখতে হয়।অন্য মেয়েদের থেকেও দূরে থাকতে হয়।আপনি সেদিন আমার সামনে অন্য মেয়ের গালে চুমু খেয়েছেন।শুধু আমাকে কস্ট দেবেন বলে?
-আরু আমি ভুল করেছি বুঝতে পারছি।প্লিজ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।
-তাই? বুঝতে পারছেন আপনি? সত্যিই কি বুঝতে পারছেন নিজের ভুল নাকি অভিনয় করছেন? কিছুক্ষণ পর আবার বলবেন সুপারস্টার আহান খানের ওয়াইফ হবার কোনো যোগ্যতা আমার নেয়? আচ্ছা আহান! যাকে ভালোবাসা যায় তাকে কি কখনো এতোটা কস্ট দেওয়া যায়?
-ওহহ বুঝেছি।তুমি বুঝবে না আর আমাকে।আসলে এতোদিন যা করেছি তাতে আমাকে তোমার বিশ্বাস না হবারই কথা।
ওদিকে রুহান তখন মাইশাকে হাত ধরে টেনে একটা ফাঁকা কেবিনের মধ্যে নিয়ে এসেছে। মাইশাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে মুখটা ধীরে ধীরে মাইশার মুখের দিকে আগাচ্ছে।মাইশার ভেতরে এক অন্য রকম অনুভূতির জানান দিচ্ছে আজ।যা এর আগে কখনো হয় নি।মাইশা খিচে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে রুহানকে বলছে,
-দেখুন আমার কেমন যেন লাগছে।একটু দূরে সরুন। কোথাও গিয়ে বসি চলুন রোমাঞ্চ করি।
রুহান মাইশার বুকের সাথে মিশে গিয়ে মাইশার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মাইশা চোখদুটো খুলে ফেলে।মনে মনে বলে হায়! হায়! কি করছে আমার স্বামীটা? মাইশা নড়াচড়া করতে থাকে রুহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু ওর সব চেস্টায় ব্যার্থ হয়।কিছুক্ষণ পর রুহান যখন মাইশাকে ছেড়ে দেয় তখন মাইশা খুব জোড়ে জোড়ে হাঁপাতে থাকে।রুহান মাইশাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলেন,
-আমার লাইফের ফাস্ট কিস ছিলো এটা।তোমার?
মাইশা কি বলবে ভাষায় খুঁজে পাচ্ছে না।বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে শুধু একটা কথায় বলল,
-এটা কি করলেন আমার সাথে আপনি?
-কিস করেছি। এর আগে খাও নি?
মাইশা হালকা মাথা ঝাকিয়ে বলে,
-নাহ!
-আচ্ছা! আরেকবার করবো?
ঝট করে মাইশা বলে ফেললো,
-এই না না।এসব আর না।তার চেয়ে চলুন কোথাও বসে রোমাঞ্চ করি।
রুহান ভ্রু কুচকে মাইশার দিকে তাকালো। ঠোঁট উঁচিয়ে মাইশার দিকে নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-জানেমান একটু আগে যেটা করলাম ওটাই রোমাঞ্চ। মাইশার কোমরটা জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে বলল, তুমি চাইলে আমি আরও রোমাঞ্চ করতে পারি। কিন্তু হসপিটালে কি এসব মানায় বলো?
মাইশা এবার লজ্জায় ভেঙে পরে। আমতা আমতা করে বলে,
-কিহ এটাকে রোমাঞ্চ বলে?
-হুমমমম।আই লাভ ইউ জানেমান।
-এটার অর্থ কি?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি।
চলবে,,,,